আল্লাহ যদি মানুষকে দিয়ে আগে থেকেই নির্ধারিত কাজ করিয়ে নেন, যেমন জান্নাতিদের কাজ বা জাহান্নামীদের কাজ, তাহলে তা ইসলামের ন্যায়বিচারের ধারণার সাথে গুরুতরভাবে সাংঘর্ষিক। এই বিশ্বাসে আল্লাহ এমন একটি ব্যবস্থায় মানুষের জীবন পরিচালনা করেন, যেখানে তাদের কর্মের ওপর তাদের কোনো বাস্তব নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলস্বরূপ, এই প্রেক্ষাপটে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে শাস্তি বা পুরস্কৃত করা একটি গুরুতর দার্শনিক ও নৈতিক দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়।
প্রথমত, যদি আল্লাহ পাক আগে থেকেই জান্নাতী ও জাহান্নামীদের নির্ধারণ করে দেন এবং তাদেরকে সেই অনুযায়ী কাজ করিয়ে নেন, তাহলে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছার ধারণাটি সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যক্তি তার কর্মের জন্য জবাবদিহি করবে, কিন্তু যদি সেই কর্ম আল্লাহর দ্বারা পূর্বনির্ধারিত হয় এবং আল্লাহ নিজেই সেই কাজ করিয়ে নেন, তাহলে ব্যক্তি কীভাবে তার কর্মের জন্য দায়ী হতে পারে? উদাহরণস্বরূপ, যদি আল্লাহ আগে থেকেই একজন ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য নির্ধারণ করে তার থেকে জাহান্নামীদের কাজ করিয়ে নেন, তাহলে সেই ব্যক্তি তো বাধ্য হয়েই সেই কাজ করবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ কাউকে দিয়ে কোন কাজ করিয়ে নিলে কোন মানুষের পক্ষে কী তা না করে থাকা সম্ভব? এ পরিস্থিতিতে, তাকে শাস্তি দেওয়া একটি অসঙ্গত ও অবিচারমূলক পদক্ষেপ।
দ্বিতীয়ত, এই ধারণা নৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে। যদি আল্লাহ আগে থেকেই নির্ধারণ করেন কারা জান্নাতবাসী হবে এবং কারা জাহান্নামী হবে, তবে কিছু মানুষ জন্মসূত্রেই বিশেষ সুবিধা নিয়ে আসে এবং অন্যরা নির্দোষভাবেই শাস্তির জন্য তৈরি হয় এবং আল্লাহ তাদের দিয়ে সেটিই করান যা আল্লাহ নির্ধারন করে রেখেছেন। এই বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের ন্যায়বিচারের মূলনীতির সাথে সরাসরি বিরোধপূর্ণ, যা দাবি করে যে প্রতিটি ব্যক্তি তার নিজস্ব কর্মের জন্য বিচার পাবে। কিন্তু যখন আল্লাহ নিজেই তাদের কর্ম নির্ধারণ করেন এবং সেই কাজ করান, তখন বিচার প্রক্রিয়াটি একটি মিথ্যে প্রতিশ্রুতি হয়ে দাঁড়ায়। শাস্তি বা পুরস্কার তখন কেবল একটি পূর্বনির্ধারিত নাটকের অংশ হয়ে যায়, যার ওপর ব্যক্তির কোনো প্রভাব থাকে না। আল্লাহর ইচ্ছা বা পূর্বনির্ধারিত তাকদীরই সেখানে প্রভাব রাখে।
তৃতীয়ত, এই বিশ্বাসটি আল্লাহর গুণাবলীর সাথে সাংঘর্ষিক। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আল্লাহ ন্যায়বিচারক, দয়ালু এবং পরম জ্ঞানসম্পন্ন। কিন্তু যদি তিনি এমন একটি ব্যবস্থায় মানুষের কর্ম নির্ধারণ করেন, যেখানে কেউ জান্নাত বা জাহান্নামের জন্য পূর্বনির্ধারিত এবং তাদের দ্বারা সেই কাজ করান যা তাদের ভাগ্য স্থির করে দেয়, তবে সেই দয়ালুতা এবং ন্যায়বিচারের ধারণা কীভাবে বজায় থাকে? একজন সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞানী স্রষ্টা কীভাবে একজন মানুষকে এমন পথে পরিচালিত করতে পারেন, যেখানে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, এবং তারপর তাকে সেই কাজের জন্য শাস্তি দিতে পারেন? আসুন এবারে কোরআনের একটি আয়াত পড়ে নেয়া যাক। কোরআনে বলা হয়েছে [1] –
যাকে তার মন্দ কর্ম শোভনীয় ক’রে দেখানো হয়, অতঃপর সে সেটাকে উত্তম মনে করে (সে কি তার সমান, যে সৎ পথে পরিচালিত?) আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বিপথগামী করেন, আর যাকে ইচ্ছে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। কাজেই তাদের জন্য আক্ষেপ ক’রে, তুমি তোমার জীবনকে ধ্বংস হতে দিও না। তারা যা করে আল্লাহ তা খুব ভালভাবেই জানেন।
— Taisirul Quran
কেহকেও যদি তার মন্দ কাজ শোভন করে দেখানো হয় এবং সে ওটাকে উত্তম মনে করে সেই ব্যক্তি কি তার সমান যে সৎ কাজ করে? আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎ পথে পরিচালিত করেন। অতএব তুমি তাদের জন্য আক্ষেপ করে তোমার প্রাণকে ধ্বংস করনা। তারা যা করে আল্লাহ তা জানেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
কাউকে যদি তার অসৎ কাজ সুশোভিত করে দেখানো হয় অতঃপর সে ওটাকে ভাল মনে করে, (সে কি ঐ ব্যক্তির সমান যে ভালকে ভাল এবং মন্দকে মন্দ দেখে?) কেননা আল্লাহ যাকে ইচ্ছা গোমরাহ করেন আর যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন; অতএব তাদের জন্য আফসোস করে নিজে ধ্বংস হয়ো না। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা জানেন।
— Rawai Al-bayan
কাউকে যদি তার মন্দকাজ শোভন করে দেখানো হয় ফলে সে এটাকে উত্তম মনে করে, (সে ব্যক্তি কি তার সমান যে সৎকাজ করে?) তবে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছে হিদায়াত করেন [১]। অতএব তাদের জন্য আক্ষেপ করে আপনার প্রাণ যেন ধ্বংস না হয়। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন একটু ভেবে দেখি। বলুন তো, আমাকে যদি মন্দ কাজটি সুশোভিত করে আল্লাহ দেখান এই ইচ্ছায় যে, তিনি আমাকে গোমরাহ করবেন, তাহলে আমার কাছে তো সেই মন্দ কাজটিই ভাল মনে হবে, তাই না? আমি তো তখন উত্তম কাজ মনে করে সেই মন্দ কাজটিই করবো, কারণ আল্লাহই তা ইচ্ছে করেছেন। আল্লাহ যদি ইচ্ছে করে আমাকে পথভ্রষ্ট না করতো, তাহলে আমার মত সামান্য সৃষ্টির পক্ষে কুপথে চলে আসা সম্ভব?
এবারে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাদিস আমরা পড়ে নিই, হাদিসটি শুধুমাত্র সুনানু আবু দাউদ শরীফের সহিহ হাদিসই নয়, সেই সাথে মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী দ্বারা তাহক্বীককৃত সহিহ হাদিস। হাদিসটিতে খুব পরিষ্কারভাবেই বলা আছে, আল্লাহ পাক সেই আদি অবস্থাতেই সকলের জান্নাত জাহান্নাম নির্ধারিত করে রেখেছেন। শুধু নির্ধারণ করেই শেষ হয়নি, আল্লাহ পাক যাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাকে দিয়ে জান্নাতবাসীদের কাজ করিয়ে নেন, আর যাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তাকে দিয়ে জাহান্নামীদের কাজ করিয়ে নেন। এবারে একটু ভাবুন তো, এর অর্থ কী? হাদিসটি পাবেন এখানে [2] [3] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
অধ্যায়ঃ ৩৫/ সুন্নাহ
৪৭০৩। মুসলিম ইবনু ইয়াসার আল-জুহানী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলোঃ ‘‘যখন তোমার রব আদম সন্তানের পিঠ থেকে তাদের সমস্ত সন্তানদেরকে বের করলেন…’’ (সূরা আল-আ‘রাফঃ ১৭২)। বর্ণনাকারী বলেন, আল-কা‘নবী এ আয়াত পড়েছিলেন। উমার (রাঃ) বলেন, আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর স্বীয় ডান হাতে তাঁর পিঠ বুলিয়ে তা থেকে তাঁর একদল সন্তান বের করে বললেন, আমি এদেরকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জান্নাতবাসীর উপযোগী কাজই করবে।
অতঃপর আবার তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে একদল সন্তান বেরিয়ে এনে বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং জাহান্নামীদের উপযোগী কাজই করবে। একথা শুনে এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমলের কি মূল্য রইলো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তার দ্বারা জান্নাতবাসীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষে সে জান্নাতীদের কাজ করেই মারা যায়। আর আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যখন তিনি কোনো বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজ করিয়ে নেন। অবশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করে মারা যায়। অতঃপর এজন্য তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করান।(1)
সহীহ, পিঠ বুলানো কথাটি বাদে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আল্লাহ পাক আদমকে সৃষ্টি করার পরে তার পিঠ থেকে জান্নাতী এবং জাহান্নামী মানুষকে বের করেছিলেন, যা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ জান্নাতের জন্য কিছু মানুষ নির্দিষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন, এবং জাহান্নামের জন্য কিছু মানুষকে। আল্লাহ পাক যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, মানুষের পক্ষে তা পরিবর্তন সম্ভব নয় [4] [5] ।
গ্রন্থের নামঃ মুয়াত্তা মালিক
অধ্যায়ঃ ৪৬. তকদীর অধ্যায়
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ১. তকদীরের ব্যাপারে বিতর্ক করা নিষেধ
রেওয়ায়ত ২. মুসলিম ইবন ইয়াসার জুহানী (রহঃ) হইতে বর্ণিত, উমর (রাঃ)-এর নিকট (وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ) (সূরা আ’রাফঃ ১৭২) আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হইল। তিনি বলিলেন, আমি শুনিয়াছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হইয়াছিল। তিনি বলিয়াছিলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করিলেন এবং তাহার পৃষ্ঠে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা মুসেহ করিলেন, অতঃপর আদমের পৃষ্ঠদেশ হইতে তাহার সন্তানদেরকে বাহির করিলেন এবং বলিলেন, আমি ইহাদেরকে বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করিয়াছি। ইহারা বেহেশতের কাজ করবে। অতঃপর পুনরায় তাহার পৃষ্ঠদেশে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত বুলাইলেন এবং তাহার আর কিছু সংখ্যক সন্তান বাহির করিলেন এবং বলিলেন, আমি ইহাদেরকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করিয়াছি। ইহারা দোযখের কাজ করবে। এক ব্যক্তি বলিয়া উঠিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহা হইলে আমল করায় লাভ কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহু পাক যখন কোন বান্দাকে বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তাহার দ্বারা বেহেশতীদের কাজ করান আর মৃত্যুর সময়েও সে নেক কাজ করিয়া মৃত্যুবরণ করে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাহাকে বেহেশতে প্রবেশ করাইয়া থাকেন। আর যখন কোন বান্দাকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তাহার দ্বারা দোযখীদের কাজ করাইয়া থাকেন। অতঃপর মৃত্যুর সময়েও তাহাকে খারাপ কাজ করাইয়াই মৃত্যুবরণ করান। আর আল্লাহ তখন তাহাকে দোযখে প্রবেশ করাইয়া থাকেন।
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১ঃ ঈমান (বিশ্বাস)
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ – তাক্বদীরের প্রতি ঈমান
৯৫-(১৭) মুসলিম ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে কুরআনের এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ ‘‘(হে মুহাম্মাদ!) আপনার রব যখন আদম সন্তানদের পিঠ থেকে তাদের সব সন্তানদেরকে বের করলেন’’ (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭: ১৭২) (…আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি শুনেছি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং তিনি জবাবে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর আপন ডান হাত তাঁর পিঠ বুলালেন। আর সেখান থেকে তাঁর (ভবিষ্যতের) একদল সন্তান বের করলেন। অতঃপর বললেন, এসবকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি, তারা জান্নাতীদের কাজই করবে। আবার আদামের পিঠে হাত বুলালেন এবং সেখান থেকে (অপর) একদল সন্তান বের করলেন এবং বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং তারা জাহান্নামীদেরই ‘আমাল করবে। একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে ‘আমালের আর আবশ্যকতা কি? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন আল্লাহ কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জান্নাতীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত সে জান্নাতীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে এবং আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। এভাবে আল্লাহ তাঁর কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজই করিয়ে নেন। পরিশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে, আর এ কারণে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করেন। (মালিক, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)(1)
(1) সহীহ : وَمَسَحَ ظَهْرَهٗ অংশটুকু ব্যতীত। মুয়াত্ত্বা মালিক ১৩৯৫, আবূ দাঊদ ৪০৮১, তিরমিযী ৩০০১; সহীহ সুনান আবূ দাঊদ। হাদীসের সানাদের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য ও তারা বুখারী মুসলিমের রাবী। তবে এ সানাদে মুসলিম ইবনু ইয়াসার ও ‘উমারের মাঝে বিচ্ছিনণতা রয়েছে তথাপি হাদীসের অনেক শাহিদ বর্ণনা থাকায় হাদীসটি সহীহ। আর সহীহ সুনানে আবী দাঊদে আলবানী (রহঃ) হাদীসটিকে وَمَسَحَ ظَهْرَهٗ অংশটুকু ছাড়া সহীহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মূল বই থেকেও দেখি [6]
নিচের হাদিসটিও দেখে নিই [7] –
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছদঃ ১৭. তাকদীর সম্পর্কে।
৪৬৩০. আবদুল্লাহ্ কা’নাবী (রহঃ) ……. মুসলিম ইবন জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি উমার ইবন খাওাব (রাঃ)-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেনঃ
إِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ
অর্থাৎ স্মরণ কর! তোমার রব আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ হতে তার বংশধরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারুক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেনঃ আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলেঃ নিশ্চয়ই, আমরা সাক্ষী থাকলাম। (৭ঃ১৭২)
রাবী বলেনঃ কা’নাবী এ আয়াত তিলাওয়াত করলে উমার (রাঃ) বলেনঃ একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুনি। জবাবে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মহান আল্লাহ্ আদম (আ)-কে সৃষ্টি করার পর, তার পিঠকে স্বীয় ডান হাত দিয়ে মাসেহ করেন। ফলে অনেক আদম সন্তান সৃষ্টি হয়। এরপর তিনি বলেনঃ আমি এদের জান্নাতে জন্য সৃষ্টি করেছি। এরা জান্নাতীদের ন্যায় আমল করবে। এরপর আল্লাহ্ তার হাত দিয়ে আদমের পিঠকে মাসেহ করেন। ফলে তার আরো সন্তান সৃষ্টি হয়। তিনি বলেনঃ আমি এদের জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তারা জাহান্নামীদের ন্যায় আমল করবে। তখন এক ব্যক্তি বলেঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাহলে আমলের প্রয়োজনীয়তা কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা যখন কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাকে দিয়ে জান্নাতীদের আমল করিয়ে নেন। ফলে, সে ব্যক্তি জান্নাতীদের ন্যায় আমল করতে করতে মারা যায়। যদ্দরুন আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যখন তিনি কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাকে দিয়ে জাহান্নামীদের ন্যায় আমল করান। ফলে সে জাহান্নামীদের ন্যায় আমল করতে করতে মারা যায়। যদ্দরুন আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করান।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তথ্যসূত্র
- সূরা ফাতির, আয়াত ৮ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, হাদিসঃ ৪৭০৩ [↑]
- সুনান আবু দাউদ , পঞ্চম খণ্ড, আল্লামা আলবানী একাডেমী, পৃষ্ঠা ৪৪৫-৪৪৬ [↑]
- মুয়াত্তা মালিক, হাদিসঃ ১৬৬০ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৯৫ [↑]
- তাহক্বীক্ব মিশকা-তুল মাসা-বীহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮০ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৬৩০ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"