09.শুরু থেকেই বারোমাসে বছর

পৃথিবীতে বসবাস করা মানুষ তাদের সুবিধার জন্য সময়ের কিছু একক নির্ধারণ করেছে। সেই এককগুলোর একটি প্রধান একক হচ্ছে সৌর বছর। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর একটি প্রদক্ষিণ সম্পূর্ণ করতে যে সময় লাগে তাকে আমরা এক বছর ধরি। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ হিসেবটি করেছে, যেটি হচ্ছে প্রায় ৩৬৫.২৪ দিন। আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এই বছরকে আমরা আবার ১২ টি ভাগে ভাগ করেছি, আমাদের মানুষের সুবিধার জন্য। বছরের একই সময়ে সূর্যের আকাশে একই অবস্থানে ফিরে আসতে এই সময় লাগে। উল্লেখ্য, সৌর বছরের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে পর্যায়ক্রমে ক্যালেন্ডারে লিপ বছর যোগ করা হয়।

প্রাচীন মায়ান ক্যালেন্ডারে পদ্ধতিটি বেশ জটিল ছিল এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মাসে তা বিভক্ত ছিল। মায়ান ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চক্রগুলির মধ্যে একটি ছিল টুন, যা ৩৬০ দিনের সমতুল্য। টুনের মধ্যে, মোট ৩৬০ দিনের জন্য প্রতিটি ২০ দিনের ১৮টি মাস ছিল। মাসগুলির নাম মায়া অঞ্চল এবং সময়কালের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতো, সেগুলি সাধারণত প্রাকৃতিক ঘটনা বা দেবতাদের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। টুন ছাড়াও, মায়ান ক্যালেন্ডারে হাব নামে পরিচিত আরও একটি পৃথক চক্র ছিল, যেটি ৩৬৫ দিন নিয়ে গঠিত ছিল। ১৮টি মাসে এবং প্রতিটি মাস ২০ দিনে বিভক্ত এই ক্যালেন্ডারে শেষ ৫টি দিন “ওয়ায়েব” নামে পরিচিত ছিল [1]। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে ১০ মাসে বছরের হিসেবটি করেছিলেন রোমান সম্রাট Romulus। প্রাচীন গ্রীস দ্বারা অনুপ্রাণিত এই রাজা তাদের পদ্ধতিই অনুসরণ করতেন রাজ্য চালাবার স্বার্থে [2]

কিন্তু আমার পয়েন্ট সেটি নয়। আমার পয়েন্ট হচ্ছে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় যখন সূর্য নামক নক্ষত্রটিই ছিল না, পৃথিবী নামক গ্রহটিও ছিল না, তখন সৌর বছর আসবে কোথা থেকে? সৌর বছর না থাকলে ১২ মাসের হিসেবও বা কোথা থেকে আসবে? কারণ এগুলো তো পৃথিবীর সাথে আপেক্ষিক। অন্যান্য সকল গ্রহ নক্ষত্র সবখানেই বছরের এই হিসেব হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমরা সকলেই জানি, মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর, সূর্যের বয়স প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর, পৃথিবী নামক গ্রহটির বয়স ৪.৫৬ বিলিয়ন বছর। সূর্যের গঠন, পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ থেকে প্রাপ্ত পাথরের বয়স এবং কাছাকাছি নক্ষত্রের বয়স সহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে এই বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ কোরআন বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা, যে কথা কোন সেন্সই মেইক করে না [3]

আসমান-যমীন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে (লৌহ মাহফুজে) মাসগুলোর সংখ্যা হল বার। তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটা হল সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। কাজেই ঐ সময়ের মধ্যে নিজেদের উপর যুলম করো না। মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে। জেনে রেখ, আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন।
— Taisirul Quran
নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে মাস গণনায় বারটি। এর মধ্যে বিশেষ রূপে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। এটাই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম। অতএব তোমরা এ মাসগুলিতে (ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করে) নিজেদের ক্ষতি সাধন করনা, আর মুশরিকদের বিরুদ্ধে সকলে একযোগে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সকলে একযোগে যুদ্ধ করে। আর জেনে রেখ যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলম করো না, আর তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের সাথে লড়াই করে, আর জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টির দিন থেকেই [১] আল্লাহ্‌র বিধানে [২] আল্লাহ্‌র কাছে গণনায় মাস বারটি [৩], তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস [৪], এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন [৫]। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে পড়ি, [4]

মাসে

আসুন পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে তাফসীরে জালালাইনে কী বলা আছে জেনে নেয়া যাক, [5]

মাসে 1

এবারে আসুন জেনে নিই, আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে ইসলামিক আলেমগণ তাদের গ্রন্থগুলো থেকে কী শেখাচ্ছে,

তথ্যসূত্র

  1. মায়ান ক্যালেন্ডার []
  2. রোমান ক্যালেন্ডার []
  3. সূরা তওবা, আয়াত ৩৬ []
  4. তাফসীরে মাযহারী, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২৮, ৩২৯ []
  5. তাফসীরে জালালাইন, পঞ্চম খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ৯২ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"