প্রাথমিক অবস্থায় রোজার সময় ঈশার নামাজের পরে খানাপিনা এবং স্ত্রীর সহবাস হারাম ছিল। আল্লাহ পাকের বিধান সেই সময়ে ছিল এমন যে, ঈশার নামাজের পরে সারারাত আর কেউ এই কাজগুলো করতে পারবে না। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, নবী মুহাম্মদের সাহাবীগণের মধ্যে অনেকেই আল্লাহর এই বিধানের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে ঈশার পরেও স্ত্রী সহবাস চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজে অগ্রবর্তী ছিল নবী মুহাম্মদের অন্যতম সাহাবী খোদ হযরত উমর। তিনি আল্লাহর বিধানকে পাত্তা না দিয়ে তার কাজ করছিলেন। পরবর্তীতে তারা সকলে মিলে এই নিয়ে তাদের আপত্তি নবীকে জানালেন। অর্থাৎ তারা বললেন, এই আয়াতটি তাদের মনোঃপুত হচ্ছে না! আল্লাহর এই বিধানটি পরিবর্তন করে দেয়া হোক! শেষমেশ অনেক সাহাবীই যখন আর আল্লাহর হুকুম মানতে চাচ্ছে না, ওজর আপত্তি জানাচ্ছে, বাধ্য হয়ে সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞানী আল্লাহ পাক পূর্বের বিধানটি রহিত করে দিয়ে নতুন বিধান জারি করলেন যে, রমজান মাসে রাতের বেলা স্ত্রী সহবাস করা যাবে। বেচারা আল্লাহর আর কী বা করার ছিল? সাহাবীরা তো আল্লাহর হুকুম মানতেই চাইছে না! তাই বেচারা আল্লাহ তার আইনই বদলে দিলেন! আসুন কোরআনের সূরা বাকারার একটি আয়াত আগে পড়ি, [1] –
তোমাদের জন্য রমাযানের রাতে তোমাদের বিবিগণের নিকট গমন করা জায়িয করা হয়েছে, তারা তোমাদের আচ্ছাদন আর তোমরা তাদের আচ্ছাদন। আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিলেন। অতএব, এখন থেকে তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ করেছেন তা লাভ কর এবং তোমরা আহার ও পান করতে থাক যে পর্যন্ত তোমাদের জন্য কালো রেখা হতে ঊষাকালের সাদা রেখা প্রকাশ না পায়। তৎপর রাতের আগমন পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর, আর মাসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সহবাস করো না। এসব আল্লাহর আইন, কাজেই এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিজের আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা মুত্তাকী হতে পারে।
— Taisirul Quran
রামাযানের রাতে আপন স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, তারা তোমাদের জন্য এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণ, তোমরা যে নিজেদের ক্ষতি করছিলে আল্লাহ তা জ্ঞাত আছেন, এ জন্য তিনি তোমাদের প্রতি প্রত্যাবৃত্ত হলেন এবং তোমাদের (ভার) লাঘব করে দিলেন; অতএব এক্ষণে তোমরা (রামাযানের রাতেও) তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান কর এবং প্রত্যুষে কালো সূতা হতে সাদা সূতা প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা আহার ও পান কর, অতঃপর রাত সমাগম পর্যন্ত তোমরা সিয়াম পূর্ণ কর; তোমরা মাসজিদে ই‘তিকাফ করার সময় (তোমাদের স্ত্রীদের সাথে) মিলিত হবেনা; এটিই আল্লাহর সীমা। অতএব তোমরা উহার নিকটেও যাবেনা; এভাবে আল্লাহ মানবমন্ডলীর জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ বিবৃত করেন, যেন তারা সংযত হয়।
— Sheikh Mujibur Rahman
সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।
— Rawai Al-bayan
সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে [১]। তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরূপ। আল্লাহ্ জানেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদের তওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে মার্জনা করেছেন। কাজেই এখন তোমরা তাদের সাথে সংগত হও এবং আল্লাহ্ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর। আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালোরেখা থেকে উষার সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রকাশ না হয় [২]। তারপর রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত [৩] অবস্থায় তাদের সাথে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহ্র সীমারেখা। কাজেই এগুলোর নিকটবতী হয়ো না [৪]। এভাবে আল্লাহ্ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন এই আয়াতটির তাফসীর পড়ে দেখা যাক, [2] –
এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারীতে কী বলা হয়েছে দেখে নিই, [3] –
এবারে আসুন তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে দেখে নেয়া যাক, উমর এবং অন্য সাহাবীদের স্ত্রী সহবাসের ইচ্ছার কাছে আল্লাহর অসহায় আত্মসমর্পণ [4]
তথ্যসূত্র
- সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৭ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৪ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১১১ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"