মানুষের মস্তিষ্ক প্যাটার্ন সনাক্ত করতে অভ্যস্ত। এটি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের বিপদ থেকে সচেতন হতে সাহায্য করে। বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় মানুষের মস্তিষ্কের এই বৈশিষ্ট্যটি আমাদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু, এই প্রবণতাটি কখনও কখনও আমাদেরকে অর্থহীন বিষয় থেকে অর্থ খুঁজে বের করতে পারে। অপোফেনিয়া হলো মানুষের একটি সাধারণ প্রবণতা যেখানে আমরা বা আমাদের মস্তিষ্ক অর্থহীন বা র্যান্ডম তথ্য থেকে অর্থপূর্ণ প্যাটার্ন খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আমরা প্রায়ই বিশ্বাস করি যে, কোনো কিছুই ঘটনাচক্রে ঘটে না, বরং এর পেছনে কোনো গভীর অর্থ বা উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। অপোফেনিয়া বিভিন্ন মানসিক রোগের সাথেও যুক্ত হতে পারে, যেমন স্কিৎজোফ্রেনিয়া এবং বিপরীতমুখী ব্যক্তিত্ব ব্যাধি। অপোফেনিয়া বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাসের উৎপত্তিতে ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অতিপ্রাকৃতিক বিশ্বাসগুলি অপোফেনিয়ার প্রভাবে বিকশিত হতে পারে।
ছোটবেলার কথা আমাদের অনেকেরই মনে আছে। ছোটবেলা আমরা অনেকেই মেঘের মধ্যে নানা পশুপাখির শরীর বা চেহারা দেখতে পেতাম। মেঘের ভেতরে হাতী, ঘোড়া, কচ্ছপ, সাপ ইত্যাদি দেখতে পাওয়া শিশুদের জন্য খুবী স্বাভাবিক বিষয়। এগুলো সবই আসলে আমাদের মস্তিষ্কের এক ধরণের খেলা। আমরা মস্তিষ্কে আমাদের স্মৃতি জমা করে রাখি। এবং মস্তিষ্ক যখন কোন কিছু দেখে, তখন চোখ থেকে সেই ইনফরমেশন আমাদের মগজে পৌঁছায়। মগজ তখন তার রক্ষিত স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে নতুন দেখা জিনিসটিকে ক্রমাগত মেলাতে চেষ্টা করে। আমরা অনেক সময় পরিচিত অনেককে দেখি, কিন্তু ঠিক মনে করতে পারি না, তাকে কোথায় দেখেছি। আমাদের মগজ সেই সময় অনবরত খুঁজে যাচ্ছে তার ডেইটা বেইজ, একটু পরেই হয়তো কোথায় তাদের দেখেছি তা আমাদের মনে পড়ে যাবে।
এপোফেনিয়া হচ্ছে, human tendency to perceive meaningful patterns within random data. এবং প্যারেডোলিয়া হচ্ছে, a psychological phenomenon in which the mind responds to a stimulus (an image or a sound) by perceiving a familiar pattern where none exists. প্যারেডোলিয়াকে এপোফেনিয়ার একটি সাবক্যাটাগরি হিসেবে ধরা হয়।
আমরা প্রায়ই এই ধরণের অনেক নিউজ কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দেখে থাকে। যেমন মাংসের মধ্যে আল্লাহু কিংবা মেঘের মধ্যে ওম লেখা। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, মুসলিমরা যখন মেঘের দিকে লক্ষ্য করে, তারা প্রায়শই আল্লাহু কিংবা কাবা দেখতে পায়। আবার হিন্দুরা দেখতে পান গণেশকে, কিংবা হনুমানকে। বৌদ্ধরা দেখেন গৌতম বুদ্ধকে। কারণ এই চিত্রগুলো প্রতিটি ধর্মের মানুষের মগজে থাকে, তারা যাই দেখেন তার মধ্যে তারা এই চিত্রগুলো খুঁজে বেড়ান, নিজের অজান্তেই। কারণ মানুষের মস্তিষ্ক এভাবেই কাজ করে। তাই কাছাকাছি কোন কিছু যখন মিলে যায়, উনারা চমকে ওঠেন। এবং বিষয়গুলোকে কোন অলৌকিক কুদরত বলে মনে করতে থাকেন। ছোটবেলা আমি বহুবার শুনেছি, গরুর মাংসের মধ্যে নাকি আল্লাহু লেখা পাওয়া গেছে। আবার, ঠিক একই কথা শুনেছি হিন্দু বন্ধুর কাছে। তারা নাকি মেঘের মধ্যে ঔঁঁ বা ওম দেখতে পেয়েছে।
সমস্ত ধর্মের মানুষই নিজ নিজ ধর্মের সত্যতার প্রমাণ হিসেবে এই ধরণের কিছু ছবি নিয়ে আসেন, এবং প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে যান যে, তাদের ধর্মটিই সঠিক। মাঝে মাঝে উনারা ফটোশপ করেও নিয়ে আসেন অনেক ছবি। ধর্ম প্রচারের জন্য বা অন্যকে চমকে দেয়ার জন্য। এগুলো মানুষের খুবই সাধারণ প্রবণতা। কিন্তু এগুলো কোনটিই কোন অলৌকিক ঘটনা নয়। আসুন কিছু উদাহরণ দেখে নিই,
ঘোড়ায় করে যাচ্ছেন একজন। খ্রিস্টানদের দাবী এটি যীশু। মুসলমানরা হয়তো মুহাম্মদের মেরাজ গমন ভাবতে পারেন।
খ্রিস্টানদের দাবী অনুসারে এটি যীশুর ছবি
আরেকটি যীশু, বেচারা এখনো ক্রশে আটকে আছে
আপনি আপনার ধর্ম অনুসারে একে কোন পীর আউলিয়া বা দেবদেবী বলে দাবী করতে পারেন
হিন্দুদের দাবী আকাশে দেবতারা ঔঁঁ লিখে মানুষকে ধর্মের পথে আনতে চাচ্ছে
হিন্দুদের দেবতা গণেশ।
আরও গণেশ
এবং আরও
গণেশ হতে পারে
মুসলিমদের দাবী গাছটি নামাজ পড়ছে
মুসলিমদের দাবী এটি নামাজ
তাহলে এই ছবিটি কিসের প্রমাণ? ঈশ্বর কী দেখাচ্ছেন?
তাহলে এটি কী আল্লাহর পাছা?
তাহলে এই ছবিটি কী আল্লাহর নুনু?
আল্লাহর কী দুটোই আছে?
ইয়াল্লাহ!
আমাদের ডারউইনও কিন্তু কম যায় না
যদি এই ছবিগুলোকে সব ধর্মের যথার্থতা বলে ধরে নিতে হয়, অলৌকিক কাণ্ড হিসেবে ধরতে হয়, তাহলে নুনুর ছবিগুলোকে আমরা কী বলবো? তাহলে কী আল্লাহর চেহারা প্রকাণ্ড একটা নুনুর মত? আমাদের কী এখন নুনুর পূজা করা উচিত হবে? কিন্তু সেটা কী ঠিক ভদ্র কাজ হবে?
এটি কী? নবীর নুনু মোবারক?
আর এটা?