ইসলামি শরীয়তে সমকামিতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডও প্রদান করা হয়েছে। হাদিসগ্রন্থগুলোতে নবী মুহাম্মদ-এর কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে তিনি সমকামীদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামী ফিকাহ ও শরীয়তের বিভিন্ন বিধানেও এই নির্দেশনাকে সমর্থন করে এবং একটি ইসলামী রাষ্ট্রে এটি একটি বৈধ শাস্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ধরনের আইন যে শুধু অমানবিক এবং নৃশংস, তা নয়; বরং এটি ব্যক্তির স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এমন একটি শাস্তি, যেখানে একজন মানুষকে তার যৌন কামনা বা প্রবৃত্তির কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যার ওপর আসলে মানুষের সেরকম কোন নিয়ন্ত্রণই নেই। এটি তা আদতে সভ্যতা ও মানবাধিকারের মৌলিক নীতির পরিপন্থী। যৌনতা একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এবং এটি প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দের ওপর নির্ভরশীল। কারো যৌন প্রবৃত্তি তার ব্যক্তিগত বিষয়, যা আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়, এবং তা কখনোই মৃত্যুদণ্ডের মতো চরম শাস্তির কারণ হতে পারে না।
এই ধরনের শাস্তি মূলত মানুষের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতিফলন। সমকামিতা কোন অপরাধ নয়; বরং এটি মানুষের জন্মগত বা স্বাভাবিক যৌন প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী, সমকামীতা একটি স্বাভাবিক যৌন অভিরুচি, মানুষের বৈচিত্র্যময়তার একটি দিক, যা মানুষের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বা মানসিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এর জন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া মানে একজন মানুষকে তার নিজস্ব পরিচয়ের জন্য শাস্তি দেওয়া। ইসলামী শরীয়তের এই নিষ্ঠুর বিধানকে সমর্থন করা মানে মানুষের যৌন স্বাধীনতা এবং মানবিক অধিকারের সম্পূর্ণ অবমাননা করা। ধর্মীয় গ্রন্থের একটি নির্দেশনার ভিত্তিতে, যা হাজার বছর আগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে প্রণীত, তাকে আজকের পৃথিবীতে বৈধ শাস্তি হিসেবে মান্যতা দেওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এই ধরনের শাস্তি শুধু সমকামীদেরকেই নির্যাতন করে না, বরং একটি সমাজে আতঙ্ক, ঘৃণা এবং ভয় সৃষ্টি করে। এটি মানুষের মধ্যে বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা এবং বিদ্বেষের জন্ম দেয়। একটি সমাজের বিভিন্ন রকম মানুষ থাকবেন, যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ আত্মমর্যাদা, বিশ্বাস বা অবিশ্বাস ও অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন। প্রত্যেক ব্যক্তির সমান অধিকার রয়েছে নিজের জীবনযাত্রা, যৌনতা এবং পরিচয় বেছে নেওয়ার। এমন একটি আইন, যা কাউকে তার নিজস্ব যৌন অভিরুচির জন্য শাস্তি দেয়, তা কেবল মধ্যযুগীয় বর্বরতা এবং অন্ধ ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতিচ্ছবি। এই ধরনের আইন ও শাস্তির তীব্র বিরোধিতা এবং নিন্দা করা উচিত, কারণ এটি মানবতার, ন্যায়বিচারের এবং স্বাধীনতার পরিপন্থী। সভ্য সমাজে ধর্ম বা রাষ্ট্রের নামে এমন শাস্তির কোনো স্থান থাকতে পারে না। আসুন এই বিষয়ে ইসলামী শরীয়ত কী বলে জেনে নিই,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি
২৯. কেউ কওমে লূতের অনুরূপ অপকর্ম করলে
৪৪৬৩। ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, অবিবাহিতদের লাওয়াতাতে (পায়ুকামে) লিপ্ত পাওয়া গেলে রজম করা হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আসিম (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীস আমর ইবনু আবূ আমরের হাদীসকে দুর্বল প্রমাণিত করে।(1)
সনদ সহীহ মাওকুফ।
(1). বায়হাক্বী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ১৪/ হদ্দ (দন্ড)
১৪/১২. যে ব্যক্তি লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হয়
১/২৫৬১। ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কাউকে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত পেলে তাকে এবং যার সাথে তা করা হয় তাকে হত্যা করো।
তিরমিযী ১৪৫৬, আবূ দাউদ ৪৪৬২, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ২৩৫০, মিশকাত ৩৫৭৫। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবী আবদুল আযীয বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সা’দ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মালিক বিন আনাস তাকে সিকাহ বলেছেন। আহমাদ বিন শু’আয়ব আন নাসায়ী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে নিজ কিতাব ছাড়া অন্যত্র থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭০, ১৮/১৮৭ নং পৃষ্ঠা)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)