ভূমিকা
ইসলাম ধর্মে আল্লাহকে একইসাথে ন্যায় বিচারক এবং পরম করুণাময় হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এই দুই বৈশিষ্ট্যই আল্লাহর একত্বের গুরুত্বপূর্ণ দিক। মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আল্লাহ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং সর্বদ্রষ্টা। তিনি অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন এবং সমস্ত সৃষ্টির প্রতি অসীম করুণা প্রদর্শন করেন। একইসাথে তিনি ন্যায়বিচারক, যিনি প্রতিটি মানুষের কর্মের মূল্যায়ন করেন এবং সঠিকভাবে শাস্তি বা পুরস্কার প্রদান করেন। তবে, দার্শনিক এবং যৌক্তিকভাবে এই দুই বৈশিষ্ট্য — ন্যায় বিচারক এবং পরম করুণাময় — এই দুইটি সম্পূর্ণ পরস্পর বিরোধী ধারণা। শুধু পরস্পরবিরোধীই নয়, এই দুইটির একইসাথে অবস্থান আসলে যৌক্তিকভাবে অসম্ভব।
ন্যায় বিচার এবং করুণাময়ের সংজ্ঞা:
প্রবন্ধটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করার আগে, ন্যায় বিচার এবং করুণাময় বিচার এর সংজ্ঞা বুঝে নেওয়া জরুরি। ন্যায় বিচার বলতে বোঝায় কোন রকম পক্ষপাত না করে নিয়মের মধ্যে যা রয়েছে, একদম সূক্ষ্মভাবে সেই শাস্তি প্রদান বা পুরস্কার দেওয়ার প্রক্রিয়া, যার মূল ভিত্তি হচ্ছে নিরপেক্ষতা এবং ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতি বাদ রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। ন্যায় বিচার বলতে এমন একটি নীতি বোঝায়, যা অপরাধ বা অন্যায় কাজের জন্য শাস্তি প্রদান এবং সঠিক কাজের জন্য পুরস্কার নির্ধারণ করে। ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪), একজন প্রখ্যাত দার্শনিক, এই বিষয়ে বলেন, “ন্যায়বিচার একটি অপরিহার্য মূল্যবোধ, যা মানুষের প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দাবি করে। অন্যদিকে, করুণা একটি আনুগ্রহ, যা প্রাপ্যতার বাইরে গিয়ে প্রদত্ত হয়।” [1]
অন্যদিকে, করুণাময় বিচার হলো সেই বিচার পদ্ধতি, যেখানে আইন বা নিয়মের মধ্যে যা আছে, তার থেকে অপরাধীকে শাস্তি প্রদান না করে বা শাস্তি হ্রাস করে অপরাধীকে ক্ষমা করা হয়। করুণা এমন একটি ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতির প্রকাশ, যা অপরাধ বা অন্যায় কর্মের জন্য শাস্তি মওকুফ করে এবং অপরাধীকে ক্ষমা করে। করুণাময় বিচার ন্যায়বিচারের বিপরীত। এটি শাস্তি প্রদানে নমনীয়তা এবং দয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে অপরাধীকে নতুন সুযোগ দেওয়ার দিকে নজর দেয়।
একটি উদাহরণ:
ধরি, একটি দেশে চুরি এবং এই ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে পারফেক্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যেই আইনের কোন ত্রুটি নেই। পারফেক্ট আইনটিতে বলা হয়েছে, যে কেউ চুরি করবে, তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। একদিন এক যুবক, একটি দোকান থেকে একটি হীরের আংটি চুরি করে। যুবককে ধরা হয় এবং আদালতে নিয়ে আসা হয়। বিচারকের আসলে যিনি বসে আছেন, যুবকটি দেখল, এই বিচারককে তিনি চেনেন এবং সবসময় ঐ বিচারককে প্রশংসা করে। বিচারকের সাথে তার এক ধরণের সখ্যতা রয়েছে, এবং বিচারকও তাকে বেশ পছন্দ করে।
বিচারকের দায়িত্ব: বিচারকের সামনে দুটি স্পষ্ট নীতি রয়েছে—পারফেক্ট আইনে যা বলা আছে, সেটি সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মভাবে পালন করে ন্যায়বিচার করা। কোন ধরণের পূর্ব পরিচয়, প্রশংসা পেয়ে খুশি হওয়ার অনুভূতি, রাগ বা ক্ষোভ ইত্যাদি কোনকিছুই বিচার বিবেচনা না করে শুধুমাত্র পারফেক্ট আইনে যেভাবে বর্ণিত আছে, ঠিক সেভাবে বিচারটি করা। এবং অপরাধের জন্য উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করে পারফেক্ট আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আর অন্যদিকে আরেক ধরণের বিচার হচ্ছে, পারফেক্ট আইনে যা আছে সেই অনুসারে ব্যবস্থা না নিয়ে যুবকটিকে করুণা করা। যেহেতু যুবকটিকে তার ভাল ছেলে মনে হচ্ছে, তার প্রশংসা যুবকটি নানা জায়গাতে করে, তাই তার মনে করুণা নামক আবেগটি জন্ম হতে পারে। সেই আবেগকে ভিত্তি ধরে তিনি যদি পারফেক্ট আইনের বাইরে কোন সিদ্ধান্ত নেন, সেটি হবে করুণা করা। অপরাধীর প্রতি তার যদি কোন ধরণের ব্যক্তিগত আবেগ, সহানুভূতি পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় কোনভাবে শাস্তি মওকুফ বা হ্রাস করতে প্রভাবিত করে, তাহলে সেটি হবে করুনার বিচার। পারফেক্ট আইনের বাইরে গিয়েই সেটি করতে হবে।
ন্যায়বিচারের প্রয়োগ: যদি বিচারক পারফেক্ট আইন অনুসারে ন্যায়বিচারের পথে যান, তাহলে তাকে এই যুবকের চুরির অপরাধের জন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করতে হবে। পারফেক্ট আইনটি যেহেতু স্পষ্ট, এবং সেই পারফেক্ট আইন অনুযায়ী অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া ন্যায়বিচারের প্রয়োগ হবে। সেই আইনটি যেহেতু একটি পারফেক্ট আইন, সেহেতু সেই আইনে কোন ত্রুটি থাকতে পারে না। যুবকটি কোন প্রেক্ষাপটে, কোন অবস্থায় এই চুরিটি করেছে, সেটিও নিশ্চিতভাবে সেই পারফেক্ট আইনে উল্লেখিত থাকবে এবং এর ওপর ভিত্তি করে শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। যেটি কোনভাবেই অনিচার হতে পারে না, যেহেতু সেটি একটি পারফেক্ট আইন। কিন্তু যুবকটি তো বিচারকের দৃষ্টিতে একজন ভাল ছেলে। তার হয়তো কোন বিশেষ প্রয়োজনে সে চুরিটি করেছে, সে হিসেবে তার শাস্তি হ্রাস করা হলে তার প্রতি আইনের বাইরে গিয়েই করুণা করতে হবে। আর সেই পারফেক্ট আইনেই যদি বিশেষ প্রেক্ষাপটে বিশেষ বিবেচনার কথা বলা থাকে, তাহলে তো সেই বিচারকের ব্যক্তিগত করুণার প্রয়োজন নেই। পারফেক্ট আইনটিই সেই সময়ে বিশেষ পরিস্থিতিতে শাস্তি হ্রাস করে দিবে। তাই না?
করুণার প্রয়োগ:,বিচারক যদি যুবকের অসহায়তা, দরিদ্রতা, এবং চুরি করার পেছনের কারণগুলো বিবেচনা করে পারফেক্ট আইনের বাইরে গিয়ে তাকে ক্ষমা করেন, তবে তা হবে করুণা। এ ক্ষেত্রে বিচারক শাস্তি থেকে অব্যাহতি দিয়ে যুবকের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করবেন, কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি পারফেক্ট আইনের শাসন বা ন্যায়বিচার প্রয়োগ করবেন না।
যৌক্তিক দ্বন্দ্ব
এই উদাহরণে, বিচারক যদি যুবককে শাস্তি দেন, তাহলে তিনি ন্যায়বিচার করবেন, কিন্তু করুণা প্রদর্শন করতে পারবেন না। আবার, যদি তিনি করুণা দেখিয়ে শাস্তি মওকুফ করেন, তাহলে তিনি ন্যায়বিচার করতে পারবেন না। ন্যায়বিচার এবং করুণাময় বিচার একইসাথে কার্যকর করা সম্ভব নয়, কারণ ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে অপরাধের জন্য শাস্তি প্রয়োজন, আর করুণার ভিত্তিতে শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই দ্বন্দ্বই আল্লাহর ন্যায়বিচারক এবং করুণাময় হওয়ার ধারণার সাথে সম্পর্কিত, যেখানে একইসাথে শাস্তি প্রদান এবং ক্ষমা করা যৌক্তিকভাবে একটি জটিল ও অসম্ভব পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
আল্লাহর ন্যায় বিচারক হওয়ার ধারণা
আল্লাহর ন্যায় বিচারক হওয়ার ধারণা ইসলামের কেন্দ্রীয় বিশ্বাসগুলোর একটি। কোরআনে বহু আয়াতে আল্লাহর ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ সবকিছু দেখেন এবং জানেন, এবং তিনি কোনো পাপ বা অন্যায় কাজের জন্য যথাপোযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে। যারা পাপ করে বা অন্যায়ের পথে চলে, তাদের শাস্তি প্রদান করা আল্লাহর ন্যায়বিচারের অংশ। আল্লাহর ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে, প্রতিটি মানুষ তার কর্মের ফল পাবে। কোরআনে উল্লেখ আছে, “যে কেউ একটি কণার পরিমাণ পাপ করবে, সে তার ফল ভোগ করবে এবং যে কেউ একটি কণার পরিমাণ ভালো কাজ করবে, সে তার ফল লাভ করবে” [2]।
আল্লাহর পরম করুণাময় হওয়ার ধারণা
অন্যদিকে, আল্লাহকে পরম করুণাময় হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। কোরআনের প্রতিটি সূরা ( সূরা তওবা ছাড়া), “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” দিয়ে শুরু করা হয়েছে, যার অর্থ “পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।” আল্লাহর করুণা তাঁর সব সৃষ্টির প্রতি প্রসারিত। কোরআনের বহু আয়াতে আল্লাহর অসীম করুণা ও দয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহ সবচাইতে ভয়ঙ্কর অপরাধী বা পাপীকেও বারবার ক্ষমা করতে সক্ষম এবং তিনি তার সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করেন বলে কোরআনে দাবী করা হয়েছে।
ন্যায় বিচারক ও পরম করুণাময়ের বিরোধ
দার্শনিক ও যৌক্তিকভাবে, আল্লাহর ন্যায় বিচারক হওয়ার ধারণা এবং পরম করুণাময়ের ধারণা, এই দুটি বৈশিষ্ট্য একে অপরের বিপরীত। কারণ, ন্যায়বিচার ও করুণা প্রায়ই একই কর্মের প্রেক্ষিতে ভিন্ন ফলাফল দেয়। ন্যায়বিচার হচ্ছে কোন ধরণের আবেগ অনুভূতির বশবর্তী না হয়ে আইনে যা আছে সেটিই অনুসরণ এবং নিরপেক্ষ শাস্তি প্রদান, আর করুণা হচ্ছে আইনে যা আছে সেটি থেকে মুক্তি দেয়া বা শাস্তি মওকুফ করা। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন অপরাধী অপরাধ করে এবং আল্লাহ তার পারফেক্ট আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি দেন, তবে তা ন্যায়বিচারের প্রয়োগ। তবে যদি আল্লাহ তাকে শাস্তি না দিয়ে আইন বহির্ভূতভাবে করুণা প্রদর্শন করেন, তবে সেটা হবে করুণা, কিন্তু ন্যায়বিচার নয়। কারণ করুণা করতে হলে তাকে অবশ্যই আইন বহির্ভূত কিছু করতে হবে, যেটি একটি মানবীয় আবেগ। এ কারণে, এই দুই বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
ফিলোসফিকাল এবং তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
দার্শনিকভাবে, এই দুটি বৈশিষ্ট্য পরস্পর বিরোধী বলেই বিবেচিত হয়। কারণ ন্যায়বিচার এবং করুণা মূলত দুটি ভিন্ন নীতি অনুসরণ করে। ন্যায়বিচার একটি অপরাধ বা অন্যায়ের জন্য শাস্তি বা প্রতিকারের দাবি করে, যেখানে করুণা অপরাধীকে শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়। যদি আল্লাহ ন্যায়বিচারক হন এবং প্রতিটি অপরাধের জন্য অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করেন, তবে তাঁকে ক্ষমা করার কোন অবকাশ থাকে না। একইভাবে, যদি তিনি প্রতিটি অপরাধীকে ক্ষমা করেন এবং তাদের ওপর করুণা প্রদর্শন করেন, তবে ন্যায়বিচার পরিপূর্ণভাবে রক্ষা হয় না।
ইসলামিক প্রেক্ষাপটে সমাধান
ইসলামিক দর্শনে এই দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য আল্লাহর করুণা ও ন্যায়বিচারকে একসঙ্গে বিবেচনা করার একটি প্রচেষ্টা দেখা যায়। ইসলামের ইতিহাসে অনেক বড় বড় আলেমই এই দ্বন্দ্ব সমাধানের চেষ্টা করেছেন। আল্লাহর করুণা এবং ন্যায়বিচারকে তার সার্বভৌমত্বের দুটি অপরিহার্য দিক হিসেবে দেখা হয়। আল্লাহর ন্যায়বিচার মানে হলো যারা অপরাধ করে তারা শাস্তি পাবে, কিন্তু আল্লাহর করুণা সেই শাস্তিকে অনেক ক্ষেত্রে মওকুফ করতে পারে। ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে, আল্লাহ তার ইচ্ছামতো ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু তিনি শুধু তাদেরই ক্ষমা করেন যারা প্রকৃতপক্ষে পাপের জন্য অনুশোচনা করে। কিন্তু এই সমাধানে সমস্যাটি হচ্ছে, এটি তো আসলে আল্লাহ আলাদাভাবে করুণা করে করলেন না। এটিও তো আল্লাহর পারফেক্ট আইনেরই অংশ যে, কেউ যদি সত্যিকারের অনুশোচনা করে, তাহলে তার জন্য ক্ষমা রয়েছে। তাহলে এখানে করুণা থাকলো কোথায়? করুণা তো আইনের বহির্ভূত একটি বৈশিষ্ট্য। এই সমস্যার মোকাবেলা করতে গিয়ে আলেমগণ বেশিরভাগ সময়ই এসব নিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন, এবং মুসলিমদের বিশ্বাস স্থাপন করতে বলেছেন যে, আল্লাহ একইসাথে ন্যায় বিচারক, একইসাথে পরম করুণাময়। কিন্তু এরকম একটি অযৌক্তিক কথাকে আমরা যুক্তিহীনভাবে অন্ধবিশ্বাস কীভাবে করবো?
গুনাহের জন্য মানুষ সৃষ্টি
ইসলামের এই ধারনাটি আরও জটিল আকার ধারণ করে ইসলামেরই আরেকটি বিশ্বাস সামনে আসলে। সহিহ হাদিসে বলা হয়েছে, মানুষ যদি গুনাহ না করতো, তবে আল্লাহ তাদেরকে সরিয়ে এমন জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করত ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত। অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে গুনাহকারী এবং তার ক্ষমা প্রার্থণাকারী গুনাহ না করা মানুষের চাইতে অনেক বেশি প্রিয়। আল্লাহ চান বান্দারা যেন বেশি বেশি গুনাহ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। কারণ গুনাহ না করলে ক্ষমা চাওয়ারও দরকার হয় না। গুনাহ বা পাপ বা অপরাধ থাকলেই আল্লাহ করুণা দেখাবার সুযোগ পাবেন। আল্লাহর করুণা মানুষকে দেখানো আল্লাহর জন্য খুবী প্রয়োজনীয় বিধায়, তিনি মানুষকে বেশি বেশি পাপ এবং ক্ষমা পার্থনা করতে বলেন [3] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ – ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩২৮-(৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা গুনাহ না করতে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সরিয়ে এমন জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করত ও আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা চাইত। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। (মুসলিম)(1)
(1) সহীহ : মুসলিম ২৭৪৯, শু‘আবূল ঈমান ৬৭০০, সহীহাহ্ ১৯৫০, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আসুন এই বিষয়ে মিজানুর রহমান আজহারীর বক্তব্য শুনি,
উপসংহার
আল্লাহর ন্যায়বিচারক এবং পরম করুণাময়ের দ্বন্দ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক সমস্যা। একদিকে, ন্যায়বিচার কঠোর শাস্তি প্রদান দাবি করে, অন্যদিকে করুণা সেই শাস্তি মওকুফ করে। ইসলামে এই দুটি বৈশিষ্ট্যকে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের দুটি দিক হিসেবে দেখা হয়। মুসলিমগণ এটি অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে চাইলে করতে পারেন, তবে যৌক্তিক ও দার্শনিকভাবে এগুলোকে একসাথে বিচার করলে একটি জটিল দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, যা মোটে যুক্তিযুক্ত কোন সমাধানের দিকে নিয়ে যায় না।
তথ্যসূত্র
- Kant, 1785, Groundwork of the Metaphysics of Morals [↑]
- সূরা যিলযাল, ৯৯:৭-৮ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ২৩২৮ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"