এই কথাটি আসলে নির্লজ্জতার সকল সীমা অতিক্রম করে যাওয়া একটি অতি নিম্নমানের মিথ্যা কথা। মুসলিমদের মধ্য একটি অংশ যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে যে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস করা হয়েছে তা প্রমাণ করার জন্য নাস্তিকদের প্রতি হাস্যকর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। মুমিনদের মধ্যে এই অংশটির দাবী, ইসলামিক কোন দলিল থেকে নাস্তিকরা যেন প্রমাণ করে যে, ঐসব যুদ্ধবন্দী নারী সহবাসে রাজী ছিল না! এরকম দাবী যারা করে, তাদের মস্তিষ্কের সক্ষমতা নিয়ে বড় ধরণের প্রশ্ন ওঠে।
এটি খুবই কমনসেন্সের বিষয় যে, ইসলামিক যত সোর্স আছে, যেমন কুরআন, হাদিস, তাফসীর, সীরাত ইত্যাদি সকল গ্রন্থে নিশ্চয়ই নবী, সাহাবী ও মুসলমানদের কথাই লিপিবদ্ধ থাকবে, তাদের গুণকীর্তনেই পরিপূর্ণ থাকবে। যুদ্ধবন্দী দাসীরা কি বলেছে না বলেছে সেটি নিশ্চয়ই সেখানে লেখা থাকবে না। এসব কথা শুনলে মনে হয়, সেই সব বন্দী মেয়েরা নিজেরাই স্বীকারোক্তি দিয়েছিল যে, “নিজেদের পিতা, ভাই কিংবা স্বামীদেরকে সাহাবীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে দেখে আমরা নবী বীর সাহাবীদের ওপর এতই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে, তাদের সাথে সহবাস না করে আর থাকতে পারছিলাম না! মুগ্ধ হয়ে নিজে থেকেই তাদের সাথে সহবাস করতে মুখিয়ে ছিলাম! বাপ ভাই স্বামী ছেলে জবাই হওয়ার সাথে সাথে তাই নাচতে নাচতে নবীর সাহাবীদের কোলে গিয়ে উঠতাম! “
এটি তো খুব স্বাভাবিক বিষয় যে, তাদের আত্মীয় স্বজনকে হত্যা করে যারা মেয়েগুলোকে বন্দী করে নিয়ে এসেছে, তাদের স্বাধীনতা হরণ করেছে, তাদেরকে স্বাধীন মানুষ থেকে দাসী বানিয়েছে, তাদের পরিবার পরিজন ছেলে মেয়ে স্বামী ভাই বাবামায়ের তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসার ধ্বংস করেছে, তারা কখনোই তাদের সাথে স্বেচ্ছায় সহবাসে রাজি হবে না। যদি তার উল্টো ঘটনা ঘটে, অর্থাৎ কেউ দাবী করে যে আমাকে কোনোরকম জোর করে কিছু করা হয় নি, তাহলে তারই নিজের মুখের সাক্ষ্য লাগবে যে আমি স্বেচ্ছায় সহবাসে রাজি ছিলাম। বন্দী একজন মানুষের সাথে যৌনকর্ম হওয়া এটিই প্রমাণ করে, তার বন্দিত্ব এখানে একটি প্রভাব ফেলেছে। স্বেচ্ছায় সহবাস হতে পারে শুধুমাত্র তার বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে সম্মতি দেয়ার মাধ্যমে।
যেই ইসলামিস্টরা দাবী করছে, যুদ্ধবন্দী নারীরা সাহাবাদের সাথে সহবাসে রাজি ছিলেন, তাদেরকেই যুদ্ধবন্দী নারীদের নিজস্ব মুখের সাক্ষ্য পেশ করতে হবে যে, উনারা স্বেচ্ছায় সহবাসে রাজি ছিলেন। সেই সাথে প্রমাণ করতে হবে যে, এরকম স্বীকারোক্তির পেছনে সেই সব বন্দী নারীর কোন রকম ভয়ভীতি কিংবা আতঙ্ক ছিল না। দাসত্বের শেকল পায়ে ছিল না। কারণ বন্দী মানুষের এই ভয়টি থাকাটিই স্বভাবিক যে, তাকে ভয় দেখিয়ে বা ক্ষমতা, পেশীশক্তি ও কর্তৃত্ব ব্যবহার করে তার মুখ থেকে স্বীকৃতি আদায় করা হতে পারে।
উল্টদিকে অনেকগুলো হাদিস থেকেই স্পষ্ট জানা যায়, যুদ্ধবন্দী নারীদের গনিমতের মাল হিসেবে ধরে এনে একত্র করা হতো, এর মধ্য থেকে নবীর সাহাবীগণ সহবাসের জন্য দাসী বেছে বেছে নিয়ে যেতো। সেখানে দাসীদের নিশ্চয়ই প্রশ্ন করা হতো না যে, তুমি কার সাথে যাবে! বা তারা কার সাথে সহবাস করতে ইচ্ছুক? যুদ্ধবন্দী নারীরা স্বেচ্ছায় সম্মতিতে স্বাধীনভাবে সাহাবীদের মধ্য থেকে এক একজনকে বেছে নিয়ে আনন্দের সাথে বিছানায় যেতো, সেরকম কোন বিবরণ কোথাও পাওয়া যায় না। কারণ যুদ্ধবন্দী কিংবা দাসীদের তো আর মতামত দেয়ার কোন সুযোগ থাকে না। আসুন নিচের হাদিসটি থেকে দেখে নিই [1] [2] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১৪/ কর, ফাই ও প্রশাসক
পরিচ্ছেদঃ ২১. গানীমাতের মালে সেনাপতির অংশ
২৯৯৮। আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধ শেষে বন্দীদেরকে একত্র করা হলে দিহয়া আল-কালবী (রাঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে যুদ্ধ বন্দীদের মধ্য থেকে একটি বন্দিনী দিন। তিনি বললেনঃ যাও, একটি দাসী নিয়ে নাও। তিনি সাফিয়্যাহ বিনতু হুয়াইকে বেছে নিলেন। অপর এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সাফিয়্যাহ বিনতু হুয়াইকে দিহয়াকে দিলেন। অথচ তিনি কেবল আপনারই উপযুক্ত। কেননা হুয়াই কন্যা বনূ কুরাইযাহ ও বনূ নাযীর গোত্রের নেতার কন্যা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সাফিয়্যাহ সহ দিহয়াকে ডেকে আনো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যাহর দিকে তাকিয়ে দিহয়াকে বললেনঃ এর বদলে তুমি বন্দীদের মধ্য থেকে অন্য কোনো দাসী নাও। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আযাদ করে বিয়ে করেন।[1]
[1]. সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
তথ্যসূত্র
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২৯৯৮ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হুসাইন আল-মাদানী প্রকাশনী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩২-২৩৩, হাদিস নম্বরঃ ২৯৯৮ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"