আলোচনা শুরুর পূর্বে আসুন বাঙলাদেশের একজন প্রখ্যাত আলেমের মুখ থেকে জেনে নিই, ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে বেইমানের মৃত্যু কীভাবে হবে,
এবারে আসুন মিজানুর রহমান আজহারীর মুখ থেকে শুনে নিই, মুহাম্মদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল,
জানা যায়, মৃত্যুর সময় ভয়াবহ কষ্ট পেতে হয়েছিল নবীকে। তার হাদিস থেকেই আসুন জেনে নিই, [1] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪/ মাগাযী [যুদ্ধ]
পরিচ্ছেদঃ ৬৪/৮৪. নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগ ও তাঁর ওফাত।
৪৪৪৯. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি প্রায়ই বলতেন, আমার প্রতি আল্লাহর এটা নি‘য়ামাত যে, আমার ঘরে, আমার পালার দিনে এবং আমার গন্ড ও সিনার মাঝে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকাল হয় এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইন্তিকালের সময় আমার থুথু তাঁর থুথুর সঙ্গে মিশ্রিত করে দেন। এ সময় ‘আবদুর রহমান [1] (রাঃ) আমার নিকট প্রবেশ করে এবং তার হাতে মিসওয়াক ছিল। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (আমার বুকে) হেলান অবস্থায় রেখেছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, তিনি ‘আবদুর রহমানের দিকে তাকাচ্ছেন। আমি বুঝলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক চাচ্ছেন। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি আপনার জন্য মিসওয়াক নিব? তিনি মাথা নাড়িয়ে জানালেন যে, হ্যাঁ। তখন আমি মিসওয়াকটি নিলাম। কিন্তু মিসওয়াক ছিল তার জন্য শক্ত, তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি এটি আপনার জন্য নরম করে দিব? তখন তিনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললেন। তখন আমি তা চিবিয়ে নরম করে দিলাম। এরপর তিনি ভালভাবে মিসওয়াক করলেন। তাঁর সম্মুখে পাত্র অথবা পেয়ালা ছিল (রাবী ‘উমারের সন্দেহ) তাতে পানি ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হস্তদ্বয় পানির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে তার দ্বারা তাঁর চেহারা মুছতে লাগলেন। তিনি বলছিলেন …….. -আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, সত্যিই মৃত্যু-যন্ত্রণা কঠিন। তারপর দু’ হাত উপরের দিকে উঠিয়ে বলছিলেন, আমি উচ্চে সমাসীন। বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই)। এ অবস্থায় তাঁর ইন্তিকাল হল আর হাত শিথিল হয়ে গেল। [৮৯০] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০৯৯)
[1] ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর ভাই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
নবী মুহাম্মদের মৃত্যু সম্পর্কে হাদিস ও সীরাত গ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়, ইহুদি একজন নির্যাতিত নারী, যার প্রায় পুরো পরিবার এবং গোত্রকে নবী মুহাম্মদ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন, সে নবীকে বিষ মাখানো মাংস খাওয়ান এবং পরবর্তীতে সেই বিষক্রিয়াতেই নবীর মৃত্যু হয়। এই বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুন এই লেখাটি থেকে, এখানে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হচ্ছে। আসুন সম্পূর্ণ ঘটনাটি সংক্ষেপে একসাথে পড়ে নিই। এই বর্ণনাটি পাওয়া যাবে তাফসীরে মাযহারীতে, যেখানে আসলে খুব বিস্তারিতভাবে বর্ণনাটি দেয়া হয়েছে [2] –
এবারে আসুন, সেই হাদিসসমূহ দেখে নিই [3]-
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫১৩। ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত ছিলেন তখন উম্মু মুবাশশির (রাঃ) তাঁকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার রোগ সম্পর্কে কি ভাবছেন? আর আমি আমার ছেলের রোগ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন নই সেই বিষ মেশানো বকরীর গোশত ব্যতীত যা সে খায়বারে আপনার সঙ্গে খেয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমিও ঐ বিষ ছাড়া আমার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নই। এ মুহূর্তে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিচ্ছে।(1)
সনদ সহীহ।
(1). আবূ দাঊদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ্ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ)
আরো কয়েকটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, নবী মুহাম্মদ তার প্রধান ধমনী কেটে দেয়ার মত যন্ত্রণা অনুভব করতেন [4]
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫১২। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া গ্রহণ করতেন কিন্তু সাদাকাহ গ্রহণ করতেন না। বর্ণনাকারী বলেন, খায়বারের এক ইয়াহুদী মহিলা একটি ভুনা বকরীতে বিষ মিশিয়ে তাঁকে হাদিয়া দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আহার করেন এবং লোকজনও আহার করে। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও। কারণ এটি আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, এটি বিষযুক্ত। (বিষক্রিয়ার ফলে) বিশর ইবনুল বারাআত ইবনু মা‘রূর আল-আনসারী (রাঃ) মারা যান। তিনি ইয়াহুদী মহিলাকে ডেকে এনে প্রশ্ন করেনঃ তুমি যা করলে তা করতে তোমাকে কিসে প্ররোচিত করেছে?
সে বললো, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি যা করেছি তাতে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি বাদশাহ হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে পরে তাকে হত্যা করা হলো। অতঃপর তিনি যে ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন সেই সম্পর্কে বলেনঃ আমি সর্বদা সেই লোকমার ব্যথা অনুভব করছি যা আমি খায়বারে খেয়েছিলাম। এই সময়ে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিয়েছে।(1)
হাসান সহীহ।
(1). বুখারী, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
এবারে আসুন মিশকাত শরীফের একটি হাদিস এবং তার ব্যাখ্যা পড়ি, [5]
এবারে আসুন, ইবনে ইসহাকের প্রখ্যাত সীরাত গ্রন্থ থেকে এই বিষয়টি পড়ে নিই ( বই থেকে ছবি তুলে দেয়ায় ছবির কোয়ালিটি খারাপ হয়েছে বলে দুঃখিত)- [6] –
খাইবারের বাকি কথা
বনু আল-নাদিরের সঞ্চিত ধনরত্নের হেফাজত ছিল কিনানা ইবনে আল-রাবির ওপর। তাকে রাসুলের (সা.) কাছে আনা হলে সে তা অস্বীকার করল, ওগুলো কোথায় আছে সে জানে না। একজন ইহুদি রাসুলের (সা.) কাছে এসে জানাল [তাবারির ভাষ্য : তাকে আনা হয়েছিল], সে কিনানাকে ধ্বংসাবশেষের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রোজ সকালে যেতে দেখেছে। রাসুল (সা.) কিনানাকে বললেন, “আমরা যদি প্রমাণ পাই তোমার কাছে সব ধনসম্পদ আছে, তাহলে তোমাকে হত্যা করা হবে, সেটা তুমি জানো?’
সে বলল, সে তা জানে ।
রাসুল (সা.) হুকুম দিলেন, ধ্বংসাবশেষ খোদাই করে ধনরত্ন পেতে হবে। কিছু সম্পদ পাওয়া গেল। বাকি ধনরত্ন কোথায় রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলে সে তা বলতে অস্বীকার করল। রাসুল (সা.) আল-জুবায়ের ইবনে আল-আওয়ামকে হুকুম দিলেন, ‘ওর কাছে যা আছে বের করে না দেওয়া পর্যন্ত তাকে শাস্তি দাও।’
জুবায়ের তার বুকের ওপর চকমকি পাথর আর ইস্পাত রেখে তার ওপর অগ্নিসংযোগ করলেন।
এই অবস্থায় তার শেষ দশা উপস্থিত হলো। তারপর রাসুল (সা.) তাকে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার হাতে তুলে দিলেন । মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা তার শিরশ্ছেদ করে ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নিল ।
*খাইবারের লোকদের রাসুল (সা.) আল-ওয়াতিহ ও আল-সুলালিম নামে দুটি দুর্গে অবরোধ করে রাখেন। তারপর ওরা আর সামলাতে পারল না, রাসুলকে (সা.) অনুরোধ করল ওদের প্রাণে
বাঁচিয়ে দিলে ওরা চলে যাবে। রাসুল (সা.) ওদের যেতে দিলেন। এদিকে রাসুল (সা.) এ দুটি দুর্গ
……..
* * বালাদরি থেকে তিনি ইবনে ইসহাকের উৎস আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকরের (রা.) নাম উল্লেখ করেন।
৫৫৬ • সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)
ছাড়া ওদের অন্যান্য সব সম্পদ অধিকার করেন—আল-শাকক, মাতা, আল-কাতিবা এবং তাদের বাকি সমস্ত দুর্গ । ফাদাকের লোকজন সব বৃত্তান্ত অবগত হলে তারাও বলে পাঠাল প্রাণে না মারলে তারাও চলে যাবে, তাদের সব সম্পত্তি রাসুলকে (সা.) দিয়ে যাবে। রাসুল (সা.) সম্মত হলেন। এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করেছিল বনু হারিসার ভাই মুহাইসা ইবনে মাসুদ। এই সব শর্তে খাইবারের লোকজন আত্মসমর্পণ করে রাসুলের (সা.) কাছে অনুরোধ জানাল, তাদের জমিতে কাজ করতে দিলে অর্ধেক ফসল তারা গ্রহণ করবে, বাকি অর্ধেক রাসুলকে (সা.) দেবে। তারা বলল, ‘জমির ব্যাপারে আমরা আপনাদের চেয়ে বেশি জানি, আর কৃষক হিসেবে আমরা ভালো। রাসুল (সা.) এই শর্তে রাজি হলেন, ‘যখন তোমাদের বহিষ্কার করতে চাইব, তখনই তোমাদের বহিষ্কার করে দেব।” ফাদাকের লোকজনের সঙ্গেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। সুতরাং খাইবার মুসলমানদের যুদ্ধার্জিত সম্পত্তিতে পরিণত হলো। আর ফাদাক হয়ে গেল রাসুলের (সা.) ব্যক্তিগত সম্পত্তি। কারণ, তার বিরুদ্ধে কোনো ঘোড়া বা উটের সেখানে যেতে হয়নি।
রাসুল (সা.) যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তখন আল-হারিসের মেয়ে, সাল্লাম ইবনে মিশকামের স্ত্রী জয়নব তাঁর জন্য একটা ভেড়া রোস্ট করে। এর আগে জিজ্ঞেস করে সে জেনে নেয় যে রাসুল (সা.) ভেড়ার কাঁধের অংশটি খেতে পছন্দ করেন। সমস্ত মাংসে সে বিষ মেশাল, কাঁধের অংশে ভালো করে । তারপর তা বেড়ে দিল রাসুলের (সা.) পাতে। রাসুল (সা.) কাঁধের এক টুকরা মাংস নিয়ে চিবোলেন, কিন্তু গিললেন না। সঙ্গে ছিল বিশর ইবনে আল-বারা। সে একটা টুকরা গিলে ফেলল । রাসুল (সা.) মুখের গোশত ফেলে দিলেন, বললেন, ‘এই হাড্ডিতে মনে হয় বিষ মেশানো হয়েছে।’ তিনি সেই মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞেস করতেই সে সব স্বীকার করল। কেন এমন কাজ সে করতে গেল জিজ্ঞেস করলে সে বলল, ‘আপনি আমার লোকজনের কী ক্ষতি করেছেন, আপনি ভালো করে জানেন । ভাবলাম সে যদি রাজি হয়, তাহলে আপদ চুকে যাবে। আর যদি নবী হয় তো টেরই পাবে।’
শুনে রাসুল (সা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করল বিশর।
খাইবারের পর রাসুল (সা.) ওয়াদিল-কুরা কয়েক রাত অবরোধ করে রাখেন। তারপর মদিনার পথে রওনা হন ।
তাবারি ৮ম খণ্ডের ১২৪ পৃষ্ঠাতেও [7] এই ঘটনা পাওয়া যায়।
ইহুদি মহিলার দেয়া বিষযুক্ত মাংস খেয়ে নবী মুহাম্মদের কোন ক্ষতি হয়েছিল কিনা, সেটি এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইহুদি মহিলা খুব পরিষ্কারভাবেই বলেছিলেন, মুহাম্মদ নবী হয়ে থাকলে সেই বিষ মুহাম্মদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। সেটি এক অর্থে ছিল মুহাম্মদের নবুয়্যত্ব সম্পর্কে সেই ইহুদি মহিলার চ্যালেঞ্জও। হাদিস থেকেই জানা যায়, সেই বিষে মুহাম্মদের শারীরিক ক্ষতি হয়েছিল [8],
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
ভূমিকা
পরিচ্ছেদঃ ১১. মৃত ব্যক্তির কথা বলার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্মানিত করা হয়েছে প্রসঙ্গে
৬৮. আবু সালামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিয়া (উপহার) খেতেন (গ্রহণ করতেন) কিন্তু সাদাকা গ্রহণ করতেন না। একবার খায়বারের এক ইহুদী মহিলা তাঁকে একটি ভূনা ছাগল হাদিয়া দিল। তারপর তিনি তা থেকে খেলেন এবং তা থেকে বিশর ইবনু বারা’ও খেলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাত উঠিয়ে নিয়ে বললেন: ’এটি (এই বকরী) আমাকে সংবাদ দিচ্ছে যে, এটি বিষ মিশ্রিত।’ ফলে (তা খেয়ে) বিশর ইবনু বারা’ মৃত্যুবরণ করলেন। তখন তিনি ঐ মহিলার নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন: ’কিসে তোমাকে এ কাজ করতে প্ররোচিত করল? তখন সে বলল, যদি আপনি নবী হন, তবে এটি আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর যদি আপনি কোন বাদশাহ্ হন, তবে (আপনার মৃত্যু হবে ফলে) আপনার কবল থেকে লোকদেরকে আমি রেহাই দিলাম।
তাই তিনি তাঁর অসুস্থতার সময় বলতেন: ’খায়বারে যে খাদ্য আমি খেয়েছিলাম তা আজও আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। এখন এটি আমার প্রাণ ধমনি (কলিজা) ছিঁড়ে ফেলছে।’[1]
[1] তাহক্বীক্ব: এর সনদ হাসান, তবে এটি মুরসাল।
তাখরীজ: আবু দাউদ ৪৫১১, ৪৫১২; বাইহাকী, দালাইল ৪/২৬২; ইবনু সা’দ, তাবাকাত ১/১১৩-১১৪।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
নবী মুহাম্মদ যে বিষ খানিকটা মুখে দিয়ে ফেলেছিলেন, সেটি যে তার শরীরে প্রবেশ করেছিল এবং তার শারীরিক ক্ষতি হয়েছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় আরেকটি সহিহ হাদিসে। তার শরীরে পরিষ্কার বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। একজন প্রখ্যাত সাহাবীর সহিহ হাদিস অনুসারে, তিনি নবীর আলজিহবা এবং তালুতে এরপর থেকে বিষের ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করতেন [9] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৪০/ সালাম
পরিচ্ছেদঃ ১৮. বিষ
৫৫১৭। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ইয়াহুদী মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বিষ মেশানো বকরীর গোশত নিয়ে এল। তিনি তা থেকে (কিছু) খেলেন। পরে তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসা হল। তিনি তাকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করলে সে বলল, আমি আপনাকে মেরে ফেলার ইচ্ছা করেছিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ এ ব্যাপারে তোমাকে কিংবা তিনি বললেনঃ আমার উপরে ক্ষমতা দিবেন এমন নয়। তারা (সাহাবীগণ) বললেন, আমরা কি তাকে কতল করে ফেলব? তিনি বললেন, না। রাবী বলেন, এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলজিভ ও তালুতে (তার ক্রিয়া) আমি প্রত্যক্ষ করতাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
হাদিসটি পাবেন সহিহ মুসলিম গ্রন্থে [10]
এই একই হাদিস আপনি পাবেন সুনান আবু দাউদ শরীফেও [11] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫০৮। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা জনৈকা ইয়াহুদী নারী বিষ মিশ্রিত একটি ভূনা ছাগী নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে উপস্থিত হলে তিনি তা থেকে খেলেন। অতঃপর তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত করা হলে তিনি তাকে এ জন্য প্রশ্ন করলেন। সে বললো, আমি আপনাকে হত্যা করার জন্যই এটা করেছি। তিনি বললেন, ‘‘এ ব্যাপারে আল্লাহ তোমাকে সফল হতে দেননি অথবা তিনি বলেছেন, আমার উপর তোমাকে সফল হতে দেননি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন সাহাবীগণ বললেন, একে আমরা হত্যা করবই। তিনি বললেন, না। আনাস (রাঃ) বললেন, আমি সর্বদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আলাজিভে তা (বিষের ক্ষত চিহ্ন) দেখতে পেতাম।(1)
সহীহ।
(1). বুখারী, মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
উল্লেখ্য, সেই ইহুদী নারী নবীকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, যে সে আসলেই নবী হয়ে থাকলে তার কোন ক্ষতিই হবে না। এই কারণে নবী তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করতে পারেন নি, তবে পরে ঠিকই হত্যা করেছিলেন। হাদিসটি পাবেন [12]
তথ্যসূত্র
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৪৪৪৯ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, দশম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৯৬ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিসঃ ৪৫১৩ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিসঃ ৪৫১২ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ ( মিশকাত শরীফ), আধুনিক প্রকাশনী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩১ [↑]
- সিরাতে রাসুলাল্লাহ (সাঃ), অনুবাদ, শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৫৫৬, ৫৫৭ [↑]
- The History of al-Tabari, Vol. 8, page: 124 [↑]
- সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ৬৮ [↑]
- সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিসঃ ৫৫১৭ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ ইবনে মুসলিম আল কুশাইরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০০ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিসঃ ৪৫০৮ [↑]
- সুনান আবু দাউদ, তাহক্বীক আল্লামা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, প্রকাশক- মোঃ জিল্লুর রহমান জিলানী, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬০ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"