শিশুরা আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন। শিশুদের আমরা যা শেখাই, তারা সেটিই শেখে। একটি শিশু যদি একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়, স্বাভাবিকভাবেই তার পিতামাতা তাদের ইসলাম ধর্মের দীক্ষা দেয়। আবার সে যদি হিন্দু ধর্মের পরিবারে জন্ম নেয়, তাকে শেখানো হয় হিন্দু ধর্মের নিয়মকানুন। সাধারণভাবে কোন শিশুই আসলে জানে না, কোন ধর্মটি সত্য, কোন ধর্মটি মিথ্যা। যাচাই করে দেখা, বুদ্ধি জ্ঞান প্রজ্ঞা দিয়ে নির্ধারণ করা তার পক্ষে আসলে সম্ভব নয়। তার পিতামাতা যদি তাকে শেখায় হিন্দু ধর্মই সত্য, ইসলাম মিথ্যা, তাহলে সে সেই শিক্ষা নিয়েই বড় হবে। তার পিতামাতা যদি তাকে শেখায় ইহুদি ধর্মই সত্য, বাদবাকি ধর্মগুলো মিথ্যা, তাহলে সে সেই শিক্ষা নিয়েই বড় হবে। কিন্তু একজন শিশুর অধিকার থাকা উচিত, সে ধর্মগুলো সম্পর্কে জানবে, বুঝবে, যাচাই করবে। এরপরে যখন সে প্রাপ্তবয়ষ্ক হবে, তখন বুঝে শুনে নিজের যুক্তি বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। বাবা মাযের ধর্মটিই যদি তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়, তাকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ না দেয়া হয়, তাহলে সেটি তার অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে।
হয়তো তার বাবা মা ইহুদি ধর্মের, কিন্তু সে যাচাই বাছাই করার পরে তার জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে যদি মনে করে ইসলাম সত্য, তাহলে তার এই অধিকার থাকা উচিত, সে ইসলাম গ্রহণ করবে। একই কথা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শিশুদের কাছে ওপর নিজের ধর্মবিশ্বাস চাপিয়ে দেয়া অন্যায়। তাদের যাচাই বাছাই করার সুযোগ দেয়া উচিত। কিন্তু মুসলিম ধর্মাবলম্বীগণ হিন্দু খ্রিস্টান বৌদ্ধ ইহুদিদের সন্তানদের ইসলামের শিক্ষা জানাতে চাইলেও, মুসলিম শিশুদের তারা অন্য কোন ধর্ম সম্পর্কে জানতে দিতে ইচ্ছুক নয় [1] –
Ruling on teaching false religions to children
217084
Publication : 07-06-2014
Question
Im a student, becoming a teacher in religion to teach children. I live in Europe, in a Christian country, but my studies teaches the five main world religions (Islam, Christianity, Judaism, Hinduism and Buddhism). I’ve never thought that it could be haram to teach other religions to children, because I don’t see non-Islamic religions as the truth and I will never tell it is. I believe children need to know what other people believe in this world.
However, many people have been telling me my studies are haram and it’s definitely haram to teach to other children, especially muslim children. I’ve been searching, but I couldn’t find any source clarifying anything. I hope you can clarify it. Thank you very much in advance!
Answer
Praise be to Allah.
The basic principle is that it is not permissible to study or teach the distorted Scriptures, false religions or schools of thought that are contrary to the truth, unless that is done with the aim of teaching people that they are corrupt and false, and that they are contrary to reason and common sense, and contrary to the religion of truth which Allah, may He be glorified, has chosen for His slaves, namely Islam. In addition to that, the one who is studying that should also have sound knowledge of the truth and the ability to distinguish truth from falsehood, error from right guidance, and there should be no fear that he will be tempted or confused by that. This kind of study should be limited to specialists who it is hoped will play a role in combatting these distorted and devilish religions; the door should not be left open to everyone, especially the common folk and children, lest that create in them doubts and uncertainty about their religion. It says in Haashiyat Ibn ‘Aabideen (1/175): We were instructed not to look into any of that, whether it was transmitted to us by the disbelievers or by those among them who became Muslim. End quote.
In Kashshaaf al-Qinaa‘ ‘an Matn al-Iqnaa‘ (1/434) it says: It is not permissible to read the books of the People of the Book – this was stated by Imam Ahmad – because the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) got angry when he saw ‘Umar carrying a page of the Torah, and he said to him: “Are you doubting, O son of al-Khattab?” … It is not permissible to read the books of those who follow innovation or the books that contain both truth and falsehood, or to narrate them, because that comes under the heading of corrupting beliefs. End quote.
Al-Haafiz Ibn Hajar (may Allah have mercy on him) said, when discussing this issue – namely reading the books of the People of the Book: With regard to this issue, it is more appropriate to differentiate between the one whose faith is not deeply-rooted, in which case it is not permissible for him to read any of those books, in contrast to the one whose faith is deeply rooted, for whom it is permissible to do so, especially when there is a need to refute the arguments of those whose view is opposed to the truth. That is indicated by the fact that the imams (leading scholars) of the past and present quoted from the Torah and challenged the Jews to believe in Muhammad (blessings and peace of Allah be upon him) on the basis of what they quoted from their books. If they did not believe that it is permissible to read it, they would not have done that and they would all have reiterated this view.
End quote from Fath al-Baari by Ibn Hajar, 13/525
Shaykh Ibn Baaz (may Allah have mercy on him) was asked: Is it permissible for us to read the books of religions other than Islam, out of a desire to study and learn about other religions? He replied: That is not appropriate. It is not appropriate to read the Torah or the Gospel or any other books, because that may lead to doubt, and it was narrated from the Messenger (blessings and peace of Allah be upon him) that when he saw ‘Umar reading a page of the Torah, he said: “Are you doubting, O son of al-Khattab? I have brought it to you white and pure; if Moosa were alive he could not but follow me.” What is meant is that the Muslim should not read other books, such as the Torah, the Gospel or any others, except in the case of those who need to read them, such as scholars who want to refute the Jews and Christians from their own books. If there is a need to do so, the scholar who is refuting them and highlighting their falsehood may read their books so that he may refute them on that basis. In that case there is nothing wrong with doing that when there is a need for it, in the case of those who have knowledge and insight.
End quote from the Shaykh’s website
http://www.binbaz.org.sa/mat/10748
If this is the ruling for adults, then it is more applicable in the case of children, because their reasoning is still immature, so teaching them these religions is a wrong action in which there is nothing good. You will never be allowed, whilst teaching, to criticize these false religions and highlight their falseness; even if this is allowed, children will never be able to understand that, because specious arguments and refutation thereof will be above their level of understanding.
And Allah knows best.
এই উত্তরটির কিয়দাংশের অনুবাদ নিচে দেয়া হলো। অনুবাদকঃ ফারহান চৌধুরি।
শিশুদের মিথ্যা ধর্ম শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে নীতিমালা
প্রশ্ন
আমি একজন ছাত্র, শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য ধর্মের একজন শিক্ষক হচ্ছি। আমি ইউরোপে থাকি, একটি খ্রিষ্টান দেশ, কিন্তু আমার পাঠ্যক্রমে আছে বিশ্বের প্রধান পাচঁটি ধর্ম (ইসলাম, খ্রিষ্টান, ইহুদী, হিন্দু এবং বৌদ্ধ)। আমি কখনো ভাবিনি যে, শিশুদের অন্য ধর্ম শিক্ষাদান ক্ষতির কারণ হতে পারে, কারণ আমি ইসলাম বাদে অন্য ধর্ম গুলোকে সত্য বলে মনে করিনা এবং আমি কখনো বলবও না এটা। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর অন্য মানুষেরা কি বিশ্বাস করছে সেটাও শিশুদের জানা উচিত।
যাইহোক, অনেক মানুষই আমাকে বলছে যে আমার পড়ালেখার বিষয়টি হারাম এবং অন্য শিশুদের শিক্ষা দেয়াটাও অবশ্যই হারাম, বিশেষত মুসলিম শিশুদের। আমি অনুসন্ধান করছি, কিন্তু ব্যাখ্যা দেয়ার মত স্পষ্ট কোনো উৎস পাইনি। আশা করছি আপনি বিষয়টি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। অগ্রিম ধন্যবাদ।
উত্তর
সকল প্রশংসা আল্লাহর।
মৌলিক নীতি হচ্ছে যে, বিকৃত ধর্মগ্রন্থ, মিথ্যা ধর্ম অথবা যে সকল চিন্তা সত্যের পরিপন্থী তা পড়া বা শিক্ষাদানের অনুমতি নেই, যদিনা তা নীতি বহির্ভূত বা মিথ্যা হিসেবে মানুষকে বুঝানোর উদ্দেশ্যে শিক্ষা দেয়া হয় এবং যা তর্ক ও সাধারণ চিন্তার পরিপন্থী, এবং সত্য ধর্ম যার নাম ইসলাম, এর পরিপন্থী যা কিনা স্বয়ং আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের জন্য মনস্থ করেছেন। আরও বলা যায়, যে ব্যক্তি এ বিষয়ে পড়ছেন তার অবশ্যই সত্য সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকতে হবে এবং মিথ্যা থেকে সত্যকে আলাদা করার এবং সত্যপথ থেকে ভুলকে পার্থক্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে, এবং সেসব জ্ঞান দ্বারা প্রলোভিত বা দ্বিধান্বিত হওয়ার কোনো ভয় থাকা যাবেনা। এ ধরনের শিক্ষা অবশ্যই শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞদের জন্য নির্ধারিত হতে হবে যারা এসব বিকৃত এবং শয়তান ধর্মের সাথে যুদ্ধ করবে বলে আশা করা যায়; এ শিক্ষার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত নয়, বিশেষত সাধারণ জনগণ ও শিশুদের জন্য যেন ধর্ম সম্বন্ধে তাদের মনে কোনো সন্দেহ বা অনিশ্চয়তার জন্ম না নেয়।
হাশিয়াত ইবনে ‘আবিদান হতে বর্ণিত (১/১৭৫)ঃ ” এসব বিষয়ে লক্ষ্য না দেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যদিও তা অবিশ্বাসী বা তাদের মধ্যে যারা মুসলিম হয়েছে তাদের কাছ থেকে এসে থাকে।”
কাশশাফ আল-কিনা’ ‘আন মাতন আল-কিনা(১/৪৩৪) হতে বর্ণিতঃ বিধর্মীদের বই পড়ার কোনো অনুমতি নেই – এ উক্তিটি করেছেন ইমাম আহমেদ – কারণ নবী (সাঃ) একদা রেগে গিয়েছিলেন যখন তিনি উমর’ কে তাওরাতের একটি পৃষ্ঠা বহন করতে দেখেন, এবং তিনি তাকে বলেনঃ ” তুমি কি সন্ধেহের বশবর্তী হয়েছ, ইবন খাত্তাব?”….. যারা নতুন কিছুকে অনুসরণ করে তাদের বই পড়া বা তিলওয়াতের অনুমতি নাই এবং সে সব বই যাতে সত্য ও মিথ্যা উভয়ই আছে, কারণ সেসব আসে কলুষিত বিশ্বাস থেকে।’
আল হাফিজ ইবনে হাজর (র) হতে বর্ণিত, এই বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় – অর্থাৎ বিধর্মীদের বই পড়া বিষয়ে বলেনঃ এই সমস্যা বিবেচনায়, যাদের বিশ্বাস গভীর নয় তাদের এসব হতে আলাদা করাই উচিত, এক্ষেত্রে তার জন্য এসব বই পড়ারই কোনো অনুমতি নেই, অপরপক্ষে যাদের গভীর বিশ্বাস আছে, তার জন্য এর অনুমতি আছে, বিশেষত যখন যাদের অভিমত সত্যের বিরোধী তাদের যুক্তি খন্ডনের প্রয়োজন হয়। এটি সত্য দ্বারা নির্দেশিত যে, অতীত এবং বর্তমানের ইমামগণ (বিশিষ্ট আলেমগণ) ইহুদীদের মুহাম্মদ (সাঃ) সম্বন্ধে বিশ্বাস করানোর জন্য তাওরাত হতে উদ্ধৃতি দিয়েছেন যখন তারা তাদের বই থেকে উদ্বৃত্ত করেছে। যদি তারা এটা পাঠের অনুমতি আছে বলে বিশ্বাস করত না, তবে তারা এমনটি করত না এবং তারা এই মতের পুনরাবৃত্তি করত।
শেষ উক্তিটি ফাত আল-বারী হতে বর্ণিত, ১৩/৫২৫।
তথ্যসূত্র
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"