ইসলামের নামে খেলাধুলাকে হারাম ঘোষণা করার প্রবণতা একটি সংকীর্ণ মানসিকতার প্রতিফলন। ইসলামে মূলত চার প্রকারের খেলাধুলা যেমন: ঘোড়দৌড়, তীরন্দাজি, সাঁতার, এবং যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য খেলাধুলা অনুমোদিত বলে উল্লেখ রয়েছে, কোন কোন স্থানে স্ত্রী বা দাসীর সাথে প্রেমকেলী করার কথাও বলা হয়েছে। এর বাইরের সব ধরনের খেলাধুলাকে হারাম ঘোষণা করা এবং পেশা হিসেবে গ্রহণ করা থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। একে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে তার থেকে আয় উপার্জনও তাই হারাম হিসেবেই বিবেচিত হবে। এটি সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক এবং বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। খেলাধুলা মানুষের জীবনে শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যমই নয়, বরং এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, শৃঙ্খলা, এবং সামাজিক সংহতির প্রতীক। আধুনিক যুগে খেলাধুলা বৈশ্বিক সম্প্রীতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বিশাল মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। অথচ খেলাধুলাকে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সরাসরি হারাম বলে অভিহিত করা একটি সংকীর্ণ ও রক্ষণশীল মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
মুহাম্মদের কিছু বক্তব্যের ভিত্তিতে খেলাধুলা হারাম বলে প্রচার করা রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের একটি কূপমণ্ডূক এবং অসভ্য জাতি হিসেবে বহির্বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দেবে। বিভিন্ন খেলাধুলা যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল ইত্যাদি শুধু বিনোদনের জন্য নয় বরং পেশাদারীত্ব, প্রতিভার বিকাশ, এবং সামাজিক যোগাযোগের এক অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। খেলাধুলা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়, যেমন পরিশ্রম, সময় ব্যবস্থাপনা, দলীয় সংহতি এবং প্রতিকূলতার মধ্যে ধৈর্যধারণ। খেলোয়াড়রা তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি জাতির গর্ব হয়ে ওঠেন, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখেন এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন।
অন্যদিকে, খেলাধুলা থেকে আয় করা হারাম বলা হলো একটি অযৌক্তিক বক্তব্য যা বর্তমান বাস্তবতায় প্রযোজ্য নয়। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত খেলোয়াড় যারা তাদের প্রতিভার জন্য কোটি কোটি মানুষের প্রিয়, তারা তাদের আয় থেকে বিভিন্ন মানবিক কাজেও অবদান রাখেন। তাদের এই অবদান সমাজের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য সহায়ক হয়। খেলাধুলার মাধ্যমে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়, তেমনি দেশীয় অর্থনীতিতেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তাই খেলাধুলাকে ইসলামের নামে হারাম বলা শুধু যে অবিবেচক তা-ই নয়, এটি সময়োপযোগী সমাজব্যবস্থা ও মানুষের চাহিদার সঙ্গে একেবারেই বেমানান।
সবশেষে, খেলাধুলাকে ইসলামে হারাম বলে প্রচার করার চিন্তাভাবনাকে পরিত্যাগ করতে হবে এবং খেলাধুলার গুণগত দিকগুলোকে স্বীকার করে নিতে হবে। আমাদের উচিত, খেলাধুলাকে শুধু বিনোদন নয় বরং জীবনের একটি অংশ হিসেবে গ্রহণ করা এবং এ থেকে অর্জিত শিক্ষা, শৃঙ্খলা, এবং ইতিবাচক দিকগুলোকে আমাদের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা। আসুন শুরুতেই আলেমদের কাছ থেকে খেলাধুলা বিষয়ে ইসলামের বিধানটি জেনে নিই,
হাদীস সম্ভার
অধ্যায়ঃ ২২/ নিষিদ্ধ কার্যাবলী
পাবলিশারঃ ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী
পরিচ্ছদঃ নিষিদ্ধ খেলাধূলা
(২৩৩০) জাবের বিন আব্দুল্লাহ ও জাবের বিন উমাইর (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, তাঁদের একজন অপরজনকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক সেই জিনিস (খেলা) যা আল্লাহর স্মরণের পর্যায়ভুক্ত নয়, তা অসার ভ্রান্তি ও বাতিল। অবশ্য চারটি কর্ম এরূপ নয়; হাতের নিশানা ঠিক করার উদ্দেশ্যে তীর খেলা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, নিজ স্ত্রীর সাথে প্রেমকেলি করা এবং সাঁতার শিক্ষা করা।’’ (নাসাঈর কুবরা ৮৯৩৮-৮৯৪০, ত্বাবারানীর কাবীর ১৭৬০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৩১৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হাদীস সম্ভার
২২/ নিষিদ্ধ কার্যাবলী
পরিচ্ছেদঃ নিষিদ্ধ খেলাধূলা
(২৩২৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে পায়রা উড়িয়ে খেলা করতে দেখে বললেন, শয়তান শয়তানের অনুসরণ করছে।
(আহমাদ ৮৫৪৩, আবূ দাঊদ ৪৯৪২, ইবনে মাজাহ ৩৭৬৫ হাসান সনদে)
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)