মানুষ স্বভাবতই তার জীবনে অসংখ্য ভুল করবে এবং ভুল থেকে শিক্ষা নেবে। তবে, যদি কেউ নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়, তবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে ক্ষমা করা উচিত। নিজের ভুল শুধরে নেয়ার একটি সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। বিশেষ করে, সেই ধরনের পাপ যা অন্য কারও ক্ষতি করেনি, সেক্ষেত্রে ক্ষমা প্রদর্শন করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিস্ট ধর্মের প্রবক্তা যীশুর শিক্ষা এবং কাজের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে তিনি ক্ষমা এবং করুণা প্রদর্শনের পক্ষে ছিলেন। বাইবেলের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ব্যভিচারিণী নারীর ঘটনাটি, যা বাইবেলের নতুন নিয়মে [1] -তে বর্ণিত হয়েছে।
3 সেই সময় ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা, ব্যভিচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছে এমন একজন স্ত্রীলোককে তাঁর কাছে নিয়ে এল৷ তারা সেই স্ত্রীলোককে তাদের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে যীশুকে বলল,
4 ‘গুরু, এই স্ত্রীলোকটি ব্যভিচার করার সময় হাতে নাতেই ধরা পড়েছে।
5 বিধি-ব্যবস্থার মধ্যে মোশি আমাদের বলছেন, এই ধরণের স্ত্রীলোককে যেন আমরা পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলি৷ এখন আপনি এবিষয়ে কি বলবেন?’
6 তাঁকে পরীক্ষা করার ছলেই তারা একথা বলছিল, যাতে তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তারা খুঁজে পায়৷ কিন্তু যীশু হেঁট হয়ে মাটিতে আঙ্গুল দিয়ে লিখতে লাগলেন।
7 ইহুদী নেতারা যখন বার বার তাঁকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, তখন তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে নিস্পাপ সেই প্রথম একে পাথর মারুক।’
8 এরপর তিনি আবার হেঁট হয়ে আঙ্গুল দিয়ে মাটিতে লিখতে লাগলেন।
উল্লেখ্য, ইহুদিদের আইন বা মূসার শরীয়ত অনুসারে ব্যভিচারে ধরা পড়া নারীকে পাথর মেরে হত্যা করার বিধান ছিল [2] [3] –
যদি কোন পুরুষের তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক থাকে, তাহলে সেই পুরুষ এবং মহিলা দুজনেই ব্যভিচারের দোষে দোষী হবে। সেই পুরুষ এবং মহিলা দুজনের অবশ্যই যেন প্রাণদণ্ড হয়।
যদি কোন পুরুষ অপরের স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত থাকাকালীন ধরা পড়ে তবে দুজনকেই অবশ্যই মরতে হবে – সেই স্ত্রীলোকটিকে এবং তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত পুরুষটিকে হত্যা করে তোমরা অবশ্যই ইস্রায়েলের মধ্যে থেকে এই দুষ্টাচার দূর করবে।
তারা যীশুকে ফাঁদে ফেলার জন্য জিজ্ঞাসা করল, “এই নারী ব্যভিচারে ধরা পড়েছে, মূসার আইন অনুযায়ী তাকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা উচিত। কিন্তু তুমি কী বল?” যীশু কোনো উত্তর না দিয়ে নীচে ঝুঁকে মাটিতে কিছু লিখতে শুরু করলেন। কিন্তু তারা যখন বারবার তাকে প্রশ্ন করছিল, তখন যীশু উঠে বললেন,“তোমাদের মধ্যে যে পাপহীন, সেই ব্যক্তি সর্বপ্রথম তার দিকে পাথর নিক্ষেপ করুক।” এরপর যীশু আবার নীচে ঝুঁকে কিছু লিখতে লাগলেন। এই কথা শুনে উপস্থিত জনতা একে একে চলে যেতে লাগল, প্রথমে বৃদ্ধরা এবং পরে বাকিরাও। শেষ পর্যন্ত যীশু এবং সেই নারী ছাড়া আর কেউ সেখানে রইল না।
যীশু তখন নারীকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য কেউ রইল না?” সে উত্তর দিল, “না, প্রভু।” যীশু তখন বললেন, “আমিও তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করছি না। যাও, আর পাপ করো না।” [4]
অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদ জিনার দায়ে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে আল্লাহো আকবর ধ্বনি দিয়ে সম্মিলিতভাবে পাথর ছুড়ে রজমের বিধান কার্যকর করতে ছিল সর্বদাই অতি উৎসাহী। এমনকি, খোদ ইহুদিরাও এই বর্বর বিধান বন্ধ করে ফেলেছিল, নবীর চাপের কারণে তারা সেই বিধান কার্যকর করতে বাধ্য হয়, হাদিসে এমন প্রমাণও পাওয়া যায়। সে যাইহোক, এই প্রবন্ধে যেটি দেখানো হচ্ছে, তা হচ্ছে, একজন গর্ভবতী নারী, যিনি নিজেই তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত ছিলেন এবং শাস্তি কামনা করেছিলেন। সেই নারীর বাচ্চাটি পেট থেকে বের হওয়ার পরে নবী মুহাম্মদ তাকে পাথর ছুড়ে হত্যার নির্দেশনা দেন। মুহাম্মদ সেই নারীকে ক্ষমা করেননি, বা শাস্তি কমিয়ে দেননি। অত্যন্ত বর্বর পদ্ধতিতে সেই মাকে, যার একটি শিশু সন্তান ছিল, তাকে হত্যা করে।
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩০/ অপরাধের শাস্তি
পরিচ্ছেদঃ ৫. যে ব্যক্তি নিজে ব্যভিচার স্বীকার করে
৪২৮৪। আবূ গাসসান মালিক ইবনু আবদুল ওয়াহিদ মিসমাঈ (রহঃ) … ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জুহাইনা গোত্রের এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করল। সে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমি ’হদ্দ’ (শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত ব্যভিচারের শাস্তি) এর উপযোগী হয়েছি। অতএব আমার উপর তা কার্যকর করুন। তখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডাকলেন এবং বললেন, তাকে ভালভাবে সংরক্ষণ করে রেখো। পরে সে যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। সে তাই করলো।
এরপর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি (শাস্তি প্রদানের) নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলার কাপড় শক্ত করে বাঁধা হল। এরপর তিনি তার ব্যাপারে (শাস্তি কার্যকর করার) আদেশ দিলেন। তাকে পাথর মারা হল। পরে তিনি তার উপর (সালাত) আদায় করলেন। তখন উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি তার (জানাযার) সালাত আদায় করলেন অথচ সে তো ব্যাভিচার করেছে! তিনি বললেন, নিশ্চয়ই সে এমনভাবে তাওবা করেছে, যদি তা মদিনার সত্তরজন লোকের মধ্যে বণ্টিত হতো, তবে তাদের জন্য তাই যথেষ্ট হতো। তুমি কি তার চেয়ে অধিক উত্তম তাওবাকারী কখনও দেখেছো। সেতো নিজের জীবন আল্লাহর ওয়াস্তে প্রদান করেছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)
এবারে আসুন দেখে নিই, নবী মুহাম্মদের এই বিচারের প্রক্রিয়াটি কেমন ছিল। কারণ সচক্ষে না দেখলে আপনারা হয়তো এভাবে মেরে ফেলার ভয়াবহতা বুঝতে পারবেন না,
তথ্যসূত্র
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"