01.কোরআনে শিশুবিবাহের বৈধতা

ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে শিশুবিবাহ এবং শিশুর সাথে যৌনকর্মের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই বিষয়টি আমরা এই প্রবন্ধে সবগুলো দলিল প্রমাণ একত্র করে যাচাই করে দেখবো।

কোরআনে সহবাসের পূর্বে তালাক ও ইদ্দতের বিধান

কোরআনের বিধান অনুসারে, সহবাসের পূর্বে তালাক দিলে ইদ্দতের বিধান নেই। শুরুতেই এই সম্পর্কিত আয়াতটি দেখে নিই [1]

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা মুমিন নারীদেরকে বিবাহ করবে অতঃপর তাদের সাথে সহবাসের পূর্বেই তালাক দিয়ে দেবে তবে তোমাদের জন্য তাদের কোন ইদ্দত নেই যা তোমরা গণনা করবে। সুতরাং তাদেরকে কিছু উপহার সামগ্রী প্রদান কর এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে বিদায় দাও।

আসুন ড মনজুর ইলাহির মুখ থেকে বিষয়টি আরও ভালভাবে জেনে নিই,

অর্থাৎ বোঝা গেল, সহবাসের আগেই স্বামী তালাক দিলে ইদ্দত পালনের কোন প্রয়োজন নেই। এবারে সুরা তালাকের ৪ নম্বর আয়াতটি পড়ি, যেখানে বলা আছে, যেসব স্ত্রী এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি, তাদের ইদ্দত হবে তিনমাস [2]

যে সব তালাকপ্রাপ্তারা বয়সের কারণে মাসিক থেকে নিরাশ হয়েছে তাদের ইদ্দতের ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দিহান হও তাহলে তাদের মেয়াদ তিন মাস বলে গণ্য হবে। তেমনিভাবে যারা ছোট থাকার ফলে মাসিকের বয়সে উপনীত হয় নি তাদের ইদ্দতও তিন মাস। আর গর্ভবতীদের তালাক কিংবা স্বামীর মরণোত্তর ইদ্দত হলো সন্তান প্রসব। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করে তিনি তার সকল বিষয় ও সমস্যা সহজ করে দেন।
— Bengali Mokhtasar
তোমাদের যে সব স্ত্রীগণ মাসিক ঋতু আসার বয়স অতিক্রম করেছে তাদের (‘ইদ্দাতের) ব্যাপারে যদি তোমাদের সন্দেহ সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে তাদের ‘ইদ্দাতকাল তিন মাস, আর যারা (অল্প বয়স্কা হওয়ার কারণে) এখনও ঋতুবতী হয়নি (এ নিয়ম) তাদের জন্যও। আর গর্ভবতী স্ত্রীদের ‘ইদ্দাতকাল তাদের সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।
— Taisirul Quran
তোমাদের যে সব স্ত্রীর ঋতুমতী হওয়ার আশা নেই তাদের ইদ্দাত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দাতকাল হবে তিন মাস এবং যাদের এখনও রজশ্বালা হয়নি তাদেরও। এবং গর্ভবতী নারীদের ইদ্দাতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আল্লাহকে যে ভয় করে আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দিবেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুবর্তী হওয়ার কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদের ইদ্দতকালও হবে তিন মাস। আর গর্ভধারিনীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।
— Rawai Al-bayan
তোমাদের যে সব স্ত্রী আর ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই [১] তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যারা এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদেরও; আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আর যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

তাহলে স্পষ্টতই বোঝা যায়, যারা ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি, তাদের যেহেতু ইদ্দতের কথা বলা আছে, তাই অবশ্যই সহবাসের অনুমতিও দেয়া আছে। নইলে ইদ্দতের নির্দেশই থাকতো না। কারণ সহবাস ছাড়া তো ইদ্দতের প্রয়োজনই নেই।


সূরা তালাক প্রসঙ্গে বোখারী শরীফ

ইমাম বুখারীর বুখারী শরীফ গ্রন্থে পরিষ্কারভাবেই সূরা তালাকের চার নম্বর আয়াতের অর্থ বলে দেয়া হয়েছে [3] [4]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬৭/ বিয়ে
পরিচ্ছেদঃ ৬৭/৩৯. কার জন্য ছোট শিশুদের বিয়ে দেয়া বৈধ।
لِقَوْلِهِ تَعَالَى: وَاللاَّئِي لَمْ يَحِضْنَ) فَجَعَلَ عِدَّتَهَا ثَلاَثَةَ أَشْهُرٍ قَبْلَ الْبُلُوغِ
আল্লাহ্ তা‘আলার কালাম ‘‘এবং যারা ঋতুমতী হয়নি’’-(সূরাহ আত-ত্বলাক (তালাক): ৪) এই আয়াতকে দলীল হিসাবে ধরে নাবালেগার ইদ্দাত তিন মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।
৫১৩৩. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৬ বছর এবং নয় বছর বয়সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে বাসর ঘর করেন এবং তিনি তাঁর সান্নিধ্যে নয় বছরকাল ছিলেন। (৩৮৯৪)(আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৫৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)

সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর- ৪৭৫৭

সূরা তালাক প্রসঙ্গে তাফসীরে ইবনে কাসীর

তাফসীরে ইবনে কাসীরে বলা হয়েছে, অপ্রাপ্তবয়ষ্কা মেয়ের কথা [5]

তাফসীরে ইবনে কাসীর, একাদশ খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ১৬৩

সূরা তালাক প্রসঙ্গে তাফসীরে জালালাইন

তাফসীরে জালালাইনেও বলা হয়েছে, অপ্রাপ্তবয়ষ্কতার কারণে যে সব মেয়ে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায় নি, তাদের কথা [6]

তাফসীরে জালালাইন, ষষ্ঠ খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ৫৮৮

অর্থাৎ, যারা ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি, বা অপ্রাপ্তবয়সী মেয়ে, তাদের ইদ্দতকাল তিনমাস।


সূরা তালাক প্রসঙ্গে তাফসীরে মাযহারী

কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী একজন বিখ্যাত ইসলামিক পন্ডিত, যার লিখিত তাফসীর গ্রন্থের নাম তাফসীরে মাযহারী। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের একজন কাজী (বিচারপতি), মুহাদ্দিস, গবেষক ও বিশিষ্ট মুফাসসির তথা আল-কোরআনের ভাষ্যকার। এবারে সেই তাফসীরে মাযহারী [7] থেকে দেখে নিইঃ

তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৫৬২
তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৫৬৩

সূরা তালাক প্রসঙ্গে মা’আরেফুল কোরআন

তৃতীয় খলিফা হযরত উসমানের বংশধর মুফতী মুহাম্মদ শফি উসমানী ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও মনীষী । তিনি দারুল উলূম দেওবন্দ এবং দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানের মুফতীয়ে আযম বা প্রধান মুফতী (গ্রান্ড মুফতী) ছিলেন। তার বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “মা’আরিফুল কুরআন” বহু ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। এবারে আসুন মা’আরেফুল কোরআনে দেখি [8]

মা'আরেফুল কোরআন, খণ্ড ৮ এর ৪৮৩ নম্বর পৃষ্ঠা
মা'আরেফুল কোরআন, খণ্ড ৮ এর ৪৮১, নম্বর পৃষ্ঠা

সূরা তালাক প্রসঙ্গে তাফহীমুল কুরআন

প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী ইসলামে অবদান রাখার জন্যে তাকে ১৯৭৯ সালে বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান [9]। । শুধু তাই নয়, উনি হচ্ছেন আধুনিক সময়ের সবচাইতে প্রসিদ্ধ ইসলামিক স্কলার। একইসাথে, উনি ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি, যার গায়েবানা জানাজা পড়ানো হয়েছিল কাবা শরীফে [10]। এর অর্থ হচ্ছে, উনার লিখিত তাফসীর সারা পৃথিবীতেই প্রসিদ্ধ। সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর তাফহীমুল কুরআন গ্রন্থে সূরা তালাকের এই আয়াতের ব্যাখ্যাতে যা লেখা রয়েছে [11]

তাহফীমুল কুরআন সূরা তওবা আয়াত ৪

সূরা তালাক প্রসঙ্গে তাওযীহুল কুর’আন

পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা মুহাম্মদ তাকী উসমানির কথা আশাকরি বাঙলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের অধিবাসী সকল মুসলিমই অবগত আছেন। বিচারপতি মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকি উসমানি (জন্ম: ১৯৪৩) পাকিস্তানের একজন প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি হাদীস, ইসলামী ফিকহ, তাসাউফ ও অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন [12]। উনার লিখিত কোরআনের তাফসীর তাওযীহুল কুরআনে এই আয়াতের কী ব্যাখ্যা দেয়া আছে, সেটি দেখে নিই [13]

শিশুবিবাহ

সূরা তালাক প্রসঙ্গে আহকামুল কুরআন

হানাফী মাজহাবের প্রখ্যাত ইমাম আহমাদ ইবনে আলী আবূ বকর আর-রায়ী আল-যাস্সাস রচিত আহকামুল কুরআন গ্রন্থেও একই বিষয় দেখতে পাওয়া যায় [14]

শিশুবিবাহ 9

আরো পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে একই গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে যে, এই বিষয়ে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল আলেমের ঐক্যমত্য রয়েছে যে, সমস্ত অভিভাবকের জন্য অপ্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়েকে বিবাহ দেয়া ইসলামে সম্পূর্ণ জায়েজ। এই বিষয়ে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী আলেমদের ঐক্যমত্য বা ইজমা রয়েছে [15]

আলোচ্য আয়াতে এ কথারও প্রমাণ রয়েছে যে, পিতার জন্যে তার ছোট বয়সের কন্যাকে বিয়ে দেয়ার অধিকার আছে এ হিসেবে যে, সমস্ত অভিভাবকের জন্যেই তা জায়েয। আর পিতা তাদের সকলের তুলনায় অতি নিকটবর্তী অভিভাবক। আর বিভিন্ন দেশের আগের ও পরবর্তীকালের ফিকাহবিদদের মধ্যে তার জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য আছে বলে আমরা জানি না। তবে বশর ইবনুল অলীদ শিবরামাতা থেকে বর্ণনা প্রচার করেছেন যে, ছোট বয়সের ছেলেমেয়েকে বিয়ে দেয়া পিতার জন্যেও জায়েয নয়। এটা আল – আস্সাম – এর মাযহাব। এ মাযহাব যে বাতিল, তা আমরা ইতিপূর্বেই বলেছি। তাছাড়া এ আয়াতটিও এ মাযহাবের বাতুলতা প্রমাণ করে।

শিশুবিবাহ 11

সূরা তালাক প্রসঙ্গে আহকামুল হাদিস

হাদিস এবং ইসলামিক ফিকাহ শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হচ্ছে আহকামুল হাদীস। সূরা তালাকের ৪ নম্বর আয়াত সম্পর্কে এই গ্রন্থে কী বলা আছে, আসুন দেখে নেয়া যাক [16]

শিশুবিবাহ 13
শিশুবিবাহ 15
শিশুবিবাহ 17

ফিকাহ শাস্ত্র আল হিদায়ার আইন

ইমাম আবু হানিফার মাজহাবের প্রখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ আল হিদায়াতে এই বিষয়ে যা বলা আছে সেটিও দেখে নিই [17]

ইদ্দত, আল হিদায়া

ফিকাহ শাস্ত্র আশরাফুল হিদায়ার আইন

হানাফি ফিকাহশাস্ত্রে আশরাফুল হিদায়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক ফরিদী কর্তৃক নির্দেশিত এবং বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত আলেমের অনুদিত আশরাফুল হিদায়া গ্রন্থে এই বিষয়ে কী বলা আছে সেটি দেখে নিই [18]

আশরাফুল হিদায়া
হিদায়া
আশরাফুল হিদায়া, ইদ্দত

সূরা তালাক প্রসঙ্গে বোখারীর ব্যাখ্যা

এর আরো প্রমাণ পাওয়া যায় বোখারী শরীফের ব্যাখ্যায় [19] থেকে-

বোখারী শরীফ
বোখারী শরীফ, নাবালেগ মেয়ের বিবাহ

নাবালিকা সঙ্গম বিষয়ে ফিকাহুস সুন্নাহ

আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত আলেম এবং শরীয়া আইনের ওপর বিশেষজ্ঞ সাইয়েদ সাবেক রচিত ফিকাহুস সুন্নাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি আইন গ্রন্থ। এই গ্রন্থে বেশ পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে, অপ্রাপ্তবয়ষ্ক বালিকার ইদ্দত কতদিনের। আর আমরা জানি যে, ইসলামে ইদ্দত শুধুমাত্র তখনই সম্ভব, যখন যৌন সঙ্গম ঘটে [20]

শিশুবিবাহ 25

এই একই গ্রন্থে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়েদের সাথে সঙ্গমকালে যোনীপথ ফেটে গেলে স্বামীর জরিমানা হওয়ার কথা বলা আছে। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে, যোনীপথ এবং পায়ুপথ একাকার হয়ে গেলেই শুধুমাত্র এই জরিমানা প্রযোজ্য হবে। মাঝে কোন আড়াল থাকলে কোন জরিমানা হবে না। যদিও এগুলো মুহাম্মদের অনেক পরে ইমামগণের সংযুক্তি, তারপরেও ইসলাম যে খুব পরিষ্কারভাবে শিশুকামকে বৈধতা দিয়েছে, তার প্রমাণ বহন করে। অর্থাৎ মুমিনদের খেয়াল রাখতে হবে যে, অপ্রাপ্তবয়ষ্ক বাচ্চাটির যোনীপথ এবং পায়ুপথ যেন ফেটে একাকার না হয়ে যায়। এইটুকু না করলেই হলো। আর সেটি হয়ে গেলে সামান্য জরিমানা দিয়ে দিলেই তো হলো! [21]

শিশুবিবাহ 27

ভারতে শরীয়া আইনঃ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী

উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামিক গ্রন্থ ফতওয়ায়ে আলমগীরী গ্রন্থেও নাবালিকা স্ত্রীর সাথে সহবাস এবং তালাকের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে [22]

শিশুবিবাহ 29

বাল্যবিবাহ বিষয়ে আলেমদের ইজমা

শিশু বাচ্চাদের বিবাহ সম্পর্কে ইসলামের আলেমদের ঐক্যমত্য বা ইজমা রয়েছে। সেটি নিচে উল্লেখ করা হলো।

ইমাম ইবনে আব্দিল বার রহ. (মৃ: ৪২৩ হি:) লিখেছেন- أجمع العلماء على أن للأب أن يزوج ابنته الصغيرة ولا يشاورها ، لتزويج رسول الله صلى الله عليه وسلم عائشة وهي بنت ست سنين …انتهى – এব্যাপারে আলেমগণের ইজমা রয়েছে যে, পিতা তার নাবালেগ বাচ্চার সাথে পরামর্শ না করেও তাকে বিয়ে দিয়ে দিতে পারেন। কারণ, রাসুলুল্লাহ হযরত আয়েশাকে বিয়ে করেছিলেন যখন তার বয়স ছিল ছয় বছর। (আত-তামহীদ, ইবনু আব্দিল বার- ১৯/৯৪)

ইমাম মালেক রহ. (মৃ: ১৭৯ হি:) বলেছেন- وإنكاح الأب جائز على الصغار من ولده ، ذكراً كان أو أنثى– পিতার জন্য তার কোনো নাবালেগ বাচ্চার বিয়ে দিয়ে দেয়া জায়েয -চাই বাচ্চাটি ছেলে হোক বা মেয়ে। (আত-তামহীদ, ইবনু আব্দিল বার- ১৯/৯৮)

ইমাম ইসমাঈল বিন ইসহাক রহ. বলেছেন- والأب له أن يزوج الصغيرة بإجماع من المسلمين– এব্যাপারে মুসলীম উম্মাহ’র ইজমা রয়েছে যে, পিতার জন্য তার নাবালেগ বাচ্চার বিয়ে দিয়ে দেয়া জায়েয। (আত-তামহীদ, ইবনু আব্দিল বার- ১৯/৮৪)

ইমাম ইবনুল মুনযীর নিশাপুরী রহ. (মৃ: ৩১৮ হি:) বলেছেন- أجمع كل من نحفظ عنه من أهل العلم أن نكاح الأب ابنته الصغيرة جائز إذا زوجها من كفء– এব্যাপারে আহলে হক্ব আলেমগণের ইজমা রয়েছে যে, পিতার জন্য তার নাবালেগ বাচ্চার বিয়ে দিয়ে দেয়া জায়েয – যদি তিনি কুফু’র সাথে তার বিয়ে দেন। (আত-তামহীদ, ইবনুল বার- ১৯/৮৪; আল-মুগনী, ইবনে কুদামা- ৯/৩৯৮)

ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃ: ৮৫২ হি:) ইবনুল বাত্তাল রহ.-এর মত উল্লেখ করেছেন- يجوز تزويج الصغيرة بالكبير إجماعاً ، ولو كانت في المهد– (আহলে হক্ব আলেমগণের) সকলের মতে বালেগ ছেলের সাথে নাবালেগা মেয়ের বিয়ে দেয়া জায়েয – এমনকি যদিও সেই মেয়ে অতীব ছোটই হোক না কেনো। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ৯/১২৩)

ইমাম ইবনে হাযাম রহ. (মৃ: ৪৫৬ হি:) লিখেছেন- الحجة في إجازة إنكاح الأب ابنته الصغيرة البكر ، إنكاح أبي بكر رضي الله عنه النبي صلى الله عليه وسلم من عائشة رضي الله عنها وهي بنت ست سنين– পিতার জন্য তার নারালেগা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়া জায়েয হওয়ার দলিল হল, হযরত আবু বকর রা. (তাঁর নাবালেগা মেয়ে) হযরত আয়েশাকে রাসুলুল্লাহ সা.-এর সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন যখন হযরত আয়েশা ছিলেন ছয় বয়সের এক মেয়ে। (আল-মুহাল্লা, ইবনে হাযাম- ৯/৪৫৮)


ইসলাম ওয়েব এর ফতোয়া

ইসলাম ওয়েব ডট নেট ইসলাম বিষয়ক ফতোয়ার একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। এই ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে একটি ফতোয়া দেখে নিই, ফতোয়াটি আরবিতে, ইংরেজিও নিচে দেয়া হচ্ছে (ইংরেজি অনুবাদটি গুগল ট্রান্সলেটর থেকে নেয়া) [23]

الدليل على جواز تزويج الأب البنت الصغيرة دون إذنها أو رضاها
رقم الفتوى: 230518
السؤال
هل يوجد دليل في النصوص الشرعية يقول بجواز إجبار البكر الصغيرة على الزواج؟.
الإجابــة
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه، أما بعد:
فقد حكى بعض العلماء الإجماع على أن للأب تزويج ابنته البكر الصغيرة بغير رضاها، ولا يشترط إذنها، ونعني بالصغيرة من ليست بالغة، جاء في المغني لابن قدامة: أما البكر الصغيرة: فلا خلاف فيها، قال ابن المنذر: أجمع كل من نحفظ عنه من أهل العلم أن نكاح الأب ابنته البكر الصغيرة جائز, إذا زوجها من كفء. اهـ.
ومستند هذا الإجماع أن أبا بكر زوج عائشة ـ رضي الله عنها ـ من رسول الله صلى الله عليه وسلم ولم يشاورها، قال ابن عبد البر: أجمع العلماء على أن للأب أن يزوج ابنته الصغيرة ولا يشاورها، لتزويج رسول الله صلى الله عليه وسلم عائشة وهي بنت ست سنين…. اهـ.
ولمزيد الفائدة نرجو مراجعة الفتويين رقم: 223414، ورقم: 172491
والله أعلم.

Evidence that a father may marry off a young girl without her permission or consent
Fatwa Number: 230518
Publication date: Thursday 2 Safar 1435 AH – 5 December 2013
Evaluation:
3481 0 154
The question
Is there evidence in the Sharia texts that it is permissible to force a virgin to marry?
The answer
Praise be to God, and may blessings and peace be upon the Messenger of God and his family and companions. Some scholars have narrated that there is consensus that the father can marry off his young virgin daughter without her consent, and her permission is not required, and we mean by little one who is not an adult. Knowing that the father’s marriage to his young virgin daughter is permissible, if her husband is competent. Ah.
This consensus is based on the fact that Abu Bakr, the husband of Aisha, may God be pleased with her, is from the Messenger of God, may God bless him and grant him peace, and he did not consult her. Ibn Abd al-Barr said: The scholars are unanimously agreed that a father has the right to marry his young daughter and not consult her, in order to marry the Messenger of God, may God bless him and grant him peace, Aisha, who is a daughter Six years ….
For more benefit, please refer to Fatwas No. 223414 and No. 172491 .
God know best


সৌদি সরকারী ও গ্র্যান্ড মুফতির ফতোয়া

সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত সরাসরি সরকারী ওয়েবসাইটে এই ফতোয়া পরিষ্কারভাবে দেয়া হয়েছে যে, বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ হালাল, সহবাসও হালাল এবং তা শুধু নবীর জন্যেই নয়, সকলের জন্যেই হালাল। এই ফতোয়াটি সৌদি সর্বোচ্চ স্কলারবৃন্দ যেমন সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ ইবনে বাজ এবং বর্তমান সময়ের গ্র্যান্ড মুফতি শায়েখ আবদুল আজিজ আল শেইখ সহ সর্বোচ্চ ইসলামিক স্কলারদের অন্যতম শায়েখ সালিহ আল ফাউজান এবং ইফতা কমিটি দ্বারা সত্যায়িত। আসুন সেটিও দেখে নিই- [24]

The first question of Fatwa no. 18734
Q 1: Is it true that the Prophet’s marriage to `A’ishah while still young was one of his particularities or was it a legislation for the whole Ummah?
Is it permissible to consummate marriage with immature girl? If not, how then should she observe three months as `Iddah (waiting period)?
A: The Prophet (peace be upon him) betrothed `Aishah (may Allah be pleased with her) while she was six years old. He consummated the marriage in Al-Madinah when she was nine years old. Actually, this is not a particularity just for him. Thus, it is permissible to contract the marriage of an immature girl and consummate it.
(Part No. 18; Page No. 125)
even before maturity if she is able to. As for the `Iddah of an immature girl, Allah (Glorified and Exalted be He) defined the `Iddah of those who have passed the age of monthly courses and those who are still immature to be three months. Allah (Exalted be He) said, And those of your women as have passed the age of monthly courses, for them the ‘Iddah (prescribed period), if you have doubt (about their periods), is three months; and for those who have no courses (i.e. they are still immature) In fact, immature girls are included under the category: …and for those who have no courses (i.e. they are still immature) their ‘Iddah (prescribed period) is three months likewise, except in case of death). May Allah grant us success. May peace and blessings be upon our Prophet Muhammad, his family, and Companions.
The Permanent Committee for Scholarly Research and Ifta’
Member: Bakr Abu Zayd Member: Salih Al-Fawzan Deputy Chairman: `Abdul-`Aziz Al Al-Shaykh Chairman:`Abdul-`Aziz ibn `Abdullah ibn Baz

শিশুবিবাহ 31

এবারে আসুন সৌদি সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ড. সালেহ আল ফাওযান এর একটি গ্রন্থ থেকে দেখে নিই, ইসলাম হাউজ থেকে যেই বইটির বাঙলা অনুবাদ পাওয়া যায়। যার অনুবাদ করেছেন ড আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া [25]

শিশুবিবাহ 33
শিশুবিবাহ 35

অল্পবয়সে বিয়ের জন্য প্রতারণার ফতোয়া

উপরের তথ্যসূত্রগুলো থেকে এটি খুবই পরিষ্কার যে, ইসলাম অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে দেয়া উৎসাহিত করে। ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত নামক ফিকাহ গ্রন্থে এটিও বলা আছে যে, ইসলাম শুধুমাত্র অল্পবয়সে বয়সে বিয়েই জায়েজ নয়, এর জন্য বাঙলাদেশের আইন লঙ্ঘন করে মিথ্যা বলাও জায়েজ আছে [26]

ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত

তথ্যসূত্র

  1. সুরা ৩৩:৪৯ []
  2. সুরা ৬৫:৪ []
  3. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৫১৩৩ []
  4. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৭৫৭ []
  5. তাফসীরে ইবনে কাসীর, একাদশ খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ১৬৩ []
  6. তাফসীরে জালালাইন, ষষ্ঠ খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ৫৮৮ []
  7. তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৫৬২, ৫৬৩ []
  8. মা’আরেফুল কোরআন, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠাঃ ৪৮১, ৪৮৩ []
  9. “King Faisal Prize” (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৫[]
  10. Adams, Charles J. (1983). “Maududi and the Islamic State”. In Esposito, John L. (ed.). Voices of Resurgent Islam. Oxford University Press. ISBN 9780195033403 []
  11. তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী []
  12. “Muhammad Taqi Usmani”। The Muslim 500 (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৪। []
  13. তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনে, মুফতি মুহাম্মদ তাকী উসমানি, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৬৭ []
  14. আহকামুল কুরআন, ইমাম আহমাদ ইবনে আলী আবূ বকর আর-রায়ী আল-যাস্সাস, অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, খায়রুন প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩৫ []
  15. আহকামুল কুরআন, ইমাম আহমাদ ইবনে আলী আবূ বকর আর-রায়ী আল-যাস্সাস, অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, খায়রুন প্রকাশনী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩১ []
  16. আহকামুল হাদীস, লেখকঃ মাওলানা মোঃ কামরুল হাসান, সম্পাদকঃ ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, রিয়াদ প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪৭৪, ৪৭৫, ৫৬১ []
  17. আল হিদায়া, দ্বিতীয় খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ২০১ []
  18. আশরাফুল হিদায়া, তৃতীয় খণ্ড, মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক ফরিদী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৫৭৬ []
  19. বোখারী শরীফ (বাংলা তরজমা ও ব্যাখ্যা), খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৯৬-১৯৭ []
  20. ফিকাহুস সুন্নাহ, ২য় খণ্ড, সাইয়েদ সাবেক, শতাব্দী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২৬৬ []
  21. ফিকাহুস সুন্নাহ, ২য় খণ্ড, সাইয়েদ সাবেক, শতাব্দী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪৬৩ []
  22. ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৩৯ []
  23. الدليل على جواز تزويج الأب البنت الصغيرة دون إذنها أو رضاها رقم الفتوى: 230518 []
  24. It is permissible to contract the marriage of an immature girl and consummate it []
  25. মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান, ড. সালেহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান, ইসলাম হাউজ, অনুবাদকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমেদ, সম্পাদকঃ ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া, পৃষ্ঠা ৯৫, ৯৬ []
  26. ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত, ষষ্ঠ খণ্ড, ফকীহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন, ফকীহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান, পৃষ্ঠা ৪২ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"