আল্লাহর গালাগালি

Print Friendly, PDF & Email

জারজ বলে গালি

ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে বহু জায়গাতে অমুসলিমদের নানাভাবে গালাগালি করা হয়েছে। সেইসব গালাগালি নিয়ে অন্যত্র আলোচনা করা যাবে, আজকে শুধু এই বিশেষ গালিটি নিয়েই আলোচনা করছি। কোরআনে কাফেরদের সম্পর্কে জারজ বলে একটি জায়গাতে গালি দেয়া হয়েছে। কোরআনের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অনুবাদে এই শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে [1]

কঠোর স্বভাব, তার উপরে আবার কুখ্যাত।
Taisirul Quran
রূঢ় স্বভাব এবং তদুপরি কুখ্যাত।
Sheikh Mujibur Rahman
দুষ্ট প্রকৃতির, তারপর জারজ।
Rawai Al-bayan
রূঢ় স্বভাব (১) এবং তদুপরি কুখ্যাত (২);
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এই বিষয়ে তাফসীরে ইবনে কাসীরে যা বলা হয়েছে, [2]

ইকরামা (রঃ) বলেন যে, জারজ সন্তান উদ্দেশ্য। এটাও বর্ণিত আছে যে, কর্তিত কান বিশিষ্ট বকরী, যে কান তার গলদেশে ঝুলতে থাকে, এরূপ বকরীকে যেমন পালের মধ্যে সহজেই চেনা যায় ঠিক তেমনই মুমিনকে কাফির হতে সহজেই পৃথক করা যায়। এ ধরনের আরো বহু উক্তি রয়েছে। কিন্তু সবগুলোরই সারমর্ম হলো এই যে, (আরবি) হলো ঐ ব্যক্তি যে কুখ্যাত এবং যার সঠিক নসবনামা এবং প্রকৃত পিতার পরিচয় জানা যায় না। এ ধরনের লোকদের উপর শয়তান খুব বেশী জয়যুক্ত হয় এবং তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “জারজ সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অন্য এক হাদীসে আছেঃ জারজ সন্তান তিনজন মন্দ লোকের একজন, যদি সেও তার পিতা-মাতার মত আমল করে।”

আসুন সরাসরি এবারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তাফসীরে ইবনে কাসীর গ্রন্থ থেকে এই আয়াতটির তাফসীরের অংশ বিশেষ পড়ি, [3]

জারজ সন্তান

নিকৃষ্ট জীব বলে গালি

কোর আনে অমুসলিমদের নিকৃষোটম জীব বলে গালাগালি করা হয়েছে। সেইসাথে এই কথাও বলা হয়েছে যে,

কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কুফুরী করে তারা আর মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। এরাই সৃষ্টির অধম।
— Taisirul Quran
কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করে তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির অধম।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে ও মুশরিকরা, জাহান্নামের আগুনে থাকবে স্থায়ীভাবে। ওরাই হল নিকৃষ্ট সৃষ্টি।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির অধম [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এবারে আসুন এই আয়াতটির তাফসীর পড়ে নিই, যেখানে পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে, নবীকে নবী হিসেবে মেনে না নিলে তাড়াই ইসলামের দৃষ্টিতে সবচাইতে নিকৃষ্টতম জীব! [4]

অমুসলিমরা নিকৃষ্ট জীব তাফসীরে জালালাইন

আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। [5]
কুরআন ৯৮ঃ৬

সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকারকারী হয়েছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি। [6]
কোরআন ৮:৫৫

নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা’নত। [7]
কোরআন ২-১৬১

বস্তুতঃ এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহবান করছে যা কোন কিছুই শোনে না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কিছুই বোঝে না। [8]
কোরআন ২-২৫৭

কাফেরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হয়ে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নীত হবে-সেটা কতই না নিকৃষ্টতম অবস্থান। [9]
কোরআন ৩-১২

বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না। [10]
কোরআন ৩-৩২

আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ। [11]
কোরআন ৭:১৭৯

অতএব যারা কাফের হয়েছে, তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো দুনিয়াতে এবং আখেরাতে-তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। [12]
কোরআন ৩-৫৬

যাতে ধবংস করে দেন কোন কোন কাফেরকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন-যেন ওরা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়। [13]
কোরআন ৩-১২৭

খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহ্র সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুত: জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট। [14]
কোরআন ৩-১৫১

আসুন তা জেনে নিই সর্বাপেক্ষ গ্রহণযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে এই আয়াতগুলোর ব্যাখ্যাতে কী বলা রয়েছে। আসুন পড়ি ইবনে কাসীর [15] থেকে

অমুসলিমরা নিকৃষ্ট জীব তাফসীরে ইবনে কাসীর
[16]

তথ্যসূত্র

  1. কোরআন ৬৮ঃ১৩ []
  2. তাফসির ইবনে কাছের রহ, ৮-১৬ নং আয়াতের তাফসীর []
  3. তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড ১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ২২৫ []
  4. তাফসীরে জালালাইন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৮ []
  5. কোরআন ৯৮:৬ []
  6. কোরআন ৮:৫৫ []
  7. কোরআন ২:১৬১ []
  8. কোরআন ২:২৫৭ []
  9. কোরআন ৩:১২ []
  10. কোরআন ৩:৩২ []
  11. কোরআন ৭:১৭৯ []
  12. কোরআন ৩:৫৬ []
  13. কোরআন ৩:১২৭ []
  14. কোরআন ৩:১৫১ []
  15. তাফসীরে ইবনে কাসীর (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৮১ []
  16. তাফসীরে ইবনে কাসীর ইসলামিক ফাউন্ডেশন খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৪৮১ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন