08.কৃষকদের সাথে পাকনামি করতে গিয়ে নবীর ধরা খাওয়া

নবী মুহাম্মদের একটি বাজে স্বভাব ছিল যে, তিনি যেই বিষয়ে জানেন না, সেই বিষয়েও বিজ্ঞ মতামত দেয়ার চেষ্টা করতেন। ফলাফল হিসেবে মাঝে মাঝে সাহাবীরা বুঝে ফেলত, নবী যা বলেছে সেটি সঠিক নয়। এরপরে নবী নানাভাবে আগের কথাটিকে ঘোরাবার চেষ্টা করতো। না জেনে কথা বলার উদাহরণ হিসেবে সূর্য রাতের বেলা কোথায় যায়, এই সম্পর্কিত হাদিসগুলো দেখা যায়। সেগুলো পরে বর্ণিত আছে বলে এখানে আর উল্লেখ করা হচ্ছে না। আসুন এখানে ভিন্ন কিছু হাদিস পড়ি, যেখান থেকে বোঝা যায় নবীর অপর্যাপ্ত জ্ঞান স্বত্ত্বেও পাকনামি স্বভাবের কিছু উদাহরণ দেখি। নিচের হাদিসগুলো পড়ুন, নবী কীভাবে কিছু কৃষকদের সাথে পাকনামি করতে গিয়ে বেইজ্জত হয় এবং সাহাবীদের কাছে হাতেনাতে ভুল প্রমাণ হয়ে নিজেকে রক্ষা করতে বললেন, তিনি শুধুই মানুষ মাত্র। ভুল হতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত অসীম জ্ঞানের অধিকারীর ভুল কীভাবে হয়? আর যে বিষয়টি নবী জানেন না, সে বিষয়ে বিজ্ঞ মতামত দেয়ারই বা প্রয়োজন কী?

মূল আলোচনাতে যাওয়ার আগে আসুন শুরুতেই একটি হাদিস পড়ি, যেখানে দেখা যাচ্ছে, নবী তার মুখ থেকে বের হওয়া সকল কথাকেই সত্য বলে দাবি করে গেছেন [1]

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৯/ শিক্ষা-বিদ্যা, (জ্ঞান-বিজ্ঞান)
পরিচ্ছেদঃ ৪১৭. ইলম লিপিবদ্ধ করা সম্পর্কে।
৩৬০৭. মুসাদ্দাদ (রহঃ) ….. আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি যা কিছু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে শ্রবণ করতাম, তা লিখে রাখতাম। আমি ইচ্ছা করতাম যে, আমি এর সবই সংরক্ষণ করি। কিন্তু কুরাইশরা আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করে এবং বলেঃ তুমি যা কিছু শোন তার সবই লিখে রাখ, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মানুষ, তিনি তো কোন সময় রাগান্বিত অবস্থায় কথাবার্তা বলেন এবং খুশীর অবস্থায়ও বলেন। একথা শুনে আমি লেখা বন্ধ করি এবং বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করি। তখন তিনি তার আংগুল দিয়ে নিজের মুখের প্রতি ইাশারা করে বলেনঃ তুমি লিখতে থাক, ঐ যাতের কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন, যা কিছু এ মুখ হতে বের হয়, তা সবই সত্য।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ)

এবারে আসুন সহজ দরসে ইবনে মাজাহ গ্রন্থের একটি পাতা পড়ে নেয়া যাক, [2]

কৃষক

মুহাম্মদ মদিনায় গিয়ে দেখতে পেলেন, কৃষকরা খেজুর গাছে ফলন বাড়াতে নর ও নারী ফুলের রেণু মিশিয়ে গর্ভদান করছিল। তিনি তাদের বললেন, “তোমরা এমন না করলেই ভালো হবে।” কৃষকরা তা মানায় খেজুরের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। তখন তারা নবীকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, “দ্বীনের বিষয়ে আমি কিছু আদেশ দিলে তা পালন করো; কিন্তু পার্থিব বিষয়ে তোমরা আমার চেয়ে ভালো জানো।” [3] [4]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৫/ ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. শরী’আত হিসেবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যা আদেশ করেছেন তা পালন করা ওয়াজিব আর পার্থিব বিষয়ে তিনি যে অভিমত ব্যক্ত করেন, তা নয়
৫৯১৫। আবদুল্লাহ ইবনু রুমী ইয়ামামী, আব্বাস ইবনু আবদুল আযীম আনবারী ও আহমদ ইবনু জাফর মা’কিরী (রহঃ) … রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করলেন। লোকেরা খেজুর গাছ তাবীর করত। রাবী বলেন, অর্থাৎ নর ও নারী ফুলের রেণুতে মিশ্রণ ঘটিয়ে খেজুর গাছকে গর্ভদান করত। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি করছ? তারা বললো আমরা এরূপ করে আসছি। তিনি বললেনঃ তোমরা এমন না করলেই বোধ হয় ভাল হয়।
রাবী বললেন, সুতরাং তারা তা বর্জন করল। আর এতে খেজুর ঝরে পড়ল অথবা (রাবী বলেছেন,) তার উৎপাদন কমে গেল। রাবী বলেন, লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ ঘটনা বলল। তখন তিনি বললেন, আমি তো একজন মানুষ। দ্বীন সম্পর্কে যখন তোমাদের আমি কোন আদেশ দেই, তখন তোমরা তা পালন করবে, আর যখন কোন কথা আমি আমার মতানুসারে বলি, তখন তো আমি একজন মানুষ মাত্র। রাবী ইকরামা (রহঃ) বলেনঃ অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ বলেছেন। আর মা’কিরী (রহঃ) সন্দেহ ব্যতিরেকে কেবল نَفَضَتْ (ঝরে পড়ল) বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৫/ ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. শরী’আত হিসেবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যা আদেশ করেছেন তা পালন করা ওয়াজিব আর পার্থিব বিষয়ে তিনি যে অভিমত ব্যক্ত করেন, তা নয়
৫৯১৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে এবং ভিন্ন সুত্রে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাছে গর্ভদানরত কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তিনি বললেন, যদি এটা না কর তাহলে ভাল হবে। লোকেরা তা করল না। এতে ’চিটা’ খেজুর উৎপন্ন হলো। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের খেজুর গাছের কি হলো? লোকেরা বললো, আপনি এমন এমন বলেছিলেন (তা করায় এরূপ হয়েছে)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের পার্থিব বিষয়ে তোমরাই অধিক অবগত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

প্রথমত, একজন নবী যিনি দাবি করেন যে তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের পক্ষ থেকে নির্দেশ বহন করছেন, তার উচিত ছিল পার্থিব বিষয়ে দায়িত্বশীল মন্তব্য করা। কোন বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব থাকার পরেও সেই বিষয়ে বিজ্ঞের মত মতামত দিতে চেষ্টা না করা। কৃষকদের কৃষিকাজে অনর্থক পণ্ডিতি করতে গিয়ে হস্তক্ষেপ করে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া এবং পরে নিজের ভুলের দায় এড়িয়ে যাওয়া কি একজন সভ্য মানুষের কাছে প্রত্যাশিত? এই ঘটনায় দেখা যায়, নবী প্রথমে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভুল পরামর্শ দিলেন, যা লোকেদের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হলো। পরে দায় এড়িয়ে বললেন, “তোমরা তোমাদের পার্থিব বিষয়ে বেশি জানো।” এতে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ছাপ স্পষ্ট।

দ্বিতীয়ত, যদি কোনো নেতা (ধর্মীয় বা পার্থিব) জনসাধারণের জীবন-জীবিকায় হস্তক্ষেপ করেন, তবে তার উচিত আগে সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করা। একজন রাসূল থেকে এমন গড়মিল আশা করা যায় না, যিনি একদিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অহি পাওয়ার দাবি করেন, অন্যদিকে ক্ষতিকর উপদেশ দিয়ে দায় এড়িয়ে যান। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয় এবং নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নষ্ট হয়।

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, একবার নবী এক সাহাবীর ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। নবী তাকে বারবার মধু খাওয়াতে বললেন। মধু খেয়েও পেটের অসুখ ঠিক না হওয়ায় নবী তাকে বলেছিলেন, তোমার পেট মিথ্যা বলছে! কী একটা হাস্যকর অবস্থা চিন্তা করুন! পেটের অসুখ তো মিথ্যা বলতে পারে না। যদিও শেষ পর্যন্ত পেটের অসুখ ঠিক হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পেটের অসুখ সাধারণত কিছুদিন পরে এমনিতেই ঠিক হয়ে যায় বলে আমরা জানি [5]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/৪. মধুর সাহায্যে চিকিৎসা। মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘এর মধ্যে রয়েছে মানুষের জন্য নিরাময়।’’ সূরাহ আন-নাহলঃ ৬৯)
৫৬৮৪. আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললঃ আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার আসলে তিনি বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। অতঃপর তৃতীয়বার আসলে তিনি বললেন তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি এসে বললঃ আমি অনুরূপই করেছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলছে। তাকে মধু পান করাও। অতঃপর সে তাকে পান করাল। এবার সে রোগমুক্ত হল। [৫৭১৬; মুসলিম ৩৯/৩১, হাঃ ২২৬৭, আহমাদ ১১১৪৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)

তথ্যসূত্র

  1. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৬০৭ []
  2. সহজ দরসে ইবনে মাজাহ, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৬৮ []
  3. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৯১৫ []
  4. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৯১৬ []
  5. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৫৬৮৪ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"