17.সাহাবীদের পরামর্শে বিধান পরিবর্তন

ইসলামের মৌলিক আকীদা হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ নিজ থেকে কখনই কোন কথা বলেন না বা বিধান দেন না। তিনি যা হুকুম করেন বা যেই বিধান দেন তা আল্লাহই নবীর মাধ্যমে মানুষকে জানান। এই বিষয়ে অসংখ্য হাদিস রয়েছে, যেখানে বলা আছে, নবী নিজ থেকে কোন কিছু করেন না বা বিধান তৈরি করেন না। সবই আসলে তিনি আল্লাহর হুকুমে করেন। আল্লাহ যেভাবে হুকুম দেন, যেভাবে হালাল হারাম করেন, নবী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাই বর্ণনা করেন। কোন ব্যক্তিগত মত বা অমুক জায়গার দৃষ্টান্ত এইসব ক্ষেত্রে কোন প্রভাব বিস্তার করে না। আসুন বুখারী শরীফ এবং সহজ নসরুল বারী থেকে এর প্রমাণ দেখে নিই, [1] [2]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৯৬/ কুরআন ও সুন্নাহকে শক্তভাবে ধরে থাকা
পরিচ্ছেদঃ ৯৬/৯. নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) উম্মাতের পুরুষ ও নারীদেরকে সে বিষয়েরই শিক্ষা দিতেন, যা আল্লাহ্ তাঁকে শিখিয়ে দিতেন, নিজস্ব মতামত বা দৃষ্টান্তের উপর ভিত্তি করে নয়।
৭৩১০. আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাদীস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তাত্থেকে আপনি আমাদের শিখাবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হবে। সে মোতাবেক তারা একত্রিত হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ্ তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন। এবং বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি সন্তানদের থেকে তিনটি সন্তান আগে পাঠিয়ে দেয় (মৃত্যুবরণ করে) তাহলে এ সন্তানরা তার জন্য জাহান্নাম থেকে পর্দা যাবে। তাদের মাঝ থেকে একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি দু’জন হয়? বর্ণনাকারী বলেন, মহিলা কথাটি দু’ দু’বার জিজ্ঞেস করলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দু’জন হলেও, দু’জন হলেও, দু’জন হলেও। [মুসলিম ৪৫/৪৭, হাঃ ২৬৩৩, আহমাদ ১১২৯৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)

সাহাবী

এবারে নিচের হাদিসগুলো পড়ুন। এই একই ধরণের ঘটনা নবীর জীবনে আরও রয়েছে। নবী মুহাম্মদ একবার একটি বিধান করলেন বা করতে মনস্থির করলেন যে, স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করা তিনি নিষিদ্ধ করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই মনস্থির তিনি ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা জ্ঞান অনুসারে করেছিলেন, নাকি আল্লাহই তাকে এই কাজটি নিষিদ্ধ করার প্রেরণা দিয়েছিলেন? কিন্তু সেই সময়ে কয়েকজন সাহাবীর কাছ থেকে জানতে পারলেন, রোম ও পারস্যের লোকেরা এই কাজটি করে, এবং তাতে তাদের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। অর্থাৎ এই জ্ঞান সেই সময়ে নবীর ছিল না। অর্থাৎ কোন বিষয়ে জ্ঞান ছাড়াই তিনি কি নিজের স্বল্পবুদ্ধিতেই মনের খেয়াল খুশি মতো বিধান তৈরি করতেন? পরবর্তীতে তিনি যখন সাহাবীদের থেকে জানতে পারলেন, এতে কোন ক্ষতি নেই, তখন তিনি সাহাবীদের কাছ থেকে এই জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে এই কাজটি করাকে বৈধতা দিলেন। অর্থাৎ দৃষ্টান্ত বা মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে আল্লাহর নবী তার মনের ইচ্ছাকে পরিবর্তন করলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ কেন নবীকে এই জ্ঞান আগেই দেয়নি? রোম আর পারস্য ঘুরে আসা সাহাবীদের বুদ্ধিতে কেন ইসলামের কোন বিধান তৈরি হবে? স্বল্পজ্ঞানী কিন্তু দেশবিদেশ ঘোরা অভিজ্ঞ মানুষ কী আল্লাহর চাইতেও বেশি বুঝে? [3] [4] [5]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৭/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ২৪. ‘গীলা’ অর্থাৎ স্তন্যদায়িনি স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের বৈধতা এবং আযল মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গ
৩৪৩৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) … সাঈদ ইবনে আবু আয়্যুব (রহঃ) আসওয়াদ থেকে তিনি উরওয়া থেকে তিনি আয়শা (রাঃ) এবং তিনি উকাশার ভগ্নি জুদামা বিনত ওয়াহব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন কিছু সংখ্যক লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হাযির হলাম। তিনি তখন বলছিলেন, আমি স্তন্যদায়িনী মহিলার সাথে সঙ্গম করা নিষেধ করার ইচ্ছা করলাম, এমতাবস্থায় আমি রোম ও পারস্যবাসী লোকদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে অবগত হলাম যে, তারা গীলা করে থাকে, কিন্তু তা তাদের সন্তান সন্ততির কোনরূপ ক্ষতি করে না। তারপর লোকেরা তাকে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হল গোপন হত্যা।
রাবী উবায়দুল্লাহ তার বর্ণনায় সুত্রে আয়াতটুকুও উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ ’যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে’ (৮১ঃ ৮- ৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৭/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ২৪. ‘গীলা’ অর্থাৎ স্তন্যদায়িনি স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের বৈধতা এবং আযল মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গ
৩৪৩৩। খালফ ইবনু হিশাম ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … জুদামা বিনত ওয়াহাব আসাদিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, আমি গীলা (স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম) নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ইচ্ছে করলাম। এরপর আমার নিকট আলোচনা করা হল যে, রোম ও পারস্যবাসী লোকেরাও তা করে থাকে, অথচ তাতে তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয় না। খালফ তার সনদ বর্ণনায় বলেছেন যে, জুযামা আসদিয়া থেকে বর্ণিত। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, বিশুদ্ধ হল ’জুদামা’ যা ইয়াইয়া তার বর্ণনায় বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৭। বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ২৪. ‘গীলাহ’ অর্থাৎ স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের বৈধতা এবং ‘আযল মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গে
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৩৪৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৪২
৩৪৫৬-(১৪০/১৪৪২) খালাফ ইবনু হিশাম ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহিমাহুমাল্লাহ) ….. জুদামাহ বিনতু ওয়াহব আল আসাদিয়্যাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, আমি স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ইচ্ছে করলাম। এরপর আমার নিকট আলোচনা করা হল যে, রোম ও পারস্যবাসী লোকেরাও তা করে থাকে, অথচ তাতে তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয় না।
ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, খালাফ তার সানাদ বর্ণনায় “জুদামাহ্ আল আসাদিয়্যাহ্” উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ইয়াহইয়া বর্ণিত ’জুযামাহ’ শব্দটিই সঠিক ও নির্ভুল। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪২৯, ইসলামীক সেন্টার ৩৪২৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জুদামা বিনত ওয়াহব আসাদিয়া (রাঃ)

এবারে আসুন এই সম্পর্কে হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থে কী বলা আছে তা পড়ি, [6]

সাহাবী 1
সাহাবী 3

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৭৩১০ []
  2. সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী, আরবি-বাংলা, সহজ তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, হযরত মাওলানা উসমান গনী, আল কাউসার প্রকাশনী, ১৩তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫৭ []
  3. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৪৩৪ []
  4. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৪৩৩ []
  5. সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিসঃ ৩৪৫৬ []
  6. সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), আল হাদীছ প্রকাশনী, ১৩তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২০, ২২১ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"