08.শিরক নিশ্চিহ্ন না হওয়া অবধি জিহাদ

ইসলামের জিহাদের মূল ধারণাটি হচ্ছে, পৃথিবীর প্রতিটি ইঞ্চিতে আল্লাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জিহাদ করতে হবে, যতক্ষণ না প্রতিটি গৃহে তা প্রতিষ্ঠা হবে। কোরআন এবং হাদিসের বহুস্থানেই অমুসলিম কাফের অঞ্চলগুলোতে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তারা ইসলাম কবুল না করলে নতি স্বীকার করে তাদের জীবনের মূল্য হিসেবে তাদের ওপর অবমাননাকর জিযিয়া কর আরোপের কথা বলা হয়েছে, সেটিতেও সম্মত না হলে তাদের আক্রমণ করে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সব অঞ্চলের নারী ও শিশুদের মুসলিমরা দাস হিসেবে গ্রহণও করতে পারবে, আবার বিক্রিও করে দিতে পারবে। এই বিষয়টিই আমরা বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে সরাসরি প্রমাণ করবো। আলোচনার শুরুতেই আসুন একটি ওয়াজ শুনে নিই,

আসুন আর একটি ওয়াজ শুনি, এই ওয়াজের দলিল প্রমাণ লেখার পরবর্তীতে ধাপে বর্ণিত হবে,

জিহাদের এই ধারণাটি বোঝার জন্য সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতটির তাফসীর পড়তে হবে। এই তাফসীরটি আপনারা পাবেন তাফসীরে মাযহারী পঞ্চম খণ্ডে। হানাফী মাযহাবের একনিষ্ঠ অনুসারী বিশ্ববিখ্যাত সুন্নি ইসলামী পন্ডিত আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথীর লেখা এই তাফসীর কোরআনকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ [1]

এবং তোমরা তাহাদিগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে থাকিবে যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহের দ্বীন সামগ্রীকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি তাহারা বিরত হয় তবে তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।
যদি তাহারা মুখ ফিরায় তবে জানিয়া রাখ যে আল্লাহ্ই তোমাদিগের অভিভাবক এবং কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী ।
( সূরা আনফালঃ ৩৯, ৪০ )
প্রথমে বলা হয়েছে এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফেতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফেতনা অর্থ বিশৃংখলা। আর পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় বিশৃংখলা হচ্ছে শিরিক ( অংশীবাদিতা )। আলোচ্য বাক্যে ফেতনা অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কথার অর্থ-মুশরিকেরা যতক্ষণ পর্যন্ত শিরিক পরিত্যাগ না করবে, অথবা মুসলমানদের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে জিযিয়া দিতে সম্মত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংগ্রাম করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। আলোচ্য নির্দেশনাটিতে এ রকম বলা হয়নি যে, সকল অংশীবাদী ও অবিশ্বাসীকে যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করতে হবে। এ রকম মনে করা হলে আলোচ্য আয়াতটি চলে যাবে জিযিয়া দিতে সম্মত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরো না। সুতরাং – এই আয়াতের নির্দেশনাটি দাঁড়াচ্ছে এ রকম অবিশ্বাসীরা ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত অথবা জিযিয়া প্রদানের মাধ্যমে পূর্ণ অনুগত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এখানে দ্বীন প্রতিষ্ঠার অর্থ হবে শক্তি , বিজয় এবং একচ্ছত্র শাসন প্রতিষ্ঠা। ‘ দ্বীন ‘ শব্দের এ রকম অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে কামুস গ্রন্থে।
হজরত মেকদাদ বিন আসওয়াদ বর্ণনা করেছেন, রসুল স . বলেছেন, এক সময় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে পৃথিবীর সকল গৃহে। অবিশ্বাস ও অংশীবাদিতা হয়ে যাবে ইসলামের সম্পূর্ণ অধীন। সকল শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য হবে কেবল আল্লাহর।
হজরত ইবনে ওমর কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, রসুল স . বলেছেন, আমাকে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ওই সময় পর্যন্ত সংগ্রাম করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-যতক্ষণ না তারা বলে, ‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ’ প্রতিষ্ঠা করে নামাজ এবং প্রদান করে জাকাত। যে এ রকম করবে আমার পক্ষ থেকে তার জীবন ও সম্পদ হয়ে যাবে সুরক্ষিত। আল্লাহ্ই তাদের অভ্যন্তরীণ হিসাব গ্রহণ করবেন ( তিনি বিচার করবেন , তারা তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্যে , না অন্তরের তাগিদে ইসলাম গ্রহণ করেছে )। বোখারী ও মুসলিম। হজরত আবু হোরায়রা থেকে ছয়জন সাহাবী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আল্লামা সুয়ুতী বলেছেন , হাদিসটি সুবিদিত ( মুতাওয়াতির )।

ফিতনা
আক্রমণাত্মক জিহাদ
3

তথ্যসূত্র

  1. তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৭-১২০ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"