18.জান্নাতে মানুষের বয়স কত হবে?

নবী মুহাম্মদ তার সাহাবীদের জান্নাতের প্রতি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, জান্নাতে গেলে সবাই নাকি ত্রিশ বা তেত্রিশ বছরের যুবকে পরিণত হবে এবং সকলেই নাকি একশ পুরুষের সমান সঙ্গমের শক্তিপ্রাপ্ত হবে। আসুন সেগুলো শুরুতেই মিজানুর রহমান আজহারীর একটি বক্তব্য শুনি আর হাদিসগুলো দেখে নিই, [1] [2] [3] [4]

সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪১/ জান্নাতের বিবরণ
পরিচ্ছেদঃ জান্নাতীদের বয়স।
২৫৪৭. আবূ হুরায়রা মুহাম্মাদ ইবন ফিরাস বাসরী (রহঃ) ….. মুআয ইবন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতীরা লোমহীন, শ্মশ্রুহীন, কাজলটানা চোখ বিশিষ্ট ত্রিশ বা তেত্রিশ বছরের যুবকরূপে জান্নাতে দাখিল হবে। হাসান, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৫৪৫ [আল মাদানী প্রকাশনী]
হাদীসটি হাসান-গারীব। কাতাদা (রহঃ)-এর কোন কোন শিষ্য এ হাদীসটিকে কাতাদা (রহঃ) থেকে মুরসালরূপে রেওয়াত করেছেন। তাঁরা এটিকে মুসনাদ রূপে বর্ণনা করেননি।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)

সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৬/ জান্নাতের বিবরণ
পরিচ্ছেদঃ ১২. জান্নাতীদের বয়সের বর্ণনা
২৫৪৫। মু’আয ইবনু জাবাল (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের সময় তাদের শরীরে লোম থাকবে না, দাঁড়ি-গোফও থাকবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকবে। তারা হবে ত্রিশ অথবা তেত্রিশ বছরের যুবক।
হাসানঃ দেখুন হাদীস নং (২৫৩৯)।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব। উক্ত হাদীসটি কাতাদার কোন কোন শিষ্য তার সূত্রে মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন, মুসনাদরূপে বর্ণনা করেননি।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬৩৯-[২৮] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসীগণ কেশবিহীন (লোম বা পশমহীন), দাড়িবিহীন ও সুরমায়িত চক্ষুবিশিষ্ট ত্রিশ বা তেত্রিশ বছর বয়সীর মতো প্রবেশ করবে। (তিরমিযী)
হাসান: তিরমিযী ২৫৪৫, সহীহুল জামি ৮০৭২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৭০০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৬৯৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৯৮৭, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৪০০৬, মুসনাদে আহমাদ ৭৯২০, আল মু’জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৬৫৪২, আল মু’জামুস সগীর লিত্ব তবারানী ৮০৮, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৫৪২২।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)

সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪১/ জান্নাতের বিবরণ
পরিচ্ছেদঃ জান্নাতবাসীগনের সঙ্গমের বিবরণ।
২৫৩৮. মুহাম্মাদ ইবন বাশশার (রহঃ) ও মাহমূদ ইবন গায়লান …. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে প্রত্যেক মুমিনকে এত এত সঙ্গম শক্তি দেওয়া হবে। বলা হয়ঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তা করতে সক্ষম হবে কি? তিনি বললেনঃ তাকে তো একশ’ জনের শক্তি দেওয়া হবে। হাসান সহীহ, মিশকাত ৫৬৩৬, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৫৩৬ [আল মাদানী প্রকাশনী]
এ বিষয়ে যায়দ ইবন আরকাম (রাঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি সহীহ-গারীব। ইমরান আল কাত্তান (রহঃ) ছাড়া কাতাদা … আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়ত হিসাবে এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

একইসাথে, সেই একই নবী মুহাম্মদ বলেছেন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা। তার যৌনদাসী মারিয়া কিবতিয়ার পেটে জন্ম নেয়া শিশুপুত্র ইব্রাহিম ইবনে মুহাম্মদের মৃত্যুর পরে নবী মুহাম্মদ দুঃখ করে তার অনুসারীদের বলেছিলেন, সেই মৃত শিশুটিকে নাকি জান্নাতে দুইজন ধাত্রী দ্বারা দুধপান করানো হবে [5] [6]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ – রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩১-[৩১] ’আমর ইবনু সা’ঈদ (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সন্তান-সন্ততির প্রতি অত্যধিক স্নেহ-মমতা পোষণকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চেয়ে বেশি আমি আর কাউকে দেখেনি। তাঁর পুত্র ইবরাহীম (রাঃ) মদীনার উঁচু প্রান্তে (এক মহল্লায়) ধাত্রী মায়ের কাছে দুধপান করত। তিনি প্রায়শ সেথায় গমন করতেন এবং আমরাও তাঁর সাথে যেতাম। তিনি (সা.) উক্ত গৃহে প্রবেশ করতেন, অথচ সে গৃহটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকত। কারণ ইবরাহীম (রাঃ)-এর ধাত্রী মায়ের স্বামী ছিল একজন কামার। রাসূল (সা.) ইবরাহীমকে কোলে তুলে নিতেন এবং আদর করে চুমু দিতেন, এরপর চলে আসতেন। বর্ণনাকারী ’আমর বলেন, যখন ইবরাহীম (রাঃ) -এর মৃত্যু হয়ে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ইবরাহীম আমার পুত্র। সে দুগ্ধ (পানের) বয়সে মৃত্যুবরণ করেছে। অতএব জান্নাতে তার জন্য দু’জন ধাত্রী রয়েছে, যারা তাকে দুগ্ধ পানের মুদ্দাত জান্নাতে পূর্ণ করবে। (মুসলিম)
সহীহঃ মুসলিম ৬৩-(২৩১৬), আবূ ইয়া’লা ৪১৯৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৯৫০।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৫/ ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ১৫. ছেলেদের প্রতি নবী (ﷺ) এর দয়া ও বিনয় এবং তার মর্যাদা
৫৮১৯। যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিশুদের প্রতি বেশি দয়া প্রদর্শনকারী কাউকে আমি দেখিনি। তিনি বলেন, (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ছেলে) ইবরাহীম (রাঃ) মদিনার আওয়ালী (চড়াই) অঞ্চলে দুধপান করতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে যেতেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে যেতাম। তিনি সে (দাইয়ের) ঘরে প্রবেশ করতেন, আর সেখানে ধোঁয়া হতো। (কেননা) তার বংশ কর্মকার ছিল। তিনি ছেলেকে কোলে নিতেন এবং স্নেহ করতেন। পরে তিনি ফিরে আসতেন।
আমর ইবনু সাঈদ (রাঃ) বলেন, যখন ইবরাহীম (রাঃ) ইন্তেকাল করেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইবরাহীম আমার পুত্র, দুধপান করা অবস্থায় ইন্তেকাল করেছে। তার জন্য দু’জন ধাত্রী রয়েছে, যারা জান্নাতে তাকে দুধপান (করার সময়সীমা পর্যন্ত) দুধপান করাবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

প্রশ্ন হচ্ছে, জান্নাতে সকলেই যদি ত্রিশ বা তেত্রিশ বছরের যুবক হন, তাহলে নবীর সেই পুত্র সন্তান ইবাহিমও তো জান্নাতে সেই বয়সই হয়ে যাবে এবং একশ পুরুষের সমান যৌনশক্তি লাভ করবে। সেই অবস্থায় নবীর ত্রিশ বা তেত্রিশ বছর বয়সই ছেলে ইব্রাহীম কেন ধাত্রীর দুধপান করবে, সেটি খুবই অবাক ব্যাপার। মুহাম্মদের ছেলে ইব্রাহীম জান্নাতে সেই দুইজন ধাত্রীর শুধু দুধপানই করবে, নাকি দুধপানের সাথে তার একশ পুরুষের সমান যৌনশক্তির পবিত্র মেশিনটিও ধাত্রীদের ওপর চালনা করবে, তা অবশ্য হাদিস থেকে জানা যায় নি।

জান্নাতে

তথ্যসূত্র

  1. সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৫৪৭ []
  2. সুনান আত তিরমিজী(তাহকীককৃত), হাদিসঃ ২৫৪৫ []
  3. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৫৬৩৯ []
  4. সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৫৩৮ []
  5. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৫৮৩১ []
  6. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৮১৯ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"