01.মুরতাদের শাস্তি

ভূমিকা

ধর্মবিশ্বাস মূলত মানুষের ব্যক্তিগত মানসিকতা, অনুভূতি এবং বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গঠিত একটি অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া। একজন ব্যক্তি তার নিজের মনোজগৎ থেকে যা গ্রহণ করতে চান, তা-ই তার বিশ্বাসের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। এই বিশ্বাস গঠন কেবলমাত্র ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল, এবং এটি কোনো বাহ্যিক চাপ বা প্রভাবের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে পারে না। কোনো ব্যক্তিকে জোরপূর্বক কোনো নির্দিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী করানো সম্ভব নয়, কারণ এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মন থেকে আসে। কিন্তু যখন একজন মানুষ একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, তখন তাকে সেই ধর্মের প্রথা ও বিশ্বাস মেনে চলতে বলা হয়, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় না তার মতামত বা ইচ্ছা সম্পর্কে। বিশেষ করে মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে, ধর্ম পালনকে অনেক সময় বাধ্যতামূলক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যার ফলে তাদের ইচ্ছার বাইরে ধর্মীয় নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। সত্যিকার অর্থে, তার ইচ্ছে কখনো জিজ্ঞেসই করা হয় না। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে জেনেবুঝে বেছে নিতে বলা হয়না। ইসলামে, একজন ব্যক্তি যদি জেনেবুঝে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে, তবে তাকে মুরতাদ বলে চিহ্নিত করা হয়। মুরতাদের জন্য ইসলামি শরিয়তে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এই শাস্তি ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তাভাবনা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর নিষ্ঠুর হস্তক্ষেপ, যা মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। ব্যক্তির ধর্মীয় বিশ্বাস একটি স্বাধীন এবং ব্যক্তিগত বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, এমন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, যা মানুষের মুক্ত ইচ্ছা এবং স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকারকে অবমাননা করে।

মুরতাদের শাস্তি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন

মুরতাদের শাস্তি কেন এবং কীভাবে মানুষের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে, তা জানার জন্য আমাদের নিচের বিষয়গুলো বুঝতে হবেঃ

  • ১. মুসলিম পরিবারে জন্ম এবং স্বতন্ত্র ধর্মীয় পছন্দের অভাব
    • মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের ক্ষেত্রে, সাধারণত তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই মুসলমান হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাদের কাছে পছন্দের কোনো বিকল্প রাখা হয় না। যখন একজন শিশু নিজের বোধ-বিবেচনার বয়সে পৌঁছায়, তখন তার উপর ইতিমধ্যে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং বিশ্বাসের একটি সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া হয়। তাকে কখনো প্রশ্ন করা হয় না যে, সে কোন ধর্ম বেছে নিতে চায় বা সে আদৌ ধর্ম পালন করতে চায় কিনা। বা ৪২০০ টি ধর্ম পৃথিবীতে রয়েছে, তার এই ধর্মমতগুলোর মধ্যে কোন ধর্মমতটিকে যৌক্তিক মনে হয়?
    • এই বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি ভাল উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, কারণ ধর্মীয় স্বাধীনতা একটি মৌলিক অধিকার। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণা (UDHR) অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তির তার ধর্ম বিশ্বাস পরিবর্তন বা বেছে নেওয়ার অধিকার আছে। এটি মৌলিক মানবিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু ইসলামি শরিয়া আইনে এ ধরনের স্বাধীনতার সুযোগ খর্ব করে।
  • ২. ইসলামে ধর্ম ত্যাগের শাস্তি: মৃত্যুদণ্ড
    • ইসলাম ধর্ম এবং ইসলামি শরীয়া আইনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ধর্ম ত্যাগের শাস্তি। ইসলামী শরিয়া আইনে, একজন মুসলমান যদি ইসলাম ত্যাগ করে, তাহলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এই বিধানটি ‘রিদ্দাহ’ (অপস্টেসি বা ধর্মত্যাগ) নামে পরিচিত। অনেক ইসলামি পণ্ডিত এবং আইনজ্ঞ এই হুকুমের পক্ষে যুক্তি দেন যে, ধর্ম ত্যাগ করা শুধু ব্যক্তিগত বিশ্বাসের পরিবর্তন নয় বরং এটি মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য হয়। তাদের মতে, এটি সমাজের ঐক্য এবং স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করতে পারে, যা ইসলামের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অপরাধ।
    • কোরআনেও পরোক্ষভাবে কয়েকটি আয়াতে মুরতাদের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশনা আছে, সেইসাথে সহিহ হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। সহিহ বুখারি এবং সহিহ মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদিসে মুহাম্মদ নির্দেশ দিয়েছেন যে, “যে ব্যক্তি ইসলাম ত্যাগ করে, তাকে হত্যা করতে হবে।” এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিকাহ বিধান হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং অনেক মুসলিম দেশ এই শরীয়া আইনের ভিত্তিতে ধর্মত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
  • ৩. ধর্ম ত্যাগের শাস্তি ও মানবাধিকার
    • ধর্ম ত্যাগের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধানটি স্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। মানবাধিকার ঘোষণা (UDHR) এর ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং বিশ্বাস পরিবর্তনের অধিকার রয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কোনো ধর্ম অনুসরণ করার বা ত্যাগ করার অধিকার। একজন মানুষ তার ধর্ম পরিবর্তন করতে চাইলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া নৈতিক এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মারাত্মক অন্যায়।
    • ইসলাম ধর্মে এই বিধানকে সমর্থন করা হলেও, আধুনিক বিশ্বের অধিকাংশ সমাজে এটি স্পষ্টভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সাংঘর্ষিক। একটি সভ্য সমাজে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত। ধর্ম ত্যাগ বা অন্য ধর্ম গ্রহণের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি যেমন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া, বা যেকোন ভয়ভীতি প্রদর্শন, যেকোন চাপ প্রয়োগ, শাস্তির ভীতি সৃষ্টি করা, যেকোন ক্ষমতার ব্যবহার, পেশীশক্তি-রাষ্ট্রযন্ত্র- আইনের ব্যবহার, একজন ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছার ওপর গুরুতর আঘাত।
  • ৪. নৈতিক দ্বন্দ্ব: বাধ্যতামূলক বিশ্বাস এবং স্বেচ্ছায় বিশ্বাস
    • ধর্মবিশ্বাস ব্যক্তিগত ও মানসিক একটি প্রক্রিয়া। কারো ধর্ম পালনে বাধ্য করা মানে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য করা। ইসলামে, ধর্ম ত্যাগ করলে শাস্তির বিধান এই নৈতিক প্রশ্নের জন্ম দেয় যে, একজন ব্যক্তিকে জোর করে ধর্মীয় আদেশ পালনে বাধ্য করা কতটা নৈতিক? মানুষ যদি নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় ধর্ম পালনে অসম্মতি জানায়, তবে তা কি সমাজের জন্য বিপদজনক? একজন মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা এবং তার ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষার চেয়ে ধর্মীয় অনুশাসন গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। সেইসাথে, সব ধর্মের মানুষই যদি এরকম আইন করতে শুরু করে, তাহলে মারাত্মক পরিস্থিতির সূচনা হবে।
    • এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ধর্ম পালনে বাধ্য করলেও একজন ব্যক্তির মন থেকে তার বিশ্বাস পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। একজন ব্যক্তি যদি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মীয় আচার পালন করতে বাধ্য হয়, তবে সেটি আসলে তার আন্তরিকতা নয়, বরং চাপের মাধ্যমে করা একটি ক্রিয়া। এটি ধর্মীয়ভাবে সত্যিকার অর্থে মূল্যহীন হতে পারে, কারণ ইসলামে বিশ্বাসের ভিত্তি অন্ধ আনুগত্য। কিন্তু শাস্তির ভয়ে ধর্ম পালন করা মানে বিশ্বাসের অভাব। ফলে, এটি নিজেই ধর্মের ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
  • ৫. ধর্মীয় স্বাধীনতার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসলামের প্রতিক্রিয়া
    • আধুনিক সমাজে ধর্মীয় স্বাধীনতা একটি মৌলিক মানবিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারভিত্তিক নাগরিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের ধর্মীয় চর্চার অধিকার এবং ধর্ম পরিবর্তনের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু ইসলামী শরিয়া আইনে ধর্ম ত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় এটি আধুনিক মানবাধিকার ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কিছু মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রে, ধর্ম ত্যাগ করা এখনো একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখা হয় এবং অনেক মুসলিম দেশ ধর্মত্যাগের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
    • তবে, কিছু মুসলিম বুদ্ধিজীবী এবং সংস্কারপন্থী এই বিষয়ে পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তি দেন। তারা মনে করেন যে, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আধুনিক সময়ের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন ব্যাখ্যায় এবং মতবাদে এই বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে, এবং বর্তমান সময়ে অনেকেই মনে করেন যে ধর্মত্যাগের শাস্তি এত কঠোর হওয়া উচিত নয়।

আলেমদের বক্তব্য

প্রখ্যাত ইসলামিক আলেম মাহমুদুল হাসান গুনভীর একটি বক্তব্য শুনে নিই,

ইসলামিক দলিল প্রমাণ

কোরআনে মুরতাদের শাস্তি

কোরআনে সরাসরি মুরতাদ হলে হত্যা করার কথা বলা নেই, তবে একটি আয়াতে এই বিষয়ে পরোক্ষ একটি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সূরা নিসায় বলা হয়েছে, আল্লাহর রাস্তা থেকে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে তাদেরকে হত্যা করতে [1]

তারা আকাঙ্ক্ষা করে যে, তারা নিজেরা যেমন কুফরী করেছে, তোমরাও তেমনি কুফরী কর, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। কাজেই তাদের মধ্য হতে কাউকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত তারা আল্লাহর পথে হিজরত না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তাদেরকে গ্রেফতার কর এবং যেখানেই তাদেরকে পাও, হত্যা কর। তাদের মধ্য হতে কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী গ্রহণ করো না।
— Taisirul Quran
তারা ইচ্ছা করে যে, তারা যেরূপ কাফির তোমরাও যেন তদ্রুপ কাফির হয়ে যাও, যাতে তোমরাও তাদের সদৃশ হও। অতএব তাদের মধ্য হতে বন্ধু গ্রহণ করনা, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে দেশ ত্যাগ করে; অতঃপর যদি তারা প্রতিগমন করে তাহলে তাদেরকে ধর এবং যেখানে পাও তাদেরকে সংহার কর; এবং তাদের মধ্য হতে বন্ধু অথবা সাহায্যকারী গ্রহণ করনা।
— Sheikh Mujibur Rahman
তারা কামনা করে, যদি তোমরা কুফরী করতে যেভাবে তারা কুফরী করেছে। অতঃপর তোমরা সমান হয়ে যেতে। সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের মধ্য থেকে কাউকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। অতএব তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং তাদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর। আর তাদের কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না এবং না সাহায্যকারীরূপে।
— Rawai Al-bayan
তারা এটাই কামনা করে যে, তারা যেরূপ কুফরী করেছে তোমরাও সেরূপ কুফরী কর, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। কাজেই আল্লাহর পথে হিজরত [১] না করা পর্যন্ত তাদের মধ্য থেকে কাউকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে না। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তাদেরকে যেখানে পাবে গ্রেফতার করবে এবং হত্যা করবে আর তাদের মধ্য থেকে কাউকেও বন্ধু ও সহায়রূপে গ্রহণ করবে না।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

হাদিসে মুরতাদের শাস্তি

আসুন নিচের হাদিসগুলো থেকে জেনে নিই, ইসলামে মুরতাদের শাস্তি কী [2] [3] [4]

সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৮/ হত্যা অবৈধ হওয়া
পরিচ্ছেদঃ ১৪. মুরতাদ সম্পর্কে বিধান
৪০৬৪. মূসা ইবন আব্দুর রহমান (রহঃ) … হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দীন পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা কর।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ হাসান বাসরী (রহঃ)

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান‏
৪৩০০. আহমদ ইব্‌ন মুহাম্মদ (রহঃ) — ইকরাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী (রাঃ) ঐ সব লোকদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন, যারা মুরতাদ হয়েছিল। এ সংবাদ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পৌছলে, তিনি বলেনঃ যদি আমি তখন সেখানে উপস্থিত থাকতাম, তবে আমি তাদের আগুনে জ্বালাতে দিতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোময়া আল্লাহ্‌ প্রদত্ত শাস্তির (বস্তু) দ্বারা কাউকে শাস্তি দেবে না। অবশ্য আমি তাদেরকে আল্লাহ্‌র রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করতাম। কেননা, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ দীন পরিত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, তবে তোমরা তাকে হত্যা করবে। আলী (রাঃ) ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর এ নির্দেশ শুনে বলেনঃ ওয়াহ্‌! ওয়াহ্‌! ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) সত্য বলেহছেন। আর ইহাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান‏
৪৩০১. আমর ইব্‌ন আওন (রহঃ) —- আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্‌র রাসূল”। তবে তিনটি কারণের কোন মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কোন বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করে; (২) যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে এর বিনিময়ে হত্যা এবং (৩) যে ব্যক্তি দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আসুন, সহি বুখারী গ্রন্থ থেকে সরাসরি হাদিসগুলো যাচাই করে নিই [5] [6]

মুরতাদ

মুরতাদ 1

এবারে আসুন দেখি, প্রখ্যাত হাদিস প্রনেতা ইমাম মালিকের মুয়াত্তা ইমাম মালিক গ্রন্থ থেকে মুরতাদের শাস্তি কী হতে পারে তা জেনে নিই। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশ হওয়া মুয়াত্তা ইমাম মালিক দ্বিতীয় খণ্ডের ৪০৬, ৪০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় হাদিসটি পাবেন- ডাউনলোড লিঙ্ক [7]

মুরতাদ 3
মুরতাদ 5

ইসলামী শরীয়তে মুরতাদের শাস্তি

এবারে আসুন দেখা যাক ইসলামী শরীয়তে মুরতাদের শাস্তি কী। ফয়যুল হাদী শরহে তিরমিযী (ছানী) গ্রন্থটি হচ্ছে তিরমীযী শরীফের একটি ব্যাখ্যা গ্রন্থ। এখান থেকে দেখি [8]

মুরতাদের শাস্তিঃ ‘ইরতিদাদ’ অর্থ কোনো মুসলমান ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে যাওয়া। ইসলাম ধর্ম যে ত্যাগ করে তাকে মুরতাদ’ বলে। আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেনঃ “ইসলামের পরিভাষায় ইরতিদাদ অর্থ হলো, ইসলাম ধর্মের স্থানে অন্য ধর্ম, ইসলামী আকীদার স্থানে অন্য আকীদা গ্রহণ করা। রাসূলুল্লাহ সা যে শিক্ষা নিয়ে আগমন করেছিলেন, যা কিছু তথা অকাট্য সত্যরূপে বর্ণনা পরম্পরায় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং যা কিছু ইসলামে নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত তাকে অস্বীকার করা’। যেমন ইসলাম ত্যাগ করে খৃষ্টধর্ম কিংবা কাদিয়ানী মতবাদ গ্রহণ করা অথবা নামায-রোজা, হজ্ব ইসলামের দণ্ডবিধি ইত্যাদিকে অস্বীকার করা। কুরআন মজীদে স্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে- فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُم ثُمَّ يَجِدُوا فِى أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
মুরতাদের শাস্তিঃ ইমাম কুদুরী বলেন ঃ إِذَا ارْتَدَّ الْمُسْلِمُ عَنِ الْإِسْلَامِ عُرِضَ عَلَيْهِ الْإِسْلَامُ فَإِن كَانَتْ لَهُ شُبْهَةٌ كُشِفَ لَهُ وَيُحْبَسَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَإِن أَسْلَمَ وَالإقتل . অর্থাৎ মুসলমান যদি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে তার সামনে ইসলাম পেশ করা হবে । যদি তার মনে সন্দেহ থাকে তাহলে তার সন্দেহ দূর করা হবে। তাকে তিন দিন আটকে রাখা হবে। যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তো ভালো, অন্যাথায় তাকে হত্যা করা হবে। মুরতাদ পুরুষ হলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, এটা সকল ইমামের অভিমত। আর যদি মুরতাদ মহিলা হয় তাহলে এ ব্যাপারে কিছুটা মতভেদ আছে। ইমাম শাফেঈ রহ. বলেন, মুরতাদ নারীকেও হত্যা করতে হবে। কারণ, ইরতিদাদ সম্পর্কে হাদীসের মূল ভাষ্য হলো- অর্থাৎ ‘যে ধর্ম ত্যাগ করেছে, তাকে হত্যা কর।’ এত নারী পুরুষের প্রার্থক্য করা হয়নি। পক্ষান্তরে আহনাফের অভিমত হলো কোন মহিলাকে ধর্ম ত্যাগের অপরাধে হত্যা করা বৈধ নয়। কারণ হাদীসে এসেছে- অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ নারীদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে, “যদি কোনো নারী ধর্ম ত্যাগ করে তবে তাকে ইসলামের দিকে আহবান করাবে। যদি সে ফিরে আসে তবে তাকে গ্রহণ করবে । যদি অস্বীকার করে তাকে বন্দী করে রাখবে।

মুরতাদ 7

এবারে আসুন ইযাহুল মুসলিম গ্রন্থ থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পড়ি [9]

মুরতাদ 9
মুরতাদ 11
মুরতাদ 13
মুরতাদ 15
মুরতাদ 17

ইদানিংকালে জাকির নায়েক সহ অনেক দাইয়ী দাবী করেন যে, আমভাবে মুরতাদদের কতল করার বিধান ইসলামে নেই, বরঞ্চ শুধুমাত্র বিদ্রোহী মুরতাদদের হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছে। অথচ হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো পরিষ্কারভাবেই বলা আছে যে, এইসব দাবী একেবারেই মিথ্যা। মুরতাদক সে বিদ্রোহী হোক কিংবা না হোক, তাকে হত্যা করতে হবে [10]

মুরতাদ 19

শুধু তাই নয়, মুরতাদের স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে ইসলামি শরীয়তে কী করা হবে, সেটি জেনে নিই, [11]

খিলজি 133

সেইসাথে, আরো অমানবিক ব্যাপার হলো, মুরতাদকে কেউ হত্যা করলে তার জন্য হত্যাকারীর ওপর মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ হবে না। বিষয়টি সন্নিবেশিত আছে বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন খণ্ড ১ এ [12]

মুরতাদ 21

একই সাথে, মুরতাদের বিষয় সম্পত্তিও জবরদখল করা হবে, তেমনটিই বলা আছে ইসলামিক আইনে [13]

মুরতাদ 23

মুরতাদদের শাস্তির পদ্ধতি

এবারে আসুন মুরতাদদের কীভাবে হত্যা করা হতো তা জেনে নিই একটি ঘটনা থেকে। উকল গোত্রের কিছু লোক নবীর কাছে এসে ইসলাম কবুল করেছিল। পরে তারা এক রাখালকে হত্যা করে এবং উট নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের নবী মুহাম্মদ অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড কেন করা হয়েছিল, রাখালকে হত্যার জন্য নাকি উট চুরির জন্য, আগে আসুন সেটি জেনে নিই। এরপরে দেখবো হত্যার পদ্ধতিটি [14] [15] [16]

সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ পবিত্রতা
পরিচ্ছেদঃ ১৯১/ হালাল পশুর প্রস্রাব প্রসঙ্গে
৩০৭। মুহাম্মদ ইবনু ওহাব (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উরায়নাহ গোত্রের কয়েকজন বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম কবুল করল। মদিনায় বসবাস তাঁদের জন্য উপযোগী হল না। এমনকি তাঁদের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেল এবং পেট ফুলে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের স্বীয় দুগ্ধবতী উটের পালের দিকে পালিয়ে দিলেন। আর তাঁদেরকে উহা (দুধ ও প্রস্রাব) পান করার আদেশ দিলেন। এতে তারা সুস্থ হয়ে পড়ল এবং উটের রাখালকে মেরে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে গেল। এর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের খুঁজে আনার জন্য লোক পাঠালেন। তাঁদের ধরে আনা হল তাঁদের হাত পা কেটে দেয়া হল এবং তাঁদের চোখে গরম শলকা ঢুকিয়ে দেয়া হল।
আমিরুল মু’মিনীন আব্দুল মালিক আনাস (রাঃ) এর কাছে এ হাদিস শুনে তার কাছে প্রশ্ন করলেন, এ শাস্তি কি কুফুরের জন্য না পাপের জন্য? তিনি বললেন কুফুরের জন্য। আবূ আবদুর রহমান (ইমাম নাসারী) বলেন, তালহাহ ব্যতীত অন্য কেউ এ হাদিসের সানাদে ইয়াহিয়া আনাস হতে এ কথা উল্লেখ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। সঠিক কথা হল, আল্লাহই ভাল জানেন- ইয়াহইয়া সা’ইদ ইবনুল মুসাইয়্যাব হতে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬ঃ কিসাস (প্রতিশোধ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ – মুরতাদ এবং গোলযোগ সৃষ্টিকারীকে হত্যা করা প্রসঙ্গে
৩৫৩৯-(৭) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ‘উকল সম্প্রদায়ের কিছু লোক উপস্থিত হলো। অতঃপর তারা ইসলাম গ্রহণ করল। কিন্তু মাদীনার আবহাওয়া তাদের জন্য অনুপযোগী হলো। অতএব তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে সাদাকার উটনীর নিকট গিয়ে তার দুধ ও প্রস্রাব পানের নির্দেশ দিলেন। ফলে তারা নির্দেশ পালনার্থে সুস্থ হয়ে উঠল। কিন্তু তারা সুস্থ হয়ে মুরতাদ হয়ে গেল এবং তারা রাখালদেরকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিল। তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ সংবাদ শুনে) তাদের পেছনে লোক পাঠালেন। অতঃপর তাদেরকে ধরে আনা হলে তাদের দু’ হাত ও দু’ পা কেটে ফেললেন এবং তাদের চোখ ফুঁড়ে দিলেন, তারপর তাদের রক্তক্ষরণস্থলে দাগালেন না, যাতে তারা মৃত্যুবরণ করে।
অপর বর্ণনাতে রয়েছে, লোকেরা তাদের চোখে লৌহ শলাকা দিয়ে মুছে দিল। অন্য বর্ণনাতে আছে,
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লৌহ শলাকা আনার হুকুম করলেন, যাকে গরম করা হলো এবং তাদের চোখের উপর মুছে দেয়া হলো। অতঃপর তাদেরকে উত্তপ্ত মাটিতে ফেলে রাখলেন। তারা পানি চাইল কিন্তু তাদেরকে পানি পান করানো হয়নি। পরিশেষে তারা এ করুণ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল। (বুখারী ও মুসলিম)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৩০১৮, ৬৮০২, মুসলিম ১৬৭১, আবূ দাঊদ ৪৩৬৪, নাসায়ী ৪০২৫, ইবনু মাজাহ ২৫৭৮, আহমাদ ১২৬৩৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৯/ ‘কাসামা’-(খুনের ব্যাপারে বিশেষ ধরনের হলফ করা), ‘মুহারিবীন’ (শত্রু সৈন্য), ‘কিসাস’ (খুনের বদলা) এবং ‘দিয়াত’ (খুনের শাস্তি স্বরূপ অর্থদন্ড)
পরিচ্ছেদঃ ২. শত্রু সৈন্য এবং মুরতাদের বিচার
৪২০৭। আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “উকল” গোত্রের আট জনের একটি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করল। অতঃপর তারা ইসলামের ওপর বাইআত গ্রহণ করল। কিন্তু সেখানকার আবহাওয়া তাদের অনুকুলে না হওয়ায় তাদের শরীর অসুস্থ হায় গেল। তখন তারা এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আভিযোগ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি আমাদের রাখালের সাথে-গমন করে উটের মূত্র ব্যবহার এবং দুধ পান করতে পারবে? তখন তারা বলল, জী হ্যাঁ। এরপর বের হয়ে গেল এবং তার মূত্র ব্যবহার ও দুধ পান করল। এতে তারা সুস্থ হয়ে গেল।
অতঃপর তারা রাখালকে হত্যা করল এবং উটগুলো তাড়িয়ে নিয়ে গেল। এই সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছল। তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তাঁরা ধরা পড়ল এবং তাদেরকে নিয়ে আসা হল। তাদের প্রতি আদেশ জারি করা হল এবং তাদের হাত-পা কর্তন করা হল এবং তপ্ত লৌহ শলাকা চোখে প্রবেশ করানো হলো। এরপর তাদেরকে রৌদ্রে নিক্ষেপ করা হলো। অবশেষে তারা মারা গেল।
ইবন সাব্বাহ (রহঃ) … এর বর্ণনা وَطَرَدُوا الإِبِل এর স্থলে وَاطَّرَدُوا النَّعَمَ উল্লেখ রয়েছে এবং তার বর্ণনায় وَسُمِّرَتْ أَعْيُنُهُمْ রয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)



উপসংহার

ধর্ম ত্যাগের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান শুধু ইসলামী শরীয়া আইনেই নয়, বরং নৈতিক এবং মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি অমানবিক বর্বর বিষয়। মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তির ধর্ম পরিবর্তন বা ত্যাগ করার স্বাধীনতা থাকা উচিত। ইসলামের শাস্তির বিধান এই অধিকারকে খর্ব করে এবং ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ধর্মের প্রতি সৎ বিশ্বাস এবং আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন, যা চাপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। মানবাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে, প্রত্যেক মানুষ তার নিজের বিশ্বাস এবং ধর্ম বেছে নেওয়ার অধিকার রাখে। কোনো ধর্ম বা বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়া বা জোরপূর্বক অনুসরণ করানো নৈতিকভাবে অন্যায় এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

তথ্যসূত্র

  1. সূরা নিসা, আয়াত ৮৯ []
  2. সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪০৬৪ []
  3. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৩০০ []
  4. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৩০১ []
  5. সহিহ বুখারী, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৩৬ []
  6. সহিহ বুখারী, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ২৬১ []
  7. মুয়াত্তা ইমাম মালিক, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৬-৪০৭ []
  8. ফয়যুল হাদী শরহে তিরমিযী (ছানী), প্রথম খণ্ড, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪১৫ []
  9. ইযাহুল মুসলিম, মুসলিম জিলদে সানীর অদ্বিতীয় বাংলা শরাহ, দারুল উলুম লাইব্রেরি, পৃষ্ঠা ৪০৩-৪০৭ []
  10. দরসে তিরমিযী, আল্লামা মুফতি তাকী উসমানী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২৬ []
  11. তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০০ []
  12. বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৭ []
  13. বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৬ []
  14. সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৭ []
  15. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৩৫৩৯ []
  16. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪২০৭ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"