কোরআনে বলা হচ্ছে, নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের জন্য, পুরুষের বিনোদন এবং অবসন্নতা কাটাবার জন্য। এটি নারীর জন্য চরমভাবে অমর্যাদাকর। নারীর সৃষ্টি যদি পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য হয়ে থাকে, তা অবশ্যই নারীকে একটি স্বাধীন এবং স্বাভাবিক সত্ত্বা হিসেবে চিহ্নিত করে না, বরঞ্চ পুরুষের জন্য একটি উপভোগ্য বস্তু হিসেবে নির্দেশ করে, একটি যৌনযন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে [1] –
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন আর তাত্থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। যখন সে স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হয় তখন সে লঘু গর্ভধারণ করে আর তা নিয়ে চলাফেরা করে। গর্ভ যখন ভারী হয়ে যায় তখন উভয়ে তাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ডেকে বলে, ‘যদি তুমি আমাদেরকে (গঠন ও স্বভাবে) ভাল সন্তান দান কর তাহলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।’
— Taisirul Quran
তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই ব্যক্তি হতেই তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যেন সে তার নিকট থেকে প্রশান্তি লাভ করতে পারে। অতঃপর যখন সে তার সাথে মিলনে প্রবৃত্ত হয় তখন সেই মহিলাটি এক গোপন ও লঘু গর্ভ ধারণ করে, আর ওটা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকে। যখন তার গর্ভ গুরুভার হয় তখন তারা উভয়েই তাদের রবের কাছে প্রার্থনা করেঃ আপনি যদি আমাদেরকে সৎ সন্তান দান করেন তাহলে আমরা আপনার কৃতজ্ঞ বান্দা হব।
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে। অতঃপর যখন সে তার সঙ্গিনীর সাথে মিলিত হল, তখন সে হালকা গর্ভ ধারণ করল এবং তা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকল। অতঃপর যখন সে ভারী হল, তখন উভয়ে তাদের রব আল্লাহকে ডাকল, ‘যদি আপনি আমাদেরকে সুসন্তান দান করেন তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব’।
— Rawai Al-bayan
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন যাতে সে তার কাছে শান্তি পায় [১]। তারপর যখন সে তার সাথে সংগত হয় তখন সে এক হালকা গর্ভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর গর্ভ যখন ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, ‘যদি আপনি আমাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন তাহলে আপানার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।’
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
কোরআনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, নারী হচ্ছে শস্য ক্ষেত্র স্বরূপ, তাকে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করা যাবে [2]। এরকম সরাসরি নারীকে সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন সামাজিকভাবে নারীকে একটি ভোগ্যপণ্য এবং যৌনযন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য খুবই কার্যকর। নারীর অবজেক্টিফিকেশন বলতে বোঝায় একজন ব্যক্তিকে, বিশেষ করে একজন নারীকে, একটি যৌন আবেদনের বস্তু বা যৌনযন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত বা ব্যবহার করার পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক অনুশীলন। এটি বহু শতাব্দী ধরে সমাজে একটি স্থায়ী সমস্যা, যা বিভিন্ন ধর্ম, প্রথা এবং সাংস্কৃতিক নিয়ম দ্বারা বদ্ধমূল হয় যা সমাজে একজন নারীর জন্য অত্যন্ত অমর্যাদাকর এবং অসম্মানজনক। এই ধরণের বক্তব্য এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর ওপর যৌন হয়রানি, নির্যাতন এবং সহিংসতার বৃদ্ধি করে।
নারীর সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন সমাজে লিঙ্গ বৈষম্যকেও স্থায়ী করে, কারণ এটি এই ধারণাটিকে শক্তিশালী করে যে নারীরা পুরুষদের থেকে নিকৃষ্ট এবং শুধুমাত্র তাদের যৌনকর্ম ও বাচ্চা উৎপাদনের জন্য মূল্যবান। অধিকন্তু, নারীদের সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন লিঙ্গ স্টিরিওটাইপগুলিকেও শক্তিশালী করে, যেমন এই ধারণার জন্ম দেয় যে, নারী হচ্ছে পুরুষের বশ্যতা স্বীকার করবে এবং এটিই তাদের ভবিতব্য। এবং এই ধারণাটিকে শক্তিশালী করে যে মহিলারা শুধুমাত্র কিছু বিশেষ কাজের জন্য উপযুক্ত, যা তাদের শিক্ষাদীক্ষা, পেশা নির্বাচন, স্বাধীন জীবনযাপন ইত্যাদির সুযোগ সীমিত করতে পারে। নারীর অবজেক্টিফিকেশন একটি ক্ষতিকর সামাজিক সমস্যা যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্যই সুদূরপ্রসারী পরিণতি বহন করে। এই সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য, সর্বক্ষেত্রে নারীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সম্মানজনক সমাজ তৈরি করতে হবে, যেখানে নারীরা কেবল তাদের শরীর নয়, মানুষ হিসেবেই সম্মান ও আত্মমর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করতে পারবে [3]
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যে প্রকারে ইচ্ছে গমন কর এবং নিজেদের জন্য ভবিষ্যতের বন্দোবস্ত কর এবং আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখ যে, তোমাদেরকে তাঁর কাছে হাজির হতে হবে। আর বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।
— Taisirul Quran
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত্র স্বরূপ; অতএব তোমরা যখন যেভাবে ইচ্ছা স্বীয় জীবনের জন্য ব্যবহার কর এবং নিজেদের আগামী দিনের জন্য ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখ, একদিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত হবে। আর বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।
— Sheikh Mujibur Rahman
তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন কর, যেভাবে চাও। আর তোমরা নিজদের কল্যাণে উত্তম কাজ সামনে পাঠাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় তোমরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে । আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও।
— Rawai Al-bayan
তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছে [১] গমন করতে পার। আর তোমরা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু করো [২] এবং আল্লাহ্কে ভয় করো। এবং জেনে রেখো, তোমরা অবশ্যই আল্লাহ্র সম্মুখীন হবে। আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসূফের একটি ভিডিও দেখে নেয়া যাক,
একইসাথে পড়ুন নিচের হাদিসটি [4] –
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান
পরিচ্ছদঃ ৯. মহিলাদের সম্পর্কে ওসিয়ত
৩৫১২। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র আল-হামদানী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়া উপভোগের উপকরণ (ভোগ্যপণ্য) এবং দুনিয়ার উত্তম উপভোগ্য উপকরণ পুণ্যবতী নারী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
অনেক মুসলিম প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, বনলতা সেন কবিতাতেও তো জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন। এটিও কী নারীকে অবজেক্টিফাই করা? কিন্তু জীবনানন্দ দাশের কবিতা কিংবা অন্য কোন কবিতা আমাদের জন্য কোন আইন কিংবা জনগণের নৈতিকতার উৎস হিসেবে বিবেচ্য নয়। জীবনানন্দ দাশও সামগ্রিকভাবে নারীদের শান্তি দেয়ার বস্তু হিসেবে কোথাও উল্লেখ করেননি। বিশেষ একজন নারী সম্পর্কে তার মনের ভাব প্রকাশ আর সমস্ত নারীকে উপভোগের বস্তু বলা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। সেইসাথে, কোরআন হাদিসের বাণী মুসলিমদের নীতি নৈতিকতার উৎস হিসেবে বিবেচিত। এরকম গ্রন্থ তো কোন ব্যক্তির লিখিত কবিতার বইয়ের সাথে তুলনীয় নয়। আসুন ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিবের লেখা নবীদের কাহিনী বই থেকে এই বিষয়ে একটি আলোচনা পড়ি, যেখানে বলা হচ্ছে যে, ফেরেশতাগণ সিজদা করেছিল আদমকে, হাওয়াকে নয়। কারণ হাওয়া কোন পৃথক স্বাধীন সৃষ্টি ছিল না। যার অর্থ হচ্ছে, নারী কোন স্বাধীন সত্ত্বাই নয়, বরঞ্চ আসল সৃষ্টি হচ্ছে আদম [5] –

এবারে আসুন তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে পড়ি, যেখানে আসলে হাওয়ার মুখ থেকে বর্ণনা করানো হচ্ছে যে, নারীর সৃষ্টিই হয়েছে পুরুষের যৌন তৃপ্তির জন্য [6] –

তথ্যসূত্র
- সূরা ৭, আয়াত ১৮৯ [↑]
- কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২২৩ [↑]
- সূরা বাকারা, আয়াত ২২৩ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫১২ [↑]
- নবীদের কাহিনী-১, ড মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব, পৃষ্ঠা ১৯ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৯ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"