03.কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর ছায়া

ইসলামের আকীদা অনুসারে, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ পাক তার অনুগত বান্দাদের ছায়া দিয়ে রাখবেন। আর কাফের বান্দারা সেইদিন আল্লাহর ছায়ার নিচে থাকতে পারবে না, সেই কারণে তাদের খুব গরম লাগবে। এই হাদিসগুলো পড়লে পরিষ্কার মনে হয়, মানুষ বা পৃথিবীর বস্তুসমূহের ছায়া কেন পরে, সেই সম্পর্কে নবী মুহাম্মদের বা আল্লাহ কারোরই তেমন কোন ধারণা ছিল না। আসুন প্রথমে হাদিসগুলো পড়ি [1] [2]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪/ যাকাত
পরিচ্ছেদঃ ২৪/১৬. ডান হাতে সদাকাহ প্রদান করা।
১৪২৩. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না সে দিন আল্লাহ তা‘আলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।
(১) ন্যায়পরায়ণ শাসক।
(২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভিতর গড়ে উঠেছে।
(৩) যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সাথে থাকে।
(৪) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে যে দু’ব্যক্তি পরস্পর মহববত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহববতের উপর আর পৃথক হয় সেই মহববতের উপর।
(৫) এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহবান জানিয়েছে। তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।
(৬) যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সাদাকা করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না।
(৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ হতে অশ্রু বের হয়ে পড়ে। (৬৬০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৩৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ – মাসজিদ ও সালাতের স্থান
৭০১-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তা’আলা সেদিন (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকবে নাঃ (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক যে যৌবন বয়সে আল্লাহর ’ইবাদাতে কাটিয়েছে, (৩) যে ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মসজিদেই তার মন পড়ে থাকে, (৪) সেই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, (৫) সে ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, (৬) সে ব্যক্তি, যাকে কোন উচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে। যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান হতে কী খরচ করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : বুখারী ৬৬০, মুসলিম ১০৩১, নাসায়ী ৫৩৮০, তিরমিযী ২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আমরা সকলেই কমবেশি জানি ছায়া কাকে বলে। আসুন ছায়া কাকে বলা হয় আরেও একবার জেনে নিই। ছায়া হচ্ছে, কোনোকিছুর দ্বারা আলোকরশ্মির গতিপথ রুদ্ধ হওয়ার ফলে উত্পন্ন প্রতিবিম্ব। ছায়া একটি অন্ধকার এলাকা যেখানে আলোর উত্স থেকে আলো একটি অস্বচ্ছ বস্তু দ্বারা অবরুদ্ধ হয়। যেহেতু আল্লাহর ছায়া কেয়ামতের ময়দানে থাকবে, তাই খুব সহজেই বলা যায়, কেয়ামত একটি গ্রহে সংঘটিত হবে এবং সেই গ্রহে একটি নিকটবর্তী নক্ষত্রও থাকবে। নিকটবর্তী আলোর উৎস বা নক্ষত্র না থাকলে আল্লাহর ছায়া কীভাবে পরবে? নিচের ছবিতে দেখুন, ছায়া কেন এবং কীভাবে পরে।

এখন বলুন তো, আল্লাহর যদি ছায়া পরে, তাহলে আল্লাহ তো একটি অস্বচ্ছ বস্তু, তাই না? আর যেহেতু কেয়ামত একটি গ্রহেই সংঘটিত হচ্ছে, তাই গ্রহটির আল্লাহর চাইতে নিঃসন্দেহে বড় হতে হবে। নইলে আল্লাহ সেখানে থাকবেন কীভাবে? সেই গ্রহের একটি নিকটবর্তী নক্ষত্রও প্রয়োজন হবে, যার আলোর ছায়া আল্লাহ বাধা দেবে এবং সেই ছায়ায় আল্লাহর ইমানদার বান্দারা আশ্রয় পাবে। তাহলে সেই নক্ষত্রটিরও তো আল্লাহর চাইতে বড় হতে হবে, তাই না?

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৪২৩ []
  2. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৭০১ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"