কালিকা পুরাণে ব্রাহ্মণের শ্রেষ্ঠত্ব, শূদ্র ও নারীর দুরবস্থা
সূচিপত্র
ভূমিকা
হিন্দু সমাজে যে ‘জাতের নামে বজ্জাতি’ চলেছে যুগের পর যুগ ধরে, এতে কেবল সমাজের দোষ নেই, একা ‘বজ্জাতদের’ও দোষ নেই, তথাকথিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোও জাতপাত তৈরিতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে । জাতিবৈষম্য হিন্দুশাস্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। ।কালিকাপুরাণও এর ব্যতিক্রম নয়। ব্রহ্মার শরীরের নানা অংশ থেকে নানা বর্ণের উৎপত্তির কথা হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ হতে জানা যায়। কালিকা পুরাণও ঠিক একই কথা বলছে। কালিকা পুরাণের ছাব্বিশ অধ্যায়ে বলা হয়েছেঃ
অজায়ন্ত মুখাদ্বিপ্রাঃ ক্ষত্রিয়া বাহুযুগ্মতঃ ।। ১২
ঊর্বোর্বৈশ্যাঃ পদোঃ শূদ্রাশ্চতুর্বেদাশ্চতুর্মুখাৎ। ১৩
অর্থাৎ, ব্রহ্মার মুখ হতে ব্রাহ্মণগণ,বাহু হতে ক্ষত্রিয়গণ, উরু হতে বৈশ্যগণ ও পদতল হতে শূদ্রগণ, ব্রহ্মার চারমুখ হতে চার বেদ উৎপন্ন হয়…
কালিকা পুরাণের ত্রিশ অধ্যায়েও এই কথা পাওয়া যায় কিন্তু সেখানে খানিকটা ভিন্নতাও আছে। সেখানে বলা হয়েছে গোবিন্দের নানা অঙ্গ থেকে নানান বর্ণের উৎপত্তি হয়েছে-
ত্বদ্বক্ত্রাদ্ব্রাহ্মণা জাতা বাহুজাঃ ক্ষত্রিয়াস্তব।
ঊর্ব্বোর্বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাঃ পাদাভ্যাং তব নির্গতাঃ।। ৯
অর্থাৎ, আপনার মুখ হতে ব্রাহ্মণ, বাহু হতে ক্ষত্রিয়, ঊরু হতে বৈশ্য এবং চরণ হতে শূদ্রজাতি উৎপন্ন হয়েছে।
যেহেতু এই পুরাণের সৃষ্টিকাহিনীতে সৃষ্টিকর্তার মুখ থেকে ব্রাহ্মণের এবং পা থেকে শূদ্রের উৎপত্তির কথা বর্ণিত হয়েছে, তাই এই গ্রন্থেও স্বাভাবিকভাবেই ব্রাহ্মণের শ্রেষ্ঠত্ব এবং শূদ্রের দলন লক্ষ্য করা যায় ; এতে বিস্ময়ের কিছুই নয়।
ব্রাহ্মণের মহিমা
ব্রাহ্মণের মহিমায় কালিকা পুরাণের ৬৯ তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে,
দ্বিপদাং ব্রাহ্মণো যদ্বদ্দেবানাং বাসবো যথা।
তথা ভূষণবর্গেষু বস্ত্রমুত্তমমুচ্যতে।। ১৫
অর্থাৎ, মানুষদের মধ্যে যেমন ব্রাহ্মণ এবং দেবতাদের মধ্যে যেমন ইন্দ্র , তেমনি ভূষণসমূহের মধ্যে বস্ত্র সকলের শ্রেষ্ঠ।“
এছাড়া গুরু অপরাধেও ব্রাহ্মণদের লঘুদণ্ডের বিধান দিয়েছে কালিকা পুরাণ । কোনো অপরাধে যখন অন্যান্য মানুষদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেওয়ার কথা কালিকা পুরাণে বলা হয়েছে, তখন সেই একই অপরাধে ব্রাহ্মণকে কেবলমাত্র নির্বাসিত করার কথা বলা হয়েছে । এই বিধানের পেছনে অবশ্য একটি প্রসঙ্গ আছে। কালিকা পুরাণের ৮৪ তম অধ্যায়ে রাজার কি কি করা উচিত তা বলা হয়েছে। এই অধ্যায়ের একস্থানে বলা হয়েছে মন্ত্রীরা বিশ্বস্ত কিনা তা যাচাই করার জন্য রাজা বিচক্ষণা দাসীদের মন্ত্রীদের কাছে পাঠাবেন এবং সেই দাসীরা গিয়ে মন্ত্রীকে বলবেন, ” রানী আপনার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। আপনি চাইলে আমরা মিলনের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।” আবার রানীদের কাছে দাসীদের পাঠিয়ে এই কথা বলতে বলা হয়েছে- ” মন্ত্রী আপনার প্রতি আকৃষ্ট। আপনি চাইলে আমি মিলনের ব্যবস্থা করতে পারি।” রাজা এভাবে কাছের সবাইকে পরীক্ষা করবেন। যদি এদের কারও মধ্যে অবিশ্বস্ততা লক্ষ্য করা যায় তবে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করতে বলা হয়েছে। এই অপরাধে বাকিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হলেও , ব্রাহ্মণকে কেবলই নির্বাসিত করতে বলা হয়েছে। এই বিধান শোনার পর মনে একটি প্রশ্ন জাগে- ব্রাহ্মণের প্রাণ ছাড়া কি অন্যদের প্রাণের কোনো দাম নেই? ব্রাহ্মণ ভ্রষ্ট হলেও কেন তাদের সবকিছুতে ছাড় দেওয়া হত? এটা কি ন্যায়বিচার?
যাইহোক, কালিকা পুরাণ থেকে উপরোক্ত অংশের সরাসরি উদ্ধৃতি দেওয়া যাক-
দাসীশ্চ শিল্পিনীর্বৃ্দ্ধা মেধাধৃতিমতীঃ স্ত্রীয়ঃ।
অন্তর্বহিশ্চ যা যান্তি বিদিতাঃ সচিবাদিভিঃ। । ৯৩
তা রাজা রহসি স্থিত্বা ভার্য্যাদিভিরলক্ষিতঃ।
অভিমন্ত্র্যাথ সংমন্ত্র্য প্রেষয়েৎ সচিবান্ প্রতি।। ৯৪
তা গত্বা হৃদয়ং বুদ্ধাঃ স্ত্রীয়ো বিজ্ঞানতৎপরাঃ।
মহিষীপ্রমুখা রাজ্ঞস্ত্বাং বৈ কাময়তে শুভাঃ।। ৯৫
তত্রাহং যোজয়িষ্যামি যদি তে বিদ্যতে স্পৃহা।
সচিবস্ত্বাং কাময়তে ত্বদযোগ্যা বরবর্ণিনী ।। ৯৬
তং সঙ্গময়িতুং শক্তা যদি শ্রদ্ধা তবাস্ত্যহম্।
ইত্যনেন প্রকারেণ নানোপায়ৈস্তথোত্তরৈঃ।। ৯৭
ভার্য্যাঃ পুত্রদুহিত্রীশ্চ স্নুষাশ্চ প্রস্নুষাস্তথা।
শোধয়েৎ সচিবান পুত্রান্ পৌত্রাদীন্ সেবকাংস্তথা।। ৯৮
কামোপধাহবিশুদ্ধাংস্তু ঘাতয়েদবিচারয়ন্।
স্ত্রীয়স্তু যোজ্যা দণ্ডেণ ব্রাহ্মণাংস্তু প্রবাসয়েৎ।। ৯৯
অর্থাৎ,
যেসকল বৃদ্ধা বিচক্ষণা দাসী ও শিল্পিনীগণ, মন্ত্রী প্রভৃতির জ্ঞাতসারে অন্তঃপুরে ও বাইরে গতিবিধি করে। ৯৩
রাজা নির্জনে স্ত্রীদের অলক্ষ্যে তাদের বলে কয়ে মন্ত্রীদের কাছে পাঠাবেন। ৯৪
তারা গিয়ে তাদের মন বুঝবে; বলবে রানী প্রভৃতি সুন্দরীরা তোমার প্রতি অনুরক্তা হয়েছেন। ৯৫
তোমার যদি ইচ্ছা থাকে তো বল, আমি ঘটনা করে দিতে পারি। আবার রানী প্রভৃতিকে বলবে, বরবর্ণিনী, মন্ত্রী তোমার প্রতি অনুরক্ত। ৯৬
যদি ইচ্ছা হয় তাহলে বল, আমি তার সাথে তোমার মিলন করিয়ে দিতে পারি। ৯৭
রাজা এইরকম উপায় এবং অন্যরকম উপায় দ্বারা স্ত্রী, কন্যা, পৌত্রী, স্নুষা ও পৌত্রবধূদের এবং মন্ত্রী, পুত্র, পৌত্র ও সেবকদের বিশুদ্ধ কিনা জানবেন। ৯৮
এর মধ্যে যেসকল স্ত্রী পুরুষ কামোপধাতে অশুদ্ধ, অবিবাদে তাদের প্রাণদণ্ড দেবে। ব্রাহ্মণ হলে নির্বাসিত করবে। ৯৯
দাসীপুত্রের প্রতি বৈষম্য
কালিকা পুরাণের ৮৮ তম অধ্যায়ে দাসীপুত্রের কথা পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে দাসীপুত্রকে রাজ্যে অভিষিক্ত না করতে। আজকের দিনে আমরা দাস-দাসীর কথা কল্পনা করতে না পারলেও প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোতে খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসবের উল্লেখ মেলে। এর থেকে মনে হয় সে সময়ে এসব খুবই স্বাভাবিক বিষয় বলে গণ্য হত। দাসীপুত্রের সম্বন্ধে কালিকাপুরাণ বলছে-
কানীনশ্চ সহোড়শ্চ ক্রীতঃ পৌনর্ভবস্তথা।
স্বয়ংদত্তশ্চ দাসশ্চ ষড়েতে পুত্রপাংসুলাঃ ।। ৩৬
অভাবে পূর্ব্ব পূর্ব্বেষাং পরান্ সমভিষেচয়েৎ।
পৌনর্ভবং স্বয়ংদত্তং দাসং রাজ্যে ন যোজয়েৎ।। ৩৭
অর্থাৎ, কানীন, সহোড়, ক্রীত, পৌনর্ভব, স্বয়ংদত্ত, পোষ্য এই ছয় পুত্র নিন্দিত । ঔরস প্রভৃতি পূর্বে নিরূপিত পুত্রের অভাবে কানীন প্রভৃতি পঞ্চাদুক্ত পুত্রকে অভিষিক্ত করবে। পৌনর্ভব, স্বয়ংদত্ত এবং দাসপুত্রকে রাজ্যে অভিষিক্ত করবে না। ৩৭
এই অংশটি পড়ার পর মহাভারতের বিদূরের কথা মনে পড়ে। মহাভারতে বিদুরকেও ধৃতরাষ্ট্র-পাণ্ডুর মত বিচিত্রবীর্যের ক্ষেত্রজ পুত্র বলা হয়েছে। মহাভারতের কাহিনী অনুসারে বিদূর স্বয়ং ধর্মের অবতার কিন্তু বিদূর দাসীপুত্র! তাই বিদূরকে আর রাজা করা হয়নি, অত্যন্ত যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে রাজ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়।
৮৮ তম অধ্যায়ের ৪৪ ও ৪৫ নং শ্লোকে দাসীপুত্র সম্বন্ধে আরও বলা হয়েছে-
তস্যাং যো জায়তে পুত্র দাসঃ পুত্রস্তু স স্মৃতঃ।।৪৪
ন রাজ্ঞো রাজ্যভাক্ স স্যাদ্বিপ্রাণাং নাপি শ্রাদ্ধকৃৎ।
অধমঃ সর্ব্বপুত্রেভাস্তং তস্মাৎ পরিবর্জ্জয়েৎ ।। ৪৫
অর্থাৎ,
মূল্য দ্বারা যে পত্নীরূপে পরিগণিত হয়, তাকে দাসী বলা যায়। ৪৪
তার গর্ভে যে পুত্র জন্মে সে দাসীপুত্র সে রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হবে না এবং শ্রাদ্ধ প্রভৃতি বেদবিহিত কার্যে তার ক্ষমতা থাকবে না। সকল পুত্রের মধ্যে সেই অধম, তাকে কোন কার্যে গ্রহণ করবে না। ৪৫
শূদ্র বিরোধী বক্তব্য
এবার শূদ্রের কথায় আসা যাক। শূদ্রের প্রতি দমনমূলক বিধিবিধান না তৈরি করলে অধিকাংশ শাস্ত্রকারদের হয়তো মনে হতনা যে তাদের শাস্ত্র পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। তাই তারা তাদের শাস্ত্রসমূহের স্থানে স্থানে শূদ্রের নিন্দা এবং শূদ্রের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন-কানুন বানাতে কোনো কসুর করেনি। কালিকা পুরাণেও শূদ্রের প্রতি অবমাননাকর অনেক কথাই পাওয়া যায়। কালিকা পুরাণের ৮৮তম অধ্যায়ে শূদ্রদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে-
পুরাণং ধর্ম্মশাস্ত্রাণি সংহিতাশ্চ মুনীরিতাঃ।
নাধ্যাপয়েন্নৃপঃ শূদ্রৈর্বিহিতানি যদৃচ্ছয়া। ৪৬
যস্য রাজ্যে সদা শূদ্রাঃ পুরাণং সংহিতাং তথা।
পঠন্তি স্যাৎ স হীনায়ুঃ রাজা রাষ্ট্রেণ সান্বয়ঃ।। ৪৭
মোহদ্বা কামতঃ শূদ্রঃ পুরাণং সংহিতাং স্মৃতিম্।
পঠন্নরকমাপ্নোতি পিতৃভিঃ সহ পাপকৃৎ।। ৪৮
শূদ্রভ্যো বিহিতং যত্ত যশ্চ মন্ত্র উদাহৃতঃ।
তদ্বিপ্রবচনাদ্গ্রাহ্যং দ্বয়ং শূদ্রৈঃ সদৈব হি।। ৪৯
ন যোজয়েন্নৃপঃ শূদ্রং ব্যবহারস্য দর্শনে।। ৫০
নিযোজ্য তত্র তং ভূপস্তামিস্রে তেন পচ্যতে।
হীনায়ুশ্চ ভবেল্লোকো রাজা বাপি সহায়জঃ।। ৫১
অর্থাৎ,
রাজা বিধিপথ উল্লঙ্ঘন করে শূদ্রকে পুরাণ ধর্ম শাস্ত্র এবং মুনিদের নির্দিষ্ট ষটসংহিতা অধ্যয়ণ করতে বারণ করবেন। (৪৬)
যে রাজার সাম্রাজ্যে শূদ্রজাতি নিরন্তর পুরাণসংহিতা পাঠ করে, সেই পাপে রাজা, বংশ এবং রাজ্যমণ্ডলের সহিত হতায়ু হন। (৪৭)
শূদ্রজাতি অজ্ঞানবশত অথবা ইচ্ছা পূর্বক যদি পুরাণ সংহিতা অথবা স্মৃতি অধ্যয়ণ করে তাহলে পরলোকগামী পিতৃদের সাথে কুম্ভিপাক নরকে অবস্থিতি করে। (৪৮)
শূদ্রদের উচ্চারণীয় যেসকল মন্ত্র বিহিত হয়েছে , সেই মন্ত্র শূদ্র নিজে উচ্চারণ না করে ব্রাহ্মণের মুখে শুনে এরপর উচ্চারণ করবে। (৪৯)
রাজা শূদ্রকে ব্যবহার দর্শনে (ধর্মাধর্ম বিচারে) নিযুক্ত করলে সেই পাপে তামিশ্র নরকে নিপতিত হন এবং প্রজারা সেই পাপে হতায়ু হন এবং রাজার বংশীয় সকলেই অল্পায়ু হন। (৫০-৫১)
নারীস্বাধীনতা হরণ
পুরাণটির নাম কালিকা পুরাণ। কালিকা, দুর্গা , চণ্ডী ইত্যাদি মাতৃকা দেবীদের প্রশংসায় মুখরিত এই পুরাণের রচয়িতা কিন্তু এরপরেও এই পুরাণের রচয়িতা এই পুরাণে নারীবিদ্বেষী কথা ঢোকাতে একদমই সঙ্কোচ বোধ করেননি। হিন্দু ধর্মে যে দেবীরা পূজিতা হয়, এটা অনেক হিন্দুর কাছেই গর্বের বিষয়। তাহলে প্রশ্ন জাগে এক দেবীর সম্বন্ধে লিখিত পুরাণেই এতসব নারীবিদ্বেষী কথা থাকার কারণ কি? কারণ একটাই, যে সমাজ ভয়াবহভাবে পুরুষতান্ত্রিক, তাতে নারী দলিত হবে, এটাই তো স্বাভাবিক! শাস্ত্রকারা অবশ্যই তাদের তৎকালীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তাই দেবী বন্দনার পাশাপাশি পুরাণকার হিন্দু সমাজে নারীদের প্রকৃত অবস্থানও দেখিয়ে দিয়েছেন । কালিকা পুরাণের ৮৪ তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে-
অস্বতন্ত্রাঃ স্ত্রীয়ঃ কার্য্যাঃ সততং পার্থিবেন তু।
তাঃ স্বতন্ত্রাঃ স্ত্রিয়ো নিত্যং হানয়ে সম্ভবস্তি হি।। ১২৯
তস্মাৎ কুমারং মহিষীমুপধাভির্মনোহরৈঃ।
শোধয়িত্বা নিমুঞ্জিত যৌবরাজ্যোবরোধয়োঃ।। ১৩০
অন্তঃপুরপ্রবেশে তু স্বতন্ত্রত্বং নিষেধয়েৎ।
ভূপুত্রস্য ভার্য্যায়া বহিঃসারে তথৈব চ।। ১৩১
অর্থাৎ,
স্ত্রীরা যদি স্বতন্ত্র হয়ে কাজ করে, তাহলে ভীষণ অনিষ্টের সম্ভাবনা হয়। অতএব রাজা, সুন্দর ধর্ম এবং অর্থ-কাম প্রভৃতি দ্বারা পুত্র এবং পত্নীকে সংশোধিত করে যৌবরাজ্যে এবং অন্তঃপুরে নিয়োগ করবেন। ১২৯-১৩০
ভূপতি, পুত্র এবং পত্নীকে বহিঃপ্রদেশে এবং অন্তঃপুরে স্বতন্ত্র হয়ে কোনো কাজ করতে দেবেন না। ১৩১
আজকের মতন পুরানকথন এখানেই সমাপ্ত হল। আর শীঘ্রই অষ্টাদশ পুরাণের প্রত্যেকটির ইতিবৃত্ত নিয়ে উপস্থিত হবো। এই যে পুরাণের রহস্য শ্রবণ করলেন এবং করবেন, এতে অশ্বমেধের ফলও পাবেন না, গঙ্গাস্নানের পূণ্যও অর্জন হবে না, এতে কেবল কাণ্ডজ্ঞান খুলে যেতে পারে। এই কাণ্ডজ্ঞান থাকাটা কিন্তু ভীষণ জরুরী, এটা সবার থাকে না।
সহায়ক গ্রন্থঃ
কালিকাপুরাণম;
আচার্য পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত কালিকা পুরাণ অবলম্বনে;
প্রকাশকঃ রণজিৎ সাহা;
নবভারত পাবলিশার্স
অজিতদা, আপনার জ্ঞানের কাছে আমি ধারে কাছেও নাই। তাও বলি, পুরান ছোটবেলা যতগুলো শুনছিলাম বর্তমানে পুরানের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই আছে। এগুলো পুরান লেখা হয়েছে অনেক পরে। যে যার মতো যা ইচ্ছা সেভাবেই লিখছে। এক রাইটারের সাথে আরেক রাইটারের মিল নাই।তাছাড়া শ্রীকৃষ্ণের সময় যে লিখছিল তা এত বছর পরে এসে বিকৃত হয়ে গেছে।ধর্ম টা যেহেতু হিন্দুধর্ম, তাই এগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। হিন্দুদের ৮০% সেকুলার। তবে মহাভারত এবং গীতা থেকে যদি কিছু দেখাতে পারেন তবে বিশ্বাস করব।
মহাপুরাণ ১৮ টা, উপপুরাণ অনেকগুলো। তবে আপনি ছোটো থেকে বড় হতে হতে নতুন পুরাণ আর তৈরি হয়নি।
যাইহোক, মহাভারতেও অনেক সমস্যা আছে। মহাভারত নিয়ে আমি কয়েকটি লেখা লিখেছি ইতিমধ্যে । ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু লেখার আছে। নিচে লেখাগুলোর লিংক রইলোঃ
মহাভারতে জাতিভেদঃব্রাহ্মণ
https://www.shongshoy.com/archives/13536?swcfpc=1
ধার্মিক পাণ্ডবরা যখন ঠান্ডা মাথার খুনি
https://www.shongshoy.com/archives/18169?swcfpc=1
মহাভারতের একলব্য, যার প্রতিভাকে খুন করেছিল বর্ণবাদীরা
https://www.shongshoy.com/archives/21077?swcfpc=1
পুরান এর তথ্য ছাড়া আর কোন ভালো বই এর রেফারেন্স দিন