মহান আল্লাহ পাকের সর্বময় ক্ষমতার অধিকার এবং নবী মুহাম্মদ যুদ্ধের ময়দানে বিপদের সময় সাহায্য চাওয়া নিয়ে অনেক প্রশ্নই উঠে আসে। নবী মুহাম্মদ যুদ্ধে বিপদে পড়লে সাহাবাদের থেকে সাহায্য চাইতেন এবং তাদের জান্নাতের লোভ দেখিয়ে অনুপ্রাণিত করতেন। এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফেরেশতারা তখন কী করতেন, যাদের দায়িত্ব ছিল নবীর নিরাপত্তা রক্ষা করা? আল্লাহ তায়ালা সবকিছু করতে সক্ষম এবং ফেরেশতাদের দুনিয়ার যে কোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেই ফেরেশতাগণ তাদের কর্তব্য কাজে কেন এরকম ফাঁকি দিতেন যে, নবীর আকুল হয়ে সাহাবাদের ডাকতে হতো, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
আধুনিক যুগে এরকম বিভিন্ন ধরণের “পীর” বা ভণ্ডগুরুদের দেখা মেলে, যারা নিজেদেরকে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে উপস্থাপন করে। তারা দাবি করে যে তাদের সাথে শক্তিশালী জ্বীনেরা রয়েছে, যারা অসাধারণ ক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম। এই ভণ্ড পীররা সাধারণত সাধারণ মানুষের সরল বিশ্বাসকে ব্যবহার করে, তাদের উপর মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতন চালায়। আমাদের এলাকায়ও এমন একজন ভণ্ড পীর ছিল, যে দাবি করতো তার সাথে শক্তিশালী জ্বীনেরা রয়েছে, যারা যে কোনো মানুষকে যেকোনো জায়গায় উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। এর মাধ্যমে সে সাধারণ মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। এই ধরনের অসার দাবি সাধারণত অন্ধবিশ্বাস এবং ভীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, এবং মানুষকে মানসিকভাবে নিপীড়িত করে। কিন্তু আমাদের এলাকার এরকম এক পীর সাহেব প্রতিবছর আমেরিকার ডিবি লটারিতে অংশ নিতো। জ্বীনের সাহায্যে যিনি যেকাউকে যেকোন দেশ থেকে নাকি উড়িয়ে নিয়ে আসতে পারতেন, তিনি কেন জ্বীনের সাহায্যে আমেরিকা উড়ে যেতে পারছেন না, সেটি একটি অবাক করা বিষয়ই বটে।
এখানে প্রশ্ন জাগে, এই জ্বীনেরা কতটা সত্যিকারের ক্ষমতা রাখে? একদিন সেই ভণ্ড পীরের পেছনে এলাকার ছেলেপেলেরা কুকুর লেলিয়ে দেয়। ওইদিন ভণ্ড পীর এমনভাবে দৌঁড় দিয়েছিল যে, অলিম্পিক দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে সে হয়তো সোনা জিতে আসত। তার দৌড়ের চোটে এমনকি তার লুঙ্গিটাও খুলে গিয়েছিল। কিন্তু তার কথিত সেই শক্তিশালী জ্বীনগুলো তখন কী করছিল? সেই জ্বীনরা কি তাকে রক্ষা করতে পারেনি? এমন ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে, এই ভণ্ডদের জ্বীনের ক্ষমতার আসলে কোনো ভিত্তি নেই, এবং তারা শুধুমাত্র লোকজনের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করে। এটি প্রমাণ করে যে, যারা ভণ্ডামির মাধ্যমে মানুষকে ধোঁকা দেয়, তাদের আচরণ ও কথাবার্তা থেকেই আসলে তাদের আসল রূপ প্রকাশ পেয়ে যায় [1]
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ৩৭. উহুদ যুদ্ধ
৪৪৯০। হাদ্দাব ইবনু খালিদ আযদী (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ওহুদ যুদ্ধের দিন কেবল সাতজন আনসার ও দুজন কোরায়শ (মুহাজির) সাথীসহ (শত্রুবাহিনী কর্তৃক) অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং তারা তাকে বেষ্টন করে ফেলে তিনি বললেনঃ কে আমার পক্ষ থেকে শত্রুদের প্রতিহত করবে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। অথবা বললেনঃ সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে। তখন আনসারদের মধ্যকার একব্যক্তি অগ্রসর হয়ে যুদ্ধ শুরু করল এবং পরিশেষে শহীদ হন। তারপর পুনরায় তারা তাঁকে বেষ্টন করে ফেললো এবং অনুরূপভাবে (লড়াই করতে করতে তাঁদের) সাতজনই শহীদ হলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদ্বয়কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আমরা সঙ্গীদের প্রতি সুবিচার করিনি। (আমরা বেঁচে রইলাম, অথচ তারা শহীদ হলেন।)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ- এর আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস এবং আস্থা থাকা সত্ত্বেও, আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর বা ভাগ্যে পরিপূর্ণ আস্থা থাকার পরে, তিনি বিপদের মুহূর্তে মানসিকভাবে মারাত্মকরকম উদ্বিগ্ন থাকতেন। এমনকি জিবরাইলের মতো শক্তিশালী ফেরেশতা এবং হাজার হাজার ফেরেশতা বাহিনী থাকলেও, তিনি রাতে শত্রুদের আক্রমণের আশঙ্কায় সম্পূর্ণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতেন না। এজন্য, নবী তার সুরক্ষার জন্য পাহারাদার নিযুক্ত করতেন। এর মূল কারণ ছিল শত্রুদের দ্বারা খুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। যদিও আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম এবং তাঁর ইচ্ছার বাইরে কিছুই ঘটে না, তবুও নবী নিজের নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করতে পারতেন না। তিনিঅসীম ক্ষমতাবান আল্লাহ ও শক্তিশালী ফেরেশতা বাহিনী থাকার পরে বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন অনুভব করতেন। তার জীবনযাত্রা ও কর্মকাণ্ড থেকে আমরা এটি স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা রাখার চাইতে একজন নিরাপত্তা প্রহরী রাখা উত্তম [2]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ৫৬/৭০. মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধে প্রহরা দান।
২৮৮৫. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (এক রাতে) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জেগে কাটান। অতঃপর তিনি যখন মদিনা্য় এলেন এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেন যে, আমার সাহাবীদের মধ্যে কোন যোগ্য ব্যক্তি যদি রাতে আমার পাহারায় থাকত। এমন সময় আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? ব্যক্তিটি বলল, আমি সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস, আপনার পাহারার জন্য এসেছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমিয়ে গেলেন। (৭২৩১) (মুসলিম ৪৪/৫ হাঃ ২৪১০, আহমাদ ২৫১৪৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৮৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
তথ্যসূত্র
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"