05.জাকির নায়েকের মিথ্যাচারঃ ইসলামিক জবাইতে পশু কষ্ট পায় না?

ইসলামিক কোরবানির প্রথা অনুযায়ী, পশু জবাই করার সময় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলা হয়, যা ইসলামের ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। এই প্রথায় পশুর গলার সামনের অংশ কেটে দেয়া হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে রক্ত প্রবাহিত হতে দেয়া হয়। গলা কাটার সময় স্পাইনাল কর্ড অক্ষত থাকে, ফলে পশুটি ধীরে ধীরে রক্তশূন্য হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি বৃহৎ অংশ বিশ্বাস করেন, এটি প্রাণীর জন্য কম যন্ত্রণাদায়ক! তবে একটি একটু সাধারণ জ্ঞান খাটালেই বোঝা যায়, এটি মোটেও প্রাণীদের জন্য কম যন্ত্রণাদায়ক নয়, বরঞ্চ বেশি যন্ত্রণাদায়ক। আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, স্পাইনাল কর্ড অক্ষত থাকার কারণে প্রাণীটি দীর্ঘ সময় ধরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে। আসুন শুরুতে জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে নেয়া যাক,

স্পাইনাল কর্ড এবং ব্যথা অনুভূতির সম্পর্ক

স্পাইনাল কর্ড একটি প্রাণীর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মস্তিষ্কের সাথে শরীরের বিভিন্ন অংশের সংযোগ স্থাপন করে এবং ব্যথা ও অন্যান্য সংবেদন মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। যখন কোনো প্রাণীর স্পাইনাল কর্ড অক্ষত থাকে, তখন তার শরীর থেকে ব্যথা বা যন্ত্রণার সিগন্যাল মস্তিষ্কে পৌঁছায়। জবাইয়ের পর, যদি স্পাইনাল কর্ড অক্ষত থাকে, তাহলে প্রাণীটির মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত পাঠানো চালু থাকে, ফলে পশুটি তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যথা অনুভব করে। বিভিন্ন গবেষণাতে দেখা যায়, প্রাণী যখন ধীরে ধীরে রক্তশূন্য হয়, তখন তার শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। তবে স্পাইনাল কর্ড অক্ষত থাকায় মস্তিষ্ক তখনও সংকেত গ্রহণ করে চলতে থাকে, যা প্রাণীকে ব্যথার অনুভূতি দিতে থাকে ।

আধুনিক পশু অধিকারের দৃষ্টিকোণ

আধুনিক পশু কল্যাণ সংস্থাগুলি মনে করে যে, জবাইয়ের সময় স্পাইনাল কর্ড কেটে ফেলা হলে বা নষ্ট করা হলে পশুটি দ্রুত সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে এবং ব্যথা কম অনুভব করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পশু কল্যাণ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, পশু জবাই করার সময় তাদের অচেতন করার নিয়ম অনুসরণ করা হয়। এই অচেতন করার পদ্ধতিগুলি যেমন বৈদ্যুতিক শক বা বুলেটের সাহায্যে মস্তিষ্কে আঘাত করা, প্রাণীকে দ্রুত সংজ্ঞাহীন করে তোলে এবং এর ফলে তারা যন্ত্রণা অনুভব করার সময় পায় না।

একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, স্পাইনাল কর্ড অক্ষত থাকলে প্রাণীর যন্ত্রণা দীর্ঘ হয়। মূলত, প্রাণীর শরীরের স্পাইনাল কর্ড পুরো শরীরের সকল ব্যাথা বেদনা অনুভূতি মস্তিষ্কে পাঠায়, তাই স্পাইনাল কর্ড ব্যাথা অনুভবের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি অক্ষত থাকলে প্রাণী অবশ্যই অত্যাধিক ব্যাথা অনুভব করবে, যা বলাই বাহুল্য।

ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন

ইসলামিক কোরবানির প্রথা বহু বছর ধরে চলে আসছে এবং এর একটি ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। ইসলামী আইন অনুযায়ী, পশু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে গলা কাটা হয় এবং এর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত হয়, যা শুদ্ধতার প্রতীক। তবে আধুনিক বিজ্ঞান এবং পশু কল্যাণ সংস্থাগুলি মনে করে, এই প্রক্রিয়াটি পশুর জন্য বেশি যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে, কারণ স্পাইনাল কর্ড অক্ষত থাকার ফলে পশুটি ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জবাইয়ের সময় পশুকে অচেতন করা হলে, যেমন বৈদ্যুতিক শক বা গ্যাস ব্যবহার করে, তাদের যন্ত্রণা দ্রুত শেষ হয় এবং তারা তাড়াতাড়ি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। এ ধরনের পদ্ধতিগুলি পশুর যন্ত্রণার মাত্রা হ্রাস করার জন্য আধুনিক কৌশল হিসাবে গৃহীত হয়েছে। ফলে, পশ্চিমা দেশে পশু কল্যাণের নীতির সাথে সঙ্গতি রেখে এ ধরনের কৌশলগুলো প্রয়োগ করা হয়, যা পশুদের যন্ত্রণা কমায়।

উপসংহার

ইসলামিক কোরবানির প্রথায় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলা হয়, যা মুসলিম সমাজে গুরুত্বপূর্ণ। তবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রক্রিয়ায় পশুর যন্ত্রণা দীর্ঘ হতে পারে, কারণ স্পাইনাল কর্ড অক্ষত থাকার ফলে মস্তিষ্ক ব্যথার সংকেত পেতে থাকে এবং প্রাণীটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সচেতন থাকে। আধুনিক পশু কল্যাণ পদ্ধতিগুলিতে প্রাণীর যন্ত্রণা কমানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করা হয়, যেমন তাদের অচেতন করা বা দ্রুত মৃত্যু নিশ্চিত করা। গবেষণাগুলোর ফলাফল নির্দেশ করে যে, স্পাইনাল কর্ড ধ্বংস করে বা পশুকে অচেতন করে জবাই করা হলে তাদের যন্ত্রণা অনেকটাই কমানো সম্ভব।