ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ আদমকে বিভিন্ন ধরণের মাটি দিয়ে বানিয়েছেন, যার ফলে মানুষের বর্ণ ভিন্নতর হয়। অন্যান্য বিষয়ের মত ইসলামের এই বিষয়টিও একদমই হাস্যকর এবং কোনমতেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে মানুষের ত্বকের রঙ নির্ধারিত হয় মেলানিন নামক একটি রঞ্জকের দ্বারা, যা ত্বকের কোষে থাকে। মেলানিনের পরিমাণ বেশি হলে ত্বকের রঙ গাঢ় হয়, আর কম হলে ত্বক ফর্সা হয়। মেলানিনের উৎপাদন সূর্যালোকের উপর নির্ভরশীল, তাই নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের ত্বকের রঙ তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে তৈরি হয়েছে।
ত্বকের রঙের বিবর্তনঃ
বিবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে মানুষের ত্বকের রঙের ভিন্নতা বোঝা যায়। প্রাচীনকালে মানুষ আফ্রিকায় বাস করত, যেখানে সূর্যালোক ছিল প্রচুর। সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষা করতে মেলানিনের বেশি উৎপাদন গাঢ় ত্বক তৈরি করে। গাঢ় ত্বক সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ফলিক অ্যাসিড রক্ষা করে, যা প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, যেসব মানুষ ধীরে ধীরে আফ্রিকা থেকে অন্যান্য অঞ্চলে অভিবাসিত হয়েছিল, যেমন ইউরোপ বা এশিয়া, সেখানে সূর্যের তীব্রতা কম ছিল। এই কারণে, মেলানিনের কম উৎপাদনের ফলে তাদের ত্বক হালকা রঙের হয়ে যায়। কারণ, ত্বকের হালকা রঙ শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদনে সহায়ক, যা সূর্যালোক থেকে আসে। ভিটামিন ডি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে হাড়ের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য রক্ষায়। হালকা ত্বক সূর্যের কম আলোতে আরও বেশি ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম।
ত্বকের রঙের জেনেটিক বৈচিত্র্যঃ
মানুষের ত্বকের রঙ নির্ধারণে জেনেটিক বৈচিত্র্যও একটি বড় ভূমিকা পালন করে। MC1R এবং OCA2 এর মতো জিন মানুষের ত্বকের রঙের ভিন্নতার জন্য দায়ী। বিভিন্ন প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এই জিনের বৈচিত্র্য ঘটেছে, যার ফলে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রঙের ত্বক দেখা যায়। এর অর্থ হচ্ছে, ত্বকের রঙ শুধুমাত্র একটি জৈবিক প্রক্রিয়া, যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মানুষের লক্ষ বছরের বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে। মাটির সাথে ত্বকের রঙের কোনো সম্পর্ক নেই।
হাদিসের উদ্ভট তথ্যঃ
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ আদমকে বিভিন্ন ধরণের মাটি দিয়ে বানিয়েছেন। এই কারণে কোন কোন মানুষ কালো বর্ণের, কেউ সাদা, কেউ বাদামী চামড়ার হয়ে থাকে!
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৪/ তাফসীরুল কুরআন
পরিচ্ছেদঃ ৩. সূরা আল-বাকারাহ
২৯৫৫। আবূ মূসা আল-আশ’আরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীর সর্বত্র হতে এক মুঠো মাটি নিয়ে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। তাই আদম-সন্তানরা মাটির বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয়েছে। যেমন তাদের কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ কালো বর্ণের আবার কেউ বা এসবের মাঝামাঝি, কেউ বা নরম ও কোমল প্রকৃতির। আবার কেউ কঠোর প্রকৃতির, কেউ মন্দ স্বভাবের, আবার কেউ বা ভালো চরিত্রের।
সহীহঃ মিশকাত (১০০), সহীহাহ (১৬৩০)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ মূসা আল- আশ’আরী (রাঃ)
বর্তমান সময়ে, বিজ্ঞান আমাদেরকে মানুষের শারীরিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য দিয়েছে, এবং আমরা জানি যে, মানুষের ত্বকের রঙ একটি জেনেটিক এবং পরিবেশগত প্রভাবের ফলাফল। ইসলামের প্রচলিত বিশ্বাসের মতো আদমকে মাটি দিয়ে তৈরি করার ধারণা একটি পুরনো পৌরাণিক কাহিনি মাত্র।
উপসংহারঃ
বিজ্ঞান আমাদের দেখিয়েছে যে ত্বকের রঙের বৈচিত্র্য একটি জটিল জেনেটিক প্রক্রিয়া এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলাফল। ইসলামের বিভিন্ন হাদিসে আদমকে বিভিন্ন মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুল এবং বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন। ধর্মীয় শিক্ষার পরিবর্তে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য মানুষের জীবন ও বোধের উন্নতির জন্য বেশি কার্যকর।