01.সূর্য রাতের বেলা কই যায়?

ভূমিকা

ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের মধ্যে সংঘাত বহু শতাব্দী ধরেই চলছে। ধর্মগ্রন্থ এমন কিছু জ্ঞানের দাবী করে, যা আধুনিক বিজ্ঞান এবং যুক্তির সঙ্গে তীব্রভাবে সাংঘর্ষিক। ইসলামের হাদিসে উল্লেখিত একটি কাহিনী হলো, সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে সিজদা করে, এবং আল্লাহর অনুমতি নিয়ে পরের দিন পুনরায় উদিত হয়। এই ধরনের বর্ণনা সাধারণ ধর্মবিশ্বাসী মুসলমানদের কাছে একটি পবিত্র সত্য হলেও, বাস্তবে এটি সম্পূর্ণরূপে অবৈজ্ঞানিক এবং খেয়ালী কল্পনাবিলাস। বর্তমান বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অনুসারে, সূর্য কখনোই কোথাও গিয়ে সিজদা করতে পারে না, এবং তার উদয় বা অস্ত যাওয়া পৃথিবীর ঘূর্ণন ও অক্ষীয় অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। এই প্রবন্ধে আমরা হাদিসে বর্ণিত সূর্য সম্পর্কিত কাহিনী এবং এর বৈজ্ঞানিক অসংগতির ওপর একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করবো।

হাদিসে বর্ণিত সূর্য সম্পর্কিত কাহিনী

ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, সূর্য রাতের বেলা আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে ইবাদত বন্দেগী করে, এবং সকাল বেলা আল্লাহ অনুমতি দিলে সে আবারো উদিত হয়। আমরা যারা পাঠ্যপুস্তকে পড়েছি, পৃথিবী গোলাকৃতি, এবং কোন না কোন অঞ্চলে কখনো না কখনো সূর্য আলো দিচ্ছে, একপাশে দিন হলে আরেকপাশে রাত হচ্ছে, এই কথাগুলোর সম্পুর্ণ বিপরীতে চলে যাচ্ছে হাদিসের এই কথাগুলো [1] [2] [3] [4] [5] [6] [7] [8] [9] [10] [11] [12] [13] [14] [15]

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৫/ কুরআনের হরুফ এবং কিরাত
পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই।
৩৯৬১. উবায়দুল্লাহ্ ইবন উমার (রহঃ) …… আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে একটি গাধার পেছনে সওয়ার ছিলাম। এ সময় সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি জান, সূর্য কোথায় অস্তমিত হয়? আমি বলি, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল এ ব্যাপারে অধিক অবহিত। তিনি বলেন عَيْنِ حَامِيَةٍ এটি অর্থাৎ গরম প্রস্রবণের মধ্যে যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
২৯৭২। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবূ যার (রাঃ)-কে বললেন, তুমি কি জানো, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ই ভাল জানেন। তিনি বললেন, তা যেতে যেতে আরশের নীচে গিয়ে সিজদায় পড়ে যায়। এরপর সে পুনঃ উদিত হওয়ার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। আর অচিরেই এমন সময় আসবে যে, সিজদা করবে তা কবূল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু অনুমতি দেওয়া হবে না। তাকে বলা হবে যে পথে এসেছ, সে পথে ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হবে–এটাই মর্ম হল আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আর সূর্য গমন করে তার নির্দিষ্ট গন্ত্যব্যের দিকে, এটাই পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।
(কোরআন ৩৬:৩৮)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ والشمس تجري لمستقر لها ذلك تقدير العزيز العليم “এবং সূর্য ভ্রমন করে তার নির্দৃিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রন।”
৪৪৩৯ আবূ নু’আয়ম (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সূর্যাস্তের সময় আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। তিনি বললেন, হে আবূ যার! তুমি কি জানো সূর্য কোথায় ডুবে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, সূর্য চলে, অবশেষে আরশের নিচে গিয়ে সিজদা করে। নিম্নবর্ণিত আয়াত‏وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ‏ এ এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে, অর্থাৎ সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশলী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ والشمس تجري لمستقر لها ذلك تقدير العزيز العليم “এবং সূর্য ভ্রমন করে তার নির্দৃিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রন।”
৪৪৪০। হুমায়দী (রহঃ) … আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহর বাণীঃمُسْتَقَرُّ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেছেন, সূর্যের গন্তব্যস্থল আরশের নিচে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭১. যে সময়ে ঈমান কবুল হবে না
২৯৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জানো, এ সূর্য কোথায় যায়? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এ সূর্য চলতে থাকে এবং (আল্লাহ তা’আলার) আরশের নিচে অবস্থিত তার অবস্থানস্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং আরশের নিচে অবস্থিত তার অবস্থানস্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়লে হয়েই উদিত হয়।
সে আবার চলতে থাকে এবং আরশের নিচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল হয়েই সে উদিত হয়। এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথার্রীতি আরশের নিচে তার নিদৃষ্টস্থলে যাবে। তাকে বলা হবে, ওঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিম গগনে উদিত হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন দিন সে অবস্থা হবে তোমরা জানো? সে দিন ঐ ব্যাক্তির ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে ব্যাক্তি পুর্বে ঈমান আনে নাই কিংবা যে ব্যাক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করে নাই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭১. যে সময়ে ঈমান কবুল হবে না
২৯৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় উপবিষ্ট ছিলেন। সূর্য অন্তমিত হলে তিনি বললেনঃ হে আবূ যার! জানো, এ সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে তার গন্তব্য স্থলে যায় এবং আল্লাহর কাছে সিজদার অনুমতি চায়। তখন তাকে অনুমতি দেয়া হয়। পরে একদিন যখন তাকে বলা হবে যেদিক থেকে এসেছো সেদিকে ফিরে যাও। অনন্তর তা অস্থাচল থেকে উদিত হবে। এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের কিরাআত অনুসারে তিলাওয়াত করেনঃذَلِكَ مُسْتَقَرٌّ لَهَا এ তার গন্তব্যস্থল
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭১. যে সময়ে ঈমান কবুল হবে না
২৯৯। আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আামরা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেوَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا “এবং সূর্য ভ্রমণ করে উহার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিবে” (৩৬ঃ ৩৮) এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ আরশের নিচে তার গন্তব্য স্থল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)

সহীহ হাদিসে কুদসি
১/ বিবিধ হাদিসসমূহ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রশংসামূলক কতক বাক্যের ফযিলত
১৬১. আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি একটি গাধার ওপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। তখন তার উপর একটি পাড়যুক্ত চাদর ছিল। তিনি বলেন: এটা ছিল সূর্যাস্তের সময়, তিনি আমাকে বলেন: “হে আবূ যর তুমি জান এটা কোথায় অস্ত যায়?” তিনি বলেন: আমি বললাম: আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বলেন: সূর্যাস্ত যায় একটি কর্দমাক্ত ঝর্ণায়, সে চলতে থাকে অবশেষে আরশের নিচে তার রবের জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়ে, যখন বের হওয়ার সময় আল্লাহ তাকে অনুমতি দেন, ফলে সে বের হয় ও উদিত হয়। তিনি যখন তাকে যেখানে অস্ত গিয়েছে সেখান থেকে উদিত করার ইচ্ছা করবেন আটকে দিবেন, সে বলবে: হে আমার রব আমার পথ তো দীর্ঘ, আল্লাহ বলবেন: যেখান থেকে ডুবেছে সেখান থেকেই উদিত হও, এটাই সে সময় যখন ব্যক্তিকে তার ঈমান উপকার করবে না”। [আহমদ] হাদিসটি সহিহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/৩৬/১. আল্লাহর বাণীঃ আর সূর্য নিজ গন্তব্য স্থানের দিকে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। (সূরাহ ইয়াসীন ৩৬/৩৮)
৪৮০২. আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। তিনি বললেন, হে আবূ যার! তুমি কি জান সূর্য কোথায় ডুবে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, সূর্য চলে, অবশেষে আরশের নিচে গিয়ে সিজদা করে। নিম্নবর্ণিত وَالشَّمْسُ تَجْرِيْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ এ আয়াতের কথাই বর্ণনা করা হয়েছে, অর্থাৎ সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের পানে, এ হল পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। [৩১৯৯] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৩৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/৩৬/১. আল্লাহর বাণীঃ আর সূর্য নিজ গন্তব্য স্থানের দিকে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। (সূরাহ ইয়াসীন ৩৬/৩৮)
৪৮০৩. আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহর বাণীঃ وَالشَّمْسُ تَجْرِيْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেছেন, সূর্যের গন্তব্যস্থল আরশের নিচে। [৩১৯৯] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৯৭/ তাওহীদ
পরিচ্ছেদঃ ৯৭/২৩. আল্লাহর বাণীঃ ফেরেশতা এবং রূহ্ আল্লাহর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়- (সূরা আল মা‘আরিজ ৭০/৪)। এবং আল্লাহর বাণীঃ তাঁরই দিকে পবিত্র বাণীসমূহ আরোহণ করে- (সূরাহ ফাত্বির ৩৫/১০)।
৭৪৩৩. আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছি, ‘‘আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে’’ আল্লাহর এ কথা সম্পর্কে। তিনি বলেছেনঃ সূর্যের নির্দিষ্ট গন্তব্য হল আরশের নিচে। [৩১৯৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১। ঈমান [বিশ্বাস]
পরিচ্ছেদঃ ৭২. যে সময়ে ঈমান কবুল হবে না।
২৮৯-(২৫০/১৫৯) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (আঃ) ….. আবূ যার (রাযিঃ) বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কি জান, এ সূর্য কোথায় যায়? সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, এ সূর্য চলতে থাকে এবং (আল্লাহ তা’আলার) আরশের নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সাজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং আরশের নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সাজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয় উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল হয়েই সে উদিত হয়। এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথারীতি আরশের নীচে তার অবস্থানে যাবে। তাকে বলা হবে, উঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (কুরআনের বাণী) “কোন দিন সে অবস্থা হবে তোমরা জান? সেদিন ঐ ব্যক্তির ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি”- (সূরাহ আল আনআম ৬ঃ ১৫৮)*। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৩০৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাদিসের অসংগতি

এই হাদিসে যে ধরনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে বৈজ্ঞানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। বর্তমান বিজ্ঞান অনুসারে, সূর্য কখনোই কোনো সত্তার কাছে সিজদা করতে যেতে পারে না। সূর্য হলো একটি বিশাল প্লাজমার গোলক, যার ভর ১.৯৮ × ১০^৩০ কিলোগ্রাম এবং এটি মহাকর্ষীয় বলের মাধ্যমে আমাদের সৌরজগতকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি নিজের অক্ষের ওপর ঘূর্ণিত হয় এবং প্রতি ২৫ দিনে একবার পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। সূর্য প্রতি সেকেন্ডে ৬২০ মিলিয়ন টন হাইড্রোজেন হেলিয়ামে রূপান্তরিত করে শক্তি উৎপন্ন করে, যা আমাদের পৃথিবীতে আলো ও তাপ সরবরাহ করে। তাহলে, এই বিশাল ও শক্তিশালী নক্ষত্র কীভাবে আল্লাহর আরশের নিচে সিজদা করতে যেতে পারে? পৃথিবী গোলাকৃতি হওয়ার কারণে, যখন বাংলাদেশে দিন, সেই সময়ে আমেরিকাতে রাত। অর্থাৎ পৃথিবীর কোন না কোন স্থান থেকে সূর্যকে সর্বদাই দেখা যাচ্ছে। তাই সূর্যের রাতের বেলা কোথাও যাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।

তাছাড়া, কোরআনে সূর্যকে একটি গরম প্রস্রবণে (عين حمئة) ডুবে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটি সরাসরি বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক। পৃথিবীর এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে সূর্য অস্ত যায় বা গরম প্রস্রবণের মধ্যে ডুবে যায়। সূর্য একটি স্থানে ধীরে ধীরে অস্ত না হয়ে, পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অদৃশ্য হয়। তাই, এই ধরনের বর্ণনা বাস্তবিক জ্ঞান এবং প্রমাণের পরিপন্থী।

ধর্মীয় বিশ্বাসের অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব

ধর্মীয় বিশ্বাসের এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের জ্ঞানচর্চা এবং যুক্তিবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদি কোনো ধর্মগ্রন্থ বা হাদিস মানুষকে এমন কোনো ধারণা শেখায়, যা বিজ্ঞানের প্রমাণিত সত্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তবে তা মানুষের জ্ঞানচর্চাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং তাদের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে তোলে। মানুষ তখন সত্য জানার পরিবর্তে কল্পনা এবং অন্ধবিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা তাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করে।

এই হাদিসের মতো বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে যে, ধর্মীয় বিশ্বাস অনেক সময় বাস্তবতার চেয়ে কল্পনাকে বেশি প্রাধান্য দেয় এবং মানুষকে প্রকৃত জ্ঞান থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। মানুষ যদি এই ধরনের ভুল তথ্যকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করে, তবে তারা নিজেদের জ্ঞান ও বিজ্ঞানচর্চা থেকে পিছিয়ে পড়বে এবং প্রগতির পথে বাধাগ্রস্ত হবে।

উপসংহার

ইসলামিক হাদিসে বর্ণিত সূর্য সম্পর্কিত কাহিনী বৈজ্ঞানিকভাবে সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক। এটি একটি প্রাচীনকালের কল্পনা এবং অজ্ঞতার প্রতিফলন। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য হলো, সূর্য কখনোই আল্লাহর আরশের নিচে সিজদা করে না। এটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে মানুষের দৃষ্টিতে উদয় ও অস্ত হয়। ধর্মের নামে এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক এবং অযৌক্তিক তথ্য মানুষের জ্ঞানচর্চাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং সমাজের প্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই, মানুষের উচিত ধর্মীয় বিশ্বাসকে বিজ্ঞান এবং যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ করা এবং সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করা।

তথ্যসূত্র

  1. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬১ []
  2. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৭২ []
  3. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৯ []
  4. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪০ []
  5. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৬ []
  6. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৮ []
  7. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৯ []
  8. সহীহ হাদিসে কুদসি, হাদিস নম্বরঃ ১৬১ []
  9. সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হাদিস নম্বরঃ ৪৮০২ []
  10. সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৩ []
  11. সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হাদিস নম্বরঃ ৭৪৩৩ []
  12. সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নম্বরঃ ২৮৯ []
  13. রাতে আরশের নিচে সূর্যের যাওয়ার হাদিসটি কেন বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল? []
  14. কুরআন হাদিস অনুসারে সূর্য কি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে? []
  15. নিকটবর্তী আসমানে আল্লাহ পাক []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"