17.ছাগলে খাওয়া আয়াতটি আর পাওয়া গেল না

কোরআনে সামান্যতম কোন পরিবর্তন বা পরিমার্জনা হয় নি, যেমন ছিল তেমনই রয়েছে, এই ধারণার ভিত্তিতে সবচাইতে বড় আঘাত হচ্ছে, কোরআনের হারিয়ে যাওয়া আয়াতের কথা, যা আয়েশার হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি। আল্লাহ পাক দ্বারা প্রেরিত আয়াত কীভাবে ছাগলে খেয়ে যায়, যার কারণে আয়াতটি আর খুঁজে পাওয়া যায় না, যেই আয়াতগুলো বর্তমান কোরআনে অনুপস্থিত, তা বিশ্বাসী মুসলিমদের কাছে এখনো একটি বড় প্রশ্ন। সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক একটি হাদিস পড়ে নিই। পাঠক মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, নবীর মৃত্যুর সময় অবধি প্রচুর পরিমাণে ওহী নাজিল হওয়ার সুস্পষ্ট হাদিস জানা যায়। সেইসাথে এটি জানা যায়, নবীর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত কিছু আয়াত কোরআনের আয়াত হিসেবে পাঠ করা হতো। সেই আয়াতগুলোর মধ্যেই একটি ছিল বয়স্ক লোকের দুধপান বিষয়ক আয়াত, যা একটি ছাগলে খেয়ে যায় বলে আর পাওয়া সম্ভব হয়নি। আসুন শুরুতেই দেখি, নবীর মৃত্যুর দিন অবধি প্রচুর পরিমাণ ওহী নাজিলের হাদিস [1] [2]

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৬। তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৭৪১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩০১৬
৭৪১৪-(২/৩০১৬) আমর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু বুকায়র আন নাকিদ, হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী ও ’আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইন্তিকালের পূর্বে ও ইন্তিকাল পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ধারাবাহিকভাবে ওয়াহী অবতীর্ণ করেন। যেদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন সেদিনও তার প্রতি অনেক ওয়াহী অবতীর্ণ হয়। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৭২৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

ছাগলে

এবারে দেখি, সেই বিখ্যাত ছাগলে খেয়ে যাওয়া কোরআনের আয়াতের হাদিসটি [3] [4]

সুনান ইবনু মাজাহ
৯/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ৯/৩৬. বয়স্ক লোকে দুধ পান করলে।
২/১৯৪৪’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে।
মাজাহ ১৯৪৪ সহীহুল বুখারী ১৪৫২, নাসায়ী ৩৩০৭, ২০৬২, মুয়াত্তা মালেক ১২৯৩, দারেমী ২২৫৩, তা’লীক ইবনু মাজাহ।
তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

বয়ষ্ক লোকের দুধপান

এবারে দেখি, নবীর মৃত্যু অবধি ঐ আয়াতটি যে কোর আনের আয়াত হিসেবে তিলাওয়াত করা হতো, সে সম্পর্কে জেনে নিই, [5]

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান
পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৩৪৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরআনে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলঃ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ‘দশবার দুধপানে হারাম সাবিত হয়।’ তারপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ এর দ্বারা। (পাঁচবার পান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়) তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

উপরের হাদিসে লক্ষ্য করুন, নবীর মৃত্যু অবধি পাঁচবার দুধপানে হারাম সাব্যস্ত হওয়ার কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করা হতো। হাদিসের মধ্যে “অথচ” শব্দটি লক্ষ্য করুন। তাহলে সেই আয়াতটি কোথায়? এবারে আসুন এই হাদিসটির ব্যাখ্যা পড়ে নিই, যা থেকে জানা যায় পাঁচবার দুধপানের আয়াত নবীর মৃত্যুর সময় অবধি কোরআনের আয়াত হিসেবে প্রচলিত ছিল, কিন্তু সেই আয়াতটি আর পাওয়া যায় না [6]

ছাগলে 2

এরপরে তো নবীর মৃত্যু হল, তাহলে নবীর মৃত্যুর পরে সেই আয়াতটি রহিত করলো কে বা কারা? কোরআনে বলা আছে, আল্লাহ একটি আয়াত রহিত করলে তার চেয়ে ভাল আরেকটি আয়াত আনেন। তাহলে দশবার দুধপানের আয়াত রহিত করে পাঁচবার করা হল, পাঁচবার দুধপানের আয়াত রহিত করে নিশ্চয়ই কোন আয়াত এসেছিল! যেই আয়াতটি পাঁচবারের হুকুমকে রহিত করে নাজিল হয়েছিল, সেটি কোথায়? নাকি পাঁচবার দুধপানের আয়াতটি কেউ গোপন করে ফেলেছে? [7] [8]

আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা ভুলিয়ে দিলে, তাত্থেকে উত্তম কিংবা তারই মত আয়াত নিয়ে আসি, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।
— Taisirul Quran
আমি কোন আয়াতের হুকুম রহিত করলে কিংবা আয়াতটিকে বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তদনুরূপ আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জাননা যে, আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপরই ক্ষমতাবান?
— Sheikh Mujibur Rahman
আমি যে আয়াত রহিত করি কিংবা ভুলিয়ে দেই, তার চেয়ে উত্তম কিংবা তার মত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
— Rawai Al-bayan
আমরা কোনো আয়াত রহিত করলে বা ভুলিয়ে দিলে তা থেকে উত্তম অথবা তার সমান কোনো আয়াত এনে দেই [১] আপনি কি জানেন না যে, আল্লাহ্‌ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আমি যখন এক আয়াতের বদলে অন্য আয়াত নাযিল করি- আর আল্লাহ ভালভাবেই জানেন, যা তিনি নাযিল করেন– তখন এই লোকেরা বলে, ‘তুমি তো মিথ্যা রচনাকারী।’ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, এ সম্পর্কে তাদের অধিকাংশেরই কোন জ্ঞান নেই।
— Taisirul Quran
আমি যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি, আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তা তিনিই ভাল জানেন, তখন তারা বলেঃ তুমিতো শুধু মিথ্যা উদ্ভাবনকারী, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানেনা।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর যখন আমি একটি আয়াতের স্থানে পরিবর্তন করে আরেকটি আয়াত দেই- আল্লাহ ভাল জানেন সে সম্পর্কে, যা তিনি নাযিল করেন– তখন তারা বলে, তুমি তো কেবল মিথ্যা রটনাকারী; রবং তাদের অধিকাংশই জানে না।
— Rawai Al-bayan
আর যখন আমরা এক আয়াতের স্থান পরিবর্তন করে অন্য আয়াত দেই— আর আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন যা তিনি নাযিল করবেন সে সম্পর্কে— , তখন তারা বলে, ‘আপনি তো শুধু মিথ্যা রটনাকারী’, বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিসঃ ৭৪১৪ []
  2. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৮৪, হাদিসঃ ৭২৪৩ []
  3. সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিসঃ ১৯৪৪ []
  4. সুনানু ইবনে মাজাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৯৬ []
  5. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৪৬৬ []
  6. আল-আওনুল মাহমুদ ফি-হল্লি সুনানে আবী দাউদ (কিতাবুয্ যাকাত – কিতাবুল জিহাদ), সংকলন ও সম্পাদনাঃ মাওলানা আব্দুল হাফীজ বিন আব্দুর রউফ, আল-মাহমূদ প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৩৭২ []
  7. সূরা বাকারাঃ ১০৬ []
  8. সূরা নাহলঃ ১০১ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"