বিখ্যাত জার্মান জুওলজিস্ট প্রফেসর আলফ্রেড ক্রোনার (ALFRED KRÖNER) ১৯৭৯ সালে সৌদিতে একটি প্রফেশনাল কনফারেন্স যান, যেখানে তাদের কোন রকমের টিভি ইন্টারভিউ কথা আগে থেকে বলা হয়নি। কনফারেন্সের মাঝে হটাৎ করেই তাকে ইন্টারভিউ নেয়া হয়, ইন্টারভিউটি নেন জনৈক আমেরিকাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি ইসলামিস্ট Abdul Majeed al-Zindani। উল্লেখ্য, Alfred Kröner কখনই কোরআন পড়েননি এবং উনি এর কিছু জানতেনও না। ইসলাম প্রচারক জিনদানি তাকে একের পর এক বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করতে থাকে তার নিজের পছন্দের কোরআন অনুবাদ থেকে উদ্দৃতি তুলে ধরে। Alfred Kröner যেহেতু কোরআনের কিছুই জানেন না, উনি পুরো ইন্টার্ভিউয়ের সময়ই সৌদিতে আসায় খানিকটা ভীত সন্ত্রস্তও ছিলেন, তাই তিনি কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ গ্রহণকারীর সাথে সম্মত হন। কিছু ক্ষেত্রে তিনি বলেন, “ ঠিকি বলেছেন, এসব এতো আগে জানার কথা নয় (যদি সত্যি হয়েই থাকে তো)” আবার উনি কিছু জায়গায় “আপত্তি”ও করেন। উনি কোনোভাবেই সেসব কোন ঐশী গ্রন্থ বা সোর্স থেকে আসা দাবী করেন নাই, বরং উনি নিজ মুখে বলেছেন, সব ধর্মীয় গ্রন্থেই কিছু না কিছু বিজ্ঞানের সাথে মিলে যাওয়া অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। বিশেষ করে ভিন্ন অনুবাদ তৈরি করে, শব্দের অর্থ বদলে দিয়ে বর্তমানের বিজ্ঞানের সাথে মিলেয়ে দেয়া অসম্ভব নয়।
এই ভিডিওটির খণ্ডিত অংশ প্রকাশ করে মুসলিম বিশ্বে এই খবরটি ফলা করে প্রচার করা হয় যে, প্রখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী আলফ্রেড ক্রোনার নাকি কোর আনে বিজ্ঞান আছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ ফেসবুক পোস্ট এবং মুসলিম বিশ্বের হাজার হাজার পত্রপত্রিকায় বিষয়টি ফলাও করে ছাপানো হয়। অথচ পুরো বিষয়টিই ধাপ্পাবাজি। ইসলামিস্টরা ইসলামকে সত্য প্রমাণের জন্য বরাবরের মত এখানেও জোচ্চুরির আশ্রয় নিয়েছে।
বরং উনাকে নিয়ে অজ্ঞ মুমিনরা “কোরআনে বিজ্ঞান” টাইপ কিছু দাবী করাতে উনি বেশ বিরক্ত। উনি সুস্পষ্ট ভাষায় কুরআনে কোন মিরাকল বা বিজ্ঞান পাওয়াকে নাকচ করে দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বাটপার জিনদানি শুধু তার সাথেই এই কাজ করে নাই, কুরআনে বিজ্ঞান প্রমান করতে জিনদানি, Allison (Pete) Palmer এবং William Hay নামের আরো দুজনের সাথে একই বাটপারি করেছিল। ALFRED KRÖNER-এর ইন্টারভিউ যে সময় নেয়া হয়েছে তখন ইন্টারনেট ছিল না, তাই তিনি অনেক পরে জিনদানির এই ভণ্ডামি বুঝতে পারেন। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, ALFRED KRÖNER কোরআনে বিজ্ঞান দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, এমন কোন রকমের বক্তব্য স্বয়ং ALFRED KRÖNER নিজেই দেন নাই, এটা সেই ভণ্ড জিনদানির নিজের মুখের কথা, যা কিনা ক্রোনার বলেছেন বলে তিনি একাই দাবী করেন (যার কোন অডিও/ভিডিও রেকর্ড জিনদানির করা ডকুমেন্টারিতেও নাই), নিচের ভিডিও লিংকে ALFRED KRÖNER এর নিজের বক্তব্য ভাল করে শুনলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আমি একটা ব্যাপার দেখে আশ্চর্য হই এবং মজা পাই যে, বড় বড় বিজ্ঞানী বা ব্যাক্তি, যেমন কিথ মুর, মরিস বুকাইলি ইত্যাদি, যাদের কথা বলে মুমিনরা কুরআনে বিজ্ঞান দাবী করেন, এসব বড় বড় ব্যাক্তি/বিজ্ঞানীগন কুরআনে এত এত বিজ্ঞান দেখেও নিজেরা মুসলমান হন না, ব্যাপারটা সত্যিই হাস্যকর। এটা একটা প্যারাডক্স এর মত হয়ে গেল। ALFRED KRÖNERও তার নিজ বক্তব্যে হাসতে হাসতে বলেন উনিও মুসলমান হননি। এইসব কি তাহলে আপনাদের ইসলামের “তাকিয়া’ এর কোন অংশ?