07.নবী মুহাম্মদের গুপ্তহত্যা

ভূমিকা

ধর্মীয় আদর্শে বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে হত্যার আদেশ দেওয়া, সেই আদেশ পালনের মাধ্যমে মানুষকে হত্যা করা, গুপ্তঘাতক পাঠিয়ে রাতের অন্ধকারে খুন করানো —এইরকম ঘটনা শুধু ইতিহাসের ঘনকালো অধ্যায়ই নয়, বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম উদাহরণও। এটি একটি জাতির সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। একটি জাতিসত্তার নৈতিক ভিত্তি কেমন হবে, তার দিকনির্দেশনা দেয়। সমালোচনা বা কটূক্তি বা বিরোধিতা করার জন্য এরকম ঘটনা, বিশেষ করে বিরুদ্ধ মতের মানুষের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা যখন কোনো ধর্মীয় নেতার দ্বারা সংঘটিত হয়, তখন সেটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ এ ধরনের নেতারা সাধারণত একটি সম্প্রদায় বা জাতির পথপ্রদর্শক, অনুসরণীয় বা অনুকরণীয় জীবনাদর্শ হিসেবে বিবেচিত হন। এই প্রসঙ্গে আরেকটি লেখা পড়া থাকাও আপনাদের জন্য জরুরি, যেখান থেকে জানা যায়, এক অন্ধ সাহাবীর ক্রীতদাসীকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, যাতে মুহাম্মদের পরিবর্তীতে সন্তুষ্টি এবং সম্মতি ছিল[1]

গুপ্তহত্যার আদেশঃ ইহুদী সমালোচক কাব ইনবু আশরাফ

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায় যে, নবী মুহাম্মদ কা’ব ইবনু আশরাফ নামের একজন ব্যক্তিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কারণ তিনি আল্লাহ এবং মুহাম্মদকে কষ্ট দিয়েছিলেন মুহাম্মদের বিরুদ্ধে বিদ্রুপাত্মক কবিতা রচনা করে এবং মুসলিম নারীদের সম্পর্কে কটূক্তি করে। রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে বিদ্রুপ বা কটূক্তির জন্য হয়তো কোন সাধারণ শাস্তি হতে পারে, কিন্তু বিচার বহির্ভূতভাবে কাউকে গুপ্তঘাতক পাঠিয়ে খুন করানো ভয়াবহ অমানবিক আচরণ। কারণ, অপরাধের শাস্তি দিতে হলে সেটি আদালতের মাধ্যমে হতে হবে, সঠিক তদন্ত এবং অপরাধীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রেখে সেটি করতে হবে। এই গুপ্তহত্যার আদেশ ধর্মীয় শাস্তি হিসেবে কার্যকর করে সত্যিকার অর্থে ইসলামী শরীয়তে শাতিমে রাসুলের বিধানের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। কারণ ইসলামিক বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী, নবী মুহাম্মদের সামান্য সমালোচনা কেউ করলেই, সাথে সাথে কতল করে দেয়ার মত অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে এই হাদিসগুলোর মাধ্যমেই। যার ফলাফল হিসেবে বচার বহির্ভূত হত্যা বা মব জাস্টিসের মত ঘটনার প্রাদূর্ভাব মুসলিম বিশ্বে অহরহ। দেখা গেছে, কেউ একজন বলল যে, অমুকে নবীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে, এমনকি একদল তৌহীদী জনতা এসে সেই ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে চলে যাচ্ছে। এরকম উদাহরণ পাকিস্তান ও বাংলাদেশে অসংখ্য, গুনে শেষ করার মত নয়।

আসুন সেই হাদিসগুলো দেখে নেয়া যাক। নিচের হাদিসগুলো থেকে পরিষ্কার যে, সমালোচকদের গুপ্তঘাতক পাঠিয়ে মানুষ হত্যা করাতেন নবী।

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার
পরিচ্ছদঃ ৫৬/১৫৯. হারবীকে গোপনে হত্যা করা।
৩০৩২. জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কা’ব ইবনু আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে নিবে?’ তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘আপনি কি পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘তবে আমাকে অনুমতি দিন, আমি যেন তাকে কিছু বলি।’ তিনি বললেন, ‘আমি অনুমতি দিলাম।’ (২৫১০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮১৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ)
পরিচ্ছদঃ ৬৪/১৫. কা‘ব ইব্নু আশরাফ-এর হত্যা
(কা‘ব ইবনু আশরাফ বনী কুরায়যা গোত্রের একজন কবি ও নেতা ছিল যে বিভিন্ন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নামে বিদ্রুপাত্মক কথা প্রচার করতো। এমনকি সম্ভ্রান্ত মুসলিমদের স্ত্রী কন্যাদের সম্পর্কেও কুৎসিত অশালীন উদ্ভট কথা রচনা করতো। এসকল কর্মকাণ্ডে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে অবশেষে তৃতীয় হিজরী সনের রবীউল আওয়াল মাসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুহামমাদ ইবনু মাসলামাহকে নির্দেশ দেন তাকে যেন হত্যা করা হয়। এবং সে আদেশ মতে তাকে হত্যা করা হয়।)
৪০৩৭. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কা‘ব ইবনু আশরাফের হত্যা করার জন্য কে প্রস্তুত আছ? কেননা সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) দাঁড়ালেন, এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হাঁ। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, তাহলে আমাকে কিছু প্রতারণাময় কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ বল। এরপর মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) কা‘ব ইবনু আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি (রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সদাকাহ চায় এবং সে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। কা‘ব ইবনু আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম পরে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করবে এবং আরো অতিষ্ঠ করে তুলবে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আমরা তাঁর অনুসরণ করছি। পরিণাম কী দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করা ভাল মনে করছি না। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই।
বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান বলেন, ‘আমর (রহ.) আমার নিকট হাদীসটি কয়েকবার বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথা উল্লেখ করেননি। আমি তাকে বললাম, এ হাদীসে তো এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে, তিনি বললেন, মনে হয় হাদীসে এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। কা‘ব ইবনু আশরাফ বলল, ধার তো পাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, কী জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আপনি আরবের একজন সুশ্রী ব্যক্তি, আপনার নিকট কীভাবে, আমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখব? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের ছেলে সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কী করে বন্ধক রাখি? তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য খুব লজ্জাজনক বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফ্ইয়ান বলেন, লামা শব্দের মানে হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র। শেষে তিনি (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ) তার কাছে আবার যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কা’ব ইবনু আশরাফের দুধ ভাই আবূ নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কা’ব তাদেরকে দূর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে উপর তলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। তখন তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এই তো মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ এবং আমার ভাই আবূ নাইলা এসেছে। ‘আমর ব্যতীত বর্ণনাকারীগণ বলেন যে, কা’বের স্ত্রী বলল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোঁটা ঝরছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কা’ব ইবনু আশরাফ বলল, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ এবং দুধ ভাই আবূ নাইলা, (অপরিচিত কোন লোক তো নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিত। (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) সঙ্গে আরো দুই ব্যক্তিকে নিয়ে সেখানে গেলেন। সুফ্ইয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, ‘আমর কি তাদের দু’জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফ্ইয়ান বললেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। ‘আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দু’জন মানুষ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, যখন সে (কা’ব ইবনু আশরাফ) আসবে। ‘আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে) বলেছেন যে (তারা হলেন) আবূ আবস্ ইবনু জাব্র হারিস ইবনু আওস এবং আববাদ ইবনু বিশ্র। ‘আমর বলেছেন, তিনি অপর দুই লোককে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি তার মাথার চুল ধরে শুঁকতে থাকব। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়িয়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারি দ্বারা তাকে আঘাত করবে। তিনি (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ) একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুঁকাব। সে (কা‘ব) চাদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। ‘আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, কা‘ব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী মহিলা আছে। ‘আমর বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুঁকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হাঁ। এরপর তিনি তার মাথা শুঁকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুঁকালেন। তারপর তিনি আবার বললেন, আমাকে আবার শুকবার অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তাঁরা তাকে হত্যা করলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে এ খবর দিলেন। (২৫১০; মুসলিম ৩২/৪৩, হাঃ ১৮০১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৭৩৯)
হাদিসটির আর্কাইভ লিংক
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছদঃ ১৯০০. হারবীকে গোপনে হত্যা করা
২৮২০। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কাব’ ইবনু আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে নিবে? তখন মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বললেন, ‘আপনি কি এ পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বললেন, ‘তবে আমাকে অনুমতি দিন, আমি যেন তাকে কিছু বলি।’ তিনি বললেন, ‘আমি অনুমতি প্রদান করলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এই গুপ্ত হত্যা সম্পর্কে সহজ নসরুল বারীতে কী লেখা রয়েছে তা দেখে নিই, [2]

গুপ্তহত্যা

ঘুমন্ত মুশরিককে হত্যাঃ আবু রাফে

সভ্য পৃথিবীতে একজন ঘুমন্ত মানুষকে কেউ হত্যার কথা কল্পনাও করতে পারে না। ঘুমন্ত অবস্থায় কাউকে হত্যা করা চরমভাবে কাপুরুষতা এবং নির্লজ্জ কাজ। কারণ একজন ঘুমন্ত মানুষ সেই অবস্থায় কারোর কোন ক্ষতি করতে পারছে না, তাকে কেন হত্যা করা হচ্ছে জানতে পারছে না কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থনও করতে পারছে না। নবী সেই ঘুমন্ত মানুষকেও হত্যা করতে গুপ্তঘাতক পাঠাতেন।

আবু রাফের মূল নাম আব্দুল্লাহ ইবনে আবিল হুকাইক। তাকে সাল্লাম ইবনে আবিল হুকাইক নামেও ডাকা হতো। তার উপনাম ছিলো আবু রাফে’। সে ছিলো হিজাযের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। খায়বারের পাশেই হিজাযের একটি সুরক্ষিত দূর্গে সে বসবাস করত। নবী মুহাম্মদ এই ব্যক্তিকেই ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করার জন্য তার এক সাহাবীকে পাঠিয়েছিলেন।

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছদঃ ১৮৯৬. ঘুমন্ত মুশরিককে হত্যা করা
২৮১৩। আলী ইবনু মুসলিম (রহঃ) … বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীগণের একটি দল আবূ রাফে ইয়াহুদীদের হত্যা করার জন্য প্রেরণ করেন। তাদের মধ্যে থেকে একজন এগিয়ে গিয়ে ইয়াহুদীদের দূর্গে ঢুকে পড়ল। তিনি বললেন, তারপর আমি তাদের পশুর আস্তাবলে প্রবেশ করলাম। এরপর তারা দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। তারা তাদের একটি গাধা হারিয়ে ফেলেছিল এবং তার খোঁজে তারা বেরিয়ে পড়ে। আমিও তাদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। তাদেরকে আমি বুঝাতে চেয়েছিলাম যে, আমি তাদের সঙ্গে গাধাঁর খোজ করছি। অবশেষে তারা গাধাটি পেল। তখন তারা দূর্গে প্রবেশ করে এবং আমিও প্রবেশ করলাম। রাতে তারা দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। আর তারা চাবিগুলি একটি কুলুঙ্গির মধ্যে রেখে দিল। আমি তা দেখতে পাচ্ছিলাম। যখন তারা ঘুমিয়ে পড়ল, আমি চাবিগুলি নিয়ে নিলাম এবং দূর্গের দরজা খুললাম। তারপর আমি আবূ রাফের নিকট পৌঁছলাম এবং বললাম, হে আবূ রাফে! সে আমার ডাকে সাড়া দিল। তখন আমি আওয়াজের প্রতি লক্ষ্য করে তরবারির আঘাত হানলাম, অমনি সে চিৎকার দিয়ে উঠল।
আমি বেরিয়ে এলাম। আমি পুনরায় প্রবেশ করলাম, যেন আমি তার সাহাযার্থে এগিয়ে এসেছি। আর আমি আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবূ রাফে! সে বলল, তোমার কি হল, তোমার ধ্বংস হোক। আমি বললাম, তোমার কি অবস্থা? সে বলল, আমি জানিনা, কে বা কারা আমার এখানে এসেছিল এবং আমাকে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, তারপর আমি আমার তরবারী তার পেটের উপর রেখে সবশক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম, ফলে তাঁর হাড় পর্যন্ত পৌঁছে কট করে উঠল। এরপর আমি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় বের হয়ে এলাম। আমি অবতরণের উদ্দেশ্যে তাদের সিড়ির কাছে এলাম। যখন আমি পড়ে গেলাম, তখন এতে আমার পায়ে আঘাত লাগল। আমি আমার সাথীগণের সাথে এসে মিলিত হলাম। আমি তাদেরকে বললাম, আমি এখান হতে ততক্ষন পর্যন্ত যাব না, যাবত না আমি মৃত্যুর সংবাদ প্রচারকারীনীর আওয়াজ শুনতে পাই। হিযাজবাসীদের বণিক আবূ রাফের মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা না শোনা পর্যন্ত আমি সে স্থান ত্যাগ করলাম না। তিনি বলেন, তখন আমি উঠে পড়লাম এবং আমার তখন কোনরূপ ব্যথা বেদনাই অনুভব হচ্ছিল না। অবশেষে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌঁছে এ বিষয়ে তাঁকে সংবাদ দিলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার
পরিচ্ছদঃ ৫৬/১৫৫. নিদ্রিত মুশরিককে হত্যা করা।
৩০২২. বারআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের একটি দল আবূ রাফি‘ ইয়াহূদীকে হত্যা করার জন্য প্রেরণ করেন। তাঁদের মধ্য থেকে একজন এগিয়ে গিয়ে ইয়াহূদীদের দূর্গে প্রবেশ করল। তিনি বলেন, অতঃপর আমি তাদের পশুর আস্তাবলে প্রবেশ করলাম। অতঃপর তারা দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। তারা তাদের একটি গাধা হারিয়ে ফেলেছিল এবং তার খোঁজে তারা বেরিয়ে পড়ে। আমিও তাদের সঙ্গে বেরিয়ে গেলাম। তাদেরকে আমি জানাতে চেয়েছিলাম যে, আমি তাদের সঙ্গে গাধার খোঁজ করছি। অবশেষে তারা গাধাটি পেল। তখন তারা দূর্গে প্রবেশ করে এবং আমিও প্রবেশ করলাম। রাতে তারা দুর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। আর তারা চাবিগুলো একটি কুলুঙ্গীর মধ্যে রাখল। আমি তা দেখতে পেলাম। যখন তারা ঘুমিয়ে পড়ল, আমি চাবিগুলো নিয়ে নিলাম এবং দূর্গের দরজা খুললাম। অতঃপর আমি আবূ রাফি‘র নিকট পৌঁছলাম এবং বললাম, হে আবূ রাফে! সে আমার ডাকে সাড়া দিল। তখন আমি আওয়াজের প্রতি লক্ষ্য করে তরবারীর আঘাত হানলাম, অমনি সে চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি বেরিয়ে এলাম। আমি আবার প্রবেশ করলাম, যেন আমি তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছি। আর আমি আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবূ রাফি‘! সে বলল, তোমার কী হল, তোমার মা ধ্বংস হোক। আমি বললাম, তোমার কী অবস্থা? সে বলল, আমি জানি না, কে বা কারা আমার এখানে এসেছিল এবং আমাকে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, অতঃপর আমি আমার তরবারী তার পেটের উপর রেখে সব শক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম, ফলে তার হাড় পর্যন্ত ঠেকার আওয়াজ হল। অতঃপর আমি ভীত-শংকিত অবস্থায় বের হয়ে এলাম। আমি অবতরণের উদ্দেশ্যে তাদের সিঁড়ির নিকট এলাম। যখন আমি পড়ে গেলাম, তখন এতে আমার পায়ে আঘাত লাগল। আমি আমার সাথীদের সঙ্গে এসে মিলিত হলাম। আমি তাদেরকে বললাম, আমি এখান হতে ততক্ষণ পর্যন্ত যাব না, যতক্ষণ না আমি মৃত্যুর সংবাদ প্রচারকারিণীর আওয়াজ শুনতে পাই। হিজাযবাসী বণিক আবূ রাফি‘র মৃত্যুর ঘোষণা না শোনা পর্যন্ত আমি সে স্থান ত্যাগ করলাম না। তিনি বললেন, তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম এবং আমার তখন কোন ব্যথাই ছিল না। অবশেষে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছে তাঁকে খবর জানালাম। (৩০২৩, ৪০৩৮, ৪০৩৯, ৪০৪০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮১০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এই হাদিসের ব্যাখ্যা আসুন পড়ে নিই, [3]

গুপ্তহত্যা 1

ইহুদী মহিলা কবি হত্যাঃ আসমা বিনতে মারওয়ান

আল্লামা ইদরিস কান্ধলভী লিখিত সীরাতুল মুস্তফা উর্দু ভাষায় রচিত, একটি অত্যন্ত তথ্যবহুল সিরাত গ্রন্থ। এই গ্রন্থটিকে সিরাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করা হয়। এই গ্রন্থে যা বলা হয়েছে [4]

আসমাকে হত্যা (২৬ রমযানুল মুবারক, দ্বিতীয় হি.)
আসমা ছিল এক ইয়াহূদী স্ত্রীলােক, যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিরুদ্ধে কুৎসামূলক কবিতা রচনা করত এবং তাঁকে নানাভাবে কষ্ট দিত। মানুষকে নবী (সা) এবং ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তুলত। নবী (সা) বদর থেকে তখনাে ফেরেননি, পুনরায় সে এ ধরনের কবিতা বলল। এতে হযরত উমায়র ইবন আদী (রা)-এর জিদ চেপে গেল। তিনি মান্নত করলেন যে, আল্লাহর অনুগ্রহে যদি রাসূলুল্লাহ (সা) নিরাপদে বদর থেকে ফিরে আসেন, তা হলে আমি একে হত্যা করব।
রাসূলুল্লাহ (সা) যখন বদর থেকে আল্লাহর অনুগ্রহে সুস্থভাবে ও নিরাপদে ফিরে এলেন, তখন উমায়র (রা) রাত্রিকালে তরবারি নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং তার ঘরে প্রবেশ করলেন। যেহেতু তিনি অন্ধ ছিলেন, সেহেতু হাতড়িয়ে আসমার আশেপাশে থাকা শিশুদের সরিয়ে দিলেন এবং তার বুকের উপর তরবারি রেখে এত জোরে চাপ দিলেন যে, তা পিঠ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
মান্নত পূর্ণ করে তিনি ফিরে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে ফজরের নামায আদায় করেন। এরপর তিনি তাঁকে সমুদয় ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা), এ জন্যে আমার কোন জরিমানা তাে হবে না? তিনি বললেন, না। “এ ব্যাপারে দু’টি মেযও মাথা দিয়ে গুঁতােগুতি করবে না।” অর্থাৎ এটা এমন কোন কাজই নয়, যে ব্যাপারে কেউ মতপার্থক্য বা প্রতিবাদ করতে পারে।।
সত্যিকারের পয়গম্বরগণের মর্যাদা পরিপন্থী কোন অপরাধকারীকে হত্যা করা কোথায় প্রতিশােধ গ্রহণের যােগ্য বিবেচিত হয়, বরং তা সর্বোচ্চ নৈকট্যলাভ ও উত্তম ইবাদতের মধ্যে গণ্য। কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারে না, পশুও একে বৈধ মনে করে।
মুসান্নাফে হাম্মাদ ইবন সালমায় বর্ণিত আছে যে, এ স্ত্রীলােকটি মহিলাদের ঋতুস্রাব মাখা কাপড় এনে মসজিদে রাখত।
মােটকথা, হযরত উমায়র (রা)-এর এ কাজে রাসূলুল্লাহ (সা) খুবই খুশি হন এবং সাহাবায়ে কিরাম (রা)-কে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ “যদি কেউ এমন ব্যক্তিকে দেখতে চায়, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে গােপনে সাহায্য করে, তা হলে যেন উমায়র ইবন আদীকে দেখে।”
হযরত উমর (রা) বলেন, ঐ অন্ধকে দেখ, সে কেমন গােপনে আল্লাহর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ওকে তােমরা অন্ধ বলাে না, ও তাে চক্ষুস্মান। অর্থাৎ দৃশ্যত যদিও সে অন্ধ, কিন্তু অন্তরের দিক থেকে সে চক্ষম্মান। পবিত্র রমযানের পাঁচটি রাত বাকী থাকতে এ মহিলাকে হত্যা করা হয়। বিস্তারিত জানার জন্য যুরকানী, ১খ. পৃ. ৪৫৩ এবং হাফিয ইবন তায়মিয়া প্রণীত গ্রন্থ দেখুন। (তাবাকাতে ইবন সা’দ, ২খ, পৃ. ১৮ ও উয়ূনুল আসার, ২খ. পৃ. ২৯৩ দ্র)।
হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে, যে একবার হযরত উমায়র (রা) অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ “আমাদেরকে ঐ চক্ষুষ্মনের কাছে নিয়ে চল, যে বনী ওয়াকিফে বাস করে। আমরা তার সেবা করব।”

আসমা বিনতে মারওয়ান
আসমা হত্যাকাণ্ড

এবারে আসুন মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব লিখিত সীরাতুল রাসুল সাঃ গ্রন্থ থেকে দেখে নেয়া যাক, [5]

গুপ্তহত্যা 5

এবারে আসুন সর্বাধিক বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থ সিরাতে রাসুলাল্লাহ থেকে এই বিষয়ে কী বলা আছে তা দেখে নেয়া যাক, [6]

গুপ্তহত্যা 7
গুপ্তহত্যা 9

এবারে আসুন এই তথ্যটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ A Biography Of The Prophet Of Islam, In The Light Of The Original Sources An Analytical Study, Volume 1 & 2 By Dr Mahdi Rizqullah Ahmad থেকে এই বিষয়ে বিবরণগুলো দেখে নেয়া যাক, [7]

It was also documented by Abu Dawud in his Sunan (4/528-29/The Book of Hudud, rulings on those who insulted the Prophet. He follows a chain other than that of Ibn Ishaq through a chain that is Connected and its transmitters reliable as ruled by Ibn Hajar in Bulugh Al-Maram (2/241). Nasa’i has also collected this report in his Sunan (7/107-108) as well as Tabarani in his Kabir.

গুপ্তহত্যা 11

শত্রুর কাটা মাথা দেখে খুশি হতেন নবী

মানবতার ত্রাণকর্তা এবং মহাবিশ্বের সবচাইতে মানবিক মানুষ বলে দাবী করা মানুষ মুহাম্মদের জন্য তার অনুসারীগণ শত্রুর মাথা কেটে নিয়ে এসে মুহাম্মদকে উপহার দিতেন। মুহাম্মদও খুশি হয়ে সেই উপহার গ্রহণ করতেন।

وَفِي رِوَايَةِ بن سَعْدٍ فَلَمَّا بَلَغُوا بَقِيعَ الْغَرْقَدِ كَبَّرُوا وَقَدْ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ يُصَلِّي فَلَمَّا سَمِعَ تَكْبِيرَهُمْ كَبَّرَ وَعَرَفَ أَنْ قَدْ قَتَلُوهُ ثُمَّ انْتَهَوْا إِلَيْهِ فَقَالَ أَفْلَحَتِ الْوُجُوهُ فَقَالُوا وَوَجْهُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَرَمُوا رَأْسَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَحَمِدَ اللَّهَ عَلَى قَتْلِهِ
‘ইবনে সাদের বর্ণনায় এসেছে, সাহাবায়ে কিরাম (ইসলামের দুশমন পাপিষ্ঠ কাব বিন আশরাফকে হত্যা করে) যখন বাকিউল গারকাদে পৌঁছলেন, তখন সবাই “আল্লাহু আকবার” বলে ধ্বনি দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে রাতে নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি যখন তাঁদের তাকবির-ধ্বনি শুনতে পেলেন, তিনিও তাকবির-ধ্বনি দিলেন এবং বুঝতে পারলেন যে, তাঁরা তাকে হত্যা করে ফেলেছে। অতঃপর সাহাবায়ে কিরাম তাঁর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, সফল হোক (তোমাদের) চেহারাগুলো। তাঁরা প্রতিউত্তরে বললেন, এবং আপনার চেহারাও (সফল হোক), হে আল্লাহর রাসুল। তাঁরা তার (কর্তিত) মাথা তাঁর সামনে ফেললে তিনি তার নিহত হওয়ায় আল্লাহর প্রশংসা করলেন।
(ফাতহুল বারি : ৭/৩৪০, প্রকাশনী : দারুল মারিফা, বৈরুত)

এটিই একমাত্র উদাহরণ নয়। উদাহরণ আরো আছে [8]

গুপ্তহত্যা 13

গুপ্তঘাতক পাঠিয়ে হত্যাঃ মানবিকতার চরম বিপর্যয়

উপরে উল্লেখিত হাদিসে নবী মুহাম্মদ কা’ব ইবনু আশরাফকে হত্যার জন্য মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং অনুমতি দিয়েছিলেন যে, তিনি তাকে প্রতারণা করে হত্যা করতে পারেন। এখানে প্রতারণার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে হত্যার আদেশ দেওয়া এবং সেটি বাস্তবায়ন করা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রতারণা করে হত্যা বা গোপনে হত্যা করার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয় না। এটি নৈতিকতা এবং মানবাধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন এবং মানবিকতার চরম বিপর্যয়।

একটি সুসংহত সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তিরই বিচার পাওয়ার অধিকার আছে, এবং সেই বিচারের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করা উচিত। গোপনে কাউকে হত্যা করার মাধ্যমে তার জীবনের অধিকার হরণ করা, বিচার ছাড়াই শাস্তি প্রদান করা এবং তাকে আত্মরক্ষার সুযোগ না দিয়ে প্রতারণা করে খুন করা হয়, যা মানবাধিকারের মৌলিক লঙ্ঘন। এই ধরনের হত্যাকাণ্ডকে কোনোভাবেই একটি ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় না। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর আঘাত নয়, বরং সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করে।

উপসংহার

ধর্মীয় আদেশে গুপ্তঘাতক পাঠিয়ে কাউকে হত্যা করা ন্যায়বিচার নয়, বরং এটি একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ। এটি ধর্মীয় নৈতিকতার পরিপন্থী এবং একটি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে, সেটি আদালতের মাধ্যমে এবং যথাযথ বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। অন্যথায়, এটি একটি অমানবিক এবং নিষ্ঠুর কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। ধর্মের আদলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই সমর্থন করা উচিত নয়।

তথ্যসূত্র

  1. গালিদাতাকে নির্মমভাবে হত্যা []
  2. সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী, সপ্তম খণ্ড, আরবি-বাংলা, সহজ তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ উসমান গনী, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২২৯ []
  3. সহজ নসরুল বারী সরহে সহীহ বুখারী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২৫ []
  4. সীরাতুল মুস্তফা সা., লেখকঃ আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (রহ.), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৪, ১৪৫ []
  5. সীরাতুল রাসুল সাঃ, মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃষ্ঠা ৩২৪ []
  6. সীরাতে রাসুলাল্লাহ, ইবনে ইসহাক, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৭১৬, ৭১৭ []
  7. A Biography of the Prophet of Islam In the Light of Original Sources: An Analytical Study, by Dr. Mahdi Rizqullah Ahmad, translated by Syed Iqbal Zaheer [Darussalam Publishers and Distributors, Riyadh, Jeddah, Sharjah, Lahore, London, Houston, New York; First Edition: November 2005], Volume 1, Chapter 6: Events and Expeditions between Badr and Uhud, pp. 431-432; underline emphasis ours []
  8. সীরাতে রাসুলাল্লাহ, ইবনে ইসহাক, অনুবাদঃ শহীদ আখন্দ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ৩৪৬ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"