আজানের সময় কুকুর ডাকে কেন?

কুকুর ডাকে

আমাদের দেশে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম হবে যারা কখনোই আজানের সময় কুকুরকে অস্বাভাবিকভাবে ডাকতে শোনে নি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ সমূহের মানুষদের মধ্যে এমন অভিজ্ঞতা অনেক স্বাভাবিক। আজানের সময় কুকুর অস্বাভাবিকভাবে ডাকে কেন সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে আসে। নাস্তিক হওয়ার পরও আজানের সময় কুকুরের অস্বাভাবিক সুরে ডাকা আমাকে অবাক করতো, বিষয়টি অনেক ভাবিয়েছেও আমাকে। আমার দুই/একজন নাস্তিক/অজ্ঞেয়বাদী বন্ধুও আমাকে এবিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো, যদিও আমি তখন যথাযথ উত্তর দিতে পারি নি। কৌতুহলীরা এই কৌতুহলী বিষয়ের প্রকৃত সত্যের খোঁজে থাকেন, তবে বেশিরভাগ মানুষই লোকমুখে শোনা অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যা গ্রহণ করেন এবং ভ্রান্ত বিশ্বাসের নিচে কৌতুহলী মনকে চাপা দেন।

মুসলিমদের মধ্যে এবিষয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। আজানের সময় কুকুরের এই অস্বাভাবিকভাবে ডাকাকে মুসলিমরা এভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, আজানের সময় শয়তান বা খারাপ জ্বীনেরা এদিকসেদিক ছুটতে থাকে আজানের শব্দ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্য, কুকুর আজানের সময় শয়তানকে এদিকসেদিক ছুটতে দেখেই ওরকম আওয়াজ করে। একজন কৌতুহলী মুসলিম যদি এই কৌতুহলী বিষয়ে তার কৌতুহল দূর করার জন্য এলাকার কোনো ইমামকে জিজ্ঞেস করেন তাহলে তিনি এই ভ্রান্ত ধারণাটিই উত্তর হিসেবে পাবেন। মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত এই ধারণাটি লোকমুখে প্রচলিত এমন কোনো ধারণা নয় যার সাথে ইসলামের কোনো যোগসূত্র নেই। এই ভ্রান্ত ধারণাটি ইসলাম থেকেই এসেছে। নিচের হাদিস দুটো পড়লেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে:

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৪। সালাত (নামায) (كتاب الصلاة)
হাদিস নম্বরঃ ৭৪৫
৮. আযানের ফাযীলাত এবং আযান শুনে শয়তানের পলায়ন
৭৪৫-(১৯/…) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ….. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যখন সলাতের আযান দেয়া হয়, শয়তান পিছন ঘুরে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালিয়ে যায় যেন আযানের শব্দ সে শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে। আবার যখন ইকামাত দেয়া হয় তখন সে পলায়ন করে। ইকামাত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে এবং সালাত আদায়কারীদের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করতে থাকে। সে তাকে বলে, এটা স্মরণ কর, এটা স্মরণ কর। সে কথাগুলো সলাতের আগে তার স্মরণও ছিল না। শেষ পর্যন্ত সালাত আদায়কারী দ্বিধায় পড়ে যে, সে বলতেও পারে না যে, কত রাকাআত পড়ল। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৫৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব ২১ঃ খাদ্য (كتاب الأطعمة)
হাদিস নম্বরঃ ৪৩০২
৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – থালা-বাসন ইত্যাদি ঢেকে রাখা প্রসঙ্গে
৪৩০২-(৯) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যখন তোমরা রাতে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে আশ্রয় চাইবে। কেননা তারা এমন এমন কিছু দেখতে পায়, যা তোমরা দেখতে পাও না। আর রাতে যখন মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন তোমরাও বাইরে যাওয়া কমিয়ে দাও। কেননা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্ট কিছু জীবকে রাত্রিকালে ছেড়ে দেন। তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ রাখো, আর আল্লাহর নাম স্মরণ করো। কারণ শয়তান এমন দরজা খুলতে পারে না যা আল্লাহর নাম নিয়ে বন্ধ করা হয়। আর তোমরা ঘটি, মটকা (খাদ্য-পাত্রসমূহ) ঢেকে রাখো, শূন্য পাত্র উপুড় করে রাখ এবং মশকের মুখ বেঁধে রাখো। (শারহুস্ সুন্নাহ্)(1)
(1) সহীহ : শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩০৬০, আল মুসতাদরাক ‘আলাস্ সহীহায়ান ৭৮২৭, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭১৬০, আল আদাবুল মুফরাদ ১২৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫১৭, মুসনাদে আহমাদ ১৪২৮৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

উল্লেখিত দ্বিতীয় হাদিসটির ব্যাখ্যা:

গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব ২১ঃ খাদ্য (كتاب الأطعمة)
হাদিস নম্বরঃ ৪৩০২
৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – থালা-বাসন ইত্যাদি ঢেকে রাখা প্রসঙ্গে
ব্যাখ্যাঃ (مِنَ اللَّيْلِ) দ্বারা উদ্দেশ্য রাতের কোন এক অংশে। আর হাকিম-এর বর্ণনায় إِذَا سَمِعْتُمْ نُبَاحَ الْكِلَابِ যখন তোমরা কুকুরের আওয়াজ শুনবে।
(فَإِنَّهُنَّ يَرَيْنَ مَا لَا تَرَوْنَ) তারা যা দেখে তোমরা তা দেখতে পাও তা হলো তারা শয়তানকে দেখতে পায়। আর আবূ হুরায়রা -এর বর্ণনায় এসেছে যা বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত-
وَإِذَا سَمِعَ صِيَاحَ الدِّيَكَةِ، فَلْيَسْأَلِ اللهَ مِنْ فَضْلِه ; فَإِنَّهَا رَأَتْ مَلَكًا যখন কোন মুরগীর আওয়াজ শুনবে সে যেন আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ চায়, কেননা সে মালাক (ফেরেশতা)-কে দেখেছে।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কারণ হলো মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) ‘আমীন’ দু‘আতে তাদের ক্ষমা প্রার্থনা কামনা তাদের শাহাদাত বিনয়-নম্রপূর্ণ এবং একনিষ্ঠতা। আর তাতে সৎলোকেদের উপস্থিতির সময় দু‘আ কামনা করা ভালো।
অনুরূপ দু‘আ করা ভালো যালিম ও ফাসিককে দর্শনের সময়। মদ্য কথা হলো, নেককার ও ফাসিকদেরকে দেখা ওয়া‘দা ও শাস্তির নিদর্শন শুনার পর্যায়। এমনটি হলে প্রথমে চাইবে দ্বিতীয়তে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। যেমন অন্য সহীহ হাদীসে এসেছে,
إِذَا سَمِعْتُمْ أَصْوَاتَ الدِّيَكَةِ فَاسْأَلُوا اللهَ مِنْ فَضْلِه؟ فَإِنَّهَا رَأَتْ مَلَكًا، وَإِذَا سَمِعْتُمْ نَهِيقَ الْحَمِيرِ فَتَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ؟ فَإِنَّهَا رَأَتْ شَيْطَانًا.
যখন তোমরা মোরগের আওয়াজ শুনবে আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ কামনা করবে, কারণ সে মালাক (ফেরেশতা)-কে দেখ আর যখন গাধার আওয়াজ শুনবে আল্লাহর কাছে শয়তান হতে আশ্রয় চাইবে, কেননা সে শয়তানকে দেখেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

এই ভ্রান্ত ধারণার ওপর নির্ভর করে মুসলিমদের মধ্যে অনেকেই দাবি করে থাকেন যে, আজানের সময় কুকুরের অস্বাভাবিক সুরে ডাকা বা আওয়াজ করা ইসলামের সত্যতার প্রমাণ।

তাহলে বাস্তবতা কি? বাস্তবতা হচ্ছে, কুকুরের ওরকম আর্তনাদ করার সাথে বিশেষভাবে ইসলামের আজানের কোনো যোগসূত্র নেই। একটি কুকুর ওরকম আর্তনাদ ঠিক তখনই করে যখন সে কোনো আওয়াজ শুনে বিরক্ত বোধ করে। তার কারণ কুকুরের শ্রবণশক্তি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সেনসেটিভ। যা আমাদের কানে আসলে আমাদের ভালো লাগে তা হয়তো খুব তাড়াতাড়িই তাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং তারা তার জবাবে আর্তনাদ করে। অতএব, আজানের সময় কুকুরের আর্তনাদ করা নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে যা প্রচলিত আছে তা ভিত্তিহীন ভ্রান্ত বিশ্বাস ছাড়া কিছু না।

আমি নিচে কিছু ভিডিও তুলে ধরছি যেসকল ভিডিও প্রমাণ করে যে কুকুর কেবল আজানের সময়ই ঐভাবে আর্তনাদ করে না, বরং টেলিফোন বাঁজার শব্দ, এমবুলেন্স সাইরেন, সুশ্রাব্য বাদ্যযন্ত্রের শব্দ, এলার্ম ঘড়ির শব্দ ইত্যাদিতেও কুকুর একইভাবে আর্তনাদ করে:

Ringing Telephone

Tornado & Ambulance Sirens

Musical Instruments

Alarm Clock

Squeaky Dog Toy

View Comments (11)

  • হাদিসে কুকুর শব্দটাই খুজে পেলাম না।
    গাধা আর মুরগির কথাই শুধু দেখলাম।

    • কারণ আপনি দ্বিতীয় হাদিসটা প্রথম থেকে শেষ অব্দি পড়েননি।

  • Oh really?

    তাই নাকি? মানুষের শ্রাব্যতার পাল্লা আর কুকুরের শ্রাব্যতার পাল্লার মাঝে অনেক তফাত? কি হাইস্যকর!

    আর ভাইরে ভাই! কুকুর তখনই ছটফট করবে যখন আল্ট্রাসনিক সাউন্ড শুনবে এবং সব কুকুরের শ্রাব্যতার পাল্লা এক নয়!

    এবং মানুষের শ্রাব্যতার পাল্লা হচ্ছে ৩১-১৯০০০ হাজার হার্জ, এর বেশি শব্দ শুনলে মানুষ এর কাছে তা আল্ট্রাসনিক মনে হয় আর কুকুরের শ্রাব্যতার পাল্লা হচ্ছে ৬৪-৪৪০০০ হাজার হার্জ, এরমানে ৪৪ হাজার হার্জ এর বেশি শব্দ কুকুরের কাছে আল্ট্রাসনিক মনে হয় আর তখনই কুকুর শোরগোল করে কিন্তু প্রশ্ন হল যেহেতু মানুষের সবশেষ মাত্রা ২০০০০ হার্জ আর কুকুরের ৪৪০০০, সেক্ষেত্রে কুকুরের আগে তো মানুষের ছটফট করার কথা, তাই না?

    আর পক্ষান্তরে, আপনার কথাও যদি মেনে নেই তাইলে আপনার কথা অনুযায়ী আপনাকে আবার প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে।

    খরগোশের শ্রাব্যতার সীমা কুকুরের চেয়েও বেশি ৯৬-৪৯ হাজার হার্জ খরগোশকে তো আজান শুনে কখনো ছটফট করতে দেখিনি!

    বড় ভাই, কমেন্ট টা ডিলিট কইরেন না। আমাকে উত্তর দিয়া যাইয়েন আর এইসব তথ্যর রেফারেন্স নিচে দিলাম চেক করে আসেন!

    রেফারেন্স:

    https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hearing_range

    https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ultrasound

  • আপনি ইন্টারনেট থেকে সার্চ করে দুটো তথ্য নিয়ে তা এখানে যে প্রসব করে নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করার চেষ্টায় আছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে, তবে আপনি যে সত্যিকার অর্থে জ্ঞানী না, বরং ছাগল সেটাও আপনি নিজেই প্রমাণ করেছেন।

    আপনি যে তথ্য তুলে ধরেছেন, সেই তথ্য দ্বারা আসলে কি বুঝায় সেটা আপনি নিজে বুঝেন? কুকুর শ্রবণশক্তিতে মানুষের চেয়ে এগিয়ে এবং সেজন্যই কুকুরের শ্রবণশক্তি মানুষের শ্রবণশক্তির তুলনায় সেনসিটিভ। মানুষের জন্য যা আল্ট্রাসনিক, তা কুকুরের কানে আসতে পারে। মানুষের জন্য যা শোনা পেইনফুল না তা কুকুরের জন্য পেইনফুল হতে পারে, মানুষের জন্য যা শোনা আরামদায়ক তা কুকুরের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে! আপনার উল্লেখিত তথ্য আমার পয়েন্টকেই প্রমাণ করে। আপনাকে এবিষয়ে শিক্ষিত হওয়ার জন্য নিচের লেখাটা পড়ার অনুরোধ করবো:

    "Just as with people, a dog’s hearing ability depends on its age as well as its breed. Dogs hear a higher frequency of sounds than a person, which is why ultrasonic signals such as those used in training whistles can be heard by dogs.

    This has led some to wonder if the sound of sirens actually hurts a dog’s ears. When we hear a loud sound, we tend to cover our ears with our hands to block out the noise. Are dogs howling in response to ear-splitting noise?

    Veterinarians do not believe this is always the case. According to Dr. Laura Hungerford, a veterinarian and research scientist, and faculty member at the University of Nebraska, a dog isn’t always howling at a sound because it hurts his ears.

    “He may associate the sound with particular events or have learned that if he howls, the noise is ‘chased’ away.”

    Hungerford explains that pain results from sounds that are much louder than the threshold of hearing. “Dogs could feel pain from sounds that weren’t painfully loud to us. Very loud sounds can hurt the ears and if a sound seems too loud to you, it is probably more so to your dog.”

    We know that dogs can hear much better than we can; the average human hears noise on a range of 20 cycles per second to 20 rHZ, while a dog’s range of hearing is approximately 40 cycles per second to 60 rHZ.

    Veterinary behaviorists point out that most dogs do not run and hide, tuck their tails or react in such as way that would indicate they’re feeling pain due to the sound of sirens.

    If my dog Sable is any indicator, this makes sense. Instead of moving away from the sound of sirens, she now chooses to go outside when she hears them and howl along to the chorus."

    https://phz8.petinsurance.com/ownership-adoption/pet-ownership/pet-behavior/why-dogs-howl-at-sirens

  • আমি কুকুরের আর্তনাদের কথা বলছি, কারো ছটফট করার কারণ ব্যাখ্যা করছি না! আর আপনি কুকুরের ওভাবে আর্তনাদ করার কারণ হিসেবে যা বললেন তার তো কোনো ভিত্তি নাই!

  • কুকুর আর্তনাদের কারণেই তো ছটফট শুরু করে! কুকুরের চেয়ে খরগোশের শ্রাব্যতার পাল্লা বেশি, প্রায় ৯৬-৪৯ হার্জ! খরগোশকে আজান শুনে কখনো আর্তনাদ তো বাদই দিলাম, সামান্য উত্তেজিত হতে দেখেছেন?

  • নিশ্চিত ভাবেই আমি উপরে কি উত্তর দিয়েছি তা বুঝেন নাই বা বুঝেও একই জিনিস আবার রিপিট করেছেন। নিশ্চিত ভাবেই কুকুর কেন আর্তনাদ করে তা আপনি জানেন না। কুকুর এবং মানুষের শ্রবণশক্তি তুলে ধরে আপনি আমার পয়েন্টকেই প্রুভ করেছেন। কুকুরের শ্রবণশক্তি মানুষের চেয়ে বেশি মানে যা মানুষের কাছে আল্ট্রাসনিক তা কুকুরের কান বুঝতে পারবে। যা মানুষের কানে পেইনফুল নয় তা কুকুরের কানে পেইনফুল হতে পারে। যা মানুষের কানে শ্রুতিমধুর তা কুকুরের বিরক্তির কারণ হতে পারে। আর 'কুকুরের শ্রবণশক্তি মানুষের চেয়ে বেশি সেনসেটিভ' কথাটি দ্বারা এটাই বোঝায়।

    যেহেতু কুকুর কেন বিভিন্ন শব্দে আর্তনাদ করে তা আপনি জানেন না সেহেতু আপনার এবিষয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করা উচিত। আপনি কেন অনুমান করে বলছেন, কোনো শব্দ কুকুরের কাছে আল্ট্রাসনিক মনে হলেই সে আর্তনাদ করবে, নয়তো করবে না? মনে মনে যা অনুমান করে নিজের মনকে বুঝ দেন তা অন্যদের শোনাতে গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন। কুকুর কেন আর্তনাদ করে তা বিস্তারিত জানুন:

    https://www.canidae.com/blog/2009/10/why-do-dogs-howl/

    https://phz8.petinsurance.com/ownership-adoption/pet-ownership/pet-behavior/why-dogs-howl-at-sirens

    https://pets.thenest.com/sounds-make-dog-howl-11568.html

    কুকুর আর খরগোশ আলাদা প্রাণী, তাদের স্বভাব আলাদা, বৈশিষ্ট্য আলাদা। কুকুর বিভিন্ন শব্দের জবাবে আর্তনাদ করে বলে খরগোশও করবে এমনটা একজন গোমূর্খই কল্পনা করতে পারে। আপনাকে আগে দেখতে হবে খরগোশ কেমন প্রাণী, তার স্বভাব কেমন, কোন কারণে সে কেমন আচরণ করে। খরগোশ নিরব প্রাণী, কুকুর ঘেউ ঘেউ করে, বিড়াল মিউ মিউ করে, খরগোশ সাধারণত শব্দ করে না। মাঝেমধ্যে শব্দ করলেও খুব আস্তে আস্তে, নিরব শব্দ যাকে বলে। যন্ত্রণা বা ভয় না পেলে জোরে শব্দ করে না। আর আর্তনাদ না করলে বা ছটফট না করলে যে কোনো প্রাণী বিরক্ত বোধ করে না সেটা ধরে নেওয়া তো আরও হাস্যকর। কোনো মানুষকে একটা থাপ্পড় দিলে সে তার জবাবে দশটা ঘুষি দিবে, আবার কোনো মানুষকে একটা থাপ্পড় দিলে সে সহ্য করবে। যে মানুষটা সহ্য করে যাবে সে কি থাপ্পড় খেতে ভালবাসে? মানুষ ভেদেই স্বভাব চরিত্র আলাদা হয়, আর দুইটা দুইধরনের প্রাণী তো অনেক দূরের কথা। আর শব্দের কারণে ওভাবে আর্তনাদ করা কুকুর জাতীয় প্রাণীর বিশেষ স্বভাব। এখানে অন্যকোন প্রাণীর কথা তোলাই মূর্খতা।

  • আপনার কাছে আমার কয়েকটি প্রশ্ন আছে তা হল ১.আপনি কি কুকুরের ভাষা বোঝেন কিভাবে বুঝলেন বিরক্ত হয়?
    ২.কুকুরের চেয়ে বেশি শ্রবন শক্তি রয়েছে বাদুরের প্রায় ১০০,০০০হাজ কখনো তো আজানের সময় এমন দেখা যায়না যে বাদুরে আকাশ ছেয়ে গেছে বা ছটফট করছে আপনার মতে তো তাদের বিরক্তি তৈরি হয় উচ্চ শব্দে।
    ৩.আজান ব্যতিত যখন মাইকে উচ্চ শব্দে বক্তিতা হয় তখন তা আরো উচ্চ শব্দের হয় তখন কেন কুকুর ডাকেনা? হয়তোবা আপনি কমেন্ট টা ডিলিট করবেন কিন্তু আমিও মুক্ত বুদ্ধির চচাকারি হিসেবে আশাকরি উত্তর পাব।

  • সাধারণ ধারণা শব্দ একটি তরঙ্গ, এর উচ্চ এমপ্লিচুডের কারণে কাচ ভেঙে যেতে পারে। আপনি যদি সলিড স্টেট ফিজিক্স পড়তেন তাহলে জানতেন যে ক্রিস্টালের প্রত্যেকটি অণুই কম্পক এবং শব্দ যদি এর ফ্রিকুয়েন্সির সমান হয়ে যায় তখন কাচ পর্যন্ত ভেঙে যায়, যদিও এর চেয়েও উচ্চ শব্দে কাচ নাও ভাঙতে পারে। এখন আসি ইথোলজির কথায়, অনেক প্রাণীই কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ফ্রিকুয়েন্সি ও বিট সহ্য করতে পারে না, কুকুর যার মধ্যে অন্যতম। কুকুর এলার্ম, সাইরেন বা আজানের কু-উ-উ অথবা আল্লাহু-উ-উ-উ ডাক সহ্য করতে পারে না, যার ফলে FAP কর্তৃক উদবুদ্ধ হ'য়ে সে ডাক দেয়, যতোটা সম্ভব সে বিরক্ত হয়। প্রত্যেকটা প্রাণীর কিছু FAP থাকে, তা ভিন্ন ভিন্ন। আপনি যদি জানতে চান প্রাণীর বিরক্তি প্রকাশের ভাষা সম্পর্কে তাহলে ইথোলজি পড়তে পারেন।

  • এতো গুলো video দিয়ে পরিষ্কার দেখানো ও বোঝানো হলো যে কুকুর কোনো টানা কোনো একঘেয়ে শব্দ শুনলে একটা আওয়াজ (ঠিক ডাক নয়) করে তবু মূর্খের দল শ্রাব্যতার মাত্রা ওটা আর্তনাদ নাকি হাসি ইত্যাদি অবান্তর প্রসঙ্গ তুলে মূল বিষয় থেকে সরে আসার চেষ্টা করে যাবে । video গুলো তে তো দেখলেন যে সাইরেন, mobile ring থেকে trumpet, saxophone ইত্যাদি নানা আওয়াজ হলে কুকুর একইরকম প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে তবু ফালতু কথা বলতে লজ্জা করলো না?

    ছেলে ভুলিয়ে আর লোক ঠকিয়ে ১৫০০ বছর তো ব্যবসা হলো এবার অন্য কিছু ভাবুন একটু ।

Leave a Comment