ইসলামে লাজলজ্জার মাথা খেয়ে কোন রাখঢাক না করেই যৌন সঙ্গমের উদ্দেশ্যে দাসী ক্রয়ের বিধান রাখা হয়েছে। ইমাম কুদুরী তার গ্রন্থে বলেছেন, অনেক সময় সম্ভোগের উদ্দেশ্যে দাসী কেনার সময় বগলে বা মুখে দুর্গন্ধ থাকলে, সেটির জন্য ক্রেতা সেই দাসীকে আবার ফেরত দিতে পারে। এটিও বলা আছে, দাসী একটি দ্রব্য এবং দাসীর ক্ষেত্রে দুর্গন্ধ থাকা একটি দোষ [1]
কুদুরী (আরবি-বাংলা) ২৩০ কিতাবুল বুয়ুই
… এর আলোচনাঃ ক্রয়কৃত বস্তুতে দোষ-ত্রুটি দেখা দেয়ার পর তা ফিরিয়ে দেয়া বা পূর্ণ থাকার কারণ হল, মতলক আকদের চাহিদা হল, তা ত্রুটিমুক্ত হওয়া। তবে এ টা কয়েকটি শর্তের সাথে সম্পৃক্ত। (১) সে ত্রুটি বিক্রেতার নিকট থাকতেই ছিল, ক্রেতার হস্তক্ষেপের পর সৃষ্টি হয়নি। (২) ক্রেতার ক্রয় করার সময় ত্রুটি সম্পর্কে অনবগত হওয়া (৩) এবং হস্তগত করার সময়ও সে ত্রুটি সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকা। (৪) ক্রেতা কষ্ট ব্যতীত ত্রুটি বিদূরীত করতে সক্ষম না হওয়া। (৫) এ ত্রুটি এবং সকল ত্রুটিমুক্ত হওয়ার শর্ত যদি না করা হয় এবং আবূদ ভঙ্গ হওয়ার পূর্বে তা দূর হওয়া যদি সম্ভব না হয় ।
লো তা JS, -এর আলোচনা ঃ পণ্য দ্রব্যের যে কোন দোষ-ত্রুটিকে মনগড়া ভাবে ‘দোষ’ বলে অভিহিত করা যাবে না; বরং ব্যবসায়ীদের রীতি-রেওয়াজে যেটা ‘দোষ’ বলে স্বীকৃত তাই কেবল ‘দোষ’ হিসেবে গণ্য হবে। কেননা ‘দোষ’ থাকলে দ্রব্যের মান ও মূল্যে কমতি দেখা দেয়। আর কোন দ্রব্যের মূল্য কমতি হল কিনা তার বিচার করার ভার ব্যবসায়ীদের ওপর। মনে রাখতে হবে আয়েব বা দোষ সম্পর্কিত এ ব্যাখ্যা বস্তুত একটি মূল সূত্র। এ সূত্র ধরে আরো অনেক মাসায়েল সংকলন করা সম্ভব। স্বয়ং গ্রন্থকারও এ সূত্রে সংকলনকৃত কয়েকটি মাসআলা পেশ করেছেন।
…-এর আলোচনাঃ কোন ক্রীতদাসের মধ্যে পলায়ন প্রভৃতি বদ অভ্যাসগুলো শৈশবে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যদি বালেগ হওয়ার পর মালিকের নিকট পুনরায় তা প্রকাশ পেয়ে না থাকে, তবে ক্রেতার অধিকারে এসে এর পুনরাবৃত্তি ঘটলে তা দোষ হবে না। অর্থাৎ এটা দোষ তো বটেই, কিন্তু বিক্রেতার নিকট হতে উদ্ভূত দোষ বলে দাবি করা যাবে না এবং গোলামও ফেরত দেয়া যাবে না; বরং ধরে নিতে হবে এগুলো নব সৃষ্ট দোষ। অপর দিকে শৈশবকালীন এ কু-অভ্যাস গুলো যদি ক্রেতার নিকট নাবালেগ অবস্থায়ই প্রকাশ পায় কিংবা বালেগ অবস্থায় বিক্রেতার নিকট প্রকাশ পাওয়ার পর ক্রেতার নিকট এসে তার পুনরাবৃত্তি ঘটে, তবে তা ফেরতযোগ্য দোষ বলে গণ্য হবে। কারণ এ সমস্ত দোষের শৈশবকালীন উৎস এবং বালেগ অবস্থার উৎস এক নয়; বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা শৈশবে পলায়ন করে থাকে খেলাধুলার মোহে, পক্ষান্তরে বালেগ হওয়ার পর তা করে চুরি বা বেপরোয়া মনোভাবের বশবর্তী হয়ে। উৎসের ভিন্নতার কারণে দোষও ভিন্ন হয়ে যায় । সুতরাং ক্রেতার নিকট প্রকাশিত দোষ তখন পূর্বের দোষ বলে দাবি করা চলে না ।
…-এর আলোচনাঃ অর্থাৎ কোন দাসী ক্রয় করার পর যদি তার মুখে বা বগলে দুর্গন্ধ অনুভূত হয় অথবা সে ব্যভিচারিণী বা জারজ বলে প্রমাণিত হয়; তবে তাকে ফেরত দেয়া যাবে। কারণ অনেক সময় দাসী যৌন সম্ভোগের উদ্দেশ্যেও ক্রয় করা হয়। আর শারীরিক ও চারিত্রিক এ সব দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা তখন মিলনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় । সুতরাং দাসীর ক্ষেত্রে এগুলো দোষ। পক্ষান্তরে গোলাম দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে গৃহস্থালীর কাজকর্ম সম্পন্ন করা। আর এ সকল ত্রুটি সাধারণত গৃহস্থালীর কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে না। তদুপরি দুর্গন্ধ যদি অতিশয় হয় অথবা ব্যভিচার তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে থাকে, তবে তা দোষের মধ্যে গণ্য হবে। এতে পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে, দ্রব্যের মধ্যকার ত্রুটি যদি এমন হয় যা থেকে দ্রব্য সাধারণত মুক্ত হতে পারে না, যেমন এক মণ সরিষার মধ্যে পোয়া, দেড় পোয়া ধান বা কলাই থাকা- দূষণীয় নয় । কিন্তু ধুলাবালি বা কলাইর পরিমাণ যদি এক-দুই কেজি হয়, তবে অবশ্যই তা দোষের মধ্যে পরিগণিত হবে।
তথ্যসূত্র
- আল- মিসবাহুন নূরী শরহে মুখতাসারুল কুদুরী, প্রথম খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ২৩০ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"