10.আল্লাহর ভুল শপথ

Print Friendly, PDF & Email

নবী মুহাম্মদ ১৪০০ বা ১৫৫০ সৈন্যের একটি দল নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন, কিন্তু মক্কাবাসীরা তাদের ঢুকতে দিলো না। এই সময়ে নবী উসমানকে পাঠালেন আলোচনার উদ্দেশ্যে। গুজব উঠলো, মক্কাবাসীরা উসমানকে হত্যা করেছে। নবী প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হলেন। বাইরে বের হয়ে সকলের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন, উসমানের মৃত্যুর প্রতিশোধ না নিয়ে ফেরত যাবেন না বলে অঙ্গীকারও করলেন। সেইসাথে উপস্থিত সকলকে এই শপথ করতে বললেন যে, কোন অবস্থাতেই উসমান হত্যার বদলা না নিয়ে তারা ফেরত যাবে না। হাত রাখলেন নবী, সেই হাতে হাত রেখে উপস্থিত সকলেই নবীর সাথে শপথ করলেন, উসমান হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে। আল্লাহও আয়াত নাজিল করলেন যে, সকলের হাতের ওপর আল্লাহর হাতও রয়েছে, আল্লাহও উসমান হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার এই শপথে যোগ দিলেন। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, কিছুক্ষণ পরেই উসমান ফিরে আসলো। উসমানকে দেখে মুসলিম যোদ্ধারা শান্ত হল। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, জন্ম মৃত্যুর একমাত্র মালিক আল্লাহ কী জানতেন না যে, উসমান মরে নাই? এটা যে নিছক একটি গুজব, এটা তো আল্লাহর জানা থাকার কথা। তিনি কেন উপস্থিত জনতার সাথে সাথে হাতে হাত রেখে শপথ নেবেন? উনার তো জিবরাইল পাঠিয়ে বলার কথা, আরে মুহাম্মদ, ঠাণ্ডা হও। উসমান বেঁচে আছে, তার কিছুই হয় নি। এটি না করে আল্লাহ কেন তাদের হাতের ওপর হাত রেখে শপথ করলেন, বোঝা কঠিন কিছু নয়। অর্থাৎ আল্লাহ সেইটুকুই জানতেন, যতটুকু নবী জানতো। আসুন ঘটনাটি পড়ে দেখি।

আসুন এবারে একটি সহীহ হাদিস পড়ি, যেখান থেকে বোঝা যাবে, এই বায়াতটি ছিল উসমান হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার বায়াত [1]

সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা
পরিচ্ছেদঃ ১৯. ‘উসমান ইবনু আফফান (রাযিঃ)-এর মর্যাদা।
৩৭০৬। উসমান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মাওহিব (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এক মিসরবাসী বাইতুল্লাহর হাজ্জ আদায় করে। সে একদল লোককে বসা দেখে বলে, এরা কারা? লোকেরা বলল, এরা কুরাইশ বংশীয়। সে পুনরায় বলে, এই বয়স্ক (শায়খ) লোকটি কে? লোকেরা বলল, ইবনু উমর (রাযিঃ)। সে সময় সে তার নিকটে এসে বলল, আপনাকে আমি কয়েকটি বিষয় প্রশ্ন করব। অতএব আপনি আমাকে (তা) বলুন।
আমি এ বাইতুল্লাহর মর্যাদার শপথ দিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করছি, আপনি কি অবহিত আছেন যে, উসমান (রাযিঃ) উহুদ যুদ্ধের দিন (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) পলায়ন করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে আবার বলল, আপনি কি জানেন, তিনি (হুদাইবিয়ায় অনুষ্ঠিত) বাই’আতুর রিযওয়ানে অনুপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে পুনরায়ও বলল, আপনি কি অবহিত আছেন যে, তিনি বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন এবং তাতে উপস্থিত হননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
সে বলল, আল্লাহু আকবার। তারপর ইবনু উমার (রাযিঃ) তাকে বললেন, এবার এসো। যেসব বিষয়ে তুমি প্রশ্ন করেছ তা তোমাকে আমি সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেই।
উহুদের দিন তার পলায়নের ঘটনা প্রসঙ্গে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তার ঐ ব্যাপারটা ইতোমধ্যেই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন, সম্পূর্ণভাবে মাফ করেছেন। তারপর বদরের যুদ্ধে তার অনুপস্থিতির কারণ এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেয়ে (রুকাইয়াহ্) তার সহধর্মিণী ছিলেন (এবং সে সময় তিনি মারাত্মক অসুস্থ ছিলেন)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ যে লোক বদরের যুদ্ধে যোগদান করেছে তার সমপরিমাণ সাওয়াব ও গানীমাত তুমি পাবে। আর তিনি রুকাইয়ার দেখাশুনা করার জন্য তাকে মদীনাতে থাকারই নির্দেশ দিলেন। আর বাই’আতে রিদওয়ানে তার অনুপস্থিতির কারণ এই যে, মক্কাবাসীদের কাছে উসমান (রাযিঃ)-এর চাইতে বেশি মর্যাদাবান কোন মুসলিম লোক (হুদাইবিয়ায়) উপস্থিত থাকলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার পরিবর্তে) তাকেই প্রেরণ করতেন। তা না থাকাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান (রাযিঃ)-কেই (মক্কায়) প্রেরণ করলেন। আর উসমান (রাযিঃ)-এর মক্কার অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর বাই’আতুর রিযওয়ান অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ণনাকারী বলেন, (বাই’আত অনুষ্ঠানকালে)রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ডান হাতের দিকে ইশারা করে বললেনঃ এটা উসমানের হাত। তারপর তিনি ঐ হাতটি তার অন্য হাতের উপর স্থাপন করে বললেনঃ এটি উসমানের (বাই’আত)
তারপর ইবনু উমার (রাযিঃ) লোকটিকে বললেন, এবার তুমি এ ব্যাখ্যা সঙ্গে নিয়ে যাও।
সহীহঃ বুখারী (৯৬৯৮)।
আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উসমান ইবনু মাওহাব (রহঃ)

এবারে আসুন তাফসীরে জালালাইনে সূরা ফাতহ এর ১৮ নম্বর আয়াতটির ব্যাখ্যা পড়ে নিই,

তথ্যসূত্র

  1. সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ৩৭০৬ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন