নবীর বাণী হিসেবে বর্ণিত কয়েকটি সহিহ হাদিস রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে নামাজে ইমামের আগে মাথা উঠালে সেই মানুষের মাথাটি গাধার মাথায় পরিণত হবে। এটি স্পষ্টতই উদ্ভট এবং যেকোন সুস্থ স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষী বুঝবেন, এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কোনো ভিত্তি নেই। এই বক্তব্য আসলে ধর্মীয় ভীতি ও অন্ধবিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা। এমন একটি দাবি, যা জীববিজ্ঞান, শারীরবৃত্তি, বা বাস্তবতার সাথে বিন্দুমাত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, সেটি শুধু অযৌক্তিক নয় বরং এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতারণা। মানুষের মাথা কখনো গাধার মাথায় পরিণত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি, এমনকি পৃথিবীর সমস্ত ইতিহাসে এর কোন নজির নেই, শুধুমাত্র ধর্মীয় গালগপ্প বাদে। এটি কেবল যুক্তি, বিজ্ঞান এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রতি অবজ্ঞার নিদর্শন।
এই ধরনের অযৌক্তিক হাদিস একটি বৃহত্তর সমস্যা তুলে ধরে, যা ধর্মীয় বিশ্বাসের নামে যুক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতাকে দমন করে। এটি প্রশ্ন জাগায় যে, কেন এমন অসার ও অযৌক্তিক বক্তব্যকে ধর্মীয় শিক্ষার অংশ হিসেবে প্রচার করা হয়! এটি ধর্মীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার একটি পদ্ধতি হতে পারে, যেখানে বিশ্বাসীদেরকে শৃঙ্খলিত রাখতে এবং প্রশ্ন করার সাহস দমিয়ে রাখতে এই ধরনের ভীতি-সঞ্চারী বক্তব্য ব্যবহার করা হয়। অথচ, ধর্ম যদি প্রকৃতপক্ষে মানুষের আত্মিক এবং নৈতিক উন্নতি সাধন করতে চায়, তবে এ ধরনের অযৌক্তিক মিথ্যা হুমকির আশ্রয় কেন নিতে হবে? এমন বক্তব্যের মাধ্যমে ধর্ম কেবল নিজেকে হাস্যাস্পদ করে তোলে এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, ও উন্নত চিন্তার জন্য একটি বাধা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
এই হাদিসটি শুধু বৈজ্ঞানিক ও বাস্তবতার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে না, এটি ধর্মকে একটি অলৌকিক এবং ভীতিপ্রসূত ধারণার বন্দিশালায় আবদ্ধ রাখে। এটি বিশ্বাসীদের মধ্যে যুক্তি ও প্রশ্ন করার প্রবণতাকে দমন করে এবং সমাজে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের শিকড় আরও গভীর করে। এই ধরনের বক্তব্যকে সরাসরি এবং তীব্রভাবে সমালোচনা করা প্রয়োজন, কারণ এটি কেবল ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবকেই তুলে ধরে না, বরং মানব সভ্যতার অগ্রগতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির পথে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। আসুন শুরুতেই একজন আলেমের বক্তব্য শুনে নিই,
এবারে আসুন হাদিসগুলো পড়ি,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত
পরিচ্ছেদঃ ২৮. প্রথম অনুচ্ছেদ – মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম
১১৪১-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক ইমামের পূর্বে (রুকূ’ সিজদা্ হতে) মাথা উঠায় সে-কি এ বিষয়ের ভয় করে না যে, আল্লাহ তা’আলা তার মাথাকে পরিবর্তন করে গাধার মাথায় পরিণত করবেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : বুখারী ৬৯১, মুসলিম ৪২৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২/ সালাত
পরিচ্ছেদঃ ৭৬. যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় বা নামায় তার ব্যাপারে হুঁশিয়ারী
৬২৩। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কি ভয় হয় না, ইমাম সিজদাতে থাকাবস্থায় কেউ মাথা উঠালে আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথা অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে রূপান্তরিত করে দিতে পারেন। [1]
সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)