12.বায়তুল মামুর ও সিদরাতুল মুনতাহা!

কিছু সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ মিরাজের রাতে যাওয়ার পথে প্রথমে সিদরাতুল মুনতাহা দেখেন, এরপরে দেখেন বায়তুল মামুর বা ফেরেশতাদের ইবাদতখানা [1]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ২১৫১. মি’রাজের ঘটনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৬০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৮৭
৩৬০৮। হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) … মালিক ইবনু সা’সা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে রাতে তাঁকে ভ্রমণ করানো হয়েছে সে রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, একদা আমি কা’বা ঘরের হাতিমের অংশে ছিলাম। কখনো কখনো রাবী (কাতাদা) বলেছেন, হিজরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার নিকট এলেন এবং আমার এ স্থান থেকে সে স্থানের মধ্যবর্তী অংশটি চিরে ফেললেন। রাবী কাতাদা বলেন, আনাস (রাঃ) কখনো কাদ্দা (চিরলেন) শব্দ আবার কখনো শাক্‌কা (বিদীর্ণ) শব্দ বলেছেন। রাবী বলেন, আমি আমার পার্শ্বে বসা জারূদ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ দ্বারা কী বুঝিয়েছেন? তিনি বললেন, হলকুমের নিম্নদেশ থেকে নাভী পর্যন্ত। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে এ-ও বলতে শুনেছি বুকের উপরিভাগ থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত। তারপর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আগন্তুক আমার হৃদপিণ্ড বের করলেন। তারপর আমার নিকট একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল যা ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তারপর আমার হৃদপিণ্ডটি (যমযমের পানি দ্বারা) ধৌত করা হল এবং ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ করে যথাস্থানে পুনরায় রেখে দেয়া হল।
তারপর সাদা রং এর একটি জন্তু আমার নিকট আনা হল। যা আকারে খচ্চর থেকে ছোট ও গাধা থেকে বড় ছিল? জারূদ তাকে বলেন, হে আবূ হামযা, ইহাই কি বুরাক? আনাস (রাঃ) বললেন, হাঁ। সে একেক কদম রাখে দৃষ্টির শেষ প্রান্তে। আমাকে তার উপর সাওয়ার করানো হল। তারপর আমাকে নিয়ে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) চললেন, প্রথম আসমানে নিয়ে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল, ইনি কে? তিনি বললেন জিবরীল। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আবার জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল।
আমি যখন পোঁছালাম, তখন তথায় আদম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাত পেলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি আপনার আদি পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার পুত্র ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর উপরের দিকে চলে দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছে দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল কে? তিনি বললেন জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। তারপর বলা হল- তাঁর জন্য খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর খুলে দেওয়া হল। যখন তথায় পৌঁছালাম। তখন সেখানে ইয়াহ্‌ইয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) এর সাক্ষাত পেলাম। তাঁরা দু’জন ছিলেন পরস্পরের খালাত ভাই। তিনি (জিবরীল) বললেন, এরা হলেন ইয়াহ্‌ইয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম)। তাঁদের প্রতি সালাম করুন। তখন আমি সালাম দিলাম। তাঁরা জবাব দিলেন, তারপর বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
এরপর তিনি আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানের দিকে চললেন, সেখানে পৌঁছে জিবরীল বললেন খুলে দাও। তাঁকে বলা হল কে? তিনি উত্তর দিলেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর জন্য খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর দরজা খুলে দেওয়া হল। আমি তথায় পৌঁছে ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) কে দেখতে পেলাম। জিবরীল বললেন, ইনি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) আপনি তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তিনিও জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে পৌঁছলেন। আর (ফিরিশ্‌তাকে) দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। তখন বলা হল- তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তখন খুলে দেওয়া হল। আমি ইদ্রীস (আলাইহিস সালাম) এর কাছে পৌঁছলে জিবরীল বললেন, ইনি ইদ্রীস আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনিও জবাব দিলেন। তারপর বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
এরপর তিনি (জিবরীল) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করে পঞ্চম আসমানে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দিলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল। তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তথায় পৌঁছে হারূন (আলাইহিস সালাম) কে পেলাম। জিবরীল বললেন, ইনি হারূন (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম; তিনিও জবাব দিলেন, এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
তারপর আমাকে নিয়ে যাত্রা করে ষষ্ঠ আকাশে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। ফিরিশ্‌তা বললেন, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগন্তুক এসেছেন। তথায় পৌঁছে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) কে পেলাম। জিবরীল(আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম; তিনি জবাব দিলেন, এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
আমি যখন অগ্রসর হলাম তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কিসের জন্য কাঁদছেন? তিনি বললেন আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার পর একজন যুবককে নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, যার উম্মত আমার উম্মত থেকে অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশের দিকে গেলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? তিনি উত্তর দিলেন, আমি জিবরীল। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞাসা করা হল, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছে কি? তিনি বললেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। আমি সেখানে পৌঁছে ইব্‌রাহীম (আলাইহিস সালাম) কে দেখতে পেলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি আপনার পিতা। তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার পুত্র ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর আমাকে সিদ্‌রাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো হল। দেখতে পেলাম, উহার ফল হাজার অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতাগুলি এই হাতির কানের মত। আমাকে বলা হল, এ হল সিদরাতুল মুন্‌তাহা (জড় জগতের শেষ প্রান্ত)।
সেখানে আমি চারটি নহর দেখতে পেলাম, যাদের দু’টি ছিল অপ্রকাশ্য দু’টি ছিল প্রকাশ্য। তখন আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ নহরগুলো কী? অপ্রকাশ্য দু’টি হল জান্নাতের দুইটি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হল নীল নদী ও ফুরাত নদী। তারপর আমার সামনে ’আল-বায়তুল মামুর’ প্রকাশ করা হল,
এরপর আমার সামনে একটি শরাবের পাত্র, একটি দুধের পাত্র ও একটি মধুর পাত্র পরিবেশন করা হল। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরীল বললেন, এ-ই হচ্ছে ফিতরাত (দ্বীন-ই-ইসলাম)। আপনি ও আপনার উম্মতগণ এর উপর প্রতিষ্ঠিত। তারপর আমার উপর দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত সালাম ফরয করা হল।
এরপর আমি ফিরে আসলাম। মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে কী আদেশ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে সমর্থ হবে না। আল্লাহর কসম। আমি আপনার আগে লোকদের পরীক্ষা করেছি এবং বনী ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। তাই আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের(বোঝা) হাল্কা করার জন্য আবেদন করুন।
আমি ফিরে গেলাম। ফলে আমার উপর থেকে (দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) হ্রাস করে দিলেন। আমি আবার মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট ফিরে এলাম তিনি আবার আগের মত বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। ফলে আল্লাহ তা’আলা আরো দশ ওয়াক্ত সালাত কমিয়ে দিলেন। ফিরার পথে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট পৌঁছালে, তিনি আবার পূর্বোক্ত কথা বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আর দশ (ওয়াক্ত) হ্রাস করলেন। আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) নিকট ফিরে এলাম। তিনি আবার ঐ কথাই বললেন আমি আবার ফিরে গেলাম। তখন আমাকে দশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ দেওয়া হয়। আমি (তা নিয়ে) ফিরে এলাম। মূসা (আলাইহিস সালাম) ঐ কথাই আগের মত বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম, তখন আমাকে পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়।
তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট ফিরে এলাম। তিনি বললেন, আপনাকে কী আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমি বললাম, দৈনিক পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত আদায়ের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পাঁচ সালাত আদায় করতেও সমর্থ হবে না। আপনার পূর্বে আমি লোকদের পরীক্ষা করেছি। বনী ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আমার রবের নিকট (অনেকবার) আবেদন করেছি, এতে আমি লজ্জাবোধ করছি। আর আমি এতেই সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তা মেনে নিয়েছি। এরপর তিনি বললেন, আমি যখন মূসা (আলাইহিস সালাম) কে অতিক্রম করে অগ্রসর হলাম, তখন জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমি আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি জারি করে দিলাম এবং আমার বান্দাদের উপর লঘু করে দিলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ)

আবার, ভিন্ন সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, মিরাজের রাতে যাওয়ার পথে নবী মুহাম্মদ প্রথমে বায়তুল মামুর দেখেন, যেখানে নবী ইব্রাহীম পিঠ ঠেকিয়ে বসে ছিলেন। এরপরে তিনি সিদরাতুল মুনতাহা দেখেন [2]। প্রশ্ন হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ আগে বায়তুল মামুর দেখেন নাকি আগে সিদরাতুল মুনতাহা? কারণ দুই ধরণের বর্ণনাই পাওয়া যাচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছ থেকে। সমস্যা হচ্ছে, দুই ধরণের বর্ণনাই সহিহ, অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে রাবীদের স্মরণশক্তি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহের অবকাশ নেই!

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২
৩০৮। শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমার কাছে বুরাক আনা হল। বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদুর দৃষ্টি যায়, এক এক পদক্ষেপে সে ততাদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এতে আরোহন করলাম এবং বায়তুল মাকদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে রজ্জুতে বাধতেন, আমি সে রজ্জুতে আমার বাহনটিও বাধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বের হলাম।
জিবরীল (আলাইহিস সালাম) একটি শরাবের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি ফিরতকেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দার খুলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ, ডেকে পাঠানো হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খূলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাক্ষাৎ পাই তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার মঙ্গলের জন্য দুআা করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে চললেন এবং দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত পৌছলেন ও দ্বার খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি উত্তরে বললেন জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, তাকে কি আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আলাইহিমুস সালাম) দুই খালাত ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়েঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইউসূফ (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুঃআ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا‏ “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়—” (৫৭ঃ ১৯)।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খূলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হল। সেখানে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খূলে দেয়া হল। সেখানে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রাস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললোন, জিবরীল। বলা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি বায়তুল মা’মুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। বায়তুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পূনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হস্থিনীর কানের মত আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
এরপর আল্লাহ তায়াআলা আমার উপর যা অহী করার তা অহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করলেন। এরপর আমি মূসা(আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মাত এ নির্দেশ পাননে সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মাতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মাত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়াহ করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও, দিন ও রাতের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাত দশ ওয়াক্ত সালাতের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান। যে ব্যাক্তি কোন নেক কাজের ইচ্ছা করল এবং তা কাজে রুপায়িত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; অ্যর তা কাজে রুপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের অভিপ্রায় করল, অথচ তা কাজে পরিণত করল না, তার জন্য কোন গুনাহ লেখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লেখা হয় একটি মাত্র গুনাহ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে নেমে এলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিযয় নিয়ে বারবার আমি আমার রবের কাছে আসা-যাওয়া করেছি, এখন পূনরায় যেতে লজ্জা হচ্ছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আসুন হাদিস দুইটি পাশাপাশি রেখে পড়ি,

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৬০৮ []
  2. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"