সূচনা
ইসলামকে একমাত্র সত্য ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ইসলাম প্রচারকগণ যে বৈজ্ঞানিক মিরাকলের দাবিসমূহ উপস্থাপন করেন তার মধ্যে অন্যতম একটি দাবি, কোরআন ১৪০০ বছর আগেই জানিয়েছে যে, দুটি সমুদ্রের মিলনস্থলে একটি অদৃশ্য অন্তরাল থাকে, যার ফলে সমুদ্র দুটির পানি একত্রিত হতে পারে না। ইসলাম প্রচারকগণের এই দাবিটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য? সেই প্রশ্নের উত্তরেই প্রবন্ধটি লিখছি।
দাবি
মুসলিম অ্যাপোলজিস্ট আই. এ. ইব্রাহীম তার বই এ ব্রিফ ইলাস্ট্রেটেড গাইড টু আন্ডারস্ট্যান্ডিং ইসলামে দাবিটি উপস্থাপন করেছিলেন। বইটির অনুবাদগ্রন্থ ‘ইসলামের সচিত্র গাইড’ থেকে তার বক্তব্য [1] তুলে ধরছি:
আয়াতসমূহ
প্রথমেই যেই আয়াতসমূহকে কেন্দ্র ইসলাম প্রচারকগণ তাদের দাবিটি উপস্থাপন করেন সেই আয়াতসমূহ তুলে ধরছি,
55:19
مَرَجَ الۡبَحۡرَیۡنِ یَلۡتَقِیٰنِ ﴿ۙ۱۹﴾
English – Sahih International
He released the two seas, meeting [side by side];
Bengali – Bayaan Foundation
তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়।
Bengali – Taisirul Quran
দু’টি সমুদ্রকে তিনিই প্রবাহিত করেন যারা পরস্পর মিলিত হয়,
55:20
بَیۡنَہُمَا بَرۡزَخٌ لَّا یَبۡغِیٰنِ ﴿ۚ۲۰﴾
English – Sahih International
Between them is a barrier [so] neither of them transgresses.
Bengali – Bayaan Foundation
উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।
Bengali – Taisirul Quran
(কিন্তু তা সত্ত্বেও) উভয়ের মাঝে আছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।
25:53
وَ ہُوَ الَّذِیۡ مَرَجَ الۡبَحۡرَیۡنِ ہٰذَا عَذۡبٌ فُرَاتٌ وَّ ہٰذَا مِلۡحٌ اُجَاجٌ ۚ وَ جَعَلَ بَیۡنَہُمَا بَرۡزَخًا وَّ حِجۡرًا مَّحۡجُوۡرًا ﴿۵۳﴾
English – Sahih International
And it is He who has released [simultaneously] the two seas, one fresh and sweet and one salty and bitter, and He placed between them a barrier and prohibiting partition.
Bengali – Bayaan Foundation
আর তিনিই দু’টো সাগরকে একসাথে প্রবাহিত করেছেন। একটি সুপেয় সুস্বাদু, অপরটি লবণাক্ত ক্ষারবিশিষ্ট এবং তিনি এতদোভয়ের মাঝখানে একটি অন্তরায় ও একটি অনতিক্রম্য সীমানা স্থাপন করেছেন।
Bengali – Taisirul Quran
তিনিই সমুদ্রকে দু’ ধারায় প্রবাহিত করেছেন- একটি সুপেয় সুস্বাদু আরেকটি লবণাক্ত কটু, উভয়ের মাঝে টেনে দিয়েছেন এক আবরণ- এক অনতিক্রম্য বিভক্তি-প্রাচীর।
তাফসীর
এখন, আসুন দেখি, তাফসীরে ইবনে কাসীরে সুরা আর-রাহমানের ১৯ ও ২০ নং আয়াত দুইটি সম্পর্কে কী বলা আছে,
এবারে দেখে নেওয়া যাক, তাফসীরে ইবনে কাসীরে সুরা ফুরকানের ৫৩ নং আয়াত সম্পর্কে কী বলা আছে,
জবাব
ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর বা যেকোনো দুটি সমুদ্রের একত্রিত হওয়ার স্থানে তাদের পানি একে অপরের সাথে মিশে না তাদের ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে। তবে এই না মেশার ঘটনাটি স্থায়ী নয়। ভিন্ন ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার পানি এক সময় একে অপরের সাথে মিশে যায়। ঘটনাটি সাময়িক এবং কেবল তখনই পর্যবেক্ষণযোগ্য যখন দুই সমুদ্রের পানি মিলিত হয়। বিষয়টি একটি কফির কাপে দুধ ঢালার সাথে তুলনা করে বোঝানো যেতে পারে। যে কেউই দেখতে পারেন যে কফির কাপে দুধ ঢালা হলে দুধকে সাময়িক সময়ের জন্য কফি থেকে আলাদা মনে হয় এবং এক সময় তারা মিশে পুরোপুরি এক হয়ে যায়। কোরআন যেখানে বলে দুই সমুদ্রের পানি তাদের মধ্যকার অন্তরায় বা বাধা অতিক্রম করতে পারে না সেখানে প্রকৃতপক্ষে ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে দুই সমুদ্রের পানি সাময়িক সময়ের জন্য না মিশলেও একসময় তারা মিশে এক হয়ে যায় আর এটি নিঃসন্দেহেই কোরআন একটি ভুল।
নদীর পানি যখন সমুদ্রের পানির সাথে মিলিত হয় তখন তা সমুদ্রের পানির সাথে মিলিয়ে যায় বা একত্রিত হয়ে যায়। নদী এবং সমুদ্রের মিলনস্থলে বা মোহনায় যা ঘটে কোরআন তার সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য প্রদান করে। মোহনায় যেখানে নদীর মিষ্টি হালকা পানি সমুদ্রের লবণাক্ত ভারী পানির সাথে মিশে যায় সেখানে কোরআন দাবি করে, নদী ও সমুদ্রের পানির মিলনস্থলে রয়েছে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল বা বাধা, যা ভেদ করে নদীর পানি সমুদ্রে মিশে যেতে পারে না বা সমুদ্রের পানি নদীতে মিশে যেতে পারে না। পরিষ্কারভাবেই কোরআন যা বলে তা মিরাকল নয় বরং, বৈজ্ঞানিক ভুল। নদীর মিষ্টি এবং সমুদ্রের লবণাক্ত পানির মিলনস্থলে উভয় ধরনের পানির মিশ্রণ পাওয়া যায়। অনেক মুসলিম বলবেন যে, এই উভয় ধরনের পানির মিশ্রণই নদী এবং সমুদ্রের পানির মিলনস্থলে থাকা দুর্ভেদ্য দেয়াল বা বাধা, যা খুবই হাস্যকর। নদী এবং সমুদ্রের পানির মিলনস্থলের উভয় ধরনের পানির মিশ্রণই প্রমাণ করে যে, তারা কোনো বাধার কারণে একে অপর থেকে পৃথক থাকে না এবং মিশে যায়।
পৃথিবীর বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সংস্থা নাসা ( National Aeronautics and Space Administration (NASA), ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা। সংস্থাটি পৃথিবীর মহাসাগরসমূহের পানির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণের জন্য অতি ক্ষুদ্র কিছু কণা বিভিন্ন স্থানের পানিতে ছেড়ে দিয়েছিল। সেই কণাসমূহ স্যাটেলাইটের কাছে সিগন্যাল প্রেরণ করে, যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ সমুদ্রসমূহের পানির গতি প্রকৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান। সেই কণাসমূহের চলাফেরা থেকে সহজেই বোঝা যায়, দুটি সমুদ্রের পানি মিশে যায় কিনা। যদি দুটি সমুদ্রের পানি না মিশতো, তাহলে সেই কণাসমূহের গতি পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যেত যে, কোন নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে থেমে যাচ্ছে।
উপসংহার
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ইসলাম প্রচারকগণ যা কোরআনের বৈজ্ঞানিক মিরাকল বলে প্রচার করেন, তা আদতে কোরআনের বৈজ্ঞানিক ভুল ছাড়া কিছুই না।
তথ্যসূত্র
- ইসলামের সচিত্র গাইড, পৃষ্ঠা ২৪-২৬ [↑]
- Ocean Current Flows around the Mediterranean Sea for UNESCO [↑]
Leave a Comment