03.আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার

ভূমিকা:

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে (১২ সেপ্টেম্বর ২০০৭) আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার-বিষয়ক ঘোষণাপত্র (United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples) চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। ঘোষণাপত্রটি নিঃসন্দেহে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ কর্ম প্রয়াসের এক উল্লেখযোগ্য অর্জন । এই ঘোষণাপত্রের ৪৬টি অনুচ্ছেদে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বীকৃত অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:

  • ১. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার
  • ২. ভূমি ও ভূখণ্ডের উপর অধিকার
  • ৩. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভূখণ্ডের উপর সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার
  • ৪. মানবিক ও বংশগত সম্পদসহ সাংস্কৃতিক অভিপ্রকাশের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার
  • ৫. আদিবাসীদের ভূমি ও ভূখণ্ডের উপর থেকে তাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ প্রক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকার
  • ৬. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথা অনুশীলন ও পুনরুজ্জীবিতকরণের অধিকার
  • ৭. মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার
  • ৮. নিজস্ব ভাষায় নিজস্ব সংবাদ মাধ্যম প্রতিষ্ঠার অধিকার
  • ৯. উন্নয়নের অধিকার প্রয়োগ করার জন্য অগ্রাধিকার তালিকা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ ও গ্রহণের অধিকার
  • ১০. নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ঔষধি ও স্বাস্থ্যসেবা সংরক্ষণের অধিকার
  • ১১. স্বাধীন ও অবহিতকরণ সাপেক্ষে সম্মতি গ্রহণ ব্যতীত ছিনিয়ে নেয়া ভূমি, ভূখণ্ড এবং সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ফেরত পাওয়ার অধিকার
  • ১২. নিজেদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করার অধিকার।

এই ঘোষণাপত্রটির বিশেষত্ব হলো- এতে বিশ্বব্যাপী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব, আত্মনিয়ন্ত্রণ, কল্যাণ ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা রয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বের মোট ১৪৫টি দেশ এই ঘোষণাপত্রটির পক্ষে এবং ৪টি দেশ (অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘের এই ঘোষণাপত্র অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ভোট দানে বিরত থাকে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)’র মানবাধিকার কর্মসূচির আওতায় প্রকাশিত আদিবাসী-বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের বাংলা অনুবাদটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সম্পর্কে দেশের ছাত্র-শিক্ষক, গবেষক, নাগরিক সমাজ, এনজিও ও মিডিয়াসহ বিভিন্ন পর্যায়ে তথ্য প্রদান ও জনসচেতনতা তৈরিতে কার্যকর অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।

United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার-বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্ৰ


সাধারণ পরিষদ,
জাতিসংঘ সনদের মূলনীতি ও উদ্দেশ্য এবং সনদ অনুসারে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত দায়িত্বসমূহ পরিপূরণের আন্তরিক সদিচ্ছা (Good Faith) দ্বারা পরিচালিত হয়ে,

আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহ অন্য সকল জনগোষ্ঠীর মতোই সমান তা স্বীকার করে, সকল মানুষের যেরূপ স্বাতন্ত্র অধিকার রয়েছে ও সকলে নিজেদেরকে যেভাবে স্বতন্ত্র মনে করে, সেভাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহের
স্বাতন্ত্র্যতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে,

মানব জাতির সর্বজনীন ঐতিহ্য হিসেবে গড়ে উঠা সভ্যতা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সকল মানুষের অবদানকে স্বীকার করে,

জাতীয় উৎপত্তি, জাতিগত, ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক অথবা সাংস্কৃতিক ভিন্নতার উপর প্রতিষ্ঠিত ও বিশ্বাসী সকল প্রকার মতবাদ, নীতিমালা এবং আচরণ জাতিবিদ্বেষী, বৈজ্ঞানিকভাবে ভ্রান্ত, আইনগতভাবে অগ্রহণযোগ্য, নৈতিকতা দিক থেকে ঘৃণ্য এবং সামাজিকভাবে অন্যায্য স্বীকার করে,

আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহকে তাদের অধিকার প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বৈষম্য করা যাবে না- এটা পুনর্বার মেনে নিয়ে,

উপনিবেশ এবং জমি, ভূখণ্ড ও সম্পদ হারানোর ফলে তন্মধ্যে বিশেষ করে তাদের নিজস্ব চাহিদা ও স্বার্থ অনুসারে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করানোর কারণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহ যে ঐতিহাসিক বঞ্চনা ও অন্যায়ের শিকার হয়েছে তার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে,

আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো এবং সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য, ইতিহাস ও দর্শন, বিশেষভাবে তাদের জমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের অধিকারের প্রেক্ষাপট থেকে গড়ে উঠা আদিবাসীদের সহজাত অধিকারকে শ্রদ্ধা ও প্রসারের জরুরী প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে,

রাষ্ট্রের সাথে সম্পাদিত চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও অন্যান্য গঠনমূলক ব্যবস্থায় (constructive arrangments) স্বীকৃত আদিবাসীদের অধিকারকে শ্রদ্ধা ও প্রসারের আশু প্রয়োজনীয়তাকে পুনর্বার স্বীকার করে,

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতির লক্ষ্যে এবং সকল প্রকার বৈষম্য ও নির্যাতন অবসানের নিমিত্তে আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহের নিজেরাই সংগঠিত হওয়ার প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়ে,

আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে এমন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং ভূমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও শক্তিশালীকরণে এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা ভিত্তিক উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণে তাদেরকে সক্ষম করে তুলবে এটা মেনে নিয়ে,

আদিবাসী জ্ঞান, সংস্কৃতি এবং প্রথাগত রীতি যা স্থায়ীত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন এবং পরিবেশের যথাযথ ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখে এটাও স্বীকৃতি দিয়ে,

শান্তি প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন, বিশ্বের জাতিগোষ্ঠী ও জনগোষ্ঠীর মধ্যকার সমঝোতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আদিবাসী জমি ও ভূখণ্ডের বেসামরিকীকরণ অবদানকে গুরুত্ব দিয়ে,

আদিবাসী শিশু অধিকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে আদিবাসী শিশুদের লালন-পালন, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা এবং সমৃদ্ধির নিমিত্তে আদিবাসী পরিবারসমূহ ও জনগোষ্ঠীসমূহের যৌথ দায়দায়িত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখার অধিকারকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিয়ে,

রাষ্ট্র ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যকার চুক্তি, সমঝোতা স্মারক এবং গঠনমূলক ব্যবস্থায় স্বীকৃত অধিকারকে, কতক পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক বিষয়, স্বার্থ, দায়বদ্ধতা ও বৈশিষ্ট্যের অঙ্গ হিসেবে বিবেচনায় এনে,

চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও গঠনমূলক ব্যবস্থাকে রাষ্ট্র ও আদিবাসীদের মধ্যকার সুদৃঢ় অংশীদারিত্ব এবং বর্তমানে বিদ্যমান সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় এনে,

জাতিসংঘ সনদ, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার-বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার-বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি তথা ভিয়েনা ঘোষণাপত্র ও কার্যপরিকল্পনা সকল মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের মৌলিক প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেয়; সেই স্বীকৃতি বলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহ তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা নির্ধারণ করে এবং স্বাধীনভাবে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রাখে সেসব আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোকে স্বীকার করে,

আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত কোনো জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অস্বীকার করার ক্ষেত্রে এই ঘোষণাপত্র ব্যবহার করা যাবে না এটা মনে রেখে,

এই ঘোষণাপত্রে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারকে স্বীকৃতির মাধ্যমে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, বৈষম্যহীনতা এবং আন্তরিক সদিচ্ছার (good faith) মূলনীতি ভিত্তিক রাষ্ট্র ও আদিবাসীদের মধ্যকার সম্প্রীতি ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে তা সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করে,

সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক আইনসমূহে বিশেষ করে যেসব মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বেলায় প্রযোজ্য; সেসব সকল প্রকার দায়িত্বসমূহ মেনে চলতে ও বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকে উৎসাহিত করে,

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রসার ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ও বিদ্যমান ভূমিকাকে প্রাধান্য দিয়ে,

এই ঘোষণাপত্রকে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও স্বাধীনতার স্বীকৃতি, প্রসার ও সংরক্ষণ এবং কর্মক্ষেত্রে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের উন্নতির ক্ষেত্রে আরেক ধাপ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিশ্বাস করে,

আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত সকল প্রকার মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আদিবাসী ব্যক্তিগণ বৈষম্যমুক্ত থাকার অধিকারী এবং জাতিগোষ্ঠী হিসেবে আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষা, সমৃদ্ধি ও সমন্বিত উন্নতির ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমষ্টিগত অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে ও দৃঢ়তার সাথে পুনর্ব্যক্ত করে,

এক দেশের সাথে আরেক দেশের ও এক অঞ্চলের সাথে আরেক অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভিন্নতর অবস্থা এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক বিশিষ্টতা ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমির তাৎপর্যকে স্বীকার করে,

অংশীদারিত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের নীতির ভিত্তিতে অব্যাহত সফলতার ফলক হিসেবে নিম্নোক্ত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার-বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছে-


অনুচ্ছেদ-১
জাতিসংঘ সনদ, সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনসমূহে স্বীকৃত সকল প্রকার মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা, সমষ্টিগতভাবে হোক বা ব্যক্তিগতভাবে হোক, আদিবাসীদের পূর্ণাঙ্গভাবে উপভোগ করার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-২
আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহ অন্য সকল জনগোষ্ঠী ও ব্যক্তির মতোই স্বাধীন ও সমান এবং তাদের অধিকার উপভোগ করার ক্ষেত্রে বিশেষ করে তাদের আদি উৎপত্তি অথবা পরিচয়ের ভিত্তিতে যেকোনো বৈষম্য থেকে মুক্তি লাভের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৩
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার বলে তারা অবাধে তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা নির্ধারণ করে এবং অবাধে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রাখে।

অনুচ্ছেদ-৪
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার উপভোগের বেলায় তাদের অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ে তথা স্বশাসিত কার্যাবলীর অর্থায়নের পন্থা ও উৎস নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের স্বায়ত্বশাসন বা স্বশাসিত সরকারের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৫
আদিবাসী জনগণ যদি পছন্দ করে তাহলে রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার রেখে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক, আইনগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অক্ষুণ্ণ রাখা ও শক্তিশালীকরণের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৬
প্রত্যেক আদিবাসী ব্যক্তির জাতীয়তা লাভের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৭
১. আদিবাসী ব্যক্তির তার জীবন, শারীরিক এবং মানসিক মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে।
২. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বাধীনভাবে, শান্তিতে ও নিরাপদভাবে জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে এবং জোরপূর্বক একগোষ্ঠীর শিশুদের অন্য কোনো গোষ্ঠীতে সরিয়ে নেওয়াসহ গণহত্যা অথবা অন্য কোনো প্রকার সহিংস কর্মকাণ্ডের শিকার করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ-৮
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও ব্যক্তিকে জবরদস্তিমূলকভাবে অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে একীভূত করা বা তাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করা যাবে না।
২. রাষ্ট্র আদিবাসীদের বিরুদ্ধে নিম্নোক্ত কার্যক্রম নিবৃত্ত ও প্রতিকারের জন্য কার্যকরী কর্মকৌশল গ্রহণ করবে-
(ক) তাদের স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠীর মর্যাদা বা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ কিংবা আত্মপরিচয়কে বিপন্ন করার লক্ষ্যে অথবা প্রভাবিত করে এমন যে কোনো কার্যক্রম;
(খ) তাদের ভূমি, ভূখণ্ড অথবা সম্পদ থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে অথবা প্রভাবিত করে এমন যে কোনো কার্যক্রম;
(গ) তাদের অধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যে অথবা প্রভাবিত করে এমন যে কোনো জবরদস্তিমূলক জনগোষ্ঠী স্থানান্তর কার্যক্রম;
(ঘ) যে কোনো প্রকার একীভূতকরণ বা অঙ্গীভূতকরণ কার্যক্রম;
(ঙ) তাদের বিরুদ্ধে জাতিগত কিংবা নৃতাত্ত্বিক বৈষম্য ত্বরান্বিত করা বা উস্কে দেয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পিত যে কোনো অপপ্রচারণা।

অনুচ্ছেদ-৯
আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও ব্যক্তির তাদের ঐতিহ্য ও প্রথা অনুসারে আদিবাসী সম্প্রদায় বা জাতির সদস্য হওয়ার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার উপভোগ করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বৈষম্য করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ-১০
আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তাদের ভূমি কিংবা ভূখণ্ড থেকে জবরদস্তিমূলকভাবে উৎখাত করা যাবে না।
আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তাদের স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ছাড়া কোনোভাবে অন্য এলাকায় স্থানান্তর করা যাবে না এবং ন্যায্য ও যথাযথ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে সমঝোতা সাপেক্ষে স্থানান্তর করা হলেও যদি কোনো সুযোগ থাকে তবে পুনরায় তাদেরকে স্ব এলাকায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

অনুচ্ছেদ-১১
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথা চর্চা করা ও পুনরুজ্জীবিত করার অধিকার রয়েছে। এই অধিকারের মধ্যে তাদের সংস্কৃতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত অভিব্যক্তি যেমন প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থান, শিল্পকলা, নকশা, অনুষ্ঠানাদি, প্রযুক্তি এবং সচিত্র ও অভিনয় শিল্প ও সাহিত্য অক্ষুণ্ণ রাখা, রক্ষা করা এবং উন্নয়ন করার অধিকার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
২. রাষ্ট্র আদিবাসীদের সাথে যৌথভাবে প্রণীত কার্যকর কর্মকৌশল গ্রহণের মাধ্যমে, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সম্পদ যা আদিবাসীদের স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতীত কিংবা তাদের আইন, ঐতিহ্য ও প্রথা লঙ্ঘন করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে সেগুলোকে সম্মানজনকভাবে পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে কার্যকর প্রতিবিধানের উদ্যোগ নেবে।

অনুচ্ছেদ-১২
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য, প্রথা ও উৎসব বিশ্বাস করা, পালন করা, উন্নয়ন করা এবং শিক্ষা প্রদানের অধিকার; তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থানসমূহ অক্ষুণ্ণ রাখা, রক্ষা করা এবং একান্তভাবে চর্চার প্রবেশাধিকার; উৎসব-আচারাদির বস্তুসামগ্রী ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের অধিকার; এবং তাদের পূর্বপুরুষের দেহাবশেষ ফিরে পাওয়ার অধিকার (rights to the repatriation of their human remains) রয়েছে।
২. রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে যৌথভাবে প্রণীত ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ ও কার্যকর কর্মকৌশলের মাধ্যমে উৎসব-আচারাদির বস্তুসামগ্রী লাভ করা এবং/কিংবা দেহাবশেষ ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগ
গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-১৩
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের ইতিহাস, ভাষা, অলিখিত প্রথা, দর্শন, লিখন পদ্ধতি ও সাহিত্য পুনরুজ্জীবিত করা, ব্যবহার করা, উন্নয়ন করা ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করা এবং তাদের জনগোষ্ঠী, স্থান ও ব্যক্তির নিজস্ব নামকরণ করা ও তা বহাল রাখার অধিকার রয়েছে।
২. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার যাতে রক্ষিত হয় তা নিশ্চিত করার জন্য এবং আদিবাসীরা বুঝতে পারে ও বুঝতে সক্ষম হবে এমন রাজনৈতিক, আইনগত ও প্রশাসনিক কার্যপ্রণালী, প্রয়োজনে অনুবাদের ব্যবস্থা কিংবা অন্য কোনো যথাযথ পন্থা অবলম্বনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ।

অনুচ্ছেদ-১৪
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা প্রদানের জন্য তাদের সাংস্কৃতিক রীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পাঠদান ও শিক্ষণ পদ্ধতি অনুসারে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং সেসবের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে।
২. আদিবাসী ব্যক্তির বিশেষ করে আদিবাসী শিশুদের বৈষম্যহীনভাবে রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল স্তরের ও সকল প্রকারের শিক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে।
৩. রাষ্ট্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে যৌথভাবে, যারা তাদের সম্প্রদায়ের বাইরে বসবাস করছে তাদেরসহ আদিবাসী মানুষের, বিশেষ করে শিশুদের জন্য সম্ভব ক্ষেত্রে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষায় শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-১৫
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের মর্যাদাপূর্ণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণের অধিকার রয়েছে; যা শিক্ষা ব্যবস্থায় ও রাষ্ট্রীয় তথ্য ভাণ্ডারে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হবে।
২. রাষ্ট্র আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং সমাজের অন্য সকল অংশের মধ্যে বিদ্বেষ প্রশমন করা ও বৈষম্য দূর করা এবং সহনশীলতা, সমঝোতা ও সুসম্পর্ক ত্বরান্বিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে
আলোচনাক্রমে ও যৌথভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-১৬
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব ভাষায় নিজস্ব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করার অধিকার এবং কোনোরূপ বৈষম্য ব্যতীত অ-আদিবাসী জনগোষ্ঠী কর্তৃক পরিচালিত সকল প্রকার গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকার রয়েছে।
২. রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গণমাধ্যমে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য যাতে যথাযথ প্রতিফলিত হয় তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কোনোরূপ বাধা ব্যতীত মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা
নিশ্চিতকরণে, আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য পর্যাপ্তভাবে প্রতিফলন ঘটানোর জন্য রাষ্ট্র বেসরকারি মালিকানাধীন গণমাধ্যমগুলোকে উৎসাহিত করবে।

অনুচ্ছেদ-১৭
১. আদিবাসী ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীর বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শ্রম আইনে স্বীকৃত সকল প্রকার অধিকার পূর্ণাঙ্গভাবে উপভোগ করার অধিকার রয়েছে।
২. রাষ্ট্র আদিবাসী শিশুদের ক্ষমতায়নের নিমিত্তে তাদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বকে বিবেচনা করে তাদেরকে অর্থনৈতিক শোষণ থেকে এবং তাদের শিক্ষায় অনিশ্চিত কিংবা বাধাগ্রস্ত করে অথবা শিশুদের
স্বাস্থ্য বা দৈহিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক বা সামাজিক অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে রক্ষার জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনাক্রমে ও যৌথভাবে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ।
৩. আদিবাসী ব্যক্তিকে কাজ যেমন চাকুরী বা বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্যমূলক শর্তারোপ করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ-১৮
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব কর্মপদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে, তাদের অধিকারকে প্রভাবিত করবে এমন বিষয়ে তথা তাদের নিজস্ব আদিবাসী সিদ্ধান্ত-নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান অক্ষুণ্ণ রাখা ও উন্নয়নের জন্য সিদ্ধান্ত-নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-১৯
রাষ্ট্র আদিবাসীদের প্রভাবিত করতে পারে এমন আইন প্রণয়ন কিংবা প্রশাসনিক সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পূর্বে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি নেয়ার জন্য তাদের প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আন্তরিক সদিচ্ছার সাথে (in good faith) আলোচনা ও সহযোগিতা করবে।

অনুচ্ছেদ-২০
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের জীবন-জীবিকা ও উন্নয়নের নিজস্ব ধারা নিশ্চিত করার জন্য এবং তাদের ঐতিহ্যগত ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্বাধীনভাবে নিযুক্ত থাকার জন্য তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান বজায় রাখা ও উন্নয়নের অধিকার রয়েছে।
২. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের জীবন-জীবিকা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে বঞ্চনার শিকার হয়েছে তার ন্যায্য ও নিরপেক্ষ প্রতিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-২১
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন তথা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও পুনঃপ্রশিক্ষণ, আবাসন, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে।
২. রাষ্ট্র আদিবাসীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার অব্যাহত উন্নতির নিশ্চয়তা বিধানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ এবং প্রয়োজন ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আদিবাসী প্রবীণ, যুবক-যুবতী, শিশু ও
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও প্রয়োজনীয়তার প্রতি সবিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

অনুচ্ছেদ-২২
১. এই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের সময় আদিবাসী প্রবীণ, যুবক-যুবতী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও প্রয়োজনীয়তার প্রতি সবিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
২. আদিবাসী নারী ও শিশুরা যাতে সকল প্রকার সহিংসতা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা পায় ও তা নিশ্চয়তার সাথে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করে তা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র আদিবাসী জনগাষ্ঠীর সাথে যৌথভাবে
পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-২৩
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের উন্নয়নের অধিকার প্রয়োগের জন্য অগ্রাধিকার বিষয় ও কর্মকৌশল নির্ধারণ ও প্রণয়নের অধিকার রয়েছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে স্বাস্থ্য, আবাসন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড যা তাদেরকে প্রভাবিত করে এগুলোর উন্নয়ন ও নির্ধারণের জন্য এবং যথাসম্ভব তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য সক্রিয়ভাবে জড়িত হওয়ার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-২৪
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের ঐতিহ্যগত ঔষধি ব্যবস্থাপনা এবং অত্যাবশ্যক ঔষধি গাছ, জীবজন্তু ও খনিজ সম্পদ সংরক্ষণসহ তাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যার অধিকার রয়েছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কোনো বৈষম্য ছাড়া সকল প্রকার সামাজিক ও স্বাস্থ্যসেবা লাভের অধিকার রয়েছে।
২. আদিবাসী ব্যক্তির তাদের প্রাপ্য সর্বোচ্চ মানের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উপভোগের অধিকার রয়েছে । রাষ্ট্র এই অধিকার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ক্রমাগত অগ্রগতির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ
করবে।

অনুচ্ছেদ-২৫
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের ঐতিহ্যগতভাবে মালিকানাধীন কিংবা অন্যথায় দখলীয় ও ব্যবহার্য জমি, ভূখণ্ড, জল, সমূদ্র উপকূল ও অন্যান্য সম্পদের সাথে তাদের স্বাতন্ত্র্য্য আধ্যাত্মিক সম্পর্ক বজায় রাখা ও
সুদৃঢ়করণের অধিকার এবং এক্ষেত্রে ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট তাদের এসবের দায়িত্বসমূহ সমুন্নত রাখার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-২৬
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের ঐতিহ্যগতভাবে মালিকানাধীন, দখলীয় কিংবা অন্যথায় ব্যবহার্য কিংবা অধিগ্রহণকৃত জমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের অধিকার রয়েছে।
২. জমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের উপর যা আদিবাসীরা ঐতিহ্যগত মালিকানা কিংবা ঐতিহ্যগত ভোগদখল, ব্যবহার বা অন্যথায় অধিগ্রহণের মাধ্যমে অর্জন করে এসবের উপর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মালিকানা,
ব্যবহার, উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে।
৩. রাষ্ট্র এসব জমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের আইনগত স্বীকৃতি ও রক্ষার বিধান প্রদান করবে। সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রথা, ঐতিহ্য এবং ভূমি মালিকানা ব্যবস্থাপনা মেনে সেই স্বীকৃতি প্রদান করবে।

অনুচ্ছেদ-২৭
রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে যৌথভাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আইন, ঐতিহ্য, প্রথা ও ভূমি মালিকানা ব্যবস্থাপনার যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করে, ঐতিহ্যগতভাবে মালিকানাধীন কিংবা অন্যথায় দখলীয় বা ব্যবহার্য তাদের ভূমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের উপর গুরুত্ব প্রদান করে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার স্বীকৃতি দেয়া ও নির্ণয় করার লক্ষ্যে একটি অবাধ, স্বাধীন, নিরপেক্ষ, উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করবে। এই প্রক্রিয়ায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-২৮
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি, ভূখণ্ড ও সম্পদ যা তাদের ঐতিহ্যগতভাবে মালিকানাধীন কিংবা অন্যথায় দখলকৃত বা ব্যবহারকৃত এবং যা তাদের স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ছাড়া বেদখল, ছিনতাই, দখল বা ক্ষতিসাধন করা হয়েছে এসব যাতে ফিরে পায় কিংবা তা সম্ভব না হলে একটা ন্যায্য, যথাযথ ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায় তার প্রতিকার পাওয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার রয়েছে।
২. সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় অন্য কোনো কিছু রাজী না হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে গুণগত, পরিমাণগত ও আইনী মর্যাদা দিক দিয়ে সমান ভূমি, ভূখণ্ড ও সম্পদ অথবা সমান আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বা অন্য কোনো যথাযথ প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অনুচ্ছেদ-২৯
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরিবেশ এবং তাদের ভূমি বা ভূখণ্ড ও সম্পদের উৎপাদন সক্ষমতা সংরক্ষণ ও রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্র কোনো বৈষম্য ছাড়া এ ধরনের সংরক্ষণ ও রক্ষা করার ক্ষেত্রে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তামূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।
২. রাষ্ট্র আদিবাসীদের ভূমি বা ভূখণ্ডে কোনো প্রকার ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্যসামগ্রী গুদামজাতকরণ বা এর আবর্জনা স্তূপীকরণ যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৩. রাষ্ট্র আদিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা পরিবীক্ষণ, দেখাশুনা এবং পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত কার্যক্রম যা উল্লেখিত দ্রব্যসামগ্রী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী দ্বারা প্রণীত ও কার্যকর হবে তা যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, প্রয়োজনানুসারে তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-৩০
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি কিংবা ভূখণ্ডে সামরিক কার্যক্রম হাতে নেওয়া যাবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় স্বার্থের/জনস্বার্থের (a relevant public interest) প্রয়োজনে যুক্তিগ্রাহ্য হবে অথবা অন্যদিকে যদি সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছায় সম্মতি জ্ঞাপন বা অনুরোধ করে।
২. রাষ্ট্র সামরিক কার্যক্রমের জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি বা ভূখণ্ড ব্যবহারের পূর্বে যথাযথ পদ্ধতি ও বিশেষ করে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে কার্যকর
আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-৩১
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের সাংস্কৃতিক কৃষ্টি, ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি, তথা মানব ও বংশ-উৎপত্তি বিষয়ক সম্পদ, বীজ, ঔষধ, প্রাণী ও উদ্ভিদ বিষয়ক সম্পদ, মৌখিক ঐতিহ্য, সাহিত্য, নকশা, ক্রীড়া ও ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা এবং সচিত্র ও অভিনয় কলাসহ তাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির প্রদর্শনের চর্চা, নিয়ন্ত্রণ, সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের অধিকার রয়েছে। সাংস্কৃতিক কৃষ্টি, ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তিসহ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বজায় রাখা, নিয়ন্ত্রণ, রক্ষা এবং উন্নয়নের অধিকারও তাদের রয়েছে।
২. রাষ্ট্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে যৌথভাবে এ সকল অধিকারগুলোর স্বীকৃতি ও সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-৩২
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের ভূমি কিংবা ভূখণ্ড ও অন্যান্য সম্পদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার বিষয় ও কর্মকৌশল নির্ধারণ ও প্রণয়নের অধিকার রয়েছে।
২. রাষ্ট্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের উপর প্রভাব বিস্তার করে এমন কোনো প্রকল্প অনুমোদনের পূর্বে বিশেষ করে তাদের খনিজ, জল কিংবা অন্য কোনো সম্পদের উন্নয়ন, ব্যবহার বা আহরণের পূর্বে স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি গ্রহণের জন্য তাদের নিজস্ব প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা ও সহযোগিতা করবে।
৩. রাষ্ট্র উক্তরূপ কোনো কার্যক্রমের ন্যায্য ও যথাযথ প্রতিকারের জন্য কার্যকর কর্মকৌশল গ্রহণ করবে এবং মারাত্মক পরিবেশগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অথবা আধ্যাত্মিক প্রভাব কমানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-৩৩
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব প্রথা এবং ঐতিহ্য মোতাবেক তাদের আত্মপরিচয় অথবা সদস্যপদ নির্ধারণের অধিকার রয়েছে। এই অধিকার যে রাষ্ট্রে বাস করে সে রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ থেকে আদিবাসী ব্যক্তিদেরকে নিবৃত্ত করবে না।
২. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব পদ্ধতি অনুযায়ী তাদের প্রতিষ্ঠানের কাঠামো নির্ধারণ ও সদস্যপদ মনোনয়নের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৩৪
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান অনুসারে তাদের নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও তাদের স্বতন্ত্র প্রথা, আধ্যাত্মিকতা, ঐতিহ্য, কার্যপদ্ধতি, অভ্যাস এবং যে রাষ্ট্রে তাদের বাস রয়েছে উক্ত রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা কিংবা ঐতিহ্যের প্রসার ঘটানো, উন্নয়ন করা ও বজায় রাখার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৩৫
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের সমাজে ব্যক্তির দায়িত্বাবলী নির্ধারণের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৩৬
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিশেষতঃ যারা আন্তর্জাতিক সীমানা দ্বারা বিভক্ত হয়েছে তারা অন্য প্রান্তের নিজস্ব জনগোষ্ঠী তথা অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সংক্রান্ত কার্যক্রমসহ যোগাযোগ, সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রাখার ও উন্নয়নের অধিকার রয়েছে।
২. রাষ্ট্র এই অধিকার কার্যকরকরণে সহযোগিতা প্রদান ও বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-৩৭
১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র কিংবা তাদের উত্তরসূরির সাথে সম্পাদিত চুক্তি, সমঝোতা স্মারক এবং অন্যান্য গঠনমূলক ব্যবস্থাবলীর (constructive arrangement) স্বীকৃতি, প্রতিপালন এবং বাস্তবায়ন করার অধিকার রয়েছে এবং এসব চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও গঠনমূলক ব্যবস্থাবলীর অবশ্যই রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভের অধিকার রয়েছে।
২. চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও অন্যান্য গঠনমূলক ব্যবস্থায় সন্নিবেশিত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারগুলোকে খর্ব ও বিলুপ্ত করার জন্য এই ঘোষণাপত্রের কোনো কিছুরই ব্যাখ্যা করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ-৩৮
রাষ্ট্র এই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনাক্রমে ও সহযোগে আইন প্রণয়নসহ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-৩৯
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এই ঘোষণাপত্রে সন্নিবেশিত অধিকারগুলো উপভোগের জন্য রাষ্ট্র থেকে ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সাহায্য লাভের আধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৪০
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র বা অন্যান্য পক্ষের সাথে বিদ্যমান সংঘাত ও বিরোধ নিষ্পত্তি, তথা তাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত অধিকারের উপর হস্তক্ষেপের কার্যকর প্রতিকারের জন্য ন্যায্য ও নিরপেক্ষ পদ্ধতি গ্রহণ করা এবং তার মাধ্যমে দ্রুত মীমাংসা লাভের অধিকার রয়েছে। এরূপ মীমাংসার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রথা, ঐতিহ্য, নিয়ম-নীতি ও আইনি ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকে যথাযথ বিবেচনায় রাখতে হবে।

অনুচ্ছেদ-৪১
জাতিসংঘের বিভিন্ন বিভাগ ও বিশেষায়িত সংস্থাসমূহ এবং অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহ অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতাসহ কর্মোদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এই ঘোষণাপত্রের বিধানাবলী পূর্ণ কার্যরূপদানে ভূমিকা রাখবে । আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে এমন সব বিষয়ে তাদের নিশ্চিত অংশগ্রহণের জন্য পথ ও পন্থা গড়ে তুলতে হবে।

অনুচ্ছেদ-৪২
জাতিসংঘ আদিবাসী-বিষয়ক স্থায়ী ফোরামসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন পরিষদ, জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাসমূহ, তাদের দেশীয় পর্যায়ের কার্যালয়সহ, ও রাষ্ট্র এই ঘোষণাপত্রের বিধানাবলীর পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ ও স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং এই ঘোষণাত্রের কার্যকরকরণে অনুগামী কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-৪৩
এই ঘোষণাপত্রে স্বীকৃতি অধিকারগুলো বিশ্বের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষা, মর্যাদা ও সমৃদ্ধির জন্য ন্যূনতম মান গঠন/প্রদর্শন করে।

অনুচ্ছেদ-৪৪
এই ঘোষণাপত্রে স্বীকৃতি সকল অধিকার ও স্বাধীনতা আদিবাসী ব্যক্তির নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সমানভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৪৫
এই ঘোষণাপত্রের কোনো কিছুরই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিদ্যমান ও ভবিষ্যতে অর্জিত কোনো অধিকার হ্রাসকরণ ও বিলুপ্তকরণ হিসেবে ব্যাখ্যা প্রদান করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ-৪৬
১. এই ঘোষণাপত্রের কোনো কিছুরই ব্যাখ্যা প্রদান করা যাবে না যার অর্থ দাঁড়ায় যে, জাতিসংঘ সনদের বিরোধাত্মক কোনো তৎপরতায় প্রবৃত্ত হওয়া বা কোনো কার্য সম্পাদন করার অধিকার কোনো রাষ্ট্র, জনগোষ্ঠী, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির রয়েছে অথবা সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্রের ভৌগলিক অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক ঐক্যের, সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ, অঙ্গচ্ছেদ বা ক্ষতি করবে এমন কোনো কার্যের অধিকার রয়েছে।
২. এই ঘোষণাপত্রে ঘোষিত অধিকারগুলো উপভোগের ক্ষেত্রে, সকলের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে। এই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত অধিকারগুলো উপভোগের ক্ষেত্রে কেবল আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের দায়বদ্ধতা অনুসারে আইন দ্বারা নির্ধারিত সেসব সীমাবদ্ধতাগুলো কার্যকর হবে। এসব সীমাবদ্ধতাগুলো অন্যদের অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার যথাযথ স্বীকৃতি প্রদানে ও সম্মান প্রদর্শনে নিশ্চয়তা বিধানের উদ্দেশ্য এবং গণতান্ত্রিক সমাজের ন্যায্য ও অতীব বাধ্যবাধক প্রয়োজনীয়তা পুরিপূরণের জন্য একমাত্র অপ্রভেদমূলক ও কঠোর আবশ্যকতার ক্ষেত্রে বলবৎ হবে।
৩. এই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত বিধানাবলী ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সমতা, বৈষম্যহীনতা, সুশাসন এবং আন্তরিক সদিচ্ছার (good faith) মূলনীতি অনুসারে ব্যাখ্যা করা যাবে।