অনেক মুমিনই ইদানিং নির্যাতিত ইহুদি রমনীর দেয়া বিষাক্ত খাবার খেয়ে নবী মুহাম্মদের এই নির্মম মৃত্যুর বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে দাবী করেন, আল্লাহই নাকি নবীকে শহীদী মৃত্যু দেয়ার জন্য এই ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহই যদি নবীকে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার জন্য নবীকে বিষ খাইয়ে থাকেন, এতে তাহলে সেই ইহুদি নারীর কী অপরাধ? নবীর সাহাবী হযরত বিশরকে হত্যার অপরাধে তাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? নবীকে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার জন্য ঘটনা ঘটালেন আল্লাহ, এই ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে তার দায় তো সম্পূর্ণ আল্লাহর। সেই মহিলাকে কেন তাহলে কতল করা হয়েছিল? একইসাথে বলতে হয়, মুমিনদের এই দাবীটি কোনদিক দিয়েই ধোপে টেকে না৷ কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, নবীর যদি কোন অকল্যাণ হয়, তার জন্য নবীর কৃতকর্মই দায়ী, আল্লাহ নয়। [1]
তোমার কোন কল্যাণ হলে তা হয় আল্লাহর তরফ হতে এবং তোমার যে কোন অকল্যাণ হলে তা হয় তোমার নিজের কারণে এবং আমি তোমাকে মানুষের জন্য রসূলরূপে প্রেরণ করেছি, (এ কথার) সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
— Taisirul Quran
তোমার নিকট যে কল্যাণ উপস্থিত হয় তা আল্লাহর সন্নিধান হতে এবং তোমার উপর যে অকল্যাণ নিপতিত হয় তা তোমার নিজ হতে হয়ে থাকে, এবং আমি তোমাকে মানবমন্ডলীর জন্য রাসূল রূপে প্রেরণ করেছি; এবং আল্লাহর সাক্ষীই যথেষ্ট।
— Sheikh Mujibur Rahman
তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।
— Rawai Al-bayan
যা কিছু কল্যাণ আপনার হয় তা আল্লাহর কাছ থেকে [১] এবং যা কিছু অকল্যাণ আপনার হয় তা আপনার নিজের কারণে [২] এবং আপনাকে আমরা মানুষের জন্য রাসূলরূপে পাঠিয়েছি [৩]; আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন কোরআনের আরও একটি আয়াত পড়ে নেয়া দরকার। মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন [2],
এটা (কোরআন) বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ।
সে (মুহাম্মদ) যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত,
তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম,
অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা/প্রধান ধমনী।
তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।
এবারে আসুন, সেই হাদিসসমূহ দেখে নিই [3] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫১৩। ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত ছিলেন তখন উম্মু মুবাশশির (রাঃ) তাঁকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার রোগ সম্পর্কে কি ভাবছেন? আর আমি আমার ছেলের রোগ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন নই সেই বিষ মেশানো বকরীর গোশত ব্যতীত যা সে খায়বারে আপনার সঙ্গে খেয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমিও ঐ বিষ ছাড়া আমার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নই। এ মুহূর্তে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিচ্ছে।(1)
সনদ সহীহ।
(1). আবূ দাঊদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ্ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ)
আরো কয়েকটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, নবী মুহাম্মদ তার প্রধান ধমনী কেটে দেয়ার মত যন্ত্রণা অনুভব করতেন [4]
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫১২। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া গ্রহণ করতেন কিন্তু সাদাকাহ গ্রহণ করতেন না। বর্ণনাকারী বলেন, খায়বারের এক ইয়াহুদী মহিলা একটি ভুনা বকরীতে বিষ মিশিয়ে তাঁকে হাদিয়া দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আহার করেন এবং লোকজনও আহার করে। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও। কারণ এটি আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, এটি বিষযুক্ত। (বিষক্রিয়ার ফলে) বিশর ইবনুল বারাআত ইবনু মা‘রূর আল-আনসারী (রাঃ) মারা যান। তিনি ইয়াহুদী মহিলাকে ডেকে এনে প্রশ্ন করেনঃ তুমি যা করলে তা করতে তোমাকে কিসে প্ররোচিত করেছে?
সে বললো, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি যা করেছি তাতে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি বাদশাহ হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে পরে তাকে হত্যা করা হলো। অতঃপর তিনি যে ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন সেই সম্পর্কে বলেনঃ আমি সর্বদা সেই লোকমার ব্যথা অনুভব করছি যা আমি খায়বারে খেয়েছিলাম। এই সময়ে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিয়েছে।(1)
হাসান সহীহ।
(1). বুখারী, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
তথ্যসূত্র
- আল কোরআন, সূরা নিসা, আয়াত ৭৯ [↑]
- আল কোরআন, সূরা হাক্কাহঃ ৪৩-৪৭ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৩ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৫১২ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"