30.নবী মুহাম্মদের কি মৃগী রোগ ছিলেন?

ভূমিকা

প্রাচীনকাল থেকেই মানবসভ্যতায় এমন অনেক রোগ রয়েছে, যা সমাজের সাধারণ মানুষ ঠিকভাবে বুঝতে না পারার কারণে আধ্যাত্মিক বা অলৌকিক রূপ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মৃগী রোগ বা এপিলেপ্সি ছিল এমনই একটি ব্যাধি, যা বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। শুধুমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই মৃগী রোগীদেরকে সমাজের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় টিকিয়ে রাখতে তাদেরকে অলৌকিক শক্তির অধিকারী বলে প্রচার করা হতো। মূলত সেগুলো ছিল সমাজের এই ধরণের মানুষদের টিকে থাকার সংগ্রাম।

আমাদের গ্রামাঞ্চলেও এখনো দেখা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন বা স্নায়ুবিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের “জ্বীনের আছর” বা “কালী ভর করেছে” বলে গণ্য করা হয়। এই প্রথাটি এক সময় সমাজে রোগীদের প্রতি অত্যাচার কমানোর একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কারণ, মানসিক বা স্নায়ুবিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে অজ্ঞতা থাকায়, তাদেরকে অপমান করা, নির্যাতন করা, ঢিল ছোড়া কিংবা রাস্তা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু, যখনই তাদেরকে “ঈশ্বরের দূত” বা “অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন” বলে ঘোষণা করা হত, তখন সমাজ তাদের প্রতি নিন্দার পরিবর্তে শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠত। সমাজের সাধারণ মানুষ এক ধরণের শ্রদ্ধা বা ভয়ের চোখে তাদের দেখতে শুরু করতো, যার ফোলে তাদের জীবন যাত্রা একটু সহজ হতো।

ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদের জীবন নিয়ে নানা ধরণের বিতর্ক রয়েছে। তার প্রাথমিক জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অনেকেই তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করতেন, অপমান করতেন এবং পাগল বলে কটাক্ষ করতেন। জীবনের প্রথম প্রেম উম্মে হানীকে বিয়ে করতে যাওয়ায় উম্মে হানীর পিতা তার আপন চাচা আবু তালিব তাকে বেশ অপমানই করে। মুহাম্মদের জীবনীতে ওহী নাজিলের সময় কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ইসলামের ইতিহাস ও হাদিস গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ওহী নাজিলের সময় প্রচণ্ড ঘামতেন, তীব্র শারীরিক কষ্ট অনুভব করতেন, ক্লান্ত হয়ে যেতেন, কখনও কখনও অজ্ঞান হয়ে যেতেন এমনকি, উটের মতো আওয়াজ করতেন। এই লক্ষণগুলো কি স্নায়বিক ব্যাধি এপিলেপ্সির (Epilepsy) সাথে সম্পর্কিত হতে পারে? আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে এই প্রশ্নটি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এই প্রবন্ধে আমরা হাদিসে বর্ণিত লক্ষণসমূহ এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে সেগুলোর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা প্রদান করবো। এই লেখাটির উদ্দেশ্য এটি নয় যে, মুহাম্মদকে মৃগী রোগে আক্রান্ত প্রমাণ করা কিংবা পাগল বলা। শুধুমাত্র লক্ষণগুলো পর্যালোচনা করে সেরকম সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করাই এই লেখাটির উদ্দেশ্য।

এপিলেপ্সি কী এবং কেন হয়?

এপিলেপ্সি হলো এক ধরনের স্নায়ুবিক ব্যাধি, যেখানে মস্তিষ্কের কোষগুলোর মাঝে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়, যার ফলে রোগীর শরীরে খিঁচুনি বা অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া দেখা দেয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বারবার খিঁচুনি হওয়া। সাধারণত, মস্তিষ্কের কোষগুলো নির্দিষ্ট একটি বিন্যাস অনুসারে সংকেত আদান-প্রদান করে, তবে এপিলেপ্সির ক্ষেত্রে এই সংকেতের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হয়। ফলে রোগী কিছু সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, কখনও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং শরীর শক্ত বা কাঁপতে থাকে।

এপিলেপ্সির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে জন্মগত বা জেনেটিক সমস্যা, মস্তিষ্কে আঘাত, সংক্রমণ, স্ট্রোক, টিউমার বা অন্যান্য স্নায়ুবিক রোগ উল্লেখযোগ্য। কিছু ক্ষেত্রে, মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব, প্রসবকালীন জটিলতা, দীর্ঘমেয়াদী অ্যালকোহল বা মাদকাসক্তি, বা উচ্চ জ্বর থেকেও এপিলেপ্সি হতে পারে। এছাড়া, টেম্পোরাল লোব এপিলেপ্সি (Temporal Lobe Epilepsy – TLE) নামে একটি বিশেষ ধরণ রয়েছে, যেখানে রোগী আধ্যাত্মিক অনুভূতি, হ্যালুসিনেশন বা অলৌকিক কিছু দেখার অনুভূতি লাভ করতে পারে।

এপিলেপ্সি সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য না হলেও, চিকিৎসার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অ্যান্টি-এপিলেপ্টিক ওষুধ (Antiepileptic Drugs – AEDs) এই রোগের চিকিৎসার প্রধান মাধ্যম, যা মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক সংকেত প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিছু ক্ষেত্রে, নিউরোসার্জারি, কেটোজেনিক ডায়েট বা ভেগাস নার্ভ স্টিমুলেশন (VNS) ব্যবহৃত হয়, যা খিঁচুনির মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা মেনে চললে এপিলেপ্সি রোগীরা প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।


এপিলেপ্সি (Epilepsy) এবং টনিক-ক্লোনিক সিজার

এপিলেপ্সি স্নায়বিক ব্যাধি, যা স্নায়ুতন্ত্রের অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে খিঁচুনি (সিজার) সৃষ্টি করে। বিশেষত, টনিক-ক্লোনিক সিজার এর ক্ষেত্রে এই ধরণের শব্দ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেন টনিক-ক্লোনিক সিজারের সময় এই শব্দ হতে পারে?


টনিক (Tonic) পর্যায়:

  • এই পর্যায়ে ব্যক্তির সমস্ত পেশি হঠাৎ শক্ত হয়ে যায়, শ্বাসনালীর পেশিও সংকুচিত হয়।
  • শ্বাসনালী বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে গলা দিয়ে গভীর গম্ভীর শব্দ বের হতে পারে।
  • অনেক ক্ষেত্রে এটি উটের গর্জনের মতো শোনায়।

ক্লোনিক (Clonic) পর্যায়:

  • শরীরে ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি শুরু হয়, যা কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
  • এই সময় ব্যক্তি সম্পূর্ণ অজ্ঞান থাকেন এবং কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না।

পরবর্তী (Postictal) পর্যায়:

  • ব্যক্তি ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পান, কিন্তু কিছুক্ষণ বিভ্রান্ত থাকেন।
  • কিছু ক্ষেত্রে মুখ বা জিহ্বা কামড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে।
  • প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা (incontinence) হতে পারে।

এটি কি এপিলেপ্সির লক্ষণ? যদি উটের মতো শব্দটি খিঁচুনি শুরুর ঠিক আগে বা পরে ঘটে, এবং এর সাথে খিঁচুনি, জ্ঞান হারানো বা শরীর শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ থাকে, তাহলে এটি এপিলেপ্সির লক্ষণ হতে পারে।


সিনকোপ (Syncope) বা মূর্ছা যাওয়া

সিনকোপ হলো অস্থায়ীভাবে রক্তচাপ কমে যাওয়া বা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। এটি সাধারণত কম বিপজ্জনক হলেও কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর হতে পারে।

✔️ কেন সিনকোপের সময় উটের মতো শব্দ হতে পারে?

  • রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে ব্রেনের অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
  • এর ফলে শ্বাসনালী সাময়িকভাবে শিথিল বা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
  • এই অবস্থায় শ্বাস নিতে গিয়ে গলা দিয়ে গুরুগম্ভীর শব্দ বের হতে পারে।

✔️ সিনকোপের সাধারণ কারণ:
🔹 দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে
🔹 অতিরিক্ত গরমে বা পানিশূন্যতার কারণে
🔹 হঠাৎ দাঁড়ালে (Orthostatic Hypotension)
🔹 হৃদরোগের কারণে

এটি এপিলেপ্সির থেকে কীভাবে আলাদা?

  • সিনকোপের সময় শরীরে কোনো ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি হয় না।
  • ব্যক্তির জ্ঞান ফিরে আসার পরও তিনি সাধারণত তেমন বিভ্রান্ত থাকেন না।
  • জিহ্বা কামড়ানোর সম্ভাবনা কম।

স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)

যদি কেউ ঘুমের মধ্যে বা অজ্ঞান অবস্থায় গুরুগম্ভীর শব্দ করেন, তাহলে এটি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার (OSA) কারণে হতে পারে।

কেন এই শব্দ হয়?

  • স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ঘুমের সময় শ্বাসনালীর পেশিগুলো শিথিল হয়ে যায় এবং শ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়।
  • এ কারণে ব্যক্তির শ্বাস নেওয়ার সময় গুরুগম্ভীর বা গম্ভীর আওয়াজ হতে পারে, যা অনেক সময় উটের গর্জনের মতো শোনায়।
  • এটি বিশেষ করে অতিরিক্ত ওজনধারী ব্যক্তি বা যারা নাক ডাকে, তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

চিহ্নিত করার উপায়:

  • রাতে নাক ডাকা
  • দিনের বেলা ক্লান্তি অনুভব করা
  • বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া
  • রাতে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি হওয়া

এপিলেপ্সির কয়েকটি উদাহরণ

আসুন এপিলেপ্সির কিছু উদাহরণ দেখে নিই। একইসাথে কীভাবে এরকম রোগীদের সাহায্য করতে হবে, সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক,


ওহী নাজিলের সময়কার লক্ষণসমূহ

এবারে আসুন উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলোর সাথে নবী মুহাম্মদের জীবনের বেশ কিছু ঘটনার সম্পর্ক আছে কিনা যাচাই করা যাক।

১. ওহী নাজিলের সময় প্রচণ্ড ঘাম ঝরা

হাদিস থেকে জানা যায়, ওহী নাজিলের সময়ে প্রচণ্ড ঘেমে যেতেন নবী। এমনকি, তীব্র শীতের মধ্যে তার মুখ থেকে ঘাম ঝরে পড়তো। [1] [2] [3] [4]

🔎 বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: এপিলেপ্সির আক্রমণের (Seizure) সময় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষ করে অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম প্রভাবিত হলে প্রচণ্ড ঘাম হতে পারে।

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১/ ওয়াহ্‌য়ীর সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১/২. পরিচ্ছেদ নাই।
. উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন, ’হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট ওয়াহী কিরূপে আসে?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ [কোন কোন সময় তা ঘণ্টা বাজার মত আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হতেই মালাক (ফেরেশতা) যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই, আবার কখনো মালাক মানুষের রূপ ধারণ করে আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই।] ’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি তীব্র শীতের সময় ওয়াহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওয়াহী শেষ হলেই তাঁর ললাট হতে ঘাম ঝরে পড়ত। (৩২১৫; মুসলিম ৪৩/২৩, হাঃ ২৩৩৩, আহমাদ ২৫৩০৭, ২৬২৫৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ ওহীর সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩ – ৪
। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সর্বপ্রথম যে ওহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি হেরা’র গুহায় নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া এইভাবে সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন।
তারপর খাদীজা (রাঃ)-এর কাছে ফিরে এসে আবার অনুরূপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনিভাবে হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে ওহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, পড়ুন’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “আমি বললাম, আমি পড়িনা’। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন’। আমি বললামঃ আমি তো পড়ি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হল। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পড়ুন’। আমি জবাব দিলাম, আমিতো পড়িনা’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়ুন আর আপনার রব্ মহামহিমান্বিত।” (৯৬: ১-৩)
তারপর এ আয়াত নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন। তাঁর অন্তর তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজা বিন্‌ত খুওয়ালিদের কাছে এসে বললেন, আমাকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দাও। ’ তাঁরা তাঁকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় দূর হল। তখন তিনি খাদীজা (রাঃ) এর কাছে সকল ঘটনা জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি নিজের উপর আশংকা বোধ করছি। খাদীজা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র কসম, কক্ষনো না। আল্লাহ্ আপনাকে কক্ষনো অপমানিত করবেন না। আপনিতো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।
এরপর তাঁকে নিয়ে খাদীজা (রাঃ) তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নাওফিল ইবনু আবদুল আসা’দ ইবনু আবদুল উযযার কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষা লিখতে জানতেন এবং আল্লাহ্‌র তওফীক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইনজীল থেকে অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। ওয়ারাকা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাতিজা! তুমি কী দেখ?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেখেছিলেন, সবই খুলে বললেন।
তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেন, ইনি সে দূত যাঁকে আল্লাহ্ মূসা আলাইহিস সালাম এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কাওম তোমাকে বের করে দেবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাঁরা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অতীতে যিনই তোমার মত কিছু নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করব। এর কিছুদিন পর ওয়ারাকা (রাঃ) ইন্তেকাল করেন। আর ওহী স্থগিত থাকে।
ইবনু শিহাব (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) ওহী স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ একদা আমি হেঁটে চলেছি, হঠাৎ আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে চোখ তুলে তাকালাম। দেখলাম, সেই ফিরিশতা, যিনি হেরায় আমার কাছে এসেছিলেন, আসমান ও যমিনের মাঝখানে একটি কুরসীতে বসে আছেন। এতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তৎক্ষণাৎ আমি ফিরে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তারপর আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন, হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, সতর্কবানী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন। অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন (৭৪: ১-৪)। এরপর ব্যাপকভাবে পর পর ওহী নাযিল হতে লাগল।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ও আবূ সালেহ (রহঃ) অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। হেলাল ইবনু রাদদাদ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকেও অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। ইউনুস ও মা’মার فؤاده এর স্থলে بَوَادِرُهُ শব্দ উল্লেখ করেছেন।
তাখরীজ: ( বুখারীঃ তা.পা ৩, ৩৩৯২, ৪৯৫৩, ৪৯৫৫, ৪৯৫৬, ৪৯৫৭, ৬৯৮২; মুসলিম ১/৭৩ হাঃ ১৬০, আহমদ ২৬০১৮ ( আ.প্রঃ ৩, ইঃফাঃ ৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

মৃগী
মৃগী 1

২. ওহী নাজিলের পরে ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ততা

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) হাদিস নং ৪৩০৮ এ বলা হয়েছে, “রসূলুল্লাহ (সা.) এর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হতো, তখন তাকে ক্লান্ত মনে হতো এবং তার মুখমণ্ডলে ক্লান্তির চিহ্ন ফুটে উঠত।”

🔎 বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: এপিলেপ্সি আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত খিঁচুনি (Seizure) হওয়ার পর প্রচণ্ড ক্লান্ত বোধ করেন, একে Postictal State বলা হয়। এটি খিঁচুনি পরবর্তী অবস্থা যেখানে ব্যক্তির মস্তিষ্ক পুনরায় স্বাভাবিক হতে কিছুক্ষণ সময় নেয়।

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩০। অপরাধের (নির্ধারিত) শাস্তি
পরিচ্ছেদঃ ৩. ব্যভিচারের শাস্তি
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৪৩০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯০
৪৩০৮-(১৩/…) মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, ইবনু বাশশার ও মুসান্না (রহঃ) ….. উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর যখন ওয়াহী অবতীর্ণ হতো, তখন তাকে ক্লান্ত মনে হতো এবং তার মুখমণ্ডলে ক্লান্তির চিহ্ন ফুটে উঠত। বর্ণনাকারী বলেন, একদা যখন তার ওপর ওয়াহী অবতীর্ণ হলো তখন তার অবস্থা ঐরূপ হল। এরপর যখন অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা আমার কাছ হতে শিক্ষা গ্রহণ কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মহিলাদের জন্য একটি পন্থা বের করে দিয়েছেন। যদি কোন বিবাহিত পুরুষ কোন বিবাহিতা মহিলার সাথে এবং কোন অবিবাহিত পুরুষ কুমারী মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে, তবে বিবাহিত ব্যক্তিকে একশ’ বেত্ৰাঘাত করবে, এরপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবে। আর অবিবাহিত পুরুষ বা মহিলাকে একশ’ বেত্ৰাঘাত করবে, এরপর তাদেরকে এক বছরের জন্য নির্বাসন দেবে (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৪২৬৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উবাদা ইব্‌নুস সামিত (রাঃ)

৩. ওহী নাজিলের সময়ে সবাই অজ্ঞান হয়ে যেতো

সুনান আবু দাউদের এক হাদিসে (৪৬৬৩) বলা হয়েছে, “যখন আল্লাহ্ তা’আলা ওহী প্রেরণের জন্য কথা বলেন, তখন আসমানের অধিবাসীরা এরূপ শব্দ শোনে, যা শুনে তারা সবাই বেহুশ হয়ে পড়ে।”

🔎 বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: এপিলেপ্সির আক্রমণের সময় রোগী সম্পূর্ণ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন, এবং এটা ঘটতে পারে Generalized Tonic-Clonic Seizure এর ক্ষেত্রে।

সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ২১. কুরআন সম্পর্কে।
৪৬৬৩. আহমদ ইবন আবূ সুরায়হ (রহঃ) ….. আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ্‌ তা’আলা ওয়াহী প্রেরণের জন্য কথা বলেন, তখন এক আসমানের অধিবাসী অন্য আসমান থেকে এরূপ শব্দ শোনে যে, যেমন সাফা পাহাড়ের উপর লোহার শিকল টানলে শব্দ হয়। যা শুনে তারা সবাই বেহুশ হয়ে পড়ে এবং জিবরীল (আঃ) তাদের কাছে না আসা পর্যন্ত তারা এ অবস্থায় থাকে। এরপর জিবরীল (আঃ) যখন তাদের কাছে আসে, তখন তারা জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়ে বলেঃ হে জিবরীল! আপনার রব কি বলেছেন? তিনি বলেনঃ তিনি সত্য বলেছেনঃ। একথা শুনে সকল ফেরেশতা বলতে থাকেঃ সত্য বলেছেন, সত্য বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ)

৪. ওহী নাজিলের সময় উটের মত আওয়াজ করা

সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, “ওহী নাজিলের সময় নবী (সা.) উটের মতো গুরুগুরু শব্দ করতেন।”

🔎 বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: Tonic-Clonic Seizure-এর সময় রোগীর গলা ও শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যেতে পারে, ফলে গলার স্বর পরিবর্তিত হয় এবং অদ্ভুত আওয়াজ বের হয়। এটি Epileptic Cry নামে পরিচিত, যা অনেক সময় উটের গর্জনের মতো শোনায়।

Reference : Sahih al-Bukhari 1789
In-book reference : Book 26, Hadith 16
USC-MSA web (English) reference : Vol. 3, Book 27, Hadith 17
(10)Chapter: The same ceremonies in ‘Umra, as in Hajj(10)باب يَفْعَلُ فِي الْعُمْرَةِ مَا يَفْعَلُ فِي الْحَجِّ
Narrated Safwan bin Ya`la bin Umaiya from his father who said:
“A man came to the Prophet (ﷺ) while he was at Ji’rana. The man was wearing a cloak which had traces of Khaluq or Sufra (a kind of perfume). The man asked (the Prophet (ﷺ) ), ‘What do you order me to perform in my `Umra?’ So, Allah inspired the Prophet (ﷺ) divinely and he was screened by a place of cloth. I wished to see the Prophet (ﷺ) being divinely inspired. `Umar said to me, ‘Come! Will you be pleased to look at the Prophet (ﷺ) while Allah is inspiring him?’ I replied in the affirmative. `Umar lifted one corner of the cloth and I looked at the Prophet (ﷺ) who was snoring. (The sub-narrator thought that he said: The snoring was like that of a camel). When that state was over, the Prophet (ﷺ) asked, “Where is the questioner who asked about `Umra? Put off your cloak and wash away the traces of Khaluq from your body and clean the Sufra (yellow color) and perform in your Umra what you perform in your Hajj (i.e. the Tawaf round the Ka`ba and the Sa`i between Safa and Marwa). “

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২২/ হাজ্জ (হজ্জ/হজ)
পরিচ্ছেদঃ ১১২১. হজ্জে যে কাজ করা হয় ‘উমরাতেও তাই করবে
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৬৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৮৯
১৬৭৪। আবূ নু’আইম (রহঃ) … ই’য়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জি’ররানাতে ছিলেন। এ সময় জুব্বা পরিহিত এক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, আপনি ’উমরাতে আমাকে কি কাজ করার নির্দেশ দেন? লোকটির জুব্বাতে খালূক বা হল্‌দে রঙের দাগ ছিল। এ সময় আল্লাহ তা’আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অহী নাযিল করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেওয়া হল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ’উমর (রাঃ) কে বললাম, আল্লাহ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে চাই।
’উমরা (রাঃ) বললেন, এসো, আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় তুমি কি তাঁকে দেখতে আগ্রহী? আমি বললাম, হাঁ। তারপর ’উমর (রাঃ) কাপড়ের একটি কোণ উঁচু করে ধরলেন। আমি তাঁর দিকে নজর করলাম।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওয়াজ করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলছিলেন, উটের আওয়াজের মত আওয়াজ। এ অবস্থা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দূরীভুত হলে তিনি বললেনঃ ’উমরা সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার থেকে জুব্বাটি খুলে ফেল, খালুকের চিহ্ন ধুয়ে ফেল এবং হলদে রঙ পরিষ্কার করে নাও। আর তোমার হাজ্জে যা করেছ ’’উমরাতে তুমি তা-ই করবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইয়ালা ইবন উমাইয়া (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৬/ উমরাহ
পরিচ্ছেদঃ ২৬/১০. হজ্জে যে সকল কাজ করতে হয় ‘উমরাতেও তাই করবে।
১৭৮৯. ই‘য়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জি‘রানাতে ছিলেন। এ সময় জুববা পরিহিত এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললেন, আপনি ‘উমরাহতে আমাকে কী কাজ করার নির্দেশ দেন? লোকটির জুববাতে খালূক বা হল্দে রঙের দাগ ছিল। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর ওয়াহী নাযিল করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেয়া হল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ তাঁর নবীর প্রতি ওয়াহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে চাই। ‘উমার (রাঃ) বললেন, এসো, আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি ওয়াহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় তুমি কি তাঁকে দেখতে আগ্রহী? আমি বললাম, হাঁ। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) কাপড়ের একটি কোণ উঁচু করে ধরলেন। আমি তাঁর দিকে নজর করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওয়াজ করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলছিলেন, উটের আওয়াজের মত আওয়াজ। এ অবস্থা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে দূরীভূত হলে তিনি বললেনঃ ‘উমরাহ সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার হতে জুববাটি খুলে ফেল, খালূকের চিহ্ন ধুয়ে ফেল এবং হলদে রং পরিষ্কার করে নাও। আর তোমার হাজ্জে যা করেছ ‘উমরাহতে তুমি তা-ই করবে। (১৫৩৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৬৬২. ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৭১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ই‘য়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ)

৫. নবীর মুখ বা চেহারা লাল হওয়া

সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় (২৬৯০) উল্লেখ আছে, “ওহী আসার সময় নবী (সা.)-এর চেহারা লাল হয়ে যেত এবং মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হতো।”

🔎 বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: এপিলেপ্সি আক্রান্ত ব্যক্তির Autonomic Seizure হলে রক্তচাপ পরিবর্তিত হয় এবং মুখ লাল হয়ে যেতে পারে।

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৬। হজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ১. হজ্জ ও উমরার ইহরাম অবস্থায় কী ধরনের পোশাক পরিধান করা জায়িয ও কী ধরনের পোশাক নাজায়িয এবং ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধির ব্যবহার নিষিদ্ধ
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ২৬৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৮০
২৬৯০-(৮/…) যুহায়র ইবনু হারব, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আলী ইবনু খাশরম (রহিমাহুমাল্লাহ) ….. ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ (রাযিঃ) উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিঃ) কে বলতেন, আহা! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যখন ওয়াহী নাযিল হয়, আমি যদি সে অবস্থায় তাকে দেখতে পেতাম! একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিরানায় অবস্থান করছিলেন এবং একটি কাপড়ের সাহায্যে তার উপর ছায়া বিস্তার করা হয়েছিল। তার সঙ্গে তার কিছু সংখ্যক সাহাবাও ছিলেন- যাদের মধ্যে উমর (রাযিঃ)-ও ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সুগন্ধিযুক্ত জুব্বাহ পরিহিত অবস্থায় তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! এক ব্যক্তি জুব্বায় সুগন্ধি মেখে তা পরিহিত অবস্থায় উমরার ইহরাম বেঁধেছে, তার সম্পর্কে আপনার কী অভিমত? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন, অতঃপর নীরব রইলেন। এ সময় তার উপর ওয়াহী আসল।
উমার (রাযিঃ) হাতের ইশারায় ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ (রাযিঃ) কে বললেন, এদিকে আসো। ইয়া’লা (রাযিঃ) এসে নিজের মাথা (কাপড়ের মধ্যে) ঢুকিয়ে দিলেন (এবং দেখলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করেছে এবং তার মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে। অতঃপর এ অবস্থা দূরীভূত হল এবং তিনি বললেন, এই মাত্র যে ব্যক্তি আমার নিকট উমরাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিল- সে কোথায়? লোকটিকে খুঁজে এনে তার নিকট উপস্থিত করা হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার সুগন্ধি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং জুব্বাহ খুলে ফেল। অতঃপর যে নিয়মে হাজ্জ (হজ্জ/হজ) কর, ঠিক সে নিয়মে ’উমরাহ কর। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬৬৭, ইসলামীক সেন্টার ২৬৬৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইয়ালা ইবন উমাইয়া (রাঃ)

মানসিক সমস্যার অন্যান্য লক্ষণসমূহ

১. লজ্জায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলার প্রবণতা

মুহাম্মদের বাল্যকালের একটি ঘটনা থেকে জানা যায়, কাবা গৃহ পুনর্নির্মান করার সময়ে একবার সবার সামনে নবীর লুঙ্গিটি তার চাচা আব্বাস খুলে নিয়েছিল। নবী মুহাম্মদ লজ্জায় অপমানে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। এ থেকে বোঝা যায়, খুব কড়া আবেগ নবী সহ্য করতে পারতেন না, জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন [5]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৩/ আনসারগণ (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর মর্যাদা
পরিচ্ছদঃ ৬৩/২৫. কা‘বা নির্মাণ।
৩৮২৯. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কা’বা গৃহ পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আববাস (রাঃ) পাথর বয়ে আনছিলেন। ‘আববাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, তোমার লুঙ্গিটি কাঁধের উপর রাখ, পাথরের ঘর্ষণ হতে তোমাকে রক্ষা করবে। (লুঙ্গি খুলতেই) তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। তাঁর চোখ দু’টি আকাশের দিকে নিবিষ্ট ছিল। তাঁর চেতনা ফিরে এল, তখন তিনি বলতে লাগলেন, আমার লুঙ্গি, আমার লুঙ্গি। তৎক্ষণাৎ তাঁর লুঙ্গি পরিয়ে দেয়া হল। (৩৬৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫৪৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

২. নবী মুহাম্মদের আত্মহত্যাপ্রবণতা

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, আল্লাহর ওহী আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ তার সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি ছিল। প্রচণ্ড মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে এরকম হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আধুনিক সময়ে উনি জন্ম নিলে একজন ভাল মনোরোগ বিশারদ হয়তো উনাকে সুচিকিৎসা দিতে পারতেন।

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯১/ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা
তাওহীদ পাবলিকেশন
এরপর কিছু দিনের মধ্যেই ওরাকার মৃত্যু হয়। আর কিছু দিনের জন্য ওয়াহীও বন্ধ থাকে। এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থার কারণে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি আমরা এ সম্পর্কে তার থেকে জানতে পেরেছি যে, তিনি পর্বতের চূড়া থেকে নিচে পড়ে যাবার জন্য একাধিকবার দ্রুত সেখানে চলে গেছেন। যখনই নিজেকে ফেলে দেয়ার জন্য পর্বতের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিবরীল (আঃ) তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে বলতেন, হে মুহাম্মাদ! নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসূল। এতে তাঁর অস্থিরতা দূর হত এবং নিজ মনে শান্তিবোধ করতেন। তাই সেখান থেকে ফিরে আসতেন। ওয়াহী বন্ধ অবস্থা যখন তাঁর উপর দীর্ঘ হত তখনই তিনি ঐরূপ উদ্দেশে দ্রুত চলে যেতেন। যখনই তিনি পর্বতের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিবরীল (আঃ) তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে আগের মত বলতেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

৩ দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেতেন নবী

ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেতেন মুহাম্মদ। সেই সময়ে এই উপকথা প্রচলিত ছিল যে, জুলকারনাইন এক প্রাচীর বানিয়ে রেখেছে, যার ঐপাশে মানুষের চাইতে হাজার গুণ অধিক সংখ্যক হিংস্র মানুষের মত কিছু প্রাণী আছে। সেই প্রাচীরের কারণে সেই প্রাণীগুলো আসতে পারছে না। প্রাচীর ভেঙ্গে গেলেই তারা পৃথিবীর মানুষদের আক্রমণ করবে। এই প্রাণীগুলোকে বলা হয় ইয়াজুজ মাজুজ। আধুনিক গুগল আর্থের যুগে এইসব শুনলে বাচ্চারা মজা পাবে বটে, কিন্তু এগুলো শিশুদের রূপকথা হিসেবেই ভাল [6]

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
পরিচ্ছেদঃ ২৩. ইয়াজুজ ও মাজুজের আত্মপ্রকাশ
২১৮৭। যাইনাব বিনতু জাহশ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কোন একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম হতে জাগ্রত হলেন, তখন তার মুখমণ্ডল রক্তিমবর্ণ ধারণ করেছিল। তিনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে লাগলেন। তা তিনবার বলার পর তিনি বললেনঃ ঘনিয়ে আসা দুর্যোগে আরবদের দুর্ভাগ্য। আজ ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাচীর এতটুকু পরিমাণ ফাক হয়ে গেছে। এই বলে তিনি তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে দশ সংখ্যার বৃত্ত করে ইঙ্গিত করেন। যাইনাব (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমাদের মধ্যে সৎ লোক থাকাবস্থায়ও কি আমরা হবো? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পাপাচারের বিস্তার ঘটবে।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৯৫৩), বুখারী, মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ)

৪ স্মৃতি হারিয়ে ফেলার সমস্যা

কিছু হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদের একসময় কিছু সমস্যা হয়। যার ফলে তিনি মনে মনে ভাবতেন যে, তিনি তার স্ত্রীদের কাছে গমন করেছেন, অথচ তিনি আসলে যান নি। এমন কিছু কাজ করেছেন বলে উনার মনে হতো, আসলে উনি সেগুলো করেন নি। পরে তিনি এর জন্য যাদুকে দায়ী করেন [7] [8]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/৪৯. যাদুর চিকিৎসা করা যাবে কি না?
ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, আমি সা‘ঈদ ইবনু মুসায়্যিব (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ জনৈক ব্যক্তিকে যাদু করা হয়েছে অথবা যাদু ক’রে) তার ও তার স্ত্রীর মধ্যে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, এমন ব্যক্তিকে যাদু মুক্ত করা যায় কিনা অথবা তার থেকে যাদুর বন্ধন খুলে দেয়া বৈধ কিনা? সা‘ঈদ বললেনঃ এতে কোন ক্ষতি নেই। কেননা, তারা এর দ্বারা তাকে ভাল করতে চাইছে। আর যা কল্যাণকর তা নিষিদ্ধ নয়।
৫৭৬৫. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর একবার যাদু করা হয়। এমন অবস্থা হয় যে, তাঁর মনে হতো তিনি বিবিগণের কাছে এসেছেন, অথচ তিনি আদৌ তাঁদের কাছে আসেননি। সুফ্ইয়ান বলেনঃ এ অবস্থা যাদুর চরম প্রতিক্রিয়া। বর্ণনাকারী বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং বলেনঃ হে ‘আয়িশাহ! তুমি জেনে নাও যে, আমি আল্লাহর কাছে যে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম তিনি আমাকে তা বলে দিয়েছেন। স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক এলেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং আরেকজন আমার পায়ের নিকট বসলেন। আমার কাছের লোকটি অন্যজনকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ লোকটির কী অবস্থা? দ্বিতীয় লোকটি বললেনঃ একে যাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বললেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বললেনঃ লাবীদ ইবনু আ‘সাম। এ ইয়াহূদীদের মিত্র যুরায়ক্ব গোত্রের একজন, সে ছিল মুনাফিক।
প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেনঃ কিসের মধ্যে যাদু করা হয়েছে? দ্বিতীয় ব্যক্তি উত্তর দিলেনঃ চিরুনী ও চিরুনী করার সময় উঠে যাওয়া চুলের মধ্যে। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেনঃ সেগুলো কোথায়? উত্তরে দ্বিতীয়জন বললেনঃ পুং খেজুর গাছের জুবের মধ্যে রেখে ‘যারওয়ান’ কূপের ভিতর পাথরের নীচে রাখা আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কূপের নিকট এসে সেগুলো বের করেন এবং বলেনঃ এইটিই সে কূপ, যা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। এর পানি মেহদী মিশ্রিত পানির তলানীর মত, আর এ কূপের পার্শ্ববর্তী) খেজুর গাছের মাথাগুলো দেখতে) শয়তানের মাথার ন্যায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ সেগুলো তিনি সেখান থেকে বের করেন। ‘আয়িশাহ বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম, তিনি আমাকে আরোগ্য দান করেছেন; আর আমি মানুষকে এমন বিষয়ে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। (৩১৭৫; মুসলিম ৩৯/১৭, হাঃ ২১৮৯, আহমাদ ২৪৩৫৪) (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)

আল-লুলু ওয়াল মারজান
৩৯/ সালাম
পরিচ্ছেদঃ ৩৯/১৭. যাদু।
১৪১২. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর একবার যাদু করা হয়। এমন অবস্থা হয় যে, তাঁর মনে হতে তিনি বিবিগণের কাছে এসেছেন, অথচ তিনি আদৌ তাদের কাছে আসেননি। সুফইয়ান বলেন, এ অবস্থা খুব যাদুর চরম প্রতিক্রিয়া। বৰ্ণনাকারী বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং বলেনঃ হে আয়িশা! তুমি অবগত হও যে, আমি আল্লাহর কাছে যে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম তিনি আমাকে তা বাতলিয়ে দিয়েছেন। (স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক এলেন। তাদের একজন আমার মাথার নিকট এবং অন্যজন আমার পায়ের নিকট বসলেন। আমার কাছের লোকটি অন্যজনকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ লোকটির কী অবস্থা? দ্বিতীয় লোকটি বললেনঃ একে যাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বললেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বললেনঃ লবীদ ইবনু আসাম। এ ইয়াহুদীদের মিত্র সুরাইক গোত্রের একজন; সে ছিল মুনাফিক।
প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন। কিসের মধ্যে যাদু করা হয়েছে? দ্বিতীয় ব্যক্তি উত্তর দিলেন চিরুনী ও চিরুনী করার সময় উঠে যাওয়া চুলের মধ্যে। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেনঃ সেগুলো কোথায়? উত্তরে দ্বিতীয়জন বললেনঃ পুং খেজুর গাছের জুবের মধ্যে রেখে যারওয়ান নামক কূপের ভিতর পাথরের নীচে রাখা আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কূপের নিকট এসে সেগুলো বের করেন এবং বলেনঃ এইটিই সে কূপ, যা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। এর পানি মেহদী মিশ্রিত পানির তলানীর ন্যায়, আর এ কূপের (পার্শবর্তী) খেজুর গাছের মাথাগুলো (দেখতে) শয়তানের মাথার ন্যায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ সেগুলো তিনি সেখান থেকে বের করেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এ কথা প্রচার করে দিবেন না? তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম, তিনি আমাকে শিক্ষা দান করেছেন; আর আমি মানুষকে এমন ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে।
সহীহুল বুখারী, পৰ্ব ৭৬ : চিকিৎসা, অধ্যায় ৪৯, হাঃ ৫৭৬৫; মুসলিম, পর্ব ৩৯ : সালাম, অধ্যায় ১৭, হাঃ ২১৮৯
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)

৫. নবীকে পাথরের সালাম দেয়া

নবীর হ্যালুসিনেশন হতো- রাস্তার পাথরগুলো তাকে সালাম দিচ্ছে। এরকম মানসিক সমস্যা তখন হয়, যখন কেউ একজনকে তেমন পাত্তা দেয় না, বা গুরুত্ব দেয় না। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবার প্রবল আকাঙ্খায় মানুষ তখন এরকম কাল্পনিক বিষয় দেখতে পারে। শিশুদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। কোন শিশুকে যখন কেউ খেলায় নেয় না, বা বন্ধুত্ব করে না, তখন শিশুরা পাথর বা পুতুলের মধ্যে নিজের বন্ধু বা অনুসারী খুঁজে নেয়। অনেক বাচ্চা আবার দাবী করে, তার খেলার পুতুলগুলো নাকি তাদের সাথে কথাও বলে। আমাদের এলাকায় এক পাগল ছিল, তাকে নাকি রাস্তার গাছগুলো সালাম দিতো।

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
৪৪। ফাযীলাত
পরিচ্ছেদঃ ১. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশের ফাযীলাত এবং নুবুওয়াত প্রাপ্তির আগে (তাকে) পাথরের সালাম করা প্রসঙ্গ
৫৮৩৩-(২/২২৭৭) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ….. জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মাক্কায় একটি পাথরকে জানি, যে আমার (নবীরূপে) প্রেরিত হওয়ার আগেও আমাকে সালাম করত; আমি এখনও তাকে সন্দেহাতীতভাবে চিনতে পারি। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৪০, ইসলামিক সেন্টার ৫৭৭১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ)

৬. নবীর জন্য কাঠের খণ্ডের কান্নাকাটি

ইসলামের চরম হাস্যকর সব কল্পকাহিনীর মধ্যে আরও একটি উদ্ভট দাবী হচ্ছে, কাঠের খণ্ড নাকি নবীর জন্য ষাঁড়ের মত কান্নাকাটি করতো। এইসব গল্পকাহিনী এতটাই উদ্ভট এবং হাস্যকর যে, এগুলো ঠাকুরমার ঝুলিকেও হার মানায়। মুমিন পাঠকদের জন্য বলতেই হচ্ছে, কাঠের খণ্ডের কোন কার্যকর মস্তিষ্ক থাকে না বিধায় কাঠের খণ্ডের বোধবুদ্ধি থাকে না। কান্নার জন্য কণ্ঠস্বর, চোখ, নিঃশ্বাস নেয়ার মত ফুসফুস না থাকায় কাঠের খণ্ডের কান্নাকাটি করার কোন সুযোগ নেই। তবে গাঁজার নৌকা যেহেতু পাহাড় ডিঙ্গায়, তাই ইসলামিক গাঁজার এই কাঠ আল্লাহর কুদরতে কাঁদতেই পারে [9]

সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
ভূমিকা
পরিচ্ছেদঃ ৬. মিম্বারের কান্নার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্মানিত করার বিবরণ
৪২. আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমু’আর দিনে মসজিদের একটি কাষ্ঠখণ্ডের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে লোকদের মাঝে খুতবা দিতেন। তারপর এক রোম থেকে একজন লোক এসে বলল, আমি আপনার জন্য একটি কিছু বানিয়ে দিব যার উপরে বসলে মনে হবে যেন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন? তারপর সে তাঁর জন্যে একটি মিম্বার তৈরী করল, যার (নিচের দিকে) দু’টি ধাপ ছিল, আর (উপরের দিকে) তৃতীয় ধাপে তিনি বসতেন। অতঃপর যখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই মিম্বারে বসলেন, তখন কাষ্ঠখণ্ডটি ষাঁড়ের মত আর্তনাদ করতে লাগলো, এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শোকে পুরো মসজিদ প্রকম্পিত হয়ে উঠল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার হতে নেমে সেটির দিকে আসলেন এবং আর্তনাদরত কাষ্ঠখণ্ডটিকে আলিঙ্গন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটিকে আলিঙ্গন করা মাত্র তা শান্ত হয়ে গেল। তারপর তিনি বলেন: ’সেই মহান সত্ত্বার কসম, যার হাতে রয়েছে মুহাম্মাদের প্রাণ, আমি যদি একে আলিঙ্গন না করতাম, তবে অবশ্যই তা কিয়ামত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শোকে এভাবে কাঁদতে থাকত।’ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে দাফন করার নিদের্শ দিলেন, ফলে এটিকে দাফন করে দেয়া হল।[1]
[1] তাহক্বীক্ব: এর সনদ সহীহ।
তাখরীজ: আহমদ, ৩/২২৬; তিরমিযী ৩৬৩১; ইবনু মাজাহ ১৪১৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এই হাদিসটি আসুন আরও বিস্তারিতভাবে জানি আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থ থেকে, [10]

মৃগী 3
মৃগী 5
মৃগী 7
মৃগী 9

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ২ []
  2. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন,, হাদিসঃ ৩ []
  3. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৪৭৫০ []
  4. সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী, ৮ম খণ্ড, আরবি-বাংলা, সহজ তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ উসমান গনী, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২২৪ []
  5. []
  6. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ২১৮৭ []
  7. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৫৭৬৫ []
  8. আল-লুলু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১৪১২ []
  9. সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ৪২ []
  10. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ১৯২- ১৯৫ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"