ফ্রি সেক্সের দেশে!

সেক্স 2

ভূমিকা

গতবছর বাংলাদেশ থেকে এক পুরনো বন্ধু জার্মানি এসেছিল। বন্ধুটি অবিবাহিত, তবে গার্লফ্রেন্ড আছে শুনেছি। তাকে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াই, এটা সেটা দেখাই। একবার একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম, সেখানে বড় করে লেখা, এলকোহল ফ্রি রেস্টুরেন্ট। দেখে বন্ধুর চোখ চকচক করে উঠলো। সে জিজ্ঞেস করলো, এখানে কি ফ্রিতে এলকোহল দিবো নাকি দোস্ত? ল দুই বোতল কেরু ভদকা নে।

আমি হাসতে হাসতে বললাম, এইখানে তো কেরু ভদকা পাবি না। কিন্তু আসল কথা হইলো, এলকোহল ফ্রি মানে এখানে এলকোহল খাওয়া নিষেধ। ফ্রি মানে এখানে মাগনা খাওয়ায় না। এটার অর্থ ঐরকম না।

যাইহোক। বন্ধুরে সব জায়গা দেখাচ্ছিলাম শহরের। যত জায়গায় ঘুরি ফিরি, যেখানেই যাই না কেন, সে জার্মান সোনালি চুলের মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়েই থাকে। অবশ্য এটিই স্বাভাবিক। একদিন আমাকে বলেই বসলো, দোস্ত, একটা সাদা চামড়ার মাইয়া জোগাড় কইরা দে। আজকে রাত্রে চাই। হালার ফ্রি সেক্সের দেশে আইলাম, এখনতরি কিছুই করতে পারলাম না! দেশে ফেরত গিয়া মুখ দেখামু ক্যামনে?

তার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। পরে ভাবলাম, এই সমস্যা শুধু তার নয়। অধিকাংশ বাঙালি মনে করে, ফ্রি সেক্সের দেশ মানে যাকে তাকে যখন তখন ইচ্ছা শুইয়ে রাস্তাঘাটে সেক্স করে ফেলা যায়। বা এয়ারপোর্টে একদল মেয়ে বসে থাকে সেক্স করার জন্য। ব্যাপারটা আসলে এরকম নয়।

সম্মতি

সাধারণ অর্থে সম্মতি শব্দটি কোন একজনের প্রস্তাব বা মতের সাথে একমত পোষণ করাকে বোঝানো হয়। এর অর্থ হচ্ছে, কোন প্রকার চাপ কিংবা ব্লাকমেইলের ভয়, অথবা যেকোন ধরণের ভীতি প্রদর্শণ, আতঙ্কিত করা, সম্মান নষ্টের হুমকি ইত্যাদি দিয়ে সম্মত করাকে সম্মতি হিসেবে গণ্য করা যাবে না। একই সাথে, কেউ যদি মাতাল কিংবা অপ্রকৃতস্থ থাকে, কিংবা সম্মতি দেয়ার বয়সে না পৌঁছে থাকে, সেটিকেও সম্মতি বলে গণ্য করা হবে না। সম্মতি হতে হবে নিজের ইচ্ছায়, খুশিতে।

যৌন মিলনে সম্মতি যেকোনো যৌন সম্পর্কে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেকোনো ধরনের যৌন কার্যক্রম সম্মতি ব্যাতিরেকে যৌন অপরাধ ক্ষেত্রেবিশেষে ধর্ষণ বলে গণ্য হয়। বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭৫ নম্বর ধারা মোতাবেক যদি কোনো পুরুষ চৌদ্দ বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করে, তবে তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ | ৯ (১) মোতাবেক যদি কোনো পুরুষ ষোলো বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তা হলে সে উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হয়৷

না মানে না

যেকোন অবস্থায় একজন মানুষ যদি যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে না বলে, সেটির শুধুমাত্র এবং কেবলমাত্র একটিই অর্থ। সেটি হচ্ছে না। সে আপনার স্ত্রী, বান্ধবী, প্রেমিকা, এমনকি সে যদি দেহব্যবসায়ীও হয়, যেকোন মূহুর্তে তার না বলার অধিকার রয়েছে। এবং না বলা মাত্রই আপনার থামতে হবে। অন্যথায় কাজটি ধর্ষণ বলে গণ্য হতে পারে।

ফ্রি সেক্স বা যৌন স্বাধীনতা মানে হচ্ছে, আপনি আপনার যৌন সঙ্গী নিজে পছন্দ করতে পারেন। আপনি কার সাথে শোবেন, কার সাথে জীবন যাপন করবেন, বাচ্চা জন্ম দেবেন, বা দেবেন না, এই বিষয়ে রাষ্ট্র বা ধর্ম বা কোন কর্তৃপক্ষ, কেউই নাক গলাবে না। এটা আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ। কেউ আপনাকে এই বিষয়ে জোরাজুড়ি করতে পারবে না।

সেই একই সূত্রে, আপনিও কারো সাথে জোরাজুড়ি করতে পারবেন না। আপনার কাউকে ভাল লেগেছে, আপনি তার সাথে যৌন সম্পর্কে করতে ইচ্ছা প্রকাশ করতেই পারেন, তবে সেটা ভদ্র উপায়ে। সেই ছেলেটি বা মেয়েটিরও পুর্ণ স্বাধীনতা আছে, আপনাকে গ্রহণ করার বা আপনাকে না গ্রহণ করার। স্বাধীনতার মানে হচ্ছে এটাই।

যৌন স্বাধীনতা

প্রতিটি মানুষের অধিকার রয়েছে নিজ ইচ্ছেমত, পছন্দমত যৌন সঙ্গী নির্বাচনের। যৌন স্বাধীনতার কথা লিখলেই, মানুষের অধিকারের কথা লিখলেই বেশিরভাগ বাঙালি মুসলমান পাঠক আমার প্রোফাইলে মা বোন পরিবারবর্গ নিয়ে কুৎসিত সব মন্তব্য লিখতে শুরু করেন। তারা লেখেন, আমার মা বোনও যদি যৌন স্বাধীনতা চায় তখন আমি কী করবো?

ব্যাপারটা বুঝুন। আমার মা বোন কিংবা পরিবারের যে কোন মেয়ে সদস্যের পরিপূর্ণ যৌন স্বাধীনতার পক্ষে আমি। আমার পরিবারের যে কোন সদস্য, আমার মা বোন যাই হোক, তাদের পুর্ণ অধিকার থাকবে নিজ নিজ রুচি পছন্দ মোতাবেক যৌন সঙ্গী বা জীবন সঙ্গী বেছে নেয়ার। আমি তাতে বিন্দুমাত্র বাধা দেয়ার অধিকার রাখি না। সে যদি অপ্রাপ্তবয়ষ্ক হয়, আমি তখন তাকে পরামর্শ দিতে পারি, তবে কখনোই জোর করতে পারি না। আর সে যদি প্রাপ্ত বয়ষ্ক হয়, সে যাকে ইচ্ছা বেছে নেবে। তার অধিকার। আমি তার এই অধিকারের পক্ষে।

ব্যাপারটা লেখা কুৎসিত এবং কুরুচিপূর্ণ, তারপরেও লিখছি। কারণ মুমিন মনন! প্রচুর সংখ্যক মুমিন মন্তব্য লেখেন, আমি যেহেতু যৌন স্বাধীনতার কথা লিখেছি, তাই আমার মা বোনকে আমি তাদেরকে দেবো কিনা। এর উত্তর দিতে ঘেন্না লাগলেও বলছি, আমার পরিবারের কোন নারী সদস্য আমার দাস বা নির্দেশ পালনকারী কেউ না, বা কোন বস্তু নয় যে তাকে আমি দেয়া নেয়া করার অধিকার রাখি। তারা সকলেই স্বাধীন এবং সকলের নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে পুর্ণ সচেতন। মুমিন মুসলমান সম্ভবত তাদের পরিবারের নারীদের মাল ভাবেন, ইচ্ছামত দেয়ানেয়াও করেন। কিন্তু মুক্তমনাদের ভেতরে ব্যাপারটা এরকম নয়। তারা সকলের অধিকারের পক্ষে।

যৌন স্বাধীনতা মানে হচ্ছে, আপনার কারো সাথে যৌন সম্পর্কে করার, এবং একই সাথে, যৌন সম্পর্ক করতে অস্বীকৃতি জানানোর অধিকার। আপনি চাইলে এবং আপনার সঙ্গী চাইলে খুব ভাল, কিন্তু দুইজনার একজনও যদি তা না চায়, সেটা না চাওয়াও তার যৌন স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা শুধুমাত্র ব্যক্তির। কোন রাষ্ট্র, কোন সমাজ, কোন পরিবার, কোন ধর্ম কখনই নির্ধারণ করতে পারে না, ব্যক্তি কার সাথে যৌন সম্পর্ক করবে। এটি ব্যক্তি, এবং কেবলমাত্র ব্যক্তিই সিদ্ধান্ত নেবেন। তার রুচি এবং পছন্দ মাফিক। একেই যৌন স্বাধীনতা বলে। 

এই কমনসেন্সটুকু যদি না থাকে কারো, তাদের বোঝানো খুবই মুশকিলের ব্যাপার। যাইহোক, ব্যাপারটা আমার বন্ধুকে বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু সে কিছু বুঝেছে বলে মনে হয় নি। আফসোস!

View Comments (3)

  • যৌনতার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে
    না মানে না
    না মানে হ্যাঁ
    না মানে আর দেরী করিও না

    না এর ফিকুয়েন্সিতেই লুকিয়ে আছে- কোন না মানে না, রেড লাইন(ক্রস করা যাবে না)
    না এর ফিকুয়েন্সিতেই লুকিয়ে আছে- কোন না মানে গ্রিন সিগনাল(তবে এই মূর্হূতে না)
    না এর ফিকুয়েন্সিতেই লুকিয়ে আছে- কোন না মানে আর দেরী করিও না(এখনই)
    যারা অবগত, যারা এ সিগনাল ডিকোড করতে পারে তাদের ক্ষেত্রে অসুবিধা হয় না। এই যেমন আমি আসিফ মহিউদ্দিনের কন্ঠের স্বর চিনি। একশত মানুষের কন্ঠের মধ্যে আসিফ মহিউদ্দিন সাহেবের কন্ঠ আমি চিনে ফেলব কারন আমি অনেক শুনেছি তার গলার স্বর। কিন্তু মনের সাথে মনের মিলই হয় নাই তার না মানে হ্যাঁ মনে করে নিলে ধর্ষনের মামলায় জীবন শেষ হতে পারে।

Leave a Comment