আহমদ ইবনে হানবলের একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে যে, শবে কদরের রাতে উল্কাপাত হয় না—এই কথাকে কেন্দ্র করে মুফতি ইব্রাহীমসহ অনেক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও ওয়াজ মাহফিলে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন যে, নাসা (NASA) দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়টি অবগত তবে এই বিষয়ক গবেষণার তথ্য তারা গোপন করে রেখেছে, ইসলাম সত্য প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে। এসব ধর্মীয় বক্তার মতে, নাসা দেখেছে যে, সারা বছর প্রতিরাতে ১০-২০ লক্ষ উল্কা পৃথিবীর আকাশে প্রবেশ করলেও শবে কদরের রাতে একটিও উল্কাপাত ঘটে না এবং সেদিন আকাশ সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে। এমন হাস্যকর দাবি শুধুমাত্র ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসেরি বিস্তার ঘটায় না, বরঞ্চ এসব বক্তব্য যুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের পথে একটি বড় অন্তরায়। এমন অযৌক্তিক ধারণা শুধু ধর্মীয় গোঁড়ামিকেই বাড়িয়ে তোলে না, বরং শিক্ষিত সমাজে কুসংস্কার এবং অজ্ঞতার প্রসার ঘটায়। এর ফলে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাভাবনার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সাধারণ মানুষ এমনকি শিক্ষিত ব্যক্তিরাও বিভ্রান্তির শিকার হন। মুফতি কাজী ইব্রাহীমের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা দৈনিক যুগান্তরও “নাসার গবেষণায় লাইলাতুল কদর” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে [1] , যা এই গুজবকে আরও বেশি প্রসারিত করে। অথচ নাসা এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি বা কোনো গবেষণাও পরিচালনা করেনি যা শবে কদর বা উল্কাপাতের সঙ্গে সম্পর্কিত। এমন ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে পড়া কেবল ধর্মীয় কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে আরও মজবুত করে তোলে এবং সমাজে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানচর্চার পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা সৃষ্টি করে। সুতরাং, এই ধরনের গুজব ও অযৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য বিজ্ঞান ও প্রমাণের ভিত্তিতে সত্য যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুফতি কাজী ইব্রাহীমের এই বক্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে বাঙলাদেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা দৈনিক যুগান্তরে একটি নিউজ ছাপা হয়। মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ নামক একজন ব্যক্তি “নাসার গবেষণায় লাইলাতুল কদর” শিরোনামেএকটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। প্রবন্ধটি প্রকাশের পর এই গুজবটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। নাসা সম্পর্কে এইসব গুজব একদমই মিথ্যা কথা, যেই গুজব ছড়াতে সাহায্য করেছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকাগুলোও।
আসুন আমরা দেখি, এই বিষয়ে ইসলাম কী বলে [2] [3] –
এই সম্পর্কিত ভিডিও –
তথ্যসূত্র
- নাসার গবেষণায় লাইলাতুল কদর [↑]
- ইসলাম কিউএ এর ফতোয়া [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, একাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৫২[↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"