মুহাম্মদের বিবিগণ এবং প্রস্তাব সমূহ – আল্লামা ইবনে কাসীর

বিবিগণ 21

“ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ” Al Bidaya Wal Nihaya (Download Link) প্রখ্যাত মুফাসসির ও ইতিহাসবেত্তা আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) প্রণীত একটি সুবৃহৎ ইতিহাস গ্রন্থ। এই গ্রন্থে ইসলাম তথা কোরআন এবং হাদিস ও বিভিন্ন বর্ণনাকারীর সূত্র হতে ইসলাম বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে হযরত মুহাম্মদের স্ত্রী এবং অন্যান্য রমনী যাদের হযরত বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার  বিস্তারিত বর্ণনাটি পোস্ট আকারে পাঠকের জন্য সংশয় ডট কমের পক্ষে থেকে উপহার দেয়া হলো। অন্যান্য রেফারেন্সের জন্য তথ্যভাণ্ডার এবং গ্রন্থাগার পাতাগুলো দেখার অনুরোধ রইলো।

প্রাসঙ্গিক আরেকটি লেখাঃ হযরতের দাসীদের বিবরণ – আল্লামা ইবনে কাসীর

View Comments (5)

  • ছি ছি ছি ....কি জানতাম আর কি দেখছি ... মাথায় যাচ্ছে না.. এত কুৎসিত একটা চরিত্রকে এত মহৎ চরিত্র কিভাবে তৈরি করলো মাথায় আসতেছে না এই বইগুলা আমার হুজুর এর মাধ্যমে চেক করেছি ....হুজুর বললো ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে এভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে.....omg....এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না নবী মুহাম্মদ কাউকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে আবার কেউ এই প্রস্তাব নাও করে দিয়েছে আর আগে জানতাম আল্লাহর ইচ্ছায় নবীজি বিয়ে করেছে.....

  • আমাদের একটা বিষয় সুস্পষ্ট ভাবে বুঝতে হবে যে
    রাসূলুল্লাহ (স:) এর জন্য শারিয়াহ কিছুটা ভিন্ন ছিল
    এবং তার কিছু বাস্তবসম্মত কারণ ছিল।

    নবীজির জন্য ইসলামি আইন সাধারণ মুসলমানদের চেয়ে অনেক কঠিন ছিল। প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া তাঁর জন্য ওয়াজিব ছিল, একবার যুদ্ধের সরঞ্জাম পড়ে ফেলার পর যুদ্ধে না যাওয়া তাঁর জন্য হারাম ছিল।

    দান গ্রহণ ও মৃত্যুর সময় একটা পয়সা পরিমাণ সম্পদ রেখে যাওয়া তাঁর জন্য হারাম ছিল। তাঁর বংশধরদের কেউ খুব দরিদ্র হলেও যাকাত নিতে পারবেন না বলে কঠোর বিধান রয়েছে।

    স্ত্রীদের ব্যাপারেও তার বিধান আল্লাহ একটু অন্যরকম দিয়েছেন। এটি আল্লাহর নির্দেশনাই বটে।

    স্বাভাবিক যে ধারনা সেটি হলো যৌবনের কারণে মানুষ বিয়ে করে। কিন্তু নবীজি বেঁচেছিলেন ৬৩ বছর। সেখানে ৫০ বছর পর্যন্ত মাত্র একজন স্ত্রীই ছিলো তার। এর পরে আয়াতের বিষয় আমলে নিয়ে সন্মানার্থে কয়েকজনকে তিনি স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ধন্য করেছেন।

    ওই সময় আরবে বহু বিবাহ একটি রেওয়াজ ছিলো। যৌবনে নবীজি ওই রেওয়াজের পথেও হাঁটেননি। কোরআন নাযিলের পরেও বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে কোনো কোনো পুরুষ ১০০টি, কেউ ৮০টি বিয়ে করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশেও এর উদাহরণ রয়েছে। এটা ইসলাম সমর্থিত নয়।

    পরকালে নাজাত প্রত্যাশীদের জন্য সর্বোচ্চ ৪ স্ত্রীর বিধান মানার জন্য কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

    যদি হুযূর (সঃ) এর উদ্দেশ্য ভোগ-বাসনা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলা কিংবা শুধু নারী সঙ্গের আনন্দ লাভ করা হতো, তাহলে তিনি নিশ্চয় তার পূর্ণ যৌবনেই একাধিক বিয়ে করতেন এবং বিগত যৌবনা ও পৌঢ়া বিধবা তালাক প্রাপ্তা নারীদেরকে বিয়ে না করে সুন্দরী যুবতী ও কুমারীদের বিয়ে করতেন।

    পঁচিশ বছরের টগবগে যৌবনকালে চল্লিশ বছরের বৃদ্ধা মহিলা হযরত খাদিজা (রাজিঃ) কে বিয়ে করতেন না, এবং ভরা যৌবনের শেষাব্ধি তার সাথেই অতিবাহিত করতেন না।

    অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে এটাই যে, তিনি পঁশিচ বয়সে চল্লিশ বছরের বৃদ্ধা হযরত খাদিজা (রাজিঃ) কে বিয়ে করে তার সাথে যৌবনের মূল সময় তথা পঞ্চাশতম বছর পরযন্ত অতিবাহিত করেন। এরপর একান্নতম বছর থেকে শুরু করে জীবনের অন্তিম মুহুর্ত পরযন্ত তথা তেষট্টিতম বছর পরযন্ত সময়ে (মোট তের বছর) বাকি স্ত্রীদেরকে বিয়ে করেন্।

    তারা আবার একজন তথা্ হযরত আয়েশা(রাযিঃ) ছাড়া সকলেই ছিলেন বিধবা। অনেকে আবার ছিলেন বৃদ্ধা। অথচ তিনি হযরত যাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) কে সুগন্ধিযুক্ত ও সজীব চেহারার মেয়ে দেখে বিয়ে করেছেন কিনা প্রশ্নের উত্তরে বিধবা বিয়ের কথা শুনে কুমারী বিয়ে করা উচিৎ বলে মনোভাব প্রকাশ করে বলেন, কুমারী বিয়ে বরলে না কেন? তাতে তোমরা দু’জনে মিলে আনন্দ করতে পারতে!-(বোখারী শরীফ-কিতাবুন নিকাহ-২-৭৬০)

    এ হাদীসে হুযুর (সাঃ) হযরত যাবের (রাযিঃ) কে কুমারী বিয়ে করার দিকে ইশারা করেছেন। কুমারী বিয়ে করা কামনা পুরণের বড় উপায় জানা সত্ত্বেও তিনি বিধবা বিয়ে করতেন কি? যদি তিনি নারী লোভী হতেন!!!

    নবী কারীম (সাঃ) একাধিক বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন পবিত্র জীবনের পঞ্চাশটি বসন্ত কেটে যাওয়ার পর। তাহলে কি তিনি যৌবনের মূল সময় তথা পঞ্চাশতম বছর পর্যন্ত ছিলেন চরিত্রবান, আর জীবনের শেষ বয়সে এসে হয়ে গেলেন চরিত্রহীন? এটা কি কোন বিবেক প্রসূত কথা?

    অথচ তিনি চাইলে সে সময় মক্কার শ্রেষ্ট সুন্দরী আর ধনী কুমারীদের বিয়ে করতে পারতেন। অনেকেই তাকে এমন উপটৌকনও দিতে চেয়েছে। যেমন-মক্কী জীবণে কাফিররা রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বহু বারই বলে ছিলো যে, ‘আপনি চাইলে আরবের সব চেয়ে সুন্দরী নারীদেরকে আপনার সামনে নিয়ে এসে হাজির করি’। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন,- আমার এক হাতে সূর্য আর অপর হাতে চন্দ্র এনে দিলেও আমি ইসলাম প্রচার থেকে একটুও পিছপা হবো না (ইনশাআল্লাহ)।

    সুন্দর নারীদের প্রতি যদি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর লোভই থাকত (নাউযু বিল্লাহ), তাহলে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ঐ সময় মক্কার কাফিরদের কথা মেনে নিয়ে সুন্দরী নারীদের হস্তগত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সে দিকে চোখ তুলেই তাকাননি; বরং নিজ দায়িত্বেই ছিলেন অটল্। এথেকে কি প্রমানিত হয় না যে, তিনি নারী লোভী ছিলেন না?

    নিন্দুকরা যদি তাদের শত্রুতা ছেড়ে নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধির আশ্রয় গ্রহন করে এবং নিরপেক্ষভাবে বিচার- বিবেচনা করে, তাহলে তারা অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর একাধিক বিয়ের তাৎপর্য ও মাহাত্ম স্বীকার করে নিতে বাধ্য হবে। তারা খুঁজে পাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর এ বিয়ের মধ্যে মহান মর্যাদাশীল মানুষদের জন্যে একটি উৎকৃষ্ট উদাহারণ। সাথে সাথে এটাও পাবে যে, বহু বিবাহে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ব্যক্তিগত নূন্যতম স্বার্থও ছিলো না; বরং তাতে কেবলই দ্বীনের স্বার্থ সংরক্ষন নিহিত ছিলো।

    তার প্রত্যেক পদক্ষেপেই ছিলো আদর্শের রূপরেখা। তেমনি ছিলো তার বহু বিবাহের মাঝে অসংখ্য আদর্শ ও হিকমত। নিম্নে তার কয়েকটি মৌলিক আদর্শের নমুনা্ দেয়া হলো।–
    ১- শিক্ষা দানঃ
    রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর একাধিক বিবাহের মূল উদ্দেশ্য ছিলো- ইসলামী আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ মেয়েদের জন্যে এমন কতগুলো শিক্ষিকা মহিলার ব্যবস্থা করা, যারা ইসলামী হুকুম আহকামের শিক্ষাদান করাবে। কেননা, পুরুষদের ওপর যে সমস্ত আহকাম পালনের নির্দেশ রয়েছে, মেয়েদের ওপরও ঐ সমস্ত আহকাম পালনের নির্দেশ রয়েছে।

    বিশেষ করে নারী সম্পর্কীয় ও দাম্পত্য জীবনের গোপনীয় ব্যাপারে। যেমন-হায়েয, নিফাস, ও পাক হওয়া, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কীয় মাসয়ালা। এ ধরনের আহকাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে অধিকাংশ মেয়ে লজ্জাবোধ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সঃ)এর নিকট উপরোক্ত মাসয়ালা সমুহ থেকে কোন একটি মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাদের লজ্জা হতো। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর স্ত্রীদের পক্ষেই এইসবের ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া সম্ভব ছিলো।

    আবার অনেক সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিছু বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য পেশ করতে লজ্জাবোধ করতেন। তাই ইশারার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতেন। কিন্তু অনেক মহিলা তা বুঝতে সক্ষম হতেন না। ফলে তাদের শিক্ষা দেয়ার জন্যে শিক্ষিকার প্রয়োজন ছিলো। যা রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর বিবিগণের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করেছে।

    যেমন, হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বলেন আল্লাহ তায়লা আনসার মেয়েদের রহম করুন। যাদের লজ্জাবোধ দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে বাঁধা দেয়নি। তারা রাতের আঁধারে হযরত আয়েশা(রাযিঃ) এর কাছে দ্বীনের আহকাম জানার জন্যে আসতেন। হায়েয, নিফাস, ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক সমাধান শিক্ষা নিতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর প্রত্যেক স্ত্রীই ছিলেন তাদের জন্যে উত্তম শিক্ষিকা ও পথ প্রদর্শিকা। তাদের বদৌলতে মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেছ্। অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ(সঃ) এর এমন আরো অনেক কাজ আছে, যেগুলো তার বিবিদের মাধ্যমেই আমরা পেয়েছি। অন্যথায় তা অর্জনে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হতো।

    ২: সাম্য নীতি প্রতিষ্টাঃ= ইসলাম মানবতার ধর্ম, গণমানুষের ধর্ম। একজন অপরজনকে বুকে টেনে নেয়ার ধর্ম। ইসলামে আমির-প্রজা, দাস-প্রভু, পত্নী-দাসী সবাই সমান। হযরত সাফিয়া ও জুয়াইরিয়া (রাযিঃ)দাসী রূপে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতে এসেছিলেন। বিশেষতঃ হযরত জুয়াইরিয়া (রাযিঃ) বেদুঈন দস্যু দলপতির মেয়ে ছিলেন। আর হযরত সাফিয়া (রাযিঃ) ছিলেন ইহুদীর মেয়ে।

    রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বিয়ে করে হযরত আয়িশা(রাযিঃ), হাফসা(রাযিঃ), মায়মূনা(রাযিঃ), প্রমূখ অভিজাত শ্রেণীর পত্নীদের সমান মর্যাদা দান করেছেন। তারা সকলেই আজ উম্মুল মুমিনীন মর্যাদায় অভিষিক্ত।

    ৩: ধর্মীয় বিধান জারিঃ= রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর বহুবিবাহের অন্যতম হিকমত হলো-ধর্মীয় বিধান জারি ও জাহেলী যুগের ঘৃণ্য অভ্যাসকে বাতিল করা। উদাহারণ স্বরুপ বলা যেতে পারে- ‘পালক আত্মীয়তার প্রথা’।

    ইসলাম আসার পুর্বে আরববাসীরা অন্যের ছেলেকে পালক নিতো। তারা নিজেদের ঔরসজাত সন্তান নয় এমন কাউকে পালন করত, এবং নিজেদের উত্তরাধিকারী ছেলের মত গন্য করত।নিজের ছেলের ওপর আরোপিত সকল বিধান তার জন্য ও প্রযোজ্য মনে করত। যেমন-উত্তরাধিকারী, তালাক, বিয়ে, মুহাররামাতে মুছাহারা-(ভাই-বোন, মা-ছেলে ইত্যাদির মাঝে যে হুরমত), এবং মুহাররামাতে নিকাহ-(পুত্র বধু-শশুর ইত্যাদির মাঝে যে হুরমত) ইত্যাদির ক্ষেত্রে। এটা তাদের বর্বরতার যুগের অনুসৃত দ্বীন হিসাবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল।

    তাই আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মাধ্যমে যায়েদ বিন হারিস (রাযিঃ) কে লালন-পালন করান। এবং তার পালক পুত্র হিসাবে প্রসিদ্ধ লাভ করান। এমনকি তাকে অনেকে যায়েদ বিন মুহাম্মাদ বলতো। এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ফুফাত বোন হযরত জয়নাব (রাযিঃ) সাথে বিবাহ আবদ্ধ করেন।

    তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় হযরত যায়েদ (রাযিঃ) জয়নাব (রাযিঃ) কে তালাক দিলে, আসমানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। এর মাধ্যমে জাহেলী যুগের ঐ প্রথাকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করেন, এবং ঘোষণা করেন পালক পুত্র আপন পুত্রের মত নয়। পালক পুত্রের তালাক দেওয়া স্ত্রীর সাথে পালক শ্বশুরের বিয়ে বৈধ।

    ৪. নারীত্বের মর্যাদা দানঃ ইসলাম পূর্ব যুগে নারীদেরকে তদানীন্তন আরববাসী পশুতুল্য মনে করত। তাদের না ছিলো কোন মান-মর্যাদা, আর না ছিলো সুন্দর জীবন যাপন করার অধিকার। বিশেষ করে বিধবাদের দুর্গতি ছিলো সবচেয়ে বেশি।মানুষের মত বেঁচে থাকার অধিকার ছিলো না তাদের।

    এজন্যেই মানবতার নবী, গণমানুষের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বিধবা নারীদেরকে বিবাহ করে কুমারীদের সমান মর্যদা দান করতঃ বিশ্ব জগতের সম্মুখে একটা উন্নত আদর্শ তুলে ধরেছেন; যা মানবেতিহাসে নজিরবিহীন। হযরত সাওদা (রাযিঃ), হযরত উম্মুল মাসাকিন জয়নাব (রাযিঃ), ও হযরত উম্মে সালামা (রাযিঃ), কে তিনি এই কারণেই বিয়ে করেছিলেন।

    ৫. সমতা বিধানঃ একাধিক স্ত্রীদের কিভাবে রাখতে হবে এবং তাদের সাথে কিরূপ আচার-আচরণ করতে হবে, এই আদর্শ স্থাপন করাও ছিলো রাসুল (সাঃ) এর বহুবিবাহের এবটি মহান উদ্দেশ্য।

    ৬. সামাজিক হিকমতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বংশগত সম্পর্ক স্থাপন এবং তা অটুট রাখার উদ্দেশ্যে বহুবিবাহ করেছেন। যেন একারণে তারা ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়েন। যেমন- সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সব চেয়ে প্রিয় ও সর্বশ্রেষ্ট মর্যাদাবান ব্যক্তিত্ব হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এর আদরের কন্যা আয়িশা (রাযিঃ), ও আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর ফারুক (রাযিঃ) এর কন্যা হযরত হাফসা (রাযিঃ) কে বিবাহ করেন।

    যার ফলে তাদের অন্তর রাসূল (সাঃ) এর দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং তারা আল্লাহর মহত্ব ও সম্মানের প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর দাওয়াতের দিকে আকৃষ্ট হন।.......

    ৭. রাজনৈতিক হিকমাতঃ মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কোনো কোনো উম্মাহাতুল মুমিনীনকে বিয়ে করেছেন তার গোত্রের সাথে সম্পর্ক ও আত্মীয়তা করার লক্ষ্যে। কারণ, এটা অবিদিত নয় যে, নিশ্চয় মানুষ যখন কোন এক গোত্রে কিংবা কোন এক সম্প্রদায় হতে বিয়ে করে, তখন তাদের উভয়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

    আর এরই মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে সেই ব্যক্তি নতুন সম্পর্কিত গোত্রের লোকদের সাহায্য-সহযোগিতার আহবান করে।

    উদাহারণ স্বরূপ কয়েকটি উপমা পেশ করা হলো।
    *রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বনূ মুসতালাক গোত্রের নেতা হারেসের কন্যা জুয়াইরিয়া (রাযিঃ) কে বিয়ে করাঃ
    হযরত জুয়ইরিয়া (রাযিঃ)সম্প্রাদায় ও আত্মীয়-স্বজনসহ বন্দী হয়ে আসার পর স্বীয় সত্ত্বাকে মুক্ত করার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করলে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে তার মুক্তিপণ পরিশোধ করে নিজের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

    হযরত জুয়াইরিয়া (রাযিঃ) এ প্রস্তাবে সম্মতি দিলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বিয়ে করে নেন। অতঃপর সাহাবাগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শ্বশুর সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে আত্মীয়তার দিকে লক্ষ্য করে সকল বন্দীদের মুক্ত করে দেন। তারাও সাহাবাদের এই মহত্ব, উদারতা, বুদ্ধিমত্তা, ও চক্ষুলজ্জা দেখে সবাই ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন এবং সবাই আল্লাহর দ্বীনের পতাকা তলে সমবেত হন ও মুসলিম হিসাবে আত্মপরিচয় লাভ করেন।

    জুয়াইরিযা (রাযিঃ) এর সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এ বিয়েই তার নিজের এবং তার সম্প্রদায় ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্যে সৌভাগ্য স্বরূপ এবং ইসলাম গ্রহণ ও মুক্তি লাভের কারণ হয়।

    *রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিয়ে করেন সুফিয়া বিনতে হুয়াই বিন আখতাবঃ
    যিনি খায়বারের যুদ্ধে স্বামীর মৃত্যুর পর বন্দী হয়ে এসেছিলেন। এবং কোন মুসলমানের ভাগে পড়ে ছিলেন। তখন বুদ্ধিমান ও সমঝদার সাহাবাগণ বলেন, তিনি হলেন কুরায়যা গোত্রের নেত্রী, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ভাগে পড়া ছাড়া অন্য কারো ভাগে পড়া উচিৎ হবেনা।

    অতঃপর রাসূলূল্লাহ (সাঃ) কে এ বিষয়টি জানানো হলে, তিনি সুফিয়া (রাযিঃ) কে দুটি বিষয়ে এখতিয়ার প্রদান করেন-
    (ক) তাকে মুক্ত করে নিজ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে নিবেন।
    (খ) দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেবেন, অতঃপর সে তার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে যাবেন।
    সুফিয়া (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উত্তম ব্যবহার, মহত্ব, ও মর‌যাদা দেখে আযাদ হয়ে রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।
    তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বিয়ে করে নেন। যার ফলে তার গোত্রের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ

    একই ভাবে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) উম্মে হাবীবা (আবু সুফিয়ানের কন্যা রমলা) কে বিয়ে করেনঃ
    যে আবু সুফিয়ান, সে সময় ইসলামের ঘোর শত্রু ছিলেন এবং শিরকের পতাকাবাহী ছিলেন। তিনি যখন আপন মেয়ে রমলার সাথে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর বিয়ের সংবাদ শুনেন, তখন তা স্বীকৃতি দেন। সাথে সাথে তিনি ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

    এক পর্যায়ে ইসলাম গ্রহন করে, নামের সাথে যোগ করেন রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং হয়ে যান ইসলামের এক বিপ্লবী সিপাহসালার।

    সুতরাং এ থেকে বুঝা যায় যে, এই বিয়ে ছিলো তার ও মুসলমানদের কষ্টকে লাঘব করার জন্যে এবং তাই ঘটেছে। এর চেয়ে উত্তম রাজনীতি আর কি হতে পারে? তার চেয়ে ভাল কোন হিকমত আর কি আছে?
    এ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর বহুবিবাহের আরো অনেক হিকমত ও উদ্দেশ্য রয়েছে, যার বর্ণনা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়।

    • নবী যৌবনে আর বিয়ে করে নাই- ব্যাপারটা এমন না। ঘটনা হইলো পারে নাই। বউয়ের কামাই খাওয়া লোক- মানে স্ত্রীর সম্পদে লালিত পালিত একজন ব্যাক্তি আরেকটা বিয়ে করতে পারে না। এই সাধারণ কথাটা আপনার মাথায় নেওয়ার সমর্থ্যের ঘাটতি আছে আপনার।

Leave a Comment