আসুন শুরুতেই একটি হাদিস পড়ে নিই। এই হাদিসে দেখা যায়, আয়িশার কাছে একজন ইহুদি নারী এসে কবরের আজাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। সেই সময়ে নবী এই ধরণের কথা শুনে খুব অবাক হন এবং বলেন, ইহুদিদেরই এই ধরণের কিছু হবে। পরবর্তীতে তিনি কবরের আজাব সম্পর্কে নিশ্চয়ই কাউকে কাউকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এবং মুহাম্মদের অন্যান্য ধর্ম থেকে চুরির মতো এই বিষয়টিও পরে ইসলামের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, শুরুতেই তিনি কেন এই বিষয়টি জানতেন না? আল্লাহ কেন তাকে এই ইহুদি মহিলার বলবার পুর্বে এই বিষয়ে কিছুই বলেন নি, বা ইঙ্গিতও দেননি! কী অদ্ভুত ব্যাপার, কবরের আজাবের মত এতবড় একটি বিষয় নবীর জানতে হল ইহুদী নারীর কাছ থেকে? [1] [2]
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫/ মসজিদ ও সালাতের স্থান
পরিচ্ছেদঃ ২৪. তাশাহুদ ও সালামের মাঝখানে কবর আযাব, জাহান্নামের আযাব এবং জীবন মৃত্যু, মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা ও গুনাহ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
১১৯৭। হারুন ইবনু সাঈদ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে এলেন। আমার নিকট তখন এক ইয়াহুদী স্ত্রীলোক বসা ছিল। সে বলছিল তোমরা কি জান যে, কবরে তোমাদের পরীক্ষা হবে? আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্মিত হলেন এবং বললেন, ইয়াহুদিরাই পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারপর আমরা কয়েকদিন অতিবাহিত করলাম। পরে একদিন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জান যে, এই মর্মে আমার নিকট ওহী নাযিল হয়েছে, তোমরা কবরে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কবরের আযাব থেকে প্রার্থনা করতে শুনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ইহুদি মহিলার বলবার আগে যেই নবী কবরের আজাব সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, তিনি হঠাৎ তিনি কবরের মৃত মানুষদের আজাব এবং কী কারণে আজাব সব জেনে ফেলতে লাগলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এতদিন উনি যখন কোন কবরের পাশ দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি কী কবরের মৃত মানুষদের আজাবের কথা কেন শুনতেন না বা জানতেন না? কেন ইহুদি নারীর এই বিষয়টি জানাবার পরেই নবী এই সম্পর্কে বলতে লাগলেন? [3]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৩/ জানাযা
পরিচ্ছেদঃ ২৩/৮৮. গীবত এবং পেশাবে অসাবধানতার কারণে ক্ববরের ‘আযাব।
১৩৭৮. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন ঐ দু’জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে আর কোন কঠিন কাজের কারণে তাদের আযাব দেয়া হচ্ছে না। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ (আযাব দেয়া হচ্ছে) তবে তাদের একজন পরনিন্দা করে বেড়াত, অন্যজন তার পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না। (রাবী বলেন) অতঃপর তিনি একটি তাজা ডাল নিয়ে তা দু’খন্ডে ভেঙ্গে ফেললেন। অতঃপর সে দু’ খন্ডের প্রতিটি এক এক কবরে পুঁতে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ আশা করা যায় যে এ দু’টি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের উভয়ের ‘আযাব হালকা করা হবে। (২১৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৯৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
এরপরে আসুন আর কিছু হাদিস পড়ি, যেখানে দেখা যায় নবী মুহাম্মদ ঐ ঘটনার পরে কবরের আজাবের গল্প ফাঁদেন, যার সাথে অনেক কিছু মিলিয়ে দেন [4]
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – কবরের ‘আযাব
১৩০-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃতকে যখন কবরে শায়িত করা হয় তখন তার নিকট নীল চোখবিশিষ্ট দু’জন কালো মালাক (ফেরেশতা) এসে উপস্থিত হন। তাদের একজনকে মুনকার, অপর একজনকে নাকীর বলা হয়। তারা মৃতকে (রসূলের প্রতি ইঙ্গিত করে) জিজ্ঞেস করে, এ ব্যক্তির ব্যাপারে দুনিয়াতে তুমি কি ধারণা পোষণ করতে? সে বলবে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন মালাক দু’জন বলবেন, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দিবে। অতঃপর তার কবরকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সেখানে তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তারপর তাকে বলা হয়, ঘুমিয়ে থাক। তখন কবরবাসী বলবে, (না,) আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই এবং তাদের এ সুসংবাদ দিতে চাই। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বলবেন, তুমি এখানে বাসর ঘরের বরের ন্যায় ঘুমাতে থাক, যাকে তার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয়জন ব্যতীত আর কেউ ঘুম ভাঙ্গাতে পারে না। অতঃপর সে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন না আসা পর্যন্ত এভাবে ঘুমিয়ে থাকে। যদি মৃত ব্যক্তি মুনাফিক্ব হয় তাহলে সে বলবে, লোকেদেরকে তাঁর সম্পর্কে যা বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম, কিন্তু আমি জানি না। তখন মালায়িকাহ্ বলেন, আমরা পূর্বেই জানতে পেরেছিলাম যে, তুমি এ কথাই বলবে। অতঃপর জমিনকে বলা হবে, তার উপর চেপে যাও। সুতরাং জমিন তার উপর এমনভাবে চেপে যাবে, যাতে তার এক দিকের হাড় অপর দিকে চলে যাবে। কবরে সে এভাবে ’আযাব ভোগ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত (ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে) আল্লাহ তা’আলা তাকে কবর থেকে না উঠাবেন। (তিরমিযী)[1]
[1] সহীহ : তিরমিযী ১০৭১, সহীহুত্ তারগীব ৩৫৬০।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
তথ্যসূত্র
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ১১৯৭ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ১৩৭৮ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ১৩০ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"