16.নাস্তিকরা এসাইলাম পেতে নাস্তিক হয়?

ইসলামিস্টদের একটি বহুল প্রচারিত অপপ্রচার হচ্ছে, নাস্তিকরা নাকি শুধুমাত্র পশ্চিমা দেশে আশ্রয় পাওয়ার জন্য ইসলামের সমালোচনা করে বা নিজেদের নাস্তিক পরিচয় দেয়। এটি সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত একটি দাবি, যা আসলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এবং সমালোচনার মুখ বন্ধ করতে ইসলামিস্টদের প্রচারিত এক ধরনের প্রোপাগান্ডা। পৃথিবীর যেকোন মুসলিম দেশেই একজন ইসলাম ধর্মত্যাগী নাস্তিক বা মুরতাদের জীবন সংকটের মধ্যে থাকে। বিদেশে এসাইলামের জন্য কেউ এতবড় ঝুঁকি নেবে, এরকম কথা একমাত্র পাগলের পক্ষেই বলা সম্ভব। বাস্তবে, বিশ্বের কোনো উন্নত দেশ শুধুমাত্র নাস্তিক হওয়ার জন্য কাউকে রাজনৈতিক আশ্রয় বা এসাইলাম দেয় না। বরঞ্চ, ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশগুলো বছরের পর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ মুসলিম শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে, যারা আসলে ধর্মীয় নিপীড়ন কিংবা রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে পালিয়ে এসেছে। অথচ ইসলামিস্টরা নিজেদের ধর্মীয় নির্যাতন, মুরতাদ হত্যা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় সহিংসতা এবং ব্যর্থ শাসন ব্যবস্থার কথা আড়াল করে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে থাকে।আসুন একটি নিউজ পড়ে নিই, [1] [2]

এসাইলাম

মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

ধর্মবিশ্বাস সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত একটি বিষয়, যা প্রতিটি মানুষের নিজস্ব চিন্তা, অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির ওপর নির্ভর করে। মনের ওপর কোনো জোর-জবরদস্তি চলে না, কারণ বিশ্বাস কখনো বলপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। কেউ যদি কোনো মতবাদে বিশ্বাস স্থাপন করে, সেটি তার আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্তের ফল। ঠিক তেমনি, কেউ যদি কোনো বিশ্বাস থেকে সরে আসে, সেটিও তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত, যেখানে বাইরের চাপের কোনো স্থান থাকা উচিত নয়।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তি তার ধর্মীয় বিশ্বাস বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা রাখে। কাউকে কোনো ধর্ম মেনে চলতে বাধ্য করা যাবে না, যেমন কাউকে কোনো ধর্ম ত্যাগ করতে জোর করা উচিত নয়। ধর্মীয় স্বাধীনতা কেবলমাত্র ধর্ম পালনের সুযোগকেই নির্দেশ করে না, বরং এতে ধর্ম পরিবর্তন বা ধর্মত্যাগের অধিকারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত স্বাধীনভাবে তার বিশ্বাস নির্ধারণ করা, এবং অন্যদেরও তা করতে দেয়া। একজন মানুষ চাইলে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে, আবার চাইলে ইসলাম ত্যাগ করতেও স্বাধীন। এটি তার মৌলিক অধিকার, যা রাষ্ট্র বা সমাজ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত নয়। প্রতিটি নাগরিকের অধিকার থাকা উচিত তার নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক উপলব্ধির ভিত্তিতে তার ধর্মীয় অবস্থান নির্ধারণ করার। ধর্মের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ বা ভয়ভীতি প্রদর্শন বা শাস্তি প্রদানের হুমকি দিয়ে ধর্মের গণ্ডির মধ্যে থাকতে বাধ্য করা মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ইসলাম ঠিক সেই কাজটিই করে। এই বিষয়ে বিস্তারিত পাবেন এই লেখাটিতে [3]

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ হচ্ছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ইসলামিক আলেম। তার বিখ্যাত ওয়েবসাইট islamqa.info তে এই সম্পর্কিত যেই ফতোয়াটি দেয়া আছে, সেটি দেখে নেয়া যাক, [4]

ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কেন
প্রশ্ন 20327
আমি একজন অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আপনাদের বিশ্বাসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছি। কিন্তু এ বিষয়টি বুঝা কঠিন যে, এক ব্যক্তি একটা কথা বলল, আর সে কথাটার কারণে তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হবে- আমি সালমান রুশদির কথা বুঝাতে চাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যেহেতু মানুষ তাই এ ধরনের কোন রায় প্রকাশ করার অধিকার আমাদের নেই। এ ধরনের বিষয়ের ফয়সালা আল্লাহই করবেন।
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
শুরুতেই আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি- আমাদের প্রতি আস্থা রেখে এ প্রশ্নটি আমাদের নিকট পাঠানোর জন্য, আমাদের বিশ্বাসের প্রতি আপনার অনুরক্ততার জন্য এবং প্রশ্নটির উত্তর জানার ব্যাপারে আপনার আগ্রহের জন্য। এ ওয়েব সাইটের একজন অতিথি হিসেবে, পাঠক হিসেবে ও জ্ঞানপিপাসু হিসেবে আপনাকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। সুপ্রিয় পাঠক, আমরা আপনার চিঠিতে লক্ষ্য করেছি- আপনি যে, ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন সেটি আপনি খোলাখুলিভাবে ব্যক্ত করেছেন। এটি আমাদের জন্য ও আপনার জন্য শুভসংবাদ। আমাদের জন্য এ বিবেচনা থেকে খুশির সংবাদ যে, আমাদের ধর্ম আপনার মত সত্যান্বেষীদের কাছেও পৌঁছতে পেরেছে। আমাদের নবী তো আমাদেরকে জানিয়ে গিয়েছিলেন- এই ধর্ম ভূপৃষ্ঠের সর্বস্তরে পৌঁছে যাবে। তামিম আদ-দারি (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: রাত ও দিন যতদূর পৌঁছেছে এ ধর্মও ততদূর পৌঁছে যাবে। কোন পশমনির্মিত তাবু (শহুরে বাড়ী) অথবা মাটির ঘর (গ্রাম্য ঘর) কোনটাই বাদ থাকবে না; আল্লাহ তাআলা সর্বগৃহে এই ধর্মকে প্রবেশ করাবেন। সম্মানীর ঘরে সম্মানের সাথে, অসম্মানীর ঘরে অসম্মানের সাথে। যে সম্মানের মাধ্যমে আল্লাহ ইসলামকে গৌরবময় করবেন এবং যে অপমানের মাধ্যমে আল্লাহ কুফরকে অপমানিত করবেন।[মুসনাদে আহমাদ (১৬৩৪৪), সিলসিলা সহিহা গ্রন্থে আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] এটি আপনার জন্য শুভকর এ দিক থেকে যে, এই ধর্মের প্রতি আপনার যে আগ্রহ এই আগ্রহ আপনাকে এই মহান ধর্ম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে অনুপ্রাণিত করবে। যেমন- এই ধর্ম মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ও সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যশীল। তাই আমরা আপনাকে পরামর্শ দিব আপনি সব ধরনের প্রভাব মুক্ত হয়ে ধীরস্থিরভাবে ইসলাম সম্পর্কে অধ্যয়ন করবেন। আপনি এই ওয়েব সাইটের (219) (21613) (20756) (10590) নং প্রশ্নোত্তরগুলো পড়তে পারেন। পক্ষান্তরে আপনার প্রশ্ন- “এই বিষয়টি বুঝা কঠিন যে, এক ব্যক্তি একটা কথা বলল, আর সে কথাটার কারণে তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হবে…।আমি বিশ্বাস করি, আমরা যেহেতু মানুষ তাই এ ধরনের কোন রায় প্রকাশ করার অধিকার আমাদের নেই।”আপনার কথা সঠিক- কুরআন-হাদিসের দলিল ছাড়া কারো বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার অধিকার কোন মানুষের নেই। যে কথার কারণে কারো বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয় সেটাকে মুসলিম স্কলারগণ ‘রিদ্দা’ (ইসলাম-ত্যাগ) হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। কখন ব্যক্তির ‘রিদ্দা’ সাব্যস্ত হয়? এবং মুরতাদ (ইসলাম ত্যাগকারী) ব্যক্তির বিধান কী? এক: রিদ্দা মানে- ইসলাম গ্রহণ করার পর কুফরিতে ফিরে যাওয়া।
দুই: কখন ব্যক্তির ‘রিদ্দা’ সাব্যস্ত হয়?
যে বিষয়গুলোতে লিপ্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোন ব্যক্তির ‘রিদ্দা’ সাব্যস্ত হয়-তা চার প্রকার। ১. বিশ্বাসগতভাবে ইসলাম ত্যাগ করা। যেমন- আল্লাহর সাথে শিরক তথা অংশীদার স্থাপন করা, অথবা আল্লাহকে অস্বীকার করা অথবা আল্লাহ তাআলার সাব্যস্ত কোন গুণকে অস্বীকার করা।
২. কোন কথা উচ্চারণ করার মাধ্যমে ইসলাম ত্যাগ। যেমন- আল্লাহ তাআলাকে গালি দেয়া অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দেয়া।
৩. কর্মের মাধ্যমে ধর্মত্যাগ। যেমন-কোন নোংরা স্থানে কুরআন শরিফ নিক্ষেপ করা। এ কাজ আল্লাহর বাণীকে অবমূল্যায়নের নামান্তর। তাই এটি অন্তরে বিশ্বাস না থাকার আলামত। অনুরূপভাবে কোন প্রতিমাকে অথবা সূর্যকে অথবা চন্দ্রকে সিজদা করা।
৪. কোন কর্ম বর্জন করার মাধ্যমে ইসলাম ত্যাগ। যেমন- ইসলামের সকল অনুশাসনকে বর্জন করা এবং এর উপর আমল করা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুখ ফিরিয়ে নেয়া।
তিন: মুরতাদের হুকুম কী?
যদি কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুরতাদের সকল শর্ত তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় (সুস্থ- মস্তিস্ক, বালেগ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হওয়া) তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হবে এবং ইমাম তথা মুসলমানদের শাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি যেমন বিচারক তাকে হত্যা করবে। তাকে গোসল করানো হবে না, তার জানাযা-নামায পড়ানো হবে না এবং তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা হবে না।
মুরতাদকে হত্যা করার দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী “যে ব্যক্তি ধর্ম ত্যাগ করে তাকে হত্যা কর।” [সহিহ বুখারী (২৭৯৪)]। হাদিসে ধর্ম দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী- “যে মুসলিম ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’ নিম্নোক্ত তিনটি কারণের কোন একটি ছাড়া তার রক্তপাত করা হারাম: হত্যার বদলে হত্যা, বিবাহিত ব্যভিচারী, দল থেকে বিচ্ছিন্ন-ধর্মত্যাগী।”[সহিহ বুখারি (৬৮৭৮) সহিহ মুসলিম (১৬৭৬)]। দেখুন: মাওসুআ ফিকহিয়্যা (ফিকহি বিশ্বকোষ), খণ্ড-২২, পৃষ্ঠা- ১৮০ প্রিয় প্রশ্নকারী, এর মাধ্যমে আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মুরতাদকে হত্যা করার বিষয়টি আল্লাহর আদেশেই সংঘটিত হয়ে থাকে। যেহেতু আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। “তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল তাদের আনুগত্য কর” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুরতাদকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে- “যে ব্যক্তি তার ধর্ম পরিবর্তন করেছে তাকে হত্যা কর।” এ মাসয়ালার প্রতি সন্তুষ্ট হতে আপনার হয়তো কিছু সময় লাগতে পারে, কিছু চিন্তাভাবনার প্রয়োজন হতে পারে। আপনি এ দিকটি একটু ভেবে দেখেন তো, একজন মানুষ সত্যকে অনুসরণ করল, সত্যপথে প্রবেশ করল এবং আল্লাহ তার উপর যে ধর্ম গ্রহণ করা আবশ্যক (ফরয) করে দিয়েছেন একমাত্র সে সত্য ধর্ম গ্রহণ করল। এরপর আমরা তাকে এই অবকাশ দিব যে, সে যখন ইচ্ছা অতি সহজে এই ধর্ম ত্যাগ করে চলে যাবে এবং কুফরি কথা উচ্চারণ করবে -যে কথা ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বহিষ্কার করে দেয়- এভাবে সে আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর কিতাব, তাঁর ধর্মকে অস্বীকার করবে কিন্তু কোন শাস্তির সম্মুখীন হবে না। এই যদি হয় তাহলে তার নিজের উপর এবং অন্য যারা এই ধর্মে প্রবেশ করতে চায় তাদের উপর এর প্রভাব কেমন হবে? আপনার কি মনে হয় না, এ রকম সুযোগ দিলে এই মহান ধর্ম -যা গ্রহণ করা অনিবার্য- একটি উন্মুক্ত দোকানে পরিণত হবে। যে যখন ইচ্ছা এতে প্রবেশ করবে এবং যখন ইচ্ছা বের হয়ে যাবে। হতে পারে সে অন্যকেও ইসলাম ত্যাগে অনুপ্রাণিত করবে। তাছাড়া এই ব্যক্তি তো এমন কেউ নয় যে সত্যকে জানেনি, ধর্মকর্ম, ইবাদত-বন্দেগি কিছুই করেনি। বরঞ্চ এই ব্যক্তি সত্যকে জেনেছে, ধর্মকর্ম করেছে, ইবাদত-অনুষ্ঠান আদায় করেছে। সুতরাং সে যতটুকু শাস্তি প্রাপ্য এটি তার চেয়ে বেশি নয়। এ ধরনের শাস্তি শুধু এমন এক ব্যক্তির জন্য রাখা হয়েছে যে ব্যক্তির জীবনের কোন মূল্য নেই। কারণ সে ব্যক্তি সত্যকে জেনেছে, ইসলামের অনুসরণ করেছে এরপর তা ছেড়ে দিয়েছে। অতএব এ ব্যক্তির আত্মার চেয়ে মন্দ কোন আত্মা আছে কি? সারকথা হচ্ছে- আল্লাহ তাআলা এই ধর্ম নাযিল করেছেন এবং তিনি এই ধর্ম গ্রহণ করা অপরিহার্য করেছেন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর ইসলাম ত্যাগকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন। এই শাস্তি মুসলমানদের চিন্তাপ্রসূত নয়, পরামর্শভিত্তিক নয়, ইজতিহাদনির্ভর নয়। বিষয়টি যেহেতু এমনু তাই আমরা যাঁকে রব্ব হিসেবে, ইলাহ হিসেবে মেনে নিয়েছি তাঁর হুকুমের অনুসরণ করতেই হবে। আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে তাঁর পছন্দীয় ও সন্তোষজনক আমল করার তাওফিক দিন। আমরা পুনরায় আপনার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
যে ব্যক্তি হেদায়েত গ্রহণ করেছে তাঁর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।

এবারে আসুন দেখে নিই, সৌদি সরকার নাস্তিকদের কীভাবে দেখে, [5]

এসাইলাম 1

নাস্তিকতা ও পশ্চিমা দেশে এসাইলাম: বাস্তবতা ও অপপ্রচার

প্রথমত, পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনৈতিক আশ্রয় বা পলিটিক্যাল এসাইলাম নীতির দিকে তাকালে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, কোনো দেশেই শুধুমাত্র “নাস্তিক হওয়া” বা “ইসলাম সমালোচনা করা” আশ্রয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ নয়। আশ্রয় পাওয়া সাধারণত নির্ভর করে নির্যাতন, জীবননাশের আশঙ্কা, অথবা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ওপর। এই ক্যাটাগরিতে ধার্মিক অধার্মিক যে কেউই পড়তে পারে। যেমন বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের কোন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ যদি ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করে, তার আবেদন খুবই শক্তিশালী হয়। কারণ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর ঘটে যাওয়া গণহত্যা এবং অন্যান্য মুসলিমদের ফতোয়া। যদিও আহমদিয়ারা খুবই ধার্মিক, তারপরেও তাদের আবেদন শক্তিশালী আবেদন হিসেবে গ্রহণ করা হবে। আবার উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি এমন দেশে বসবাস করে যেখানে ধর্মত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড (যেমন সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইত্যাদি), তাহলে সেই ব্যক্তি হয়তো নিজের জীবন বাঁচাতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারে। তবে সেটিও ব্যাপক প্রমাণের ওপর নির্ভর করে, এবং কেবল “আমি নাস্তিক” বললেই কেউ সহজে আশ্রয় পায় না।

ইউরোপের এসাইলাম গ্রহণের পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যায়, মুসলিম দেশগুলো থেকে আসা লক্ষ লক্ষ শরনার্থী বছরের পর বছর ধরে আশ্রয় পাচ্ছে। সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, ইয়েমেন, জর্ডান, প্যালেস্টাইন, পাকিস্তান—এসব দেশ থেকে মুসলিমরা পালিয়ে যাচ্ছে এবং পশ্চিমারা তাদের জায়গা দিচ্ছে। ২০১৫-১৬ সালে যখন সিরিয়া যুদ্ধের ফলে ইউরোপে শরণার্থীর ঢল নামে, তখন মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ১০ লক্ষেরও বেশি মুসলিম শরনার্থী জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পেয়েছে। অথচ এই বিপুল সংখ্যক মুসলিম শরনার্থীর জন্য পশ্চিমাদের মানবিক মনোভাব স্বীকার না করে, ইসলামিস্টরা উল্টো নাস্তিকদের নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছে। গত কয়েক বছরে জার্মানি লক্ষ লক্ষ সিরিয়ান রিফিউজিকে আশ্রয় দিয়েছে, শুধু তাই নয়, তুরস্কে কয়েক লক্ষ সিরিয়ান রিফিউজিকে গ্রহণ করার জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো ইউরোপ তুরস্ককে দিয়েছে, যেগুলো সকলেই কমবেশি জানেন। সেই মুসলিম শরনার্থীদের অনেকেই এখন জার্মানিতে শরীয়া আইনের জন্য দল বানাচ্ছে, নানা জায়গাতে জঙ্গি হামলা চালাচ্ছে, এমনকি পুলিশ জবাই করছে। জার্মানির নাগরিকদের একটি বড় অংশই এই ইসলামিস্টদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। আসুন একটি খবর পড়ি, [6]

এসাইলাম 3

মুহাম্মদের ধর্ম অবমাননা ও রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ

ইসলামিস্টদের এই হিপোক্রেসি বা ভণ্ডামির সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো, তাদের নিজেদের নবী মুহাম্মদের জীবনী। যে মানুষরা নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তোলে, তারাই ভুলে যায় যে মুহাম্মদ নিজেও একই কাজ করেছেন। ইসলামের ইতিহাসে মুহাম্মদের কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাস এবং দেব-দেবীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করতেন, যা মক্কার কুরাইশদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। মুহাম্মদ কাবাঘরের দেব-দেবীদের ‘কানকাটা মূর্তি’, ‘নির্বোধ কাঠের টুকরো’ ইত্যাদি বলে উপহাস করতেন। তিনি প্রকাশ্যে মক্কার ধর্মীয় ঐতিহ্যকে অবমাননা করতেন এবং তাদের বিশ্বাসকে মিথ্যা বলে উপস্থাপন করতেন। স্বাভাবিকভাবেই, কুরাইশদের মধ্যে এটি ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং তারা মুহাম্মদকে তাদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিস্তারিত এখান থেকে পড়তে পারে [7]

এরপর মুহাম্মদ নিজেকে নিপীড়িত দাবি করে মদিনায় রাজনৈতিক আশ্রয় বা পলিটিক্যাল এসাইলাম গ্রহণ করেন। মদিনার ইহুদিরা তখনো তার নবুওয়াতকে স্বীকৃতি দেয়নি, কিন্তু মুহাম্মদ কৌশলে সেখানে একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলেন এবং পরে মক্কা দখল করে ফেলেন। তাই ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসেই স্পষ্ট দেখা যায় যে, নবী মুহাম্মদ নিজেই ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে বিতাড়িত হয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। আসুন এই বিষয়ে একটি ওয়াজ শুনি,


ইসলামিস্টদের দ্বিচারিতা ও প্রোপাগান্ডা

ইসলামিস্টরা যখন বলে যে নাস্তিকরা কেবল পশ্চিমা দেশে আশ্রয় পাওয়ার জন্য ইসলামের সমালোচনা করে, তখন তারা মূলত নিজেদের স্ববিরোধিতাকে আড়াল করার চেষ্টা করে। কারণ তারা নিজেরাই ধর্মীয় স্বাধীনতা দমনের সংস্কৃতি তৈরি করেছে।

  • যদি মুসলিম দেশগুলোতে নাস্তিকদের ওপর নির্যাতন চালানো না হতো, তাহলে কি কেউ নিজ জন্মভূমি ছেড়ে বিদেশে ভিন্ন ভাষা ভিন্ন পরিবেশের দেশে এসাইলাম চাইত?
  • ইসলাম ধর্মত্যাগী বা মুরতাদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান হচ্ছে, কেউ ধর্মত্যাগ করলে তার গর্দান উড়াইয়া দিতে হবে। এটি স্পষ্টভাবে মানুষের বিশ্বাসের স্বাধীনতা হরণ করে। এই সহিংসতা ও অন্ধবিশ্বাসই মানুষকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করে।
  • যদি ইসলামে সত্যের শক্তি থাকত, তাহলে সমালোচনা দমনের এত প্রয়োজন হতো না। ইসলাম এতটাই ভঙ্গুর একটি মতবাদ যে, এটি সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। তাই ইসলামিস্টরা যেকোনো প্রশ্ন বা সমালোচনাকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করে। কখনো ইসলামিক বর্বর আইনের মাধ্যমে, কখনো চাপাতির মাধ্যমে।
  • ইসলামিক দেশগুলোর চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলো কেন মানবাধিকার রক্ষা করছে? ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো নাস্তিক-মুসলিম নির্বিশেষে আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীদের গ্রহণ করছে। অথচ মুসলিম দেশগুলোর বেশিরভাগই নিজেরা কখনো রোহিঙ্গা, সিরিয়ান, ইয়েমেনি বা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় না।

উপসংহার

নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ইসলামিস্টদের অভিযোগ যে, তারা শুধুমাত্র পশ্চিমে আশ্রয় পাওয়ার জন্য নাস্তিক হয়, তা একটি নির্জলা মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা। বরং বাস্তবতা হলো, ইসলামী দেশগুলোর মধ্যযুগীয় ধর্মীয় আইন ও নিপীড়নের কারণেই মানুষ ধর্মত্যাগ করতে বাধ্য হয়। পশ্চিমা দেশগুলো কেবল মানবাধিকারের ভিত্তিতে নির্যাতিতদের আশ্রয় দেয়, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নয়। উল্টো, নবী মুহাম্মদ নিজেই পৌত্তলিকদের ধর্ম অবমাননা করতেন এবং ধর্মীয় বিতাড়নের কারণে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন।

ইসলামিস্টরা নাস্তিকদের নামে মিথ্যা রটিয়ে আসলে নিজেদের দ্বিচারিতা লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। কারণ সত্য এটাই—ইসলামের ভিত এতটাই দুর্বল যে, সেটিকে কেবল সহিংসতা ও দমননীতি দিয়েই টিকিয়ে রাখা সম্ভব। যদি ইসলাম সত্য হতো, তাহলে সেটিকে বাঁচিয়ে রাখতে এতো ভয়ভীতি, হত্যা, নিষেধাজ্ঞা আর মিথ্যাচারের দরকার হতো না।

তথ্যসূত্র

  1. নাস্তিকদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে পুরো বিশ্ব, সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ []
  2. আর্কাইভ লিঙ্কঃ নাস্তিকদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে পুরো বিশ্ব, সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ []
  3. ইসলামে মুরতাদ-ধর্মত্যাগের শাস্তি []
  4. ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কেন []
  5. নাস্তিকদের সন্ত্রাসী ঘোষণা করল সৌদি আরব []
  6. হঠাৎ কঠোর জার্মানি []
  7. নবীর ধর্ম অবমাননা []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"