ইসলামে অমুসলিমদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কোরআনের বহুস্থানে এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে,
- – হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত দেন না।
কোরআন ৫ঃ৫১ - – মুমিনরা যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধু না বানায়। আর যে কেউ এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যদি তাদের পক্ষ থেকে তোমাদের কোন ভয়ের আশঙ্কা থাকে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের ব্যাপারে সতর্ক করছেন এবং আল্লাহর নিকটই প্রত্যাবর্তন।
কোরআন ৩ঃ২৮ - – হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে তো শত্রুতা প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে তা অধিক ভয়াবহ। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছি। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে।
কোরআন ৩ঃ১১৮ - – তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহ্র পথে হিজরত করে চলে আসে। অত:পর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।
কোরআন ৪ঃ৮৯ - – যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের কাছে সম্মান চায়? অথচ যাবতীয় সম্মান আল্লাহর।
কোরআন ৪ঃ১৩৯ - – হে মুমিনগণ, তোমরা মুমিনগণ ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহর জন্য তোমাদের বিপক্ষে কোন স্পষ্ট দলীল সাব্যস্ত করতে চাও?
কোরআন ৪ঃ১৪৪ - – হে মুমিনগণ, তোমরা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্য থেকে তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও কাফিরদেরকে। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।
কোরআন ৫ঃ৫৭ - – আর তুমি পরিত্যাগ কর তাদেরকে, যারা নিজদের দীনকে গ্রহণ করেছে খেল-তামাশা রূপে এবং প্রতারিত করেছে যাদেরকে দুনিয়ার জীবন। আর তুমি কোরআন দ্বারা উপদেশ দাও, যাতে কোন ব্যক্তি তার কৃতকর্মের দরুন ধ্বংসের শিকার না হয়, তার জন্য আল্লাহ ছাড়া নেই কোন অভিভাবক এবং নেই কোন সুপারিশকারী। আর যদি সে সব ধরণের মুক্তিপণও দেয়, তার থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। এরাই তারা, যারা ধ্বংসের শিকার হয়েছে তাদের কৃতকর্মের দরুন। তাদের জন্য রয়েছে ফুটন্ত পানীয় এবং বেদনাদায়ক আযাব, যেহেতু তারা কুফরী করত।
কোরআন ৬ঃ৭০ - – মুমিনগণ, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে।
কোরআন ৬০ঃ১৩
একইসাথে, ইসলামের আকীদা হচ্ছে অমুসলিমদের সম্পর্কে সর্বদাই বিদ্বেষ ও ঘৃণা পোষণ করতে হবে। আসুন সারা পৃথিবীর সর্বোচ্চ ইসলামিক আলেম শায়েখ সালিহ আল-ফাওযান কী বলেছেন সেটি দেখে নিই [1] –
আল ইরশাদ-ছহীহ আক্বীদার দিশারী
পৃষ্ঠা ৪৩৩
আল ওয়ালা ওয়াল বারা
বন্ধুত্ব রাখা এবং শত্রুতা পোষণ করার নীতিমালা
“সংক্ষিপ্তভাবে ইসলামী আক্বীদার মৌলিক বিষয়গুলো বর্ণনা করার পর একটি আবশ্যিক
বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করছি। তা হলো ইসলামী আকীদার এসব বিষয়কে দীন হিসাবে
গ্রহণকারী প্রত্যেক মুসলিমের উপর আবশ্যক হলো, যারা উপরোক্ত বিষয়গুলোকে তাদের
আক্বীদা হিসাবে গ্রহণ করে তাদেরকে বন্ধু বানাবে এবং যারা এগুলোর প্রতি শত্রুতা পোষণ
করে তাদেরকে শত্রু বানাবে। সুতরাং সে তাওহীদ ও ইখলাস ওয়ালাদেরকে ভালোবাসবে
এবং তাদেরকে বন্ধু বানাবে। সেই সঙ্গে মুশরিকদেরকে ঘৃণা করবে এবং তাদের প্রতি শত্রুতা
পোষণ করবে। এটি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তার সাথীদের দীনের অন্তর্ভুক্ত।
আমাদেরকে তাদের অনুসরণ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা সূরা মুমতাহানার
৪নং আয়াতে বলেন,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أَسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا
تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُم وبدا بيننا وبينكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحدَهُ
“তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সাথীগণের মধ্যে চমৎকার নমুনা রয়েছে। যখন তারা
তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত
করো, তার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করছি।
তোমরা এক আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চির
শত্রুতা ও বিদ্বেষ প্রকাশিত হয়েছে”।
মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীনের কথাও তাই। আল্লাহ তা’আলা আরো
বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ
فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
“হে ঈমানদারগণ! ইয়াহুদী ও খৃস্টানদেরকে নিজেদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা
পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর যদি তোমাদের মধ্য থেকে কেউ তাদেরকে বন্ধু হিসাবে
পরিগণিত করে তাহলে সেও তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। অবশ্যই আল্লাহ যালেমদেরকে সঠিক
পথ প্রদর্শন করেন না”। (সূরা মায়েদা: ৫১) এ আয়াতে খাস করে আহলে কিতাবদেরকে বন্ধু
বানানো হারাম করা হয়েছে। সমস্ত কাফেরদেরকে বন্ধু বানানো হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ
তা’আলা বলেন,
পৃষ্ঠা ৪৩৪
আল ইরশাদ-দ্বহীহ আক্বীদার দিশারী
إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخفيتم ومَا أَعْلَتُم ومن يفعلهُ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيل
“হে মুমিনগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।
তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তোমাদের কাছে যে সত্য আগমন
করেছে, তারা তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে এবং তোমাদেরকে বহিষ্কার করে, এই
অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি
লাভের জন্য এবং আমার পথে জেহাদ করার জন্যে বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি
গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, তা আমি
খুব জানি। তোমাদের মধ্যে যে এটা করে, সে সরল পথ হতে বিচ্যুত হয়ে যায়”। (সূরা
মুমতাহানাহ: ১)
আল্লাহ মুমিনদের উপর কাফেরদেরকে বন্ধু বানানো হারাম করেছেন। যদিও তারা তার
বংশের সর্বাধিক নিকটবর্তী লোক হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, আল্লাহ তা’আলা আরো
বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنْ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الإِيمَانِ وَمَن يَتَولَّهُم
مِّنكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি
তারা কুফরকে ঈমানের উপর প্রাধান্য দেয়। তোমাদের মধ্য হতে যারা তাদেরকে
অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, তারাই হবে যালেম”। (সূরা তাওবা: ২৩) আল্লাহ তা’আলা
আরো বলেন,
ولَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادٌ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ
أبناء هُما أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشيرتهم
“যারা আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাদেরকে তুমি আল্লাহ ও তার
রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবে না। হোক না এই বিরুদ্ধাচরণকারীরা
তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের জাতি-গোত্র”। (সূরা মুজাদালা: ২২)
এ বিরাট মূলনীতিটি সম্পর্কে অনেক মানুষ অজ্ঞ রয়েছে। আমি আরবী ভাষায় প্রচারিত
একটি রেডিও অনুষ্ঠানে একজন আলেম ও দাঈকে খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলতে শুনেছি, তিনি
বলেছেন, খৃষ্টানরা আমাদের ভাই। এ রকম ভয়ঙ্কর কথা খুবই দুঃখজনক।
আল্লাহ তা’আলা যেমন ইসলামী আক্বীদা বিশ্বাসের দুশমন কাফেরদেরকে অভিভাবক
রূপে গ্রহণ করা হারাম করেছেন, ঠিক তেমনি তিনি মুমিনদেরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ
করা ও তাদেরকে বন্ধু বানানো ওয়াজিব করেছেন। আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন:
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ * وَمَنْ
يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
“আল্লাহ, তার রসূল এবং মুমিনগণই হচ্ছেন তোমাদের বন্ধু। যারা জ্বলাত কায়েম করে,
যাকাত দেয় এবং রুকু করে। আর যে আল্লাহ্ তার রসূল এবং মুমিনদেরকে বন্ধু বানায়,
কিন্তু ইদানীংকালের মুমিনগণ কোরআনের আরেকটি আয়াত নিয়ে এসে দাবী করে থাকেন যে, সকল অমুসলিমের বেলাতে নাকি এমনটি বলা হয়নি! বিস্তারিত এই লেখাটিতে আলোচনা করা হয়েছে [2] [3]। তাই সেই দলিলগুলোর চাইতে আলেমদের বক্তব্যই এখানে গুরুত্বপূর্ণ হবে। আসুন আমরা বাংলাদেশের সবচাইতে প্রখ্যাত কয়েকজন আলেমের বক্তব্য শুনে নিই,
তথ্যসূত্র
- আল ইরশাদ-ছ্বহীহ আক্বীদার দিশারী, মাকতাবুস সুন্নাহ প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪৩৩-৪৩৪ [↑]
- ইসলাম কি অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্বের অনুমোদন দেয়? [↑]
- অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে | আল্লামা ইবনে কাসীর [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"