2.2.নারী উত্যক্তকারী উমর

সরাসরি সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর সরাসরিই নবীপত্নী সাওদাকে রাস্তায় উত্যক্ত করেছিলেন, তার পর্দা না থাকার কারণে। বর্তমান সময়ে অনেক জায়গাতেই দেখা যায়, পোষাকের কারণে রাস্তাঘাটে মেয়েদের নাজেহাল করা হয়, নানা বাজে মন্তব্য করা হয়। কার পোষাক কীরকম হবে, এই নিয়ে কিছু মানুষের সীমাহীন চুলকানি। তারা এইসব কাজের প্রেরণা হযরত উমর থেকে পান কিনা, সেটিও চিন্তার বিষয়। কারণ উমর নিজেও একই কাজ করতেন বলে জানা যায়। ঘটনাটি হচ্ছে এরকম, পরপুরুষ দেখে ফেলবে এই ভয়ে সারাদিন প্রশ্রাব পায়খানা আটকে রেখে রাতের বেলা নবীর স্ত্রীগণ খোলা ময়দানে প্রাকৃতিক কাজ করার জন্য বের হতেন। সেরকম এক সময়ে প্রাকৃতিক কাজ করার জন্য বের হলে উমর সাওদার পিছু নেন এবং পথ আটকে রাখেন। একইসাথে, তিনি সাওদাকে তিরষ্কার করেন ঠিকভাবে পর্দা না করার জন্য। পথ আটকে রাখার জন্য প্রাকৃতিক কাজ করতে না যেতে পেরে সাওদা নবীর কাছে নালিশ নিয়ে যান এবং নবী তাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেন। আসুন হাদিসগুলো পড়ে নিই, [1] [2] [3] [4] [5]

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪০/ সালাম
পরিচ্ছদঃ ৭. মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য স্ত্রীলোকের বাইরে যাওয়ার বৈধতা
৫৪৮৪। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় রাতের বেলা ‘মানাসি’ এর দিকে বেরিয়ে যেতেন। الْمَنَاصِع (মানাসি) হল প্রশস্ত ময়দান। ওদিকে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতেন, আপনার স্ত্রীগণের প্রতি পর্দা বিধান করুন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেননি। কোন এক রাতে ইশার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা সাওদা বিনত যাম’আ (রাঃ) বের হলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী মহিলা। উমার (রাঃ) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেন, হে সাওদা! আমরা তোমাকে চিনে ফেলেছি। পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার প্রতি প্রবল আকাঙ্ক্ষায় (তিনি এরূপ করলেন)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আল্লাহর তাআলা পর্দা-বিধি নাযিল করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪৪৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯৫
৪৪৩২। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর সাওদা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে যান। সাওদা এমন মোটা শরীরের অধিকারিণী ছিলেন যে, পরিচিত লোকদের থেকে তিনি নিজকে গোপন রাখতে পারতেন না। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে দেখে বললেন, হে সাওদা! জেনে রাখ, আল্লাহর কসম, আমাদের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকতে পারবে না। এখন দেখ তো, কেমন করে বাইরে যাবে? আয়িশা (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) সাওদা (রাঃ) ফিরে আসলেন। আর এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে রাতের খানা খাচ্ছিলেন। তাঁর হাতে ছিল টুকরা হাড়। সাওদা (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম। তখন উমর (রাঃ) আমাকে এমন এমন কথা বলেছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ সময় আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নিকট ওহী নাযিল করেন। ওহী অবতীর্ণ হওয়া শেষ হল, হাড় টুকরা তখনও তাঁর হাতেই ছিল, তিনি তা রাখেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অবশ্যই প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৬/ অনুমতি চাওয়া
পরিচ্ছেদঃ ২৫৭০. পর্দার আয়াত
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫৮০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬২৪০
৫৮০৬। ইসহাক (রহঃ) … নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট প্রায়ই বলতেন যে, আপনি আপনার সহধর্মিণীদের পর্দা করান। কিন্তু তিনি তা করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীগণ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রাতে মাঠের দিকে বেরিয়ে যেতেন। একবার সাওদা বিনত যামআ (রাঃ) বেরিয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন লম্বাকৃতির মহিলা। উমর (রাঃ) মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তাই তিনি তাকে দেখে ফেললেন এবং পর্দার নির্দেশ নাযিল হওয়ার আগ্রহে বললেনঃ ওহে সাওদা! আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি। অতঃপর আল্লাহ তায়াআলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪০/ সালাম
পরিচ্ছেদঃ ৭. মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য স্ত্রীলোকের বাইরে যাওয়ার বৈধতা
৫৪৮২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমাদের উপরে) পর্দার বিধান আরোপের পর সাওদা (রাঃ) তার প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলেন, ছিলেন স্থুলদেহী, দেহাকৃতিতে উচ্চতায় তিনি নারীদের ঊর্ধ্বে থাকতেন; যারা তাঁকে চিনে, তাদের কাছে নিজেকে লুকাতে পারতেন না। তখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, হে সাওদা! আল্লাহর কসম! তুমি আমাদের কাছে লুকাতে পারবে না। ভেবে দেখ, কেমন করে তুমি বের হচ্ছ? আয়িশা (রাঃ) বলেন, একথা শুনে তিনি উল্টা ফিরে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে ছিলেন এবং রাতের খাবার গ্রহণ করছিলেন। তাঁর হাতে তখন অল্প গোশতযুক্ত একখানা হাড় ছিল।
সাওদা (রাঃ) ঢুকে পড়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি বের হয়েছিলাম, উমার আমাকে এই এই কথা বলেছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি ওহী নাযিল করেন। তারপর তাঁর উপর থেকে (ওহীর) অবস্থার অবসান হয়। আর তখনও হাড়টি তাঁর হাতে ছিল, তা তিনি রেখে দেননি। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে (এ বর্ননা আবূ কুরায়ব-এর)। আর আবূ বকর (রহঃ) বর্ণিত রিওয়ায়াতে রয়েছে, “তাঁর দেহ মহিলাদের ঊর্ধ্বে থাকত।” আবূ বকর (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে অধিক রিওয়ায়াত করেছেন যে, রাবী হিশাম (রহঃ) বলেছেন,الحاجة “প্রয়োজন” অর্থাৎ পায়খানার হাজত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৪/ বিয়ে-শাদী
পরিচ্ছেদঃ ২৫৩৯. প্রয়োজনে মহিলাদের ঘরের বাইরে যাওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪৮৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৩৭
৪৮৫৭। ফারাওয়া ইবনু আবূল মাগ্‌রা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে উম্মাহাতুল মু’মিনীন সওদা বিনত জামাআ (রাঃ) কোন কারণে বাইরে গেলেন। উমর (রাঃ) তাঁকে দেখে চিনে ফেললেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! হে সওদা (রাঃ) তুমি নিজেকে আমাদের কাছ থেকে লুকাতে পারনি। এতে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ফিরে গেলেন এবং উক্ত ঘটনা তাঁর কাছে বললেন। তিনি তখন আমার ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন এবং তাঁর হাতে গোশতপূর্ণ একখানা হাড় ছিল। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে ওহী নাযিল হল। যখন ওহী নাযিল হওয়া শেষ হল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা’আলা প্রয়োজনে তোমাদের জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

এবারে সরাসরি বই থেকেও দেখে নিই, [6]

সাওদা ও উমর

মেয়েরা কোন কারণে বাইরে বের হলে তাদের উত্যক্ত করার হযরত উমরের এই অভ্যাস কিন্তু শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আরো কিছু ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়, যেখানে বিভিন্ন কারণে মেয়েদের হযরত উমর উত্যক্ত করেছিলেন। অর্থাৎ এটিই কিন্তু একমাত্র ঘটনা নয়। আসুন এই বিবরণটি পড়ি, [7]

উত্যক্ত

তথ্যসূত্র

  1. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৪৩২ []
  2. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৮০৬ []
  3. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৪৮২ []
  4. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৮৫৭ []
  5. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৪৮৪ []
  6. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৭ []
  7. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৫৩৩ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"