সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, একজন শিক্ষিত খ্রিস্টান ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে মুহাম্মদ তাকে ওহী লেখার দায়িত্ব দেন। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই সে ইসলাম ত্যাগ করে চলে যায়। তার বক্তব্য ছিল, সে মুহাম্মদকে যা লিখে দিতো তার চাইতে বেশি মুহাম্মদ জানতো না। তার মৃত্যুর পরে কে বা কারা তাকে কবর থেকে বের করে ফেলতো। হাদিসটির দাবী হচ্ছে, কবরের মাটিই তাকে কবর থেকে বাইরে নিক্ষেপ করতো। কিন্তু সেটি সত্য হয়ে থাকলে, পৃথিবীতে এখন লক্ষ লক্ষ ইসলাম ত্যাগী এবং মুহাম্মদের কঠোর সমালোচক আছেন। তাদের সকলের কবরেই তো এরকম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরকম তো কখনো শোনা যায় না। এর অর্থ হচ্ছে, সেই সময়ে নবীরই কোন অনুসারীকে দিয়ে নবী হয়তো কাজটি করাতেন, বা নবী নিজেই করতেন। এই হাদিসটি সহিহ মুসলিম শরীফেও রয়েছে, তবে খ্রিস্টান ব্যক্তির বক্তব্য বাদ দিয়েইমাম মুসলিম হাদিসটি সংকলন করেছেন।
উল্লেখ্য, নবী রাতের বেলা একা একা ঘর থেকে বের হয়ে যেতেন, যার প্রমাণ আরেকটি হাদিস থেকে পাওয়া যায়। যেখানে দেখা যায়, আয়িশা তার পিছু নিয়েছিল। তাই সেই ব্যক্তির কবর মুহাম্মদ নিজেই খুড়ে আসতেন কিনা, সেটিও একটি সম্ভাবনা হতে পারে। হাদিসটি নিচে বর্ণনা করা হলো। এই কারণে মুহাম্মদ আয়িশার ওপর রেগে তার গায়ে হাতও তুলেছিলেন। শুরুতেই সেই হাদিসটি পড়ি, যেখানে শিক্ষিত একজন ওহী লেখক ইসলাম ত্যাগ করে নবীর সম্পর্কে বলেছিলেন, তিনি যা লিখে দিতেন তার চেয়ে বেশি কিছু নবী জানতেন না [1]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬১/ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
পরিচ্ছেদঃ ৬১/২৫. ইসলামে নুবুওয়াতের নিদর্শনাবলী।
৩৬১৭. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলিম হল এবং সূরা বাকারাহ ও সূরা আলে-ইমরান শিখে নিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সে ওহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ -কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ্ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিস্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিস্টানরা বলতে লাগল- এটা মুহাম্মাদ এবং তাঁর সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের হতে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মাদ ও তাঁর সাহাবীদের কান্ড। তাদের নিকট হতে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল। (মুসলিম ৫০/৫০ হাঃ ২৭৮১, আহমাদ ১৩৩২৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৫৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
আল-লুলু ওয়াল মারজান
৫০/ মুনাফিক ও তাদের হুকুম
পরিচ্ছেদঃ (মুনাফিক ও তাদের হুকুম)
১৭৭২. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলিম হল এবং সূরাহ বাকারাহ ও সূরাহ আলে-ইমরান শিখে নিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সে ওহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ-কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ্ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিস্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিস্টানরা বলতে লাগল- এটা মুহাম্মাদ এবং তার সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের হতে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মাদ ও তাঁর সাহাবীদের কাণ্ড। তাদের নিকট হতে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভােরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল।
সহীহুল বুখারী, পর্ব ৬১ : মর্যাদা ও গুণাবলী, অধ্যায় ২৫, হাঃ ৩৬১৭; মুসলিম, পর্ব ৫০ : মুনাফিক ও তাদের হুকুম, অধ্যায়, হাঃ ২৭৮১
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
হযরত আয়শা হতে বর্ণিত, রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে বের হয়ে গেলে, আয়িশা পিছু নেয়ার কারণে তিনি (মুহাম্মদ) আমাকে বুকের ওপর আঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল [2] [3] –
সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ৪. আত্মাভিমান
৩৯৬৫. সুলায়মান ইবন দাউদ (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আমার ব্যাপারে কি তোমাদেরকে বর্ণনা করব না? আমরা বললাম, কেন করবেন না? তিনি বললেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআমার পালার রাতে (ইশার সালাত আদায়ের পর) ফিরে আসলেন। তারপর তার জুতা পায়ের দিকে রাখলেন, তাঁর চাদর রেখে দিলেন এবং তাঁর একটি লুঙ্গি বিছানার উপর বিছালেন।
তারপর তিনি মাত্র এতটুকু সময় অবস্থান করলেন যতক্ষণে তাঁর ধারণা হল যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর উঠে আস্তে করে জুতা পরলেন এবং আস্তে করে তার চাদর নিলেন। তারপর আস্তে করে দরজা খুললেন এবং বের হয়ে আস্তে দরজা চাপিয়ে দিলেন। আর আমি মাথার উপর দিয়ে কামিজটি পরিধান করলাম, ওড়না পরলাম এবং চাদরটি গায়ে আবৃত করলাম ও তার পিছনে চললাম, তিনি বাকীতে আসলেন এবং তিনবার হাত উঠালেন ও বহুক্ষণ দাঁড়ালেন, তারপর ফিরে আসছিলেন। আমিও ফিরে আসছিলাম। তিনি একটু তীব্রগতিতে চললেন, আমিও তীব্রগতিতে চললাম, তিনি দৌড়ালেন, আমিও দৌড়ালাম। তিনি পৌছে গেলেন, তবে আমি তার আগে পৌছে গেলাম।
ঘরে প্রবেশ করেই শুয়ে পড়লাম। তিনিও প্রবেশ করলেন এবং বললেনঃ হে আয়েশা! কি হয়েছে তোমার পেট যে ফুলে গেছে। বর্ণনাকারী সুলায়মান বলেন, ইবন ওয়াহাব (رابية) এর পরিবর্তে (حشيا) দ্রুত চলার কারণে হাঁপিয়ে ওঠা শব্দটি বলেছেন বলে ধারণা করছি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘটনা কি বল, নচেৎ আল্লাহ্ যিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত, তিনিই আমাকে খবর দিবেন।
আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক এবং ঘটনাটির বর্ণনা দিলাম। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমিই সেই (ছায়ামূর্তি) যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম? আমি বললাম, হ্যাঁ। আয়েশা (রাঃ) বললেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বক্ষে একটি মুষ্ঠাঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি ধারণা করেছ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করবে? আয়েশ্ম (রাঃ) বললেন, লোক যতই গোপন করুক না কেন, আল্লাহ্ তা নিশ্চিত জানেন।
রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি যখন আমাকে দেখছিলে তখন জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসেছিলেন। তুমি যে (শুয়ে যাওয়ায়) কাপড় খুলে ফেলেছ। তাই জিবরীল (আঃ) প্রবেশ করেননি। তোমার থেকে গোপন করে আমাকে ডাকলেন, আমিও তোমার থেকে গোপন করে উত্তর দিলাম। মনে করলাম, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তোমাকে জাগিয়ে দেওয়াটা পছন্দ করলাম না এবং এ ভয়ও ছিল যে, (আমি চলে যাওয়ার কারণে) তুমি নিঃসঙ্গতা বােধ করবে। জিবরীল (আঃ) আমাকে নির্দেশ দিলে বাকীতে অবস্থানকারীদের কাছে যাই এবং তাদের রব্বের কাছে তাদের জন্য ক্ষমা চাই।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ)
তথ্যসূত্র
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৬১৭ [↑]
- সূনান নাসাঈ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬৫ [↑]
- সহিহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, তৃতীয় খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ২১২৮ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"