নবী মুহাম্মদ একবার আয়িশা এবং তার পিতা আবু বকরকে একটি কক্ষে আলাপ করতে দেখলেন। সেটি দেখে তিনি তাদের এই কাজ করতে, অর্থাৎ দুইজনে নির্জনে কথা বলতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, এমনকি পিতা কন্যাও একসাথে কথা বললে তাদের মাঝখানে শয়তান চলে আসতে পারে! শুধুমাত্র বিকৃত মন মানসিকতার মানুষই নিজ শ্বশুর এবং স্ত্রীকে নিয়ে এরকম বাজে মন্তব্য করতে পারে। এই ঘটনায় মুহাম্মদের অসন্তুষ্টি এবং নির্দেশনা প্রমাণ করে, আবু বকর এবং আয়িশাকে একসাথে এক কক্ষে কথা বলতে দেখাটি নবী মোটেও পছন্দ করেননি। কিন্তু কেন তা পছন্দ করেননি? নবী কী আয়িশা ও আবু বকরকে নিয়ে সন্দেহ করেছিলেন? এইরকম নোংরা সন্দেহ তার মনে কীভাবে আসলো? তারই ঘনিষ্টতম বন্ধু ও অনুসারী আবু বকর এবং তারই স্ত্রী আয়িশাকে নিয়ে তার মনে এরকম চিন্তা আসলো কীভাবে?
ভাবুন তো, আপনার মেয়েকে আপনি একজনার কাছে বিয়ে দিয়েছেন। একদিন আপনাকে এবং আপনার মেয়েকে একসাথে এক কক্ষে দেখে আপনার মেয়ের জামাই এরকম একটি অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলো। আপনার এরকম মন্তব্য শুনতে কেমন লাগবে? আপনার লজ্জায় মাথা কাটা যাবে না? আসুন আহমদুল্লাহর বক্তব্য শুনি,
সেই একই নবী মুহাম্মদ কিন্তু আলী বাসায় না থাকা অবস্থায় তার নিজ কন্যা ফাতিমার ঘরে যেতেন। আসুন হাদিসগুলো পড়ি, [1] [2]
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮/ সালাত
পরিচ্ছেদঃ ২৯৯। মসজিদে পুরুষের ঘুমানো।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৪১
৪২৮। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) …. সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রাঃ) এর ঘরে এলেন, কিন্তু আলী (রাঃ)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাঁর মধ্যে কিছু ঘটেছে। তিনি আমার সাথে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার কাছে দুপুরের বিশ্রামও করেন নি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেনঃ দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যাক্তি খোঁজে এসে বললোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন, তখন আলী (রাঃ) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশের চাঁদর পড়ে গিয়েছে এবং তাঁর শরীরে মাটি লেগেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীরের মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বললেনঃ উঠ, হে আবূ তুরাব! উঠ, হে আবূ তুরাব!
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা’দ (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৬/ অনুমতি চাওয়া
পরিচ্ছেদঃ ২৬০০. মসজিদে কাইলুলা করা
৫৮৪৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আলী (রাঃ) এর কাছে আবূ তুরাব এর চাইতে প্রিয়তর কোন নাম ছিল না। এ নামে ডাকা হলে তিনি অতান্ত খুশী হতেন। কারণ একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রাঃ) এর ঘরে আসলেন। তখন আলী (রাঃ) কে ঘরে পেলেন না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তার মধ্যে কিছু ঘটায় তিনি আমার সঙ্গে রাগারাগি করে বেরিয়ে গেছেন। আমার কাছে কায়লুলা করেননি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেনঃ দেখতো সে কোথায়? সে লোকটি এসে বললঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি তো মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখতে পেলেন যে, তিনি কাত হয়ে শুয়ে আছেন, আর তার চাঁদরখানা পাশ থেকে পড়ে গেছে। ফলে তার সাথে মাটি লেগে গেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গায়ের মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেনঃ ওঠো, আবূ তুরাব (মাটির বাবা) ওঠো, আবূ তুরাব! একথাটা তিনি দু’বার বললেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা’দ (রাঃ)
আবার হাদিস থেকে এটিও জানা যায়, মাথায় উকুন ছিল নবীর, এবং এক মহিলার বাসায় গিয়ে তাকে দিয়ে উকুন বাছতেন নবী। উকুন হয় সাধারণত অপরিচ্ছন্ন স্বভাবের মানুষ, যারা মাথা অপরিষ্কার রাখেন। সেটি যদি বাদও দিই, এই হাদিসে দেখুন, একজন মহিলার বাসায় নবী নিয়মিত যেতেন, যার ঘরে খানাপিনা করার পরে সেই নারীকে দিয়ে নিজের মাথার উকুন বাছাতেন। উকুন বাছতে দুইজন মানুষের কতটা কাছাকাছি অবস্থান করতে হয়, সেটি ভেবে দেখুন তো। এতো ঘনিষ্ঠভাবে নবী মুহাম্মদ নারীদের সাথে মিশতেন, যিনি নিজেই তার স্ত্রীকে তার শ্বশুরের সাথে নির্জনে কথা বলতে দেখলে বাজে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলতেন! ভাবা যায়?
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৮০/ স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান
পরিচ্ছেদঃ ২৯৪০. দিনের বেলায় স্বপ্ন দেখা। ইবন আউন (রহঃ) ইবন সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, দিনের স্বপ্ন রাতের সপ্নের মত।
৬৫৩০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই উম্মে হারাম বিনত মিলহান (রাঃ) এর ঘরে যেতেন। আর সে ছিল উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) এর স্ত্রী। একদা তিনি তার কাছে এলেন। সে তাকে খানা খাওয়াল। তারপর তার মাথার উকুন বাছতে শুরু করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর হেসে হেসে জেগে উঠলেন। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন হাসলেন? তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোককে আমার কাছে পেশ করা হয়েছে। যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত সাগরের মধ্যে জাহাজের ওপর আরোহণ করে বাদশাহর সিংহাসনে অথবা বাদশাহদের মত তারা সিংহাসনে উপবিষ্ট। ইসহাক রাবী সন্দেহ করেছেন। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দোয়া করলেন।
এরপর আবার তিনি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর আবার হেসে হেসে জেগে উঠলেন। আমি বললাম, আপনি হাসলেন কেন হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত আমার একদল উম্মতকে আমার কাছে পেশ করা হয়েছে। পূর্বের ন্যায় এ দল সম্পর্কেও বললেন। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাকে এ দলভুক্ত করে দেন। তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম দলভুক্ত।
উম্মে হারাম (রাঃ) মুআবিয়া ইবনু সুফিয়ান (রাঃ) এর আমলে সামুদ্রিক জাহাজে আরোহন করেন এবং সমুদ্র থেকে পেরিয়ে আসার সময় আপন সাওয়ারী থেকে মাটিতে পড়ে গিয়ে মারা যান।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
আসুন ভালভাবে বিষয়টি বোঝার জন্য একটি ছবি দেখি,

আবার দেখুন, সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী অন্যের দাসীর সাথে মেলামেশা করতেন, যেখানে সেখানে চলে যেতেন। হাত ধরাধরিও হতো [3] [4]
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৫/ আচার ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ২৪৯৩. অহংকার। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, (আল্লাহর বানী) عطفه অর্থাৎ তার ঘাড়। ثَانِيَ عطفه অর্থাৎ নিজে নিজে মনে অহমিকা পোষণকারী
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫৬৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬০৭১ – ৬০৭২
৫৬৪৫। মুহাম্মাদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … হারিসা ইবনু ওহাব খুযায়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের জান্নাতীদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? (তারা হলেন) ঐ সকল লোক যারা অসহায় এবং যাদের হীন মনে করা হয়। তারা যদি আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বসে, তাহলে তা তিনি নিশ্চয়ই পুরা করে দেন। আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা হলোঃ রুঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় ও দাম্ভিক।
মুহাম্মদ ইবনু ঈসা (রহঃ) সুত্রে আনাস ইবনু ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদিনাবাসীদের কোন এক দাসীও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত ধরে যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যেত। আর তিনিও তার সাথে চলে যেতেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ হারিসাহ ইবনু ওয়াহব (রাঃ)
সুনান ইবনু মাজাহ
৩১/ পার্থিব ভোগবিলাসের প্রতি অনাসক্তি
পরিচ্ছেদঃ ৩১/১৬. অহমিকা বর্জন এবং বিনয়-নম্রতা অবলম্বন
৫/৪১৭৭। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনার কোন দাসী নিজ প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাত ধরে তাঁকে নিজ ইচ্ছামত মদীনার কোন স্থানে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতেন না (তার সাথে যেতেন)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তথ্যসূত্র
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪২৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৮৪৫ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৬৪৫ [↑]
- সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিসঃ ৪১৭৭ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"