08.আরিফ আজাদের মিথ্যাচারঃ তাকদীর সম্পর্কিত

আরিফ আজাদ নামক বাংলাদেশের একজন ইসলামি কিতাব লেখক তার কিতাবে লিখেছেন, [1]

1
3

আরিফ আজাদের এই বক্তব্যগুলো সরাসরি কোরআন হাদিসের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। আরিফ আজাদ হয় ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা লিখেন, অথবা উনি ইসলাম সম্পর্কে কোন জ্ঞানই রাখেন না। প্রথমেই আসুন আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকীদা গ্রন্থগুলোতে এই বিষয়ে কী লেখা রয়েছে তা পড়ে দেখা যাক। শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া অত্যন্ত বিখ্যাত একটি আকীদা গ্রন্থ, যার লেখক  ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী। তিনি তার বইতে ইসলামের এই আকীদাগত বিষয়টি স্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন এবং সকল উম্মতকে এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন, অনুসন্ধান, চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন। কারণ এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করলেই ইসলামের ঈমান দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই সকল আলেম ওলামা একমত [2]

5
7

ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষ আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছু ইচ্ছা করতে পারে না। এর অর্থ হচ্ছে, কেউ যদি ধর্ষণ করার ইচ্ছা করে, সেটি অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য ইচ্ছা করে দেয়। সে নিজে থেকে এই ইচ্ছাটি আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া করতে পারে না। একইভাবে কেউ যদি নামাজ পড়ার ইচ্ছা করে, সেটিও আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়। মানুষের পক্ষে শুধু সেটি ইচ্ছে করাই সম্ভব, যা আল্লাহ তার জন্য ইচ্ছে করে দিয়েছেন [3]

তোমরা ইচ্ছে কর না যদি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ ইচ্ছে না করেন।
Taisirul Quran
তোমরা ইচ্ছা করবেনা, যদি জগতসমূহের রাব্ব আল্লাহ ইচ্ছা না করেন।
Sheikh Mujibur Rahman
আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন
Rawai Al-bayan
আর তোমরা ইচ্ছে করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্ ইচ্ছে করেন (১)।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আল্লাহ্‌ কোরআনে খুব পরিষ্কারভাবেই বলেছেন, তিনি কিছু মানুষের অন্তরে মোহর মেরে দেন, কানসমূহ বন্ধ করে দেন, চোখে পর্দা দিয়ে ঢেকে দেন। যার ফলে তারা ইসলামকে জানতে এবং বুঝতে পারে না। যার ফলশ্রুতিতে তারা কাফের হয়ে যায়। এখন আমার মত নাস্তিকের অন্তরে আল্লাহ যদি মোহর লাগিয়ে দেন, সেই কারণে যদি আমি ইসলামের সত্যতা অনুধাবন করতে না পারি, এর জন্য দায়ী আসলে কে? [4]

আল্লাহ তাদের অন্তর ও কানের উপর মোহর করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখে আছে আবরণ আর তাদের জন্য আছে মহা শাস্তি।
Taisirul Quran
আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহের উপর ও তাদের কর্ণসমূহের উপর মোহরাংকিত করে দিয়েছেন এবং তাদের চক্ষুসমূহের উপর আবরণ পড়ে আছে এবং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি।
Sheikh Mujibur Rahman
আল্লাহ তাদের অন্তরে এবং তাদের কানে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের চোখসমূহে রয়েছে পর্দা। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাআযাব।
Rawai Al-bayan
আল্লাহ্‌ তাদের হৃদয়সমূহ ও তাদের শ্রবণশক্তির উপর মোহর করে দিয়েছেন (১), এবং তাদের দৃষ্টির উপর রয়েছে আবরণ। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আল্লাহ্‌ বলেছেন, তিনি সমস্ত বস্তুকেই তাকদীর অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন [5]

আমি প্রত্যেক বস্তুকে তাকদীর অনুযায়ী সৃষ্টি করেছি।

এই পৃথিবীতে যত ধরণের ভাল ঘটনা ঘটে, বিপদ-আপদ ঘটে, ফিতনা-ফাসাদ আপতিত হয় আল্লাহ্‌ তাআলা সেসব ঘটার আগেই সে সম্পর্কে জানেন এবং সেটি তিনি লওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন। যা বিশ্বাস করা প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। কোরআনে বলা হয়েছে [6]

পৃথিবীতে ও তোমাদের জানের উপর যে বিপদই আসুক না কেন আমরা তা সৃষ্টি করার আগেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।

ইসলাম ধর্ম অনুসারে প্রতিটি মুসলিমের অবশ্যই এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, কোন কিছুই আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে ঘটে না। হোক না সেটি আল্লাহর কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট অথবা মাখলুকের কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ যা ইচ্ছা নির্ধারণ করেন, যাকে ইচ্ছা তাকে মনোনীত করেন। কোরআনে বলা হয়েছে [7]

আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং (যা ইচ্ছা) মনোনীত করেন।

আল্লাহ আরো বলেন, তিনি যেটি ইচ্ছা করেন সেটিই করেন বা ঘটান [8]

এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা সেটাই করেন

আল্লাহ বলেন, তিনি যেভাবে ইচ্ছা মাতৃগর্ভেই আকৃতি দান করেন। এগুলো নিতান্তই তার ইচ্ছাধীন। অর্থাৎ, পৃথিবীতে যেসকল অসংখ্য শিশু নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্ম নেয়, সেগুলো আল্লাহ পাক ইচ্ছা করেই তাদের ঐরকম আকৃতি দান করেন [9]

তিনিই মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে আকৃতি দান করেন যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে

আল্লাহ পাক সেই সাথে আরো বলেন, আল্লাহ না চাইলে কেউ কিছু করতেও পারতো না [10] [11]

তোমার রব যদি ইচ্ছা করত, তবে তারা তা করত না

তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে যথোচিত আকৃতি দান করেছেন

তাছাড়া গোটা মহাবিশ্ব আল্লাহ তাআলার মালিকানাধীন। অতএব, তাঁর মালিকানাভুক্ত রাজ্যে কোন কিছু তাঁর অজ্ঞাতসারে অথবা অনিচ্ছায় ঘটা সম্ভব নয়। কোরআনে বলা হয়েছে [12] [13]

আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।

যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত

এবারে আসুন, একটি আয়াত তাফসীর সহ পড়ি। [14]

MUHIUDDIN KHAN
আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যতিরেকে তোমরা অন্য কোন অভিপ্রায় পোষণ করবে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।

সৌদি সরকার দ্বারা সত্যায়িত আল বায়ান ফাউন্ডেশনের অনুবাদটিও দেখে নিইঃ

9

এবারে এই আয়াতটির তাফসীর পড়ি, তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে [15]

11

এবারে আসুন এই আয়াতটির তাফসীর পড়ে দেখি, [16]

13

এবারে আসুন তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে আরেকটি পৃষ্ঠার অংশবিশেষ পড়ে নেয়া যাক [17]

15

কোরআনে এটিও খুব স্পষ্ট ভাষায় বলা আছে, শয়তান মানুষকে কুমন্ত্রণা বা প্ররোচনা দেয় আল্লাহর অনুমতিক্রমেই। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সে কাউকে পথভ্রষ্ট করতে সক্ষম নয়। কোরআনে বলা হয়েছে [18]

গোপন পরামর্শ হল মু’মিনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্য শয়ত্বান প্ররোচিত কাজ। তবে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না। মু’মিনদের কর্তব্য হল একমাত্র আল্লাহরই উপর ভরসা করা।
( Taisirul Quran )
শাইতানের প্ররোচনায় হয় এই গোপন পরামর্শ, মু’মিনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্য; কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত শাইতান তাদের সামান্যতম ক্ষতি সাধনেও সক্ষম নয়। মু’মিনদের কর্তব্য হল আল্লাহর উপর নির্ভর করা।
( Sheikh Mujibur Rahman )
গোপন পরামর্শ তো হল মুমিনরা যাতে দুঃখ পায় সে উদ্দেশ্যে কৃত শয়তানের কুমন্ত্রণা মাত্র। আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সে তাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। অতএব আল্লাহরই ওপর মুমিনরা যেন তাওয়াক্কুল করে।
( Rawai Al-bayan )
গোপন পরামর্শ তো কেবল শয়তানের প্ররোচনায় হয় মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্য। তবে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া শয়তান তাদের সামান্যতম ক্ষতি সাধনেও সক্ষম নয়। অতএব, আল্লাহ্‌র উপরই মুমিনরা যেন নির্ভর করে।
( Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria )

আল্লাহ পাক সেই আদি অবস্থাতেই সকলের জান্নাত জাহান্নাম নির্ধারিত করে রেখেছেন। শুধু নির্ধারণ করেই শেষ হয়নি, আল্লাহ পাক যাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাকে দিয়ে জান্নাতবাসীদের কাজ করিয়ে নেন, আর যাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তাকে দিয়ে জাহান্নামীদের কাজ করিয়ে নেন। এবারে একটু ভাবুন তো, এর অর্থ কী? হাদিসটি পাবেন এখানে [19]

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
অধ্যায়ঃ ৩৫/ সুন্নাহ
৪৭০৩। মুসলিম ইবনু ইয়াসার আল-জুহানী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলোঃ ‘‘যখন তোমার রব আদম সন্তানের পিঠ থেকে তাদের সমস্ত সন্তানদেরকে বের করলেন…’’ (সূরা আল-আ‘রাফঃ ১৭২)। বর্ণনাকারী বলেন, আল-কা‘নবী এ আয়াত পড়েছিলেন। উমার (রাঃ) বলেন, আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর স্বীয় ডান হাতে তাঁর পিঠ বুলিয়ে তা থেকে তাঁর একদল সন্তান বের করে বললেন, আমি এদেরকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জান্নাতবাসীর উপযোগী কাজই করবে।
অতঃপর আবার তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে একদল সন্তান বেরিয়ে এনে বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং জাহান্নামীদের উপযোগী কাজই করবে। একথা শুনে এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমলের কি মূল্য রইলো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তার দ্বারা জান্নাতবাসীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষে সে জান্নাতীদের কাজ করেই মারা যায়। আর আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যখন তিনি কোনো বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজ করিয়ে নেন। অবশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করে মারা যায়। অতঃপর এজন্য তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করান।(1)
সহীহ, পিঠ বুলানো কথাটি বাদে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আল্লাহ পাক আদমকে সৃষ্টি করার পরে তার পিঠ থেকে জান্নাতী এবং জাহান্নামী মানুষকে বের করেছিলেন, যা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ জান্নাতের জন্য কিছু মানুষ নির্দিষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন, এবং জাহান্নামের জন্য কিছু মানুষকে। আল্লাহ পাক যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, মানুষের পক্ষে তা পরিবর্তন সম্ভব নয় [20] [21]

গ্রন্থের নামঃ মুয়াত্তা মালিক
অধ্যায়ঃ ৪৬. তকদীর অধ্যায়
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ১. তকদীরের ব্যাপারে বিতর্ক করা নিষেধ
রেওয়ায়ত ২. মুসলিম ইবন ইয়াসার জুহানী (রহঃ) হইতে বর্ণিত, উমর (রাঃ)-এর নিকট (‏وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ) (সূরা আ’রাফঃ ১৭২) আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হইল। তিনি বলিলেন, আমি শুনিয়াছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হইয়াছিল। তিনি বলিয়াছিলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করিলেন এবং তাহার পৃষ্ঠে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা মুসেহ করিলেন, অতঃপর আদমের পৃষ্ঠদেশ হইতে তাহার সন্তানদেরকে বাহির করিলেন এবং বলিলেন, আমি ইহাদেরকে বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করিয়াছি। ইহারা বেহেশতের কাজ করবে। অতঃপর পুনরায় তাহার পৃষ্ঠদেশে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত বুলাইলেন এবং তাহার আর কিছু সংখ্যক সন্তান বাহির করিলেন এবং বলিলেন, আমি ইহাদেরকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করিয়াছি। ইহারা দোযখের কাজ করবে। এক ব্যক্তি বলিয়া উঠিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহা হইলে আমল করায় লাভ কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহু পাক যখন কোন বান্দাকে বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তাহার দ্বারা বেহেশতীদের কাজ করান আর মৃত্যুর সময়েও সে নেক কাজ করিয়া মৃত্যুবরণ করে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাহাকে বেহেশতে প্রবেশ করাইয়া থাকেন। আর যখন কোন বান্দাকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তাহার দ্বারা দোযখীদের কাজ করাইয়া থাকেন। অতঃপর মৃত্যুর সময়েও তাহাকে খারাপ কাজ করাইয়াই মৃত্যুবরণ করান। আর আল্লাহ তখন তাহাকে দোযখে প্রবেশ করাইয়া থাকেন।

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১ঃ ঈমান (বিশ্বাস)
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ – তাক্বদীরের প্রতি ঈমান
৯৫-(১৭) মুসলিম ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে কুরআনের এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ ‘‘(হে মুহাম্মাদ!) আপনার রব যখন আদম সন্তানদের পিঠ থেকে তাদের সব সন্তানদেরকে বের করলেন’’ (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭: ১৭২) (…আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি শুনেছি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং তিনি জবাবে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর আপন ডান হাত তাঁর পিঠ বুলালেন। আর সেখান থেকে তাঁর (ভবিষ্যতের) একদল সন্তান বের করলেন। অতঃপর বললেন, এসবকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি, তারা জান্নাতীদের কাজই করবে। আবার আদামের পিঠে হাত বুলালেন এবং সেখান থেকে (অপর) একদল সন্তান বের করলেন এবং বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং তারা জাহান্নামীদেরই ‘আমাল করবে। একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে ‘আমালের আর আবশ্যকতা কি? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন আল্লাহ কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জান্নাতীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত সে জান্নাতীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে এবং আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। এভাবে আল্লাহ তাঁর কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজই করিয়ে নেন। পরিশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে, আর এ কারণে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করেন। (মালিক, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)(1)
(1) সহীহ : وَمَسَحَ ظَهْرَهٗ অংশটুকু ব্যতীত। মুয়াত্ত্বা মালিক ১৩৯৫, আবূ দাঊদ ৪০৮১, তিরমিযী ৩০০১; সহীহ সুনান আবূ দাঊদ। হাদীসের সানাদের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য ও তারা বুখারী মুসলিমের রাবী। তবে এ সানাদে মুসলিম ইবনু ইয়াসার ও ‘উমারের মাঝে বিচ্ছিনণতা রয়েছে তথাপি হাদীসের অনেক শাহিদ বর্ণনা থাকায় হাদীসটি সহীহ। আর সহীহ সুনানে আবী দাঊদে আলবানী (রহঃ) হাদীসটিকে وَمَسَحَ ظَهْرَهٗ অংশটুকু ছাড়া সহীহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

তথ্যসূত্র

  1. প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ, পৃষ্ঠা ২৫, ১১, ১৪ []
  2. শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া, লেখক : ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী, প্রকাশনী : মাকতাবাতুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৪২৩, ৪২৪ []
  3. সূরা তাকভীর, আয়াত ২৯ []
  4. সূরা বাকারা আয়াত ৭ []
  5. সূরা ক্বামার, আয়াত: ৪৯ []
  6. সূরা হাদীদ, আয়াত: ২২ []
  7. সূরা কাসাস, আয়াত: ৬৮ []
  8. সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ২৭ []
  9. সূরা আল ইমরান, আয়াত: ৬ []
  10. সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১১২ []
  11. সূরা ফুরকান, আয়াত:২ []
  12. কোরআন ১৮:১৭ []
  13. কোরআন ৭:১৭৮ []
  14. কোরআন ৭৬:৩০ []
  15. তাফসীরে ইবনে কাসীর। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। একাদশ খণ্ড। পৃষ্ঠা ৩৭২ []
  16. তাফসীরে মাযহারী, আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী, হাকিমবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া, ১২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭৫ []
  17. তাফসীর ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ১১তম খণ্ড , ইসলামিক ফাউন্ডেশন ,পৃষ্ঠা ৪৩২ []
  18. সূরা আল মুজাদিলা আয়াত ১০ []
  19. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, হাদিসঃ ৪৭০৩ []
  20. মুয়াত্তা মালিক, হাদিসঃ ১৬৬০ []
  21. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৯৫ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"