নবীর স্ত্রীদের তালাকের হুমকির নেপথ্যে
সূচিপত্র
- 1 ভূমিকা
- 2 মূল ঘটনা
- 3 সূরা তাহরীম এর অনুবাদ
- 4 নবীর যৌনদাসী মারিয়া কিবতিয়া
- 5 রূপবতী যৌনদাসীর কামনায় নবী
- 6 হাফসার বিছানায় মারিয়া
- 7 মধুপানের ঘটনা
- 8 মধুর ঘটনার মধ্যে সমস্যাবলী
- 9 পালার দিন নিয়ে ঝগড়া
- 10 নবী স্ত্রীদের বিদ্রোহ
- 11 তালাকের হুমকি
- 12 তালাক কি হয়েছিল?
- 13 নবীর একমাস বাহিরে অবস্থান
- 14 উম্মাহাতুল মুমিনীন নামক অভিশাপ
- 15 কয়েকজন তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর পুনর্বিবাহ
- 16 খোরপোষ দেয়া হবে না
- 17 নবীর স্ত্রীদের মারধোর
- 18 নবীর স্ত্রীদের নতি স্বীকার
- 19 বিদ্রোহী স্ত্রীদের খুশি করা আয়াত
- 20 নবীর লাম্পট্যের আরো কথা
- 21 উপসংহার
- 22 তথ্যসূত্র
ভূমিকা
বিবাহিত জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে নানা ধরণের ঝগড়া, সাংসারিক সমস্যা ইত্যাদি থাকা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। একসাথে দুইজন মানুষ বসবাস করলে নানা সমস্যার উদ্ভব ঘটবেই। তার ওপর যদি কোন লোকের একাধিক স্ত্রী থাকে, সেই সংসার কীরকম সমস্যাপূর্ণ হবে তা বোঝাই যায়। এর মধ্যে সেই স্বামী পুরুষের যদি প্রচণ্ড আলুর দোষ থাকে, সে যদি একাধিক স্ত্রী থাকার পরেও বাসার দাসীবাঁদীদের দিকেও কুনজর দিতে থাকে, একইসাথে একের পর এক বিবাহ করার বাতিক থাকে, স্ত্রীগণ তাতে বিরক্ত হবেন এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে স্বামী লোকটি যদি স্ত্রীদের রীতিমত জিম্মি করে, তাদের হুমকি ধামকি দিয়ে নিজের লাম্পট্য চালু রাখে, এরকম একটি সংসারে সেই স্ত্রীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, এটি যেকোন মানুষই বুঝতে পারেন। আজকে আমরা নবী মুহাম্মদের জীবন থেকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো সেই ঘটনাটি, যেই ঘটনাটির কারণে নবী তার সকল স্ত্রীকে একসাথে তালাক দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, নতুন অনেকগুলো বিবি আনার হুমকি দিয়েছিলেন এবং এই হুমকি দেয়ার মাধ্যমে তার লাম্পট্যে যেন আর কেউ ভবিষ্যতে বাধা দিতে না পারে, সেই শিক্ষাটি স্ত্রীদের দিয়েছিলেন, সেই ঘটনাটি আলোচনা করবো। আসুন ধীরে ধীরে পুরো ঘটনাটি দলিল প্রমাণ সহ যাচাই করে দেখি। পাঠকের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, নবীর জীবনের এইসব ঘটনা ইসলামিক আলেমগণ অনেক কৌশলে লুকাবার চেষ্টা করলেও, ফাঁক ফোকর দিয়ে আসলে সত্য কাহিনী বের হয়ে যায়। সেই ফাঁকফোকর গুলো আমরা যৌক্তিকভাবে যাচাই করবো।
মূল ঘটনা
নবী মুহাম্মদের স্ত্রীদের জন্য জীবনের সবচাইতে কঠিন সময় ছিল, যখন নবী মুহাম্মদ যৌনদাসী মারিয়া কিবতিয়ার সাথে হাফসার ঘরে যৌনকর্ম করার সময় হাফসার কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে, এর পরবর্তী সময়টুকু। সেই সময়ে লজ্জায় মুহাম্মদ প্রতিজ্ঞা করে বসে যে, সে আর মারিয়া কিবতিয়ার সাথে যৌনকর্ম করবে না। হাফসাকে এই লোভও দেখানো হয় যে, এই কথা আয়িশাকে না বললে হাফসার পিতা উমর আবু বকরের পরে ইসলামই রাষ্ট্রের খলিফা হবে। নবী মুহাম্মদ হাফসাকে এই ঘটনাটি গোপন করতে বলেন, সে যেন অন্য স্ত্রী বিশেষ করে আয়িশাকে এই ঘটনাটি না বলে দেয়। কারণ আমরা সকলেই কমবেশি জানি যে, আয়িশা খুব স্পষ্টভাষী মেয়ে ছিলেন, নবী মুখের ওপর মাঝে মাঝেই কথা বলতেন। তাই বিশেষভাবে আয়িশাকে যেন এই ঘটনা না বলা হয়, সেইদিকে নবী মুহাম্মদ বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন।
কিন্তু নবীর মনে তখন মারিয়ার প্রতি কামনার জোয়ার। মারিয়ার সাথে যৌনকর্ম না করে তিনি থাকতে পারছিলেন না। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে, মারিয়া কিবতিয়া ছিলেন অত্যন্ত সুন্দরী এবং নবী তার সাথে সঙ্গমের জন্য খুবই উদ্গ্রীব থাকতেন। তাই মারিয়ার সাথে যৌনকর্ম করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করার পরেও নবীর মনে তখন মারিয়ার সাথে সঙ্গমের ইচ্ছে জাগ্রত হয়। ঐদিকে নবী মুহাম্মদের স্ত্রীগণ খুবই খুশি ছিলেন এই ভেবে যে, নবী আর মারিয়ার সাথে যৌনকর্ম করছেন না। কিন্তু নবী নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি, আবারও মারিয়ার সাথে সেই কর্ম করে বসেন। প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে মারিয়ার সাথে আবারও যৌনকর্ম করায় মুহাম্মদের স্ত্রীদের একাংশ নবীর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে, এর ফলাফল হিসেবে নবী মুহাম্মদের কাছে সূরা তাহরীমের আয়াতগুলো নাজিল হয়। নবী একসাথে তার সকল বিদ্রোহী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার হুমকি দেন। আসলে আল্লাহই এই হুমকি দেন সূরা নাজিল করে। নবী যে মারিয়া কিবতিয়ার সাথে যৌনকর্ম করতে পারছেন না, এতে আল্লাহ মহা নাখোশ হয়েছিলেন তা বলাই বাহুল্য।
যাইহোক। এরপরে নবী মারিয়া কিবতিয়ার বাসায় চলে যান এবং সেখানে তিনি দীর্ঘ একমাস অবস্থান করেন। অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে নবী এই সময়ে তার সকল স্ত্রীদের একত্রে তালাক দেয়ার হুমকিতে অটল থাকেন। আল্লাহ বরাবরের মতই ছিলেন নবীর দলে, তিনি আয়াত নাজিল করে নবীকে দাসী সেক্স করতে উৎসাহ দিতে থাকেন। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব কেন হয়েছিল, পরিস্থিতি কতটা মারাত্মক পর্যায়ে গিয়েছিল, সেগুলো নিয়েই আমাদের এই লেখাটি। আশাকরি পাঠক মন দিয়ে দলিল প্রমাণগুলো পড়বেন এবং যাচাই করে দেখবেন। এরপরে সিদ্ধান্ত নেবেন যে, এই বিষয়গুলো কতখানি নবীসূলভ আর কতখানি একজন লম্পট লোকের ঘরোয়া ঝগড়াঝাটি। সাত আসমানের ওপর বসে থাকা আল্লাহ পাক যিনি মহাবিশ্বের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, যিনি মহাবিশ্ব পরিচালনা করেন, তিনি নবীর ঘরোয়া ঝগড়ায় নবীর পক্ষ হয়ে দাসীর সাথে যৌনকর্মের জন্য উকালতি করছেন, সেটি মুখ বুজে মেনে না নিলে সব বিবিদের তালাকের হুমকিধামকি দিচ্ছেন এবং নবীকে দাসী সেক্স করতে উৎসাহ দিচ্ছেন, এগুলো নিয়ে হাসির নাটক সিনেমা হিসেবে তৈরি করা হলেও মানা যেতো। কিন্তু বিষয়গুলো ধর্মীয় বিশ্বাস এবং লক্ষ কোটি মানুষ এগুলো অন্ধভাবে বিশ্বাস করে, এটাই এক উদ্ভট বিষয়।
সূরা তাহরীম এর অনুবাদ
সূরা তাহরীমের অনুবাদ পড়ার পূর্বে কোরআনের একটি আয়াত পরে নেয়া যাক। আসুন দেখি, আল্লাহ পাক নবী মুহাম্মদের “অসুবিধা” দূর করতে কতটাই না সচেষ্ট। কোরআনে বলা হয়েছে [1] –
হে নবী (সা.)! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের মোহরানা তুমি প্রদান করেছ; আর বৈধ করেছি আল্লাহ ফায় (বিনা যুদ্ধে লব্ধ) হিসেবে তোমাকে যা দান করেছেন তার মধ্য হতে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে, আর তোমার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, তোমার মামার কন্যা ও তোমার খালার কন্যাকে যারা তোমার সঙ্গে হিজরাত করেছে। আর কোন মু’মিন নারী যদি নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করে আর নবী যদি তাকে বিয়ে করতে চায় সেও বৈধ, এটা মু’মিনদের বাদ দিয়ে বিশেষভাবে তোমার জন্য যাতে তোমার কোন অসুবিধে না হয়। মু’মিনগণের জন্য তাদের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার তা জানা আছে। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Taisirul Quran
হে নাবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের মোহর তুমি প্রদান করেছ এবং বৈধ করেছি ‘ফায়’ হিসাবে আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তন্মধ্য হতে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে এবং বিয়ের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, মামার কন্যা ও খালার কন্যাকে, যারা তোমার সাথে দেশ ত্যাগ করেছে এবং কোন মু’মিনা নারী নাবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে, এবং নাবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও বৈধ। এটা বিশেষ করে তোমারই জন্য, অন্য মু’মিনদের জন্য নয়; যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। মু’মিনদের স্ত্রী এবং তাদের মালিকানাধীন দাসীদের সম্বন্ধে যা আমি নির্ধারিত করেছি তা আমি জানি। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Sheikh Mujibur Rahman
হে নবী, আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা দিয়েছ, আর আল্লাহ তোমাকে ফায়* হিসেবে যা দিয়েছেন তন্মধ্যে যারা তোমার মালিকানাধীন তাদেরকেও তোমার জন্য হালাল করেছি এবং (বিয়ের জন্য বৈধ করেছি) তোমার চাচার কন্যা, ফুফুর কন্যা, মামার কন্যা, খালার কন্যাকে, যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে, আর কোন মুমিন নারী যদি নবীর জন্য নিজকে হেবা** করে, নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও তার জন্য বৈধ। এটা বিশেষভাবে তোমার জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়; আমি তাদের ওপর তাদের স্ত্রীদের ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তাদের ব্যাপারে যা ধার্য করেছি তা আমি নিশ্চয় জানি; যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। * ‘ফায়’ হচ্ছে বিনা যুদ্ধে লব্ধ কাফিরদের সম্পদ।
— Rawai Al-bayan
হে নবী! আমরা আপনার জন্য বৈধ করেছি আপনার স্ত্রীগণকে, যাদের মাহর আপনি দিয়েছেন এবং বৈধ করেছি ফায় হিসেবে আল্লাহ আপনাকে যা দান করেছেন তাদের মধ্য থেকে যারা আপনার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে। আর বিয়ের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, মামার কন্যা ও খালার কন্যাকে, যারা আপনার সঙ্গে হিজরত করেছে এবং এমন মুমিন নারীকে (বৈধ করেছি) যে নবীর জন্যে নিজেকে সমৰ্পণ করে, যদি নবী তাকে বিয়ে করতে চায়— এটা বিশেষ করে আপনার জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়; যাতে আপনার কোনো অসুবিধা না হয়। আমরা অবশ্যই জানি মুমিনদের স্ত্রী এবং তাদের মালিকানাধীন দাসীগণ সম্বন্ধে তাদের উপর যা নির্ধারিত করেছি [১]। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
উপরের আয়াতে আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে অংশটি লক্ষ্য করুন। প্রশ্ন হচ্ছে, নবী মুহাম্মদের কী এমন অসুবিধা হচ্ছিল, যার কারণে আল্লাহ তার জন্য এত এত নারী হালাল করলেন? কী অসুবিধা থাকলে এত নারী কারো জন্য হালাল হয়? এটি বুদ্ধিমান পাঠকের বুদ্ধিমত্তার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। এবারে আসুন পড়ে নিই সূরা তাহরীমের কয়েকটি আয়াত। যেই আয়াতগুলোর অনেকগুলো অনুবাদের মধ্যে এখানে Bengali Mokhtasar অনুবাদটি নেয়া হয়েছে। পাঠকগণ অন্য অনুবাদও পড়ে দেখতে পারেন, অন্য অনুবাদে মারিয়ার নাম উল্লেখ না করে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে প্রায় সকল ধ্রুপদী তাফসীর গ্রন্থেই এই বিবরণটি বর্ণনা করা হয়েছে [2]।
১. হে রাসূল! আপনি কেন নিজের জন্য আল্লাহ কর্তৃক হালালকৃত বস্তু তথা মারিয়াকে দাসী হিসাবে ব্যবহার করা হারাম করে নিয়েছেন? এতে করে আপনি নিজের স্ত্রীদের সন্তুষ্টি কামনা করছেন। যখন তারা এর ব্যাপারে ঈর্ষান্বিতা হলো। বস্তুতঃ আল্লাহ আপনার প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়াশীল।
২. আল্লাহ কাফফারা প্রদান সাপেক্ষে আপনাদের জন্য শপথ ভঙ্গ করা বৈধ করেছেন। যদি আপনারা তদপেক্ষা ভালো কিছু পেয়ে যান কিংবা তা ভঙ্গ করে থাকেন। বস্তুতঃ আল্লাহ আপনাদের সাহায্যকারী। তিনি আপনাদের অবস্থা ও আপনাদের জন্য যা কিছু প্রযোজ্য সে সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তিনি তাঁর বিধান রচনা ও ফায়সালায় প্রজ্ঞাবান।
৩. আপনি তখনকার কথা স্মরণ করুন যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুধু হাফসাকে তাঁর স্ত্রী মারিয়ার নিকটবর্তী না হওয়ার সংবাদ দিলেন। এ দিকে হাফসা যখন সে ব্যাপারে আয়শাকে সংবাদ দিলো এবং আল্লাহ তদীয় নবীকে তাঁর গোপন সংবাদ ফাঁস হওয়ার কথা জ্ঞাত করলেন তখন তিনি হাফসাকে দোষারোপ করলেন। তিনি তার নিকট ওর দ্বারা প্রকাশিত কিছু কথা উল্লেখ করলেন আর কিছু কথা থেকে চুপ থাকলেন। তখন সে জিজ্ঞাসা করলো, আপনাকে এ ব্যাপারে কে সংবাদ দিয়েছে? তিনি বললেন, আমাকে সর্বজ্ঞ ও সর্ব প্রকার গোপন সংবাদ সম্পর্কে সবজান্তাই সংবাদ দিয়েছেন।
৪. তোমাদের উভয়ের দায়িত্ব হলো, তোমরা তাওবা করবে। কেননা, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা অপছন্দ করতেন তথা তাঁর দাসী থেকে দূরে থাকা ও তাকে তাঁর উপর হারাম করে নেয়া এ ব্যাপারে তোমরা অনুরাগী হয়ে উঠেছো। যদি তোমরা তাঁকে এ ব্যাপারে ক্ষেপিয়ে তোলার কাজে অটল থাকো তাহলে জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বন্ধু ও সাহায্যকারী। তেমনিভাবে জিবরীল এবং মুমিনদের মধ্যকার ভালো ব্যক্তিরাও তাঁর বন্ধু ও সাহায্যকারী। এ দিকে আল্লাহর সাহায্যের পর ফিরিশতারাও তাঁকে কষ্ট দেয়া লোকদের বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্যকারী ও সহযোগী।
৫. আশা করা যায়, আল্লাহর নবী যদি তাঁর স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দেন তাহলে তিনি তাঁর জন্য তাদের পরিবর্তে তাদের অপেক্ষা আরো উত্তম স্ত্রীদের ব্যবস্থা করবেন। যারা তাঁর কথার আনুগত্যকারিণী, আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের উপর বিশ্বাসীনী, আল্লাহর আনুগত্যশীলা, নিজেদের পাপসমূহ থেকে তাওবাকারিণী, রবের ইবাদাতকারিণী, রোযাব্রত পালনকারিণী বিধবা ও এমন কুমারী হবে যাদের সাথে অন্য কেউ এখনো মিলন করে নি। বস্তুতঃ তিনি তাদেরকে তালাক দেন নি।
— Bengali Mokhtasar
সূরা তাহরীম, আয়াত ১-৫
নবীর যৌনদাসী মারিয়া কিবতিয়া
বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অধিনস্ত মিশরীয় সম্রাট মুকাউকিস হিজরি ৬ অথবা ৭ সালে অর্থাৎ ৬২৮ বা ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে, মারিয়া আল-কিবতিয়া নামক একজন মিশরীয় কপ্টিক খ্রিস্টান দাসীকে মুহাম্মাদের নিকট উপহার হিসাবে প্রদান করেন। মুহাম্মাদ তাকে দাসী হিসেবে গ্রহণ করেন তবে তিনি সাধারণ ক্রীতদাসী ছিলেন না। তিনি ছিলেন যৌনদাসী। অর্থাৎ মারিয়া কিবতিয়াকে গৃহকর্ম কিংবা অন্য কোন কাজ করতো হতো না, তার একমাত্র কাজই ছিল মালিককে যৌনসুখ দেয়া। তার আসল নাম মারিয়া বিনত সাম’উন, তবে তিনি মারিয়া আল-কিবতিয়া নামেই অধিক পরিচিত। মারিয়া ছিলেন মিশরীয় সম্রাট মুকাউকিসের হাতে ধরা পড়া একজন যুদ্ধবন্দী [3]। তিনি ইব্রাহিম ইবনে মুহাম্মাদ নামে মুহাম্মাদের একটি সন্তানের জন্ম দেন, যে কিনা ১৬ অথবা ১৮ মাস বয়সে শিশুকালেই মারা যায়। সুনানু নাসাই শরীফের একটি তাহকীককৃত সহিহ হাদিসে তার সাথে নবীর যৌন সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে [4] [5] –
সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার
৩৯৬১. ইবরাহীম ইবন ইউনুস ইবন মুহাম্মাদ হারামী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি বাঁদি ছিল যার সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহবাস করতেন। এতে আয়েশা (রাঃ) এবং হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে লেগে থাকলেন। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বদিটিকে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ পাক নাযিল করেনঃ (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ) “হে নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন তা আপনি নিজের জন্য কেন হারাম করে নিয়েছেন (সূরা তাহরীমঃ ১) ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তাহক্বীকঃ সহীহ।
সহিহ মুসলিম শরীফ থেকে আরেকটি হাদিস পড়ে নিই, এখানেও নবী মুহাম্মদের উম্মে ওয়ালাদ অর্থাৎ যেই দাসীর গর্ভে সন্তানের জন্ম হয়েছে তার কথা বলা হচ্ছে [6] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫১/ তাওবা
পরিচ্ছেদঃ ১১. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর হেরেম সন্দেহমুক্ত হওয়া
৬৭৬৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মে ওয়ালাদের সাথে এক ব্যক্তির প্রতি অভিযোগ (অপবাদ) উত্থাপিত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে বললেন, যাও। তার গর্দান উড়িয়ে দাও। আলী (রাঃ) তার নিকট গিয়ে দেখলেন, সে কুপের মধ্যে শরীর শীতল করছে। আলী (রাঃ) তাকে বললেন, বেরিয়ে আস। সে আলী (রাঃ)এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। তিনি তাকে বের করলেন এবং দেখলেন, তার পূরুষাঙ্গ কর্তিত, তার লিঙ্গ নেই। তখন আলী (রাঃ) তাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকলেন। তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে তো লিঙ্গ কর্তিত তার তো লিঙ্গ নেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
রূপবতী যৌনদাসীর কামনায় নবী
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ মারিয়ার রূপে মুগ্ধ ছিলেন এবং তার জন্য মদীনার “উঁচু স্থানে গাছগাছালিপূর্ণ স্থানে” এক উন্নতমানের খেজুর বাগানে বাগানবাড়ি করে দিয়েছিলেন। পাঠকদের অনুরোধ করবো, উঁচু স্থানে এবং খেজুর বাগানে শব্দগুলো মনে রাখতে [7] –
নবী করীম (সা)-এর বাঁদী ছিলেন দুজন৷ তাদের একজন মারিয়া বিনত শামউন কিবতী (মিশরী)৷ আলেকজান্দ্রিয়ার শাসনকর্তা জুবায়জ ইবন মীনা নবী করীম (সা)-এর সকাশে তাঁকে উপহার হিসাবে পাঠিয়েছিলেন ৷ উপহার সামগ্রীর মধ্যে তার সংগে আরো ছিলেন তাঁর বোন শীরীন ৷ আবূ নু’আয়ম (র) উল্লেখ করেন, উপহার প্রদত্ত চারটি বাঁদীর মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতমা৷ আল্লাহই সর্বাধিক অবগত৷ আর ছিল একটি খোজা গোলাম, যার নাম ছিল মাবূর এবং ‘দুলদুল’ নামের একটি খচ্চর৷ নবী করীম (সা) তার এ উপহার সামগ্রী গ্রহণ করেন এবং নিজের জন্য মারিয়াকে বেছে নেন …
… বর্ণনাকারী বলেন, মারিয়া ছিলেন সুন্দরী ও গৌরবর্ণ ৷ তার সৌন্দর্যে রাসুলুল্লাহ (সা) মুগ্ধ হন …
… ইয়াকুব ইবন মুহাম্মদ ইবন আবু সা’সাআ (র) আবদুল্লাহ ইবন আবদুর রহমান ইবন আবু সা’সাআ (র) থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) মারিয়া কিবতিয়াকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন ৷ তিনি ছিলেন সুন্দরী ও মনােহর কৌকড়ানো কেশধারিণী৷ নবী করীম (সা) মারিয়ার বোন সহ উম্মু সুলায়ম বিনত মিলহাম (রা) এর বাড়িতে তার অবস্থানের ব্যবস্থা করলেন৷ পরে রাসুলুল্লাহ (সা) তাদের কাছে গিয়ে (তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলে) তাঁরা সেখানেই ইসলাম গ্রহণ করলেন ৷ পরে তিনি মালিকানা সুত্রে মারিয়া (রা)-এর সঙ্গ ভোগ করলেন এবং তাকে মদীনায় উচু এলাকায় অবস্থিত বনূ নাযীরের নিকট হতে প্রাপ্ত বাগানসমুহের একটিতে স্থানান্তরিত করলেন। গ্রীষ্মকালে তিনি সেখানে উন্নতমানের খেজুর বাগানে বাস করতে থাকেন…
পাঠক লক্ষ্য করে পড়ুন, নবী মারিয়া কিবতিয়াকে প্রাথমিক অবস্থায় আনাস ইবনে মালিকের মা উম্মু সুলায়মের বাড়িতে রেখেছিলেন। একটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মাঝে মাঝেই বেগানা নারী উম্মু সুলায়েমের বাড়িতে যেতেন এবং বিশ্রাম নিতেন। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিশ্রাম নিতে গিয়ে নবী মুহাম্মদ উম্মে সুলায়মের বাসায় মাত্রাতিরিক্ত ঘামতেন। যেই ঘাম আবার উম্মে সুলায়ম সংগ্রহ করে রেখে দিতেন। অর্থাৎ সেখানে নবী বেশ ভাল পরিমাণেই ঘামতেন, নইলে ঘাম সংগ্রহ করা তো কঠিন কাজ। বিশ্রাম নেয়ার সময় কেন মানুষ এত বেশি ঘামবে, সেটি খুবই অবাক হওয়ার মত ব্যাপারই বটে। এত ঘেমে যাওয়ার কারণ কি এটিই যে, সেই বাড়িতে মারিয়া কিবতিয়া ছিলেন? নইলে নবী কী এমন পরিশ্রমের কাজ সেখানে করতেন যে, বিশ্রামের সময়ও এত ঘামা ঘামতেন যে, সেই ঘাম আবার একজন সংগ্রহ করে রাখতে পারে? [8]
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ – নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮৮-[১৩] উম্মু সুলায়ম (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) প্রায়শ দ্বিপ্রহরে তাদের সাথে সেখানে বিশ্রাম করতে আসতেন। তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তার জন্য একখানা চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিতেন এবং রাসূল (সা.) তাতেই বিশ্রাম করতেন। নবী (সা.) -এর শরীর থেকে অত্যধিক ঘর্ম বের হত। আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তাঁর ঘর্মগুলো একত্রিত করে আতর বা সুগন্ধির মধ্যে মিলিয়ে রাখতেন। তখন নবী (সা.) প্রশ্ন করলেন, হে উম্মু সুলায়ম! তুমি এটা কি করছ? তিনি বললেন, এটা আপনার শরীরের ঘাম। আমরা এটাকে আমাদের সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত করব। মূলত এটা সর্বোত্তম সুগন্ধি। অপর এক বর্ণনায় আছে- উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য (ব্যবহারের মাধ্যমে) বরকতের আশা করি। তখন রাসূল (সা.) বললেন, তুমি ঠিকই করেছ। (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহঃ বুখারী ৬২৮১, মুসলিম ৮৫-(২৩৩২), সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৩০৫, আল মু’জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ২০৮০৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ৪৩৬৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সুলায়ম (রাঃ)
হাফসার বিছানায় মারিয়া
উম্মু সুলায়মের বাড়িতে মারিয়াকে রাখবার সময় ঘটে যায় একটি কেলেঙ্কারী ঘটনা। একদিন উমরের কন্যা হাফসার সাথে নবীর থাকার কথা। এই সময়ে নবী হাফসাকে তার পিতার বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। হাফসাও খুশী মনে বাপের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এই সময়ে নবী মারিয়াকে হাফসার বাসায় নিয়ে এসে হাফসার বিছানায় রঙ্গলীলা চালানো শুরু করে দেন। ঐদিকে হাফসা কিছুটা পথ গিয়ে কী মনে করে আবার বাড়িতে ফেরত চলে আসে। এসে দেখে তার নিজের ঘরের দরজা বন্ধ, এবং ভেতরে নবী মারিয়া কিবতিয়ার সাথে লীলায় মত্ত। বাইরে থেকে নিশ্চয়ই হাফসা শব্দ শুনছিলেন। একজন স্ত্রী যখন শোনে, ঘরের ভেতর তার স্বামী দাসীর সাথে লীলাখেলায় মত্ত, স্ত্রীর ভয়ঙ্কর খারাপ লাগাই স্বাভাবিক। দরজার সামনেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন হাফসা। নবী ঘর থেকে বের হয়ে এইরকম পরিস্থিতিতে পরে বিব্রত হন, কাচুমাচু অবস্থায় মুহাম্মদ তখন ঘটনাটি আয়িশা জেনে ফেললে কীহবে এই ভয়ে প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি আর কোনদিন দাসীর সাথে সঙ্গম করবেন না। বিনিময়ে হাফসা যেন এই ঘটনা আয়িশাকে না বলে দেয়। কিন্তু খুশির চোটে হাফসা ঘটনাটি গোপন রাখতে পারেন না, তিনি আয়িশাকে বলে দেন। এরপরেই ঘটে যায় ভয়াবহ সেই ঘটনা। আসুন পুরো বর্ণনাটি তাফসীরে জালালাইন থেকে পড়ি। [9] –
বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ নিজের স্ত্রীদের সাথে থাকার পালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যখন হযরত হাফসার দিন আসল তিনি তাঁর মাতাপিতাকে দেখতে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ -এর কাছে অনুমতি চাইলেন। রাসূল তাঁকে অনুমতি দিলেন। হযরত হাফসা (রা.) চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ হযরত হাফসার ঘরে হযরত মারিয়াকে ডেকে পাঠালেন। অতঃপর সেখানে একাকিত্বে অবস্থান করলেন। ইতোমধ্যেই হযরত হাফসা চলে আসলে তাঁর ঘরে হযরত মারিয়াসহ রাসুল -কে দেখতে পেলেন। এটা দেখে হযরত হাফসা (রা.) অত্যন্ত রেগে গেলেন এবং বললেন, আপনি আমার ঘরে আমার অনুপস্থিতিতে একে নিয়ে আসলেন এবং একাকিত্বে কাটালেন, এটা আমাকে অপমানিত করার উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো কারণে নয়। তখন রাসূলুল্লাহ তাঁকে খুশি করার উদ্দেশ্যে বললেন, ঠিক আছে আমি আজ হতে তাকে নিজের জন্য হারাম করে নিলাম। এ সংবাদ তুমি অন্য কাউকেও দিও না। রাসূলুল্লাহ এ ঘর হতে বের হয়ে গেলে হযরত হাফসা সংবাদ হযরত আয়েশা (রা.)-কে জানিয়ে দেন এবং গোপন কথাও ফাঁস করে দেন। এটা শুনতে পেয়ে রাসূলুল্লাহ অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে শপথ করলেন যে, আগামী এক মাস তিনি তাঁর স্ত্রীগণের ঘরে প্রবেশ করবেন না। এরপর রাসুলুল্লাহ তাঁদের হতে আলাদা থাকলেন। তখন আল্লাহ তাআলা আয়াতটি নাজিল করলেন। -[ সাফওয়া, আসবাব, কুরতুবী, তাবারী, সাবী ]
এবারে আসুন এই বর্ণনাটি ইবনে কাসীরের তাফসীর গ্রন্থ থেকে পড়ি, [10]
কেউ কেউ বলেন যে, এটা হযরত মারিয়াহ্ (রাঃ)-এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তাঁকে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন। সুনানে নাসাঈতে এই রিওয়াইয়াতটি বিদ্যমান রয়েছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত হাফসা (রাঃ)-এর কথার পরিপ্রেক্ষিতে এটা ঘটেছিল যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর এক দাসী সম্পর্কে এ কথা বলেছিলেন। ফলে এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।
তাফসীরে ইবনে জারীরে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাঁর কোন এক স্ত্রীর ঘরে উম্মে ইবরাহীম (রাঃ)-এর সাথে কথাবার্তা বলেছিলেন। তখন তাঁর ঐ স্ত্রী তাঁকে বলেনঃ “তোমার ঘরে ও আমার বিছানায় এ কাজ কারবার?” তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ “আমি তাকে আমার উপর হারাম করে নিলাম।” তখন তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! হালাল কিভাবে আপনার উপর হারাম হয়ে যাবে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “আমি শপথ করছি যে, এখন হতে তার সাথে কোন প্রকারের কথাবার্তা বলবো না।” ঐ সময় এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। হযরত যায়েদ (রঃ) বলেনঃ এর দ্বারা জানা গেল যে, তুমি আমার উপর হারাম’ এ কথা কেউ বললে তা বাজে বলে প্রমাণিত হবে। হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছিলেনঃ “তুমি আমার উপর হারাম। আল্লাহর কসম! আমি তোমার সাহচর্যে থাকবো না।”
হযরত মাসরূক (রঃ) বলেন যে, হারাম করার ব্যাপারে তো রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং তাঁকে তাঁর কসমের কাফফারা আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়। তাফসীরে ইবনে জারীরে রয়েছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “এ দু’জন স্ত্রী কে ছিলেন?” উত্তরে হযরত উমার বলেনঃ “তারা হলেন হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত হাফসা (রাঃ)। উম্মে ইবরাহীম কিবতিয়্যাহ (রাঃ)-কে কেন্দ্র করেই ঘটনাটির সূত্রপাত হয়। হযরত হাফসা (রাঃ)-এর ঘরে তাঁর পালার দিনে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হযরত মারিয়াহ্ কিবতিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর সাথে মিলিত হন। এতে হযরত হাফসা (রাঃ) দুঃখিতা হন যে, তাঁর পালার দিনে তাঁরই ঘরে ও তাঁরই বিছানায় তিনি মারিয়াহ্ (রাঃ)-এর সাথে মিলিত হলেন! রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাফসা (রাঃ)-কে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে বলে ফেলেনঃ “আমি তাকে আমার উপর হারাম করে নিলাম। তুমি এই ঘটনা কারো কাছে বর্ণনা করো না।” এতদসত্ত্বেও হযরত হাফসা (রাঃ) ঘটনাটি হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর সামনে প্রকাশ করে দেন। আল্লাহ্ তা’আলা এই খবর স্বীয় নবী (সঃ)-কে জানিয়ে দেন এবং এই আয়াতগুলো নাযিল করেন। নবী (সঃ) কাফফারা আদায় করে স্বীয় কসম ভেঙ্গে দেন এবং ঐ দাসীর সঙ্গে মিলিত হন। এই ঘটনাটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই ফতওয়া দেন যে, কেউ যদি বলেঃ “আমি অমুক জিনিস আমার উপর হারাম করে নিলাম” তবে তার উচিত কসম ভেঙ্গে দিয়ে কাফফারা আদায় করা। একটি লোক তাঁকে এই মাসআলা জিজ্ঞেস করে যে, সে তার স্ত্রীকে নিজের উপর হারাম করে নিয়েছে।তখন তিনি তাকে বলেনঃ “তোমার স্ত্রী তোমার উপর হারাম নয় (তুমি কাফফারা আদায় করে কসম ভেঙ্গে দাও)।” সবচেয়ে কঠিন কাফফারা তো হলো আল্লাহ্ পথে গোলাম আযাদ করা। ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং বহু ফিকাহ্ শাস্ত্রবিদের ফতওয়া এই যে, যে ব্যক্তি তার স্ত্রী, দাসী অথবা খাওয়া পরার কোন জিনিসকে নিজের উপর হারাম করে নেয়, তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যায়। ইমাম শাফিয়ী (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, শুধু স্ত্রী বা দাসীকে নিজের উপর হারাম করে নিলে কাফফারা ওয়াজিব হয়, অন্য কোন জিনিস নিজের উপর হারাম করে নিলে কাফফারা ওয়াজিব হয় না। যদি হারাম করা দ্বারা তালাকের নিয়ত করে তবে অবশ্যই তালাক হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে দাসীকে হারাম করার কথা দ্বারা যদি আযাদ করে দেয়ার নিয়ত করে তবে ঐ দাসী অবশ্যই আযাদ হয়ে যাবে।
ইবনে কাসিরের তাফসীর গ্রন্থ থেকে আসুন আরো কিছু অংশ পড়ে নিই [11] –
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবি) আল্লাহ তা’আলার এই উক্তি সম্পর্কে তিনি বলেনঃ “ঘটনা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাফসা (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। যখন হাফসা (রাঃ) দেখেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত মারিয়াহ (রাঃ)-এর সাথে মশগুল রয়েছেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাফসা (রাঃ)-কে বলেনঃ “তুমি এ খবর হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে জানাবে না। আমি তোমাকে একটি সুসংবাদ দিচ্ছি। তা এই যে, আমার ইন্তেকালের পর আমার খিলাফত হযরত আবূ বকর (রাঃ)-এর পর তোমার আব্বা লাভ করবেন। কিন্তু হযরত হাফসা (রাঃ) এ খবর হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে জানিয়ে দেন। তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “এ খবর আপনার কাছে কে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমাকে অবহিত করেছেন তিনি যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবগত।” হযরত আয়েশা (রাঃ) তখন বলেনঃ “আমি আপনার দিকে তাকাবো যে পর্যন্ত না আপনি মারিয়াহ (রাঃ)-কে আপনার উপর হারাম করবেন।” তখন তিনি হযরত মারিয়াহ (রাঃ)-কে নিজের উপর হারাম করেন। ঐ সময় আল্লাহ তা’আলা .. (আরবি)-এই আয়াত অবতীর্ণ করেন।” (এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিবরানী (রঃ))(আরবি)-এর একটি তাফসীর তো এই যে, তারা হবে রোযা পালনকারিণী। একটি মারফূ’ হাদীসেও এই শব্দের এই তাফসীরই এসেছে যে হাদীসটি সূরায়ে বারাআতের এই শব্দের তাফসীরে গত হয়েছে যে, এই উম্মতের সিয়াহাত হলো রোযা রাখা। দ্বিতীয় তাফসীর এই যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হিজরতকারিণীগণ। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশী উত্তম। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
এবারে আসুন একটি নাটক দেখে নিই,
মধুপানের ঘটনা
সূরা তাহরীমের অয়াতগুলো নাজিলের প্রেক্ষাপট হিসেবে ইমাম বুখারী সহ আরো কিছু আলেমের আরো একটি বিবরণ পাওয়া যায়, আর সেটি হচ্ছে মধুপানের ঘটনা। বুখারী শরীফ থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদের মুখ থেকে বিশেষ ধরণের মধুর গন্ধ আসা নিয়ে আয়িশা ও হাফসার সাথে মুহাম্মদের এই ঝামেলার উৎপত্তি ঘটে, এবং এরপরে নবীর স্ত্রীদের সবাইকে তালাক দেয়ার মত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। এই বর্ণনাটি সহিহ মুসলিমেও পাওয়া যায়। আসুন এই বর্ণনাটিও জেনে নেয়া যাক। [12] [13] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৯০/ কূটচাল অবলম্বন
পরিচ্ছেদঃ ৯০/১২. কোন নারীর জন্য স্বামী ও সতীনের বিরুদ্ধে কূটকৌশল অবলম্বন করা অপছন্দনীয় এবং এ ক্ষেত্রে নাবী (সাঃ)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে।
৬৯৭২. ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্টান্ন দ্রব্য ও মধু পছন্দ করতেন। এবং যখন ’আসরের সালাত আদায় করে নিতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে ঘুরে বেড়াতেন এবং তাঁদের কাছে উপস্থিত হতেন। একবার তিনি হাফসাহ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলেন এবং সাধারণভাবে যত সময় তাঁর কাছে অবস্থান করতেন তার চেয়ে বেশি সময় তাঁর কাছে অবস্থান করলেন। তাই আমি এর কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তখন আমাকে বলা হল যে, তার স্বগোত্রীয় এক মহিলা এক কৌটা মধু হাদিয়া পাঠিয়েছে। এ থেকে তিনি আল্লাহর রাসূলকে কিছু পান করিয়েছেন। আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই একটা কূটকৌশল গ্রহণ করব। এরপর আমি এ ব্যাপারে সাওদা (রাঃ)-এর সঙ্গে আলোচনা করলাম। আমি বললাম, যখন তিনি তোমার ঘরে আসবেন, তখন তিনি অবশ্যই তোমার নিকটে যাবেন। এ সময় তুমি তাঁকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি মাগাফীর খেয়েছেন? তিনি অবশ্য না-ই বলবেন। তখন তুমি বলবে, তাহলে এ দুর্গন্ধ কিসের? আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে তাঁর থেকে দুর্গন্ধ পাওয়াটা খুবই গুরুতর মনে হত। তখন তিনি বলবেনঃ হাফসাহ আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। তখন তুমি তাঁকে বলবে, তাহলে ঐ মধুর পোকা ’উরফুত’ গাছের রস সংগ্রহ করেছে। আর আমিও একই কথা বলব। হে সফীয়্যাহ! তুমিও তাঁকে এ কথা বলবে। যখন তিনি সাওদা (রাঃ)-এর ঘরে এলেন, তখন সাওদা (রাঃ) বললেন, কসম ঐ সত্তার, যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই। যখনই তিনি দরজার কাছে এলেন তখনই আমি তোমার ভয়ে তোমার শিখানো কথাগুলো বলতে প্রস্তুত হলাম। এরপর তিনি যখন নিকটে এলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ’মাগফীর’ খেয়েছেন। তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে এ দুর্গন্ধ কিসের? তিনি বললেনঃ হাফসাহ আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। আমি বললাম, তাহলে এ মধুর পোকা ’উরফুত’ গাছের রস সংগ্রহ করেছে। ’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমার ঘরে এলেন, তখন আমিও তাঁকে তেমনি কথা বললাম। এরপর তিনি সফীয়্যাহ (রাঃ)-এর ঘরে গেলেন, সেও তাঁকে তেমনি কথা বলল। পুনরায় রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাফসাহ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলেন তখন তিনি তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে মধু পান করতে দিব কি? তিনি বললেনঃ এর কোন প্রয়োজন নেই। ’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, সাওদা (রাঃ) বললঃ সুবহানাল্লাহ্! আমরা তা হারাম করে দিলাম। ’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি সাওদা (রাঃ)-কে বললাম, চুপ কর। [৪৯১২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৯/ তালাক
পরিচ্ছেদঃ ৩. তালাকের নিয়্যত না করে স্ত্রীকে ‘হারাম’ সাব্যস্ত করলে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে
৩৫৪৭। আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনুল আ’লা ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) (আবূ উসামা সূত্রে) … হিশামের পিতা (উরওয়া) সুত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণানা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্ট দ্রব (হালুয়া) ও মধু পছন্দ করতেন। তার নিয়ম হচ্ছিল আসরের সালাত আদায়ের পরে স্ত্রীদের ঘরে ঘরে এক চক্কর ঘুরে আসতেন এবং তাদের সান্নিধ্য গমন করতেন। এভাবে তিনি হাফসা (রাঃ) এর কাছে গেলেন এবং তার কাছে স্বাভাবিকভাবে আবদ্ধ থাকার সময়ের চেয়ে অধিক সময় আবদ্ধ রইলেন। আমি (আয়িশা) এ বিষয় জিজ্ঞাসা করলে আমাকে বলা হল তাকে (হাফসাকে) তার গোত্রের কোন মহিলা এক পাত্র মধু হাদিয়া দিয়েছিল। তাই সে তা থেকে কিছু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পান করিয়ে ছিল।
(আয়িশা বলেন,) আমি বললাম, ওহে! আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তাঁর জন্য কৌশল অবলম্বন করব। আমি বিষয়টি সাওদা এর সঙ্গে আলোচনা করলাম এবং তাঁকে বললাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার কাছে আগমন করলে তিনি তো তোমার সন্নিকটে আসবেন, তখন তুমি তাঁকে বলবে, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি মাগাফীর খেয়েছেন। তখন তিনি তো তোমাকে বলবেন- না, তখন তুমি তাঁকে বলবে, (তবে) এ দুর্গন্ধ কিসের? আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে এটা ছিল তাঁর কাছে অতি অসহনীয় বিষয়। তখন তিনি তোমাকে বলবেন- হাফসা আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। তুমি তখন তাকে বলবে, ’ঐ মধুর মৌমাছি-উরফূত (গাছের কষ) চুষেছে।” আর আমিও তাঁকে এভাবেই বলব। আর তুমিও হে সাফিয়্যা! তাই বলবে।
পরে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওদা (রাঃ) এর কাছে গেলেন আয়িশা (রাঃ) বলেন, সাওদা (রাঃ) এর বর্ণনা- “কসম সে সত্তার যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই! তুমি আমাকে যা কিছু বলেছিলে তা তাঁর কাছে প্রকাশ করেই দিচ্ছিলাম প্রায়- তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন দরজায়- তোমার ভয় তা আর করা হল না। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকটবর্তীহলে সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি মাগাফীর খেয়েছেন কি? তিনি বললেন, না। সে (সাওদা) বলল, তবে এ ঘ্রাণ কিসের? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাফসা আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। সাওদা বলল, (তবে-তাই) তার মৌমাছি উরফূত চুষেছে।
পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আগমন করলে আমিও তাঁকে অনুরূপ বললাম। অতঃপর সাফইয়্যা (রাঃ) এর কাছে গেলে সেও অনুরূপ বলল। পরে (আবার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসা এর নিকট গেলে সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কি আপনাকে তা পান করতে দিব না? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তার প্রতি আমার কোন চাহিদা নেই।” আয়িশা বলেন, সাওদা (রাঃ) বলতে লাগল, আল্লাহর কসম! আমরা তো তাকে (একটি প্রিয় পানীয় হতে) বঞ্চিত করে দিয়েছি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, চুপ থাক।
(ইমাম মুসলিম এর শাগরিদ) আবু ইসহাক ইবরাহীম (গ্রন্থকার হতে এ গ্রন্থের রিওয়ায়াতকারী) বলেন, হাসান ইবনু বিশর (রহঃ) আবূ উসামা (রহঃ) সুত্রে আমাকে অবিকল এ হাদীস শুনিয়েছেন। সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) সুত্রে ঐ সনদে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উরওয়াহ (রহঃ)
মধুর ঘটনার মধ্যে সমস্যাবলী
মুহাম্মদের সবচেয়ে প্রথম জীবনী, ইবনে ইসহাক এর সিরাত গ্রন্থটি অনেকাংশে হারিয়ে গেলেও তার সংগ্রহকৃত তথ্যাবলি মূলতঃ দুই উৎসে টিকে আছে। ইবনে হিশাম এবং আল-তাবারি। ইবনে হিশাম মূলত ইবনে ইসহাক থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তার বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থটি রচনা করেন। ইবনে হিশাম তার সীরাত গ্রন্থটি রচনার সময় নিরপেক্ষভাবে তিনি গ্রন্থটি রচনা করেননি বলে স্বীকারও করেন। তিনি বলেন, কিছু ঘটনা “কিছু মানুষকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলতে পারে”, তাই কিছু ঘটনা তার সীরাত গ্রন্থে তিনি লিপিবদ্ধ করেননি, যা থেকে বোঝা যায়, সেই সময়ের শাসক এবং মুসলিমদের মধ্যে নবীর চরিত্রকে সর্বোত্তম বলে প্রমাণের জন্য এই লেখকদের ওপর এক ধরণের রাজনৈতিক চাপ ছিল [14] –
Things which it is disgraceful to discuss; matters which would distress certain people; and such reports as I have been told are not to be accepted as trustworthy all these things have I omitted.
যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা লজ্জাজনক; যে বিষয়গুলো কিছু লোককে কষ্ট দেয়; আমাকে বলা হয়েছে এই ধরনের বিবরণগুলো বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে গ্রহণ করা হবে না, সেই সমস্ত জিনিস আমি বাদ দিয়েছি।
পরবর্তী সময়ে লিখিত বুখারী শরীফে তাই ইমাম বুখারী মারিয়া কিবতিয়ার পুরো ঘটনাটি খুব কৌশলে তার গ্রন্থে বাদ দেন এবং এই পুরো বিষয়টিকে মধুপানের ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন। নাসাই শরীফের একটি সহিহ হাদিসের বর্ণনা না থাকলে আধুনিককালের অনেক মুসলিমই পুরো ঘটনাটিকে বেমালুল চেপেই যেতেন। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় নাসাই শরীফ সহ আরো কিছু সহিহ বর্ণনায় বিষয়টি চলে আসায়। একটু লক্ষ্য করে পড়লেই আসলে বোঝা যায়, মধুপানের ঘটনার জন্য সমস্ত স্ত্রীকে তালাক দেয়ার মত ঘটনা ঘটা একদমই অসম্ভব একটি কল্পনা, এবং মূল ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার একটি কৌশল। ইসলামের প্রসিদ্ধ আলেমগণ অবশ্য স্বীকার করেন, মধুপানের ঘটনাটি নবীর বিবিদের তালাক দেয়ার মত এত বড় ঘটনা হিসেবে মেনে নেয়া কঠিন। তাই বর্তমান সময়ের প্রায় বেশিরভাগ আলেমই মনে করেন, দুইটি ঘটনাই সূরা তাহরীমের নাজিলের কারণ। আসুন এই বিষয়ে তাফসীরে জালালাইনে বর্ণিত ইবনে কাসীরের একটি উক্তি পড়ে নিই, যেখানে ইবনে কাসীর বলছেন, মধুপানের ব্যাপারটিকে সূরা নাজিল হওয়ার কারণ হিসেবে গ্রহণ করা কঠিন [15] –
পালার দিন নিয়ে ঝগড়া
নবীর স্ত্রীদের মধ্যে পালার দিন নিয়ে ঝগড়া হতো বলে সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়। অর্থাৎ, নবী কোন দিন কার সাথে সহবাস করবেন, এই নিয়ে স্ত্রীদের মধ্যে রীতিমত চুলোচুলির মত অবস্থা হতো। নিচের হাদিসটি পড়ুন, হাদিসটি থেকে জানা যায়, দুই বিবির মধ্যে পালার দিন নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি কী মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল [16]
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৮/ দুধপান
পরিচ্ছেদঃ ৫. রাত যাপনে স্ত্রীদের মাঝে পালাবণ্টন এবং প্রত্যেকের কাছে একরাত পরের দিবাভাগ সহ অবস্থান করা সুন্নাত
৩৪৯৭। আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (শেষ পর্যায়ে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নয়জন সহধর্মিনী ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে পালাবণ্টন কালে নয় দিনের আগে (পালার) প্রথমা স্ত্রীর কাছে পুনরায় পৌঁছতেন না। প্রতি রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ঘরে অবস্থান করতেন সেখানে তারা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নীগণ) সমবেত হতেন। একরাতে তিনি যখন আয়িশা (রাঃ) এর ঘরে ছিলেন তখন যয়নাব (রাঃ) সেখানে আগমন করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে নিজের হাত প্রসারিত করলেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, ও তো যয়নাব! ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত গুটিয়ে নিলেন।
তখন তারা দু’জন (আয়িশা ও যয়নাব) কথা কটিাকাটি করতে লাগলেন। এমনকি তাদের গোসসার আওয়াজ চড়ে গেল, ওদিকে সালাতের ইকামত (এর সময় উপস্থিত) হন। ঐ অবস্থায় আবূ বকর (রাঃ) সেখান দিয়ে (সালাতে) যাচ্ছিলেন। তিনি ঐ দুজনের আওয়াজ শুনতে পেয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি বের হয়ে আসুন এবং ওদের মুখে ধুলা-মাটি ছুঁড়ে (দিয়ে মুখ বন্ধ করে) দিন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, এখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালাত আদায় করবেন, তার পরে তো আবূ বকর (রাঃ) এসে আমাকে বকাবকি ও গালমন্দ করবেন, পরে (তাই হল)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালাত সমাধা করলে আবূ বকর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) এর নিকটে এসে তাকে কড়াকড়া কথা বললেন এবং বললেন, তুমি এমন কর?
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
নবী স্ত্রীদের বিদ্রোহ
এতগুলো বিবি থাকার পরেও দাসী মারিয়া কিবতিয়ার সাথে অবাধ যৌনলীলায় মত্ত মুহাম্মদের এইসব কর্ম স্বাভাবিকভাবেই তার স্ত্রীদের পীড়া দিচ্ছিল বলেই বোঝা যায়। কিন্তু নবীর বিরুদ্ধে কিছু বললে তো আল্লাহ নাখোশ হবে, নবীও ক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু নবীর স্ত্রীগণের নিশ্চয়ই এইসব আর সহ্য হচ্ছিল না। তাই তারা বিদ্রোহ করে বসে, তাদের সাথে নবীর এই সময় বেশ ঝগড়াঝাঁটিও হয় বলে জানা যায়। পাঠকদের কাছে অনুরোধ, দীর্ঘ একমাস সময় নবী একটি উঁচু জায়গাতে ছিলেন যেখানে খেজুর কাণ্ডের সিড়ি দিয়ে উঠতে হতো, এই অংশটুকু মন দিয়ে পড়বেন [17] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৯/ তালাক
পরিচ্ছেদঃ ৪. ইখতিয়ার প্রদান করলে তালাকের নিয়্যাত ছাড়া তালাক হবে না
৩৫৫৯। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) … সুলায়মান ইবন বিলাল ইয়াহইয়া থেকে এবং তিনি উবায়দ ইবন হুনায়ন থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ এক বছর যাবত ইচ্ছা পোষণ করে আসছিলাম যে, একটি আয়াত সম্পর্কে উমর উবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করব। কিন্তু আমি তার গাম্ভীর্যের কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে সাহস পাইনি।
একবার তিনি হজ্জ পালনের জন্য রওনা হলেন, আমিও তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। যখন আমরা কোন এক রাস্তা দিয়ে চলছিলাম এই সময় তিনি (প্রকৃতির) প্রয়োজনে পিলুগাছের ঝোঁপের দিকে গেলেন। আমি তাঁর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি তাঁর প্রয়োজন পূরণ করে ফিরে এলেন। এরপর আমি তাঁর সঙ্গে রওনা করলাম। (এক মওকা পেয়ে) আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনীগণের মধ্যে থেকে কোন দু’জন তাঁর অপ্রিয় কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করেছিল?
তিনি বললেন, তারা ছিল হাফসা (রাঃ) ও আয়িশা (রাঃ)। (আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে (উমর (রাঃ) কে) বললামঃ আল্লাহর কসম! তিনি এক বছর যাবত এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করব বলে মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করে আসাছিলাম, কিন্তু আপনার ভয়ের কারণে সাহস পাইনি। তিনি (উমর রা) বললেন, কখনো এরূপ করবে না বরং আমার কাছে কোন বিষয়ের জ্ঞান আছে বলে তোমার ধারণা হলে তুমি অবশ্যই সে সম্পর্কে আমার কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিবে। যদি তা আমার জানা থাকে তাহলে তোমাকে অবহিত করবই।
রাবী (আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! জাহিলী যুগে আমরা নারী জাতির জন্য কোন অধিকার স্বীকার করতাম না। এরপর আল্লাহ তাদের অধিকার সম্পর্কে যা অবতীর্ণ করার অবতীর্ণ করলেন এবং তাদের জন্য যা বণ্টন করার ছিল তা বণ্টন করে দিলেন। তিনি বলেন আমি কোন একদিন এক বিষয়ে চিন্তা করছিলাম। এমন সময় আমার স্ত্রী আমার কাছে এসে বলল, আপনি যদি এরূপ এরূপ করতেন তাহলে বেশ ভাল হত। আমি তাকে বললাম, তোমার কি হয়েছে? তুমি এখানে এলে কেন? আমি যে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি তাতে তুমি নাক গলাচ্ছ কেন?
তখন সে বলল, হে খাত্তাবের পূত্র! আপনি তো আমাকে মুখ খুলতেই দিচ্ছেন না, কী আশ্চর্য অথচ আপনার (স্নেহের) কন্যাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে প্রতি উত্তর করে, যার ফলে তিনি সারা দিন রাগাম্বিত অবস্থায় অতিবাহিত করেন। উমর (রাঃ) বলেন, এরপর আমি (তড়িঘড়ি) আমার চাঁদর গুটিয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম এবং সোজা হাফসার কাছে পৌছিলাম।
আমি তাঁকে বললাম, হে আমার কন্যা! তুমি নাকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথার প্রতি উত্তর করে থাক, যাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা দিন রাগাম্বিত থাকেন? হাফসা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা সত্যই তার কথার প্রতি উত্তর দিয়ে থাকি। তখন আমি বললাম, জেনে রাখ! আমি তোমাকে আল্লাহর শাস্তির ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসন্তুষ্টির ভীতি প্রদর্শন করছি। হে আমার কন্যা! ঐ মেয়েটি যেন তোমাকে ধোকায় ফেলতে না পারে যাকে তাঁর সৌন্দর্য ও তার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুরাগ গর্বিত করে ফেলেছে (এর দ্বারা তিনি আয়িশা (রাঃ) কে বুঝাতে চেয়েছেন)।
এরপর আমি সেখানে থেকে বেরিয়ে উম্মু সালামা (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তাঁর সাথে আমার আত্নীয়তার সস্পর্ক ছিল। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বললাম। তখন উম্মু সালামা (রাঃ) আমাকে বললেন, কী আশ্চার্য হে খাত্তাবের পূত্র! তুমি সব কিছুতেই দখল নিতে চাচ্ছ? এমন কি তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সহধর্মিনীগণের মধ্যকার বিষয়ে দখল নিতে চাচ্ছ? তিনি বলেন, এই বিষয়ে উম্মু সালামা (রাঃ) এর কথা আমাকে এমনভাবে জব্দ করল যে, আমি হতোদ্যম হয়ে পড়লাম। তাই আমি তার নিকট হতে কেটে পড়লাম।
এদিকে আমার একজন আনসারী বন্ধু ছিলেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মজলিসে অনুপস্থিত থাকলে তিনি আমাকে জানাতেন এবং তিনি তাঁর মজলিসে অনুপস্থিত থাকলে আমি তার কাছে এসে তাকে (আলোচ্য বিষয়ে) জানাতাম। সে সময়ে আমরা জনৈক গাসসানী বাদশার আক্রমণের আশংকা করছিলাম। কারণ তখন আমাদের মাঝে সংবাদ (গুজব) ছড়িয়ে পড়েছিল যে, সে আমাদের উপর হামলার পাঁয়তার করছে। তাই ভয়-ভীতি ও দুশ্চিন্তায় আমাদের অন্তর ছিল আচ্ছন্ন।
ইত্যবসরে আমার আনসারী বন্ধুটি এসে দরজা খটখটাতে লাগলেন এবং বললেন, খুলে দিন, খুলে দিন! আমি বললাম, তাহলে গাসসানীরা কি এসেই পড়ল। তিনি (আমার আনসারী বন্ধুটি) বললেন, (না, গাসসানীরা আসে নি) তবে তার চাইতেও সাংঘাতিক কিছু। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দিয়েছেন।
উমর (রাঃ) বললেন, তখন আমি বললাম, হাফসা ও আয়িশার নাক ধূলোয় মলিন হোক। এরপর আমি আমার কাপড় চোপড় পরিধান করলাম এবং ঘর থেকে বেরিয়ে সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তখন তিনি তার টঙ্গের ভিতর ছিলেন। সেখানে খেজুর কাণ্ডের সিড়ি বেয়ে উঠতে হত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক কৃষ্ণকায় ভৃত্য সে সিঁড়ির গোড়ায় বসা ছিল। তখন আমি তাকে বললাম, আমি উমর। আমাকে অনুমতি এনে দাও। সে অনুমতি নিয়ে এলে আমি ভিতরে প্রবেশ করে এই ঘটনা বিশদভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে খুলে বললাম।
আমি যখন উম্মু সালামা (রাঃ)-এর ঘটনা পর্যন্ত পোঁছলাম, তখন তিনি মুচকি হাসি দিলেন। তিনি তখন একটি সাদামাটা চাটাইয়ের উপর (কাত হয়ে শায়িত) ছিলেন, তাঁর ও চাটাইয়ের মাঝখানে অন্য কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল চামড়ার তৈরি একটি বালিশ যার মধ্যে খেজুর গাছের ছাল ভর্তি ছিল। তাঁর পায়ের কাছে ছিল স্তৃপকৃত সলম গাছের কিছু পাতা এবং শিয়রের কাছে ঝুলন্ত ছিল একটি কাঁচা চামড়া। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীরের পার্শ্বদেশে চাটাই এর দাগ দেখতে পেলাম, এতে আমি কাঁদলাম। তিনি বললেন, (হে খাত্তাব তনয়) তুমি কাঁদছ কেন?
তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! পারস্য সম্রাট ও রোমক সম্রাট কত বিলাস ব্যসনে কাটাচ্ছে আর আপনি হলেন, আল্লাহর রাসুল, (আপনার অবস্থা এই)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (হে উমর) তুমি কি এতে পরিতুষ্ট নও যে, তাদের জন্য কেবল দুনিয়া (পার্থিব ভোগ-বিলাস) আর তোমার জন্য রয়েছে আখিরাত (চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৯/ তালাক
পরিচ্ছেদঃ ৪. ইখতিয়ার প্রদান করলে তালাকের নিয়্যাত ছাড়া তালাক হবে না
৩৫৬২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণের মধ্যে থেকে যে দু’জন মহিলা সম্পর্কে উমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করার জন্য বহুদিন যাবত লালায়িত ছিলাম যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমাদের দু’জনের হৃদয় অন্যায় প্রবণ হয়েছে মনে করে তোমরা যদি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আস তাহলে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন”। (সূরা আত-তাহরীমঃ ৪)
পরিশেষে উমর (রাঃ) হজ্জ পালনের জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন এবং আমিও হজ্জ পালনের জন্য তাঁর সফর সঙ্গী হলাম। এরপর (হজ্জ সমাপন করে ফেরার পথে) আমরা কোন এক রাস্তা দিয়ে চলার সময় উমর (রাঃ) একপার্শ্বে মোড় নিলেন। আমিও পানির বদনাসহ তাঁর সঙ্গে রাস্তার পার্শ্বে গেলাম। তিনি তাঁর হাজত পূরণ করলেন এবং আমার কাছে এলেন। আমি তাঁর উভয় হাতে পানি ঢাললাম, তিনি উযু করে নিলেন। তখন আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণের সে দুজন মহিলা কারা ছিলো যাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
“তোমাদের দু’জনের হৃদয় অন্যায় প্রবণ হয়েছে মনে করে তোমরা যদি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর তাহলে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন।” (তাহরীমঃ ৪)।
উমর (রাঃ) বললেন, হে ইবনু আব্বাস! তোমার প্রতি বিস্ময়বোধ করছি। যুহরী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! তিনি সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাকে অপছন্দ করলেও তা বর্ণনা করতে কিছুই গোপন করলেন না। তিনি বললেন, তাঁরা দুজন ছিল হাফসা ও আয়িশা (রাঃ)। এরপর তিনি ঘটনার বিবরণ দিতে লাগলেন।
তিনি বললেন, আমরা কুরায়শ বংশের লোকেরা (জাহিলী যুগে) আমাদের স্ত্রীদের উপর প্রভাব খাটাত। যখন আমরা মদিনায় এলাম তখন এমন লোকদের দেখতে পেলাম যাদের উপর তাদের স্ত্রীরা প্রভাব বিস্তার করছিল। এমনি পরিবেশে আমাদের নারীরা তাদের (মদিনাবাসীদের) নারীদের অভ্যাস শিখতে শুরু করে দেয়। তিনি বলেন, সে সময় মদিনার উচ্চভূমির অধিবাসী বনূ উমায়্যা ইবনু যায়িদের বংশধরদের মধ্যে আমার বসতবাটি ছিল। এরপর একদিন আমি আমার স্ত্রীর উপর রাগাম্বিত হলাম। সে আমার কথার প্রতি উত্তর করতে লাগল। আমি আমার সঙ্গে তার প্রতি উত্তর করাকে খুবই অপ্রিয় মনে করলাম। সে বলল, আপনার সঙ্গে আমার কথার প্রতি উত্তর করাকে অপছন্দ করছিলেন কেন? আল্লাহর কসম! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণও তো তাঁর সঙ্গে কথার প্রতি উত্তর করে থাকে। এমনকি তিনি তাঁদের কেউ কেউ তাঁকে সারা দিন রাত বিচ্ছিন্ন করে রাখে।
তখন আমি রওনা করে (আমার মেয়ে) হাফসার কাছে চলে এলাম। এরপর আমি তাকে বললাম, তুমি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে প্রতিউত্তর কর? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তোমাদের মধ্যে কি কেউ তাকে সারা দিন রাত বিচ্ছিন্ন করে রাখে? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তোমাদের যে কেউ এরূপ আচরণ করে সে আসলেই দূর্ভাগা ও ক্ষতিগ্রস্ত। তোমাদের মধ্যে কি কেউ এ ব্যাপারে নিশ্চিন্তবোধ করে যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলের ক্রোধের কারণে তার প্রতি ক্ষুদ্ধ হবেন না? এরূপ হলে তো তার ধ্বংস অনিবার্য। তুমি কখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাঁর কথার প্রতি উত্তর লিপ্ত হয়ো না এবং তাঁর কাছে কোন কিছু দাবী করবে না, তোমার মনে যা চায় তা আমার কাছে চাইবে। তোমার সতীন তোমার চাইতে অধিকতর সুন্দরী এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট তোমার তুলনায় অধিকতর প্রিয়পাত্রি। সে যেন তোমায় ধোকায় পতিত না করে। এর দ্বারা তিনি আয়িশা (রাঃ) কে বুঝাতে চাইছেন।
তিনি বলেন, আমার একজন আনসারী প্রতিবেশী ছিলেন। আমরা দুই বন্ধু পালাক্রমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (তাঁর মজলিসে) যেতাম। একদিন তিনি উপস্থিত থাকতেন অপরদিন আমি উপস্থিত হতাম। এভাবে তিনি আমাকে ওহী ইত্যাদির খবর দিতেন আমিও অনুরূপ খবর তাকে পৌঁছাতাম। সে সময় আমরা বেশ করে আলোচনা করতে ছিলাম যে, গাসসানী বাদশাহ নাকি আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা জন্য ঘোড়ার ক্ষুরে নাল লাগাচ্ছে।
একদিন আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলেন এবং ইশার সময় (রাত্রিকালে) আমার কাছে (ফিরে) এলেন। তিনি এসে আমার ঘরের দরজা খটখটালেন এবং আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর ডাক শুনে তার কাছে ছুটে এলাম। তিনি বললেন, একটি বিরাট কাণ্ড ঘটে গেছে। আমি বললাম, সে কি? গাসসানীরা তাহলে এসে গেছে নাকি? তিনি বললেনঃ না, তারা আসেনি বরং ব্যাপার তার চাইতেও সাংঘাতিক ও দীর্ঘতর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনীদের তালাক দিয়েছেন। তখন আমি বললাম, হাফসার সর্বনাশ হয়েছে ও সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি পূর্ব থেকেই ধারণা পোষণ করে আসছিলাম যে, এমন একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
এরপর আমি ফজরের সালাত আদায় করে প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় পরিধান করলাম। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে সরাসরি হাফসার কাছে উপস্থিত হলাম। তখন সে কাঁদছিল। আমি বললাম, রাসুলল্লাহ (রহঃ) কি তোমাদেরকে তালাক দিয়েছেন। সে বলল, আমি জানি না। তবে তিনি তাঁর ঐ টঙ্গে নির্জনবাস করছেন। আমি তাঁর কৃষ্ণকায় গোলামের কাছে এলাম। এরপর সে ভিতরে প্রবেশ করল এবং বেরিয়ে এসে আমার দিকে তাকাল। এরপর সে বলল, আমি তার (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে আপনার কথা উত্থাপন করেছি কিন্তু তিনি নীরব আছেন। (কিছুই বলছেন না)। তারপর আমি চলে এলাম এবং মিম্বরের কাছে এসে বসে পড়লাম। তখন আমি দেখতে পেলাম সেখানে একদল লোক বসা আছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।
আমি খানিকটা বসলাম। এরপর আমার মনের প্রবল আকঙ্খা আমার উপর প্রভাব বিস্তার করল। তখন আমি সেই গোলামের কাছে চলে এলাম এবং তাকে বললাম, উমরের জন্য ভিতরে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে এসো। সে ভেতরে প্রবেশ করল এবং বেরিয়ে এসে আমাকে বলল, আপনি আপনার বিষয়টি তাঁর সামনে উত্থাপন করেছি কিন্তু তিনি নীরব আছেন। আমি তখন পিছনে ফিরে চললাম অমনি সে গোলামটি আমাকে ডাক দিয়ে বলল, আপনি প্রবেশ করুন; তিনি আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন।
আমি ভিতরে প্রবেশ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দিলাম। আমি দেখতে পেলাম, তিনি খেজুর পাতার তৈরি একটি চাটাই এর উপর হেলান দিয়ে আরাম করছেন যা তাঁর পার্শ্বদেশে দাগ বসিয়ে দিয়েছে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি আপনার সহধর্মিনীগণকে তালাক দিয়েছেন? আমার দিকে তাকিয়ে মাথা তুললেন এবং বললেন, না। আমি বললাম, আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি বিষয়টি ভেবে দেখুনঃ
আমরা কুরায়শরা এমন ছিলাম যে, আমাদের স্ত্রীদের উপর প্রভাব খাটাতাম। তারপর আমরা যখন মদিনায় এলাম তখন দেখতে পেলাম, এখানকার পুরুষ লোকদের উপর তাদের স্ত্রীরা প্রভাব বিস্তার করে আসছে। তাদের থেকে আমাদের স্ত্রীরাও এটা শিখতে শুর করে দিয়েছে। একদিন আমি আমার স্ত্রীর প্রতি রাগান্বিত হলাম। অমনি সে আমার কথার প্রতি উত্তর শুরু করে দিল। আমি তার প্রতি উত্তর করাকে খুবই খারাপ মনে করলাম। সে বলে ফেলল- আপনার সঙ্গে প্রতিউত্তর করাকে আপনি এত খারাপ মনে করছেন কেন? আল্লাহর কসম! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণও তো তাঁর কথার প্রতি উত্তর করে থাকে, এমনকি তাদের কেউ কেউ তাঁকে সারা দিন রাত বিচ্ছিন্ন করে রাখে।
আমি বললাম, তাঁদের মধ্যে কেউ এমন আচরন করলে সে হতভাগ্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে থেকে কারো উপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হওয়ার কারণে যদি আল্লাহ ক্রদ্ধ হয়ে যান তাহলে তার পতন ও ধ্বংস অনিবার্য। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃদু সূরে হেসে উঠলেন।
আমি বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ! আমি হাফসার কাছে গিয়ে তাকে বলে দিয়েছি যে, তোমার সতীন সৌন্দর্যে তোমার তুলনায় অগ্রগামিনী এবং রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তোমার চাইতে অধিকতর আদরিনী- তা যেন তোমাকে ধোকায় না ফেলে। এতে আবার তিনি মুচকি হাসি দিলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসালুল্লাহ! আমি আপনার সঙ্গে একান্তে আলাপ করতে চাই। তিনি বললেনঃ হাঁ, করতে পার।
তারপর আমি বসলাম এবং মাথা উঠিয়ে তাঁর কোঠার (এদিক ওদিক) তাকিয়ে দেখলাম। আল্লাহর কসম! আমি সেখানে তিনখানি চামড়া ব্যতীত দৃষ্টি ফিরানোর মত কিছু দেখতে পাইনি। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আপনার উম্মাতকে প্রাচুর্য দান করেন। পারসিক ও রোমাকদের তো বৈষয়িক সুখ সমৃদ্ধি দান করা হয়েছে অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত (আনুগত্য) করে না। তখন তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, -হে খাত্তাবের পুত্র! তুমি কি সন্দেহের জালে আবদ্ধ আছ? আসলে তারা তো এমন সম্প্রদায় যাদের পার্থিব জীবনে নগদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
তিনি তাঁর সহধর্মিনীগণের আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে কসম করেছিলেন যে, তিনি একমাস তাদের সঙ্গে একত্রে অতিবাহিত করবেন না। শেষাবধি আল্লাহ তাকে এই আচরণের জন্য তিরষ্কার করেন।
যুহরী (রহঃ) বলেন, উরওয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) এর সুত্রে আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ যখন ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হল তখন প্রথমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তো কসম করেছিলেন একমাস পর্যন্ত আমাদের কাছে আসবেন না অথচ ঊনত্রিশ দিন পরই আপনি আমাদের কাছে ফিরে এলেন। আমি এই দিনগুলো হিসেব করে রেখেছিলাম। তিনি বললেন মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়।
এরপর তিনি বললেন, হে আয়িশা! আমি তোমাকে একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, সে সম্পর্কে তোমার পিতামাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে তাড়াতাড়ি উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তখন তিনি আমাকে এই আয়াত তিলাওয়াত করে শোনালেনঃ “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও এর ভূষণ কামনা কর তাহলে এসো আমি তোমাদের ভোগ বিলাসের উপকরণের ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যর সাথে তোমাদের বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসুল ও পরকাল কামনা কর তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণা আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (সূরা আহযাবঃ ২৮,২৯)।
আয়িশা (রাঃ) বলেন, এটা নির্ঘাত সত্য যে, আমার পিতামাতা কস্মিনকালেও আমাকে তাঁর (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ দিবেন না। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ বিষয়ে কি আমি আমার পিতামাতার সাথে পরামর্শ করতে যাব? নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও পরকাল কামনা করি।
মা’মার (রহঃ) বলেন, আয়্যুব আমাকে জানিয়েছেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, (ইয়া রাসুলাল্লাহ) আপনি আপনার অন্যান্য সহধর্মিনীগনের কাছে বলবেন না যে, আমি আপনাকেই ইখতিয়ার করে নিয়েছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আল্লাহ আমকে মুবাল্লিগ (সত্যপ্রচারক) রূপে প্রেরণ করেছেন, বিপদে নিক্ষেপকারীরূপে পাঠান নি।
কাতাদা (রহঃ) বলেন,صَغَتْ قُلُوبُكُمَا এর অর্থ مَالَتْ قُلُوبُكُمَا “তোমাদের হৃদয় (অন্যায় প্রবনতার দিকে) ঝুঁকে পড়েছিল।”
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
তালাকের হুমকি
মারিয়া কিবতিয়ার সাথে হাফসার ঘরে তারই বিছানায় সঙ্গম, সেখানে হাফসার কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ার পরে মারিয়া কিবতিয়ার সাথে আর যৌন কর্ম করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করা, সেটি আবার আয়িশার জেনে ফেলা, পরে আবার মারিয়া কিবতিয়ার সাথে যৌনকর্মের জন্য নবীর উতলা হওয়া, এই নিয়ে নবীর স্ত্রীদের একদল একজোট হয়ে নবীর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা, এইসব প্রেক্ষাপটে আল্লাহ নাজিল করেন এই সূরাটি, যেখানে নবীর স্ত্রীদের তালাক দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। আসুন সূরা তাহরীমের আয়াতগুলো আরো একবার পরে দেখি [18] –
তালাক কি হয়েছিল?
একটি সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী তার স্ত্রীদের মধ্যে হাফসাকে, যার বিছানায় মারিয়াকে তোলা নিয়েই এতো কাণ্ড, তাকে তালাক দিয়েছিলেন। যদিও পরে নাকি তাকে ফিরিয়ে নেয়া হয় [19] –
সুনান ইবনু মাজাহ
১০/ ত্বালাক্ব
পরিচ্ছেদঃ ১০/১. ঘৃণ্য বৈধ বিষয়।
১/২০১৬। ’উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসা (রাঃ)-কে তালাক দেন, অতঃপর তাকে ফিরিয়ে নেন।
আবূ দাউদ ২২৮৩, দারেমী ২২৬৪, ইরওয়া ২০৭৭।
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)
নবীর একমাস বাহিরে অবস্থান
নবী মুহাম্মদের দাসী সঙ্গমের প্রতিবাদে একজোট হয়ে বিদ্রোহী হওয়া স্ত্রীদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত এবং রাগান্বিত অবস্থায় নবী তাদের তালাক দেয়ার হুমকি দিয়ে একমাস সমস্ত স্ত্রী থেকে দূরে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সময়ে তিনি আসলে কোথায় ছিলেন? তাফসীরে মাযহারী থেকে থেকে জানা যায়, এই একমাস তিনি অবস্থান করেন মারিয়া কিবতিয়ার বাসায়। অর্থাৎ যাকে নিয়ে এত ঘটনা, সেই নারীর কাছেই নবী তখন চলে গেছেন। সেখানে গিয়ে দীর্ঘ একমাস তিনি আল্লাহর ইবাদতে মশগুল ছিলেন নাকি অন্যকিছু করেছেন, তা বুদ্ধিমান পাঠকের বুদ্ধিমত্তার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি [20] –
আসুন এই বিষয়ে কিছু হাদিসও পড়ে নিই [21] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৯/ তালাক
পরিচ্ছেদঃ ৪. ইখতিয়ার প্রদান করলে তালাকের নিয়্যাত ছাড়া তালাক হবে না
৩৫৫৮। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সহধর্মিনীগন থেকে সাময়িকভাবে পৃথক হয়ে গেলেন, তখন আমি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলাম। আমি দেখতে পেলাম লোকেরা হাতে কংকর নিযে নাড়াচাড়া করছে (যা দুশ্চিন্তার সময় স্বাভাবিকভাবে ঘটে থাকে)। তাঁরা বলাবলি করছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনা ছিল তাঁদের উপর পর্দার নির্দেশ আসার পূর্বেকার।
উমর (রাঃ) বললেন, আমি আজই প্রকৃত ঘটনা জেনে নিব। তাই আমি আয়িশা (রাঃ) এর নিকটে গেলাম। আমি তাকে বললাম, হে আবূ বকর তনয়া! তোমার অবস্থা কি এই পর্যায়ে নেমে গিয়েছে যে, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দিচ্ছ? তিনি বললেন, হে খাত্তাবের পূত্র! আমার ব্যাপার নিয়ে আপনি মাথা ঘামাচ্ছেন কেন? আগে নিজের ঘরের খবর নিন। তিনি বলেন, তখনই আমি হাফসা বিনত উমর (রাঃ) এর কাছে এলাম। আমি তাঁকে বললাম, হে হাফসা! তোমার অবস্থা এই পর্যায়ে গড়িয়েছে যে, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দিচ্ছ? আল্লাহর কসম! আমি জানতে পেরেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে ভালবাসেন না। আর আমি না হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তোমাকে তালাক দিয়ে দিতেন।
একথা শুনে তিনি অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তখন আমি তাকে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় আছেন? সে [হাফসা (রা)] বলল,তিনি ঐ টঙ্গের কোষাগারে অবস্থান করছেন। আমি সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করলাম। তখন আমি দেখতে পেলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চৌকাঠটি ছিল খেজুর গাছের কাণ্ড দিয়ে নির্মিত যা দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠানামা করতেন।
আমি রাবাহকে ডাকলাম এবং বললাম, হে রাবাহ! আমার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে এসো।
তখন রাবাহ কামরার দিকে দৃষ্টিপাত করল। এরপর আমার দিকে ফিরে তাকাল। কিন্তু সে কিছুই বলল না। তখন আমি বললাম, হে রাবাহ! তুমি আমার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এসো। এরপর রাবহা কামরার দিকে দৃষ্টিপাত করল এবং আমার দিকে ফিরে তাকাল। কিন্তু সে এবার ও কিছু বলল না। তখন আমি উচ্চস্বরে বললাম, হে রাবাহ! তুমি আমার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এসো। সে সময় আমি ভেবেছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়ত ধারণা করছেন আমি আমার কন্যা হাফসার কারণেই এখানে এসেছি। আল্লাহ কসম! যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গর্দান উড়িয়ে দিবার নির্দেশ দিতেন তাহলে আমি অবশ্যই তার গর্দান উড়িয়ে দিতাম। এ সব কথা আমি উচ্চস্বরেই বলছিলাম।
তখন সে (রাবাহ) আমাকে ইশারায় উপরে উঠতে বলল। তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রবেশ করলাম। সে সময় তিনি খেজুর পত্র নির্মিত একটি চাটাইয়ের উপর কাত হয়ে শোয়া ছিলেন। আমি সেখানে বসে পড়লাম। তিনি তার চাঁদরখানি তার শরীরের উপরে টেনে দিলেন। তখন এটি ছাড়া তার পরনে অন্য কোন কাপড় ছিল না আর বাহুতে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিল। এরপর আমি স্বচক্ষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামানাদির দিকে তাকালাম। আমি সেখানে একটি পাত্রে এক সা (সাড়ে তিন কেজি পরিমাণ) এর কাছাকাছি কয়েক মুঠো যব দেখতে পেলাম। আর সলমের কিছু পাতা (এক প্রকার গাছের পাতা যা দিয়ে চামড়ায় রং করা হয়।) কামরার এক কোণায় পড়ে আছে। আরও দেখতে পেলাম ঝুলন্ত একখানা চামড়া, এ সব দেখে আমার দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল।
তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! কিসের তোমার কান্না পেয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কেন আমি কাঁদব না। এই যে চাটাই আপনার শরীরের পার্শ্বদেশে দাগ বসিয়ে দিয়েছে। আর এই হচ্ছে আপনার কোষাগার। এখানে সামান্য কিছু যা দেখলাম তা ছাড়া তো আর কিছুই নেই। পক্ষান্তরে ঐ যে রোমক বাদশাহ ও পারস্য সম্রাট, কত বিলাস বাসনে ফলমুল ও ঝরণায় পরিবেষ্টিত হয়ে আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপন করছে। আর আপনি হলেন আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর মনোনীত ব্যক্তি। আর আপনার কোষাগার হচ্ছে এই!
তখন তিনি বললেন, হে খাত্তাব তনয়! তুমি কি এতে পরিতুষ্ট নও যে, আমাদের জন্য রয়েছে আখিরাত আর তাদের জন্য দুনিয়া (পার্থিব ভোগ বিলাস)? আমি বললাম, নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট। এরপর উমর (রাঃ) বলেন, যখন আমি তার সকাশে উপস্থিত হই তখন থেকেই আমি তার চেহারায় গোস্বার ছাপ দেখতে পাচ্ছিলাম। এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার সহধর্মিনীগণের কোন আচরণ আপনার মনোকষ্টের কারণ হয়েছে কি? আপনি যদি তাঁদের তিনি তালাক প্রদান করে থাকেন (তাতে আপনার কিছু আসে যায় না) সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনার সঙ্গে আছেন। তার সকল ফিরিশতা, জিবরীল, মীকাঈল, আমি, আবূ বকর (রাঃ) সহ সকল ঈমানদার আপনার সঙ্গে আছেন।
তিনি (উমর (রাঃ) বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমি যখনই কোন কথা বলি তাতে প্রায়ই আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ আমার কথা সত্য প্রমাণিত করবেন। তখন ইখতিয়ার সম্পর্কিত এই আয়াত নাযিল হলঃ “যদি নবী তোমাদের সকলকে তালাক দিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে তাকে তোমাদের চাইতে উৎকৃষ্টতর সহধর্মিনী দিবেন।” (সূরা আততাহরীমঃ ৫)।
“আর তোমরা দুইজন যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরের পোষকতা কর তবে জেনে রাখ, আল্লাহ, জিবরীল, সৎকর্মপরায়ণ ঈমানদারগণ তার সাহায্যকারী। অধিকন্তু ফেরেশতারাও তার সাহায্যের জন্য সদা তৎপর। (সূরা তাহরীমঃ ৪)।
আয়িশা বিনত আবূ বকর (রাঃ) ও হাফসা (বিনত উমর) (রাঃ) এই দু’জন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সহধর্মিনীগণের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে আসছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তাঁদের তালাক দিয়েছেন? তিনি বললেন, না। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম মুসলিমরা (চিন্তাযুক্ত হয়ে) মাটির কংকর মারছে এবং বলছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। এখন আমি কি তাদের কাছে গিয়ে জানিয়ে দিব যে, আপনি আপনার সহধর্মিনীদের তালাক দেননি? তিনি বললেন- হাঁ তোমার মনে চাইলে। এভাবে আমি তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে লাগলাম। পরিশেষে দেখলাম তার চেহারা থেকে গোস্বার ছাপ একেবারে মুছে গেছে এবং তিনি এমনভাবে হাসি দিলেন যে, তার দাঁত দেখা গেল। তাঁর দাত ছিল সকলের চাইতে সুন্দর।
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে নিচে নেমে এলেন এবং আমিও খেজুরগাছের কাণ্ড নির্মিত (সিঁড়ির) কাষ্ঠ ধরে নিচে নেমে এলাম। তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে নিচে নামলেন যেন তিনি সমতল যমীনে হাটছেন। তিনি তাঁর হাত দিয়ে কাণ্ডটি স্পর্শ করেননি। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তো এই বালাখানায় ঊনত্রিশ দিন অবস্থান করছেন। তিনি বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
এরপর আমি মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে ঘোষণা করলাম, তিনি তাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দেননি। তখন এই আয়াত নাযিল হল” “যখন শাস্তি কিংবা ভয়ের কোন সংবাদ তাদের কাছে আসে তখন তারা তা প্রচার করে দেয়। যদি তারা বিষয়টি আল্লাহর রাসুল এবং নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিদের নিকট উপস্থাপন করত তাহলে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধানী তারা এর যথার্থতা নিরুপণ করতে সক্ষম হত।”
মোটকথা আমি [উমর (রাঃ)] এই বিষয়টির সঠিক তথ্য নির্ণয়ে সক্ষম হয়েছিলাম। তখন আল্লাহ তা’আলা ইখতিয়ার সস্পর্কিত আয়াত নাযিল করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)
উম্মাহাতুল মুমিনীন নামক অভিশাপ
নবী মুহাম্মদের স্ত্রীগণের সম্পর্কে বেশ কিছু আয়াত নাজিল হয়, যার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু আয়াত হচ্ছে, সূরা আহজাবের ৬ এবং ৫৩ নম্বর আয়াত। এই আয়াতগুলো গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, এই আয়াতে নবীর স্ত্রীদেরকে সকল মুসলমানের মাতা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়, এবং নবীর মৃত্যুর পরে বা নবী তালাক দিলে, যেকোন অবস্থাতেই, তাদের সাথে অন্য কারো বিয়ে শাদী নিষিদ্ধ করা হয়। অর্থাৎ নবীর পরে তারা আর কোনদিনই বিবাহ করতে পারবে না। বাদবাকী জীবন তাদের বিধবা হিসেবে বা তালাকপ্রাপ্ত হিসেবেই পুরুষসঙ্গহীন অবস্থায় কাটাতে হবে। যেকোন নারীর জন্য এটি একটি অভিশাপ স্বরূপ। কারণ প্রতিটি মানুষেরই যৌন চাহিদা থাকে। নবীর স্ত্রীরাও যেহেতু মানুষ ছিলেন, তাই তাদের যৌন চাহিদাও থাকার কথা। বুড়ো স্বামী মারা যাওয়ার পরে তারা আর বিয়ে শাদী করতে পারবেন না, এটি তো তাদের জন্য এক অভিশাপই বটে [22] [23] –
নবী (সাঃ) মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের চেয়ে ঘনিষ্ঠ, আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা। আল্লাহর বিধানে মু’মিন ও মুহাজিরদের (দ্বীনী সম্পর্ক) অপেক্ষা আত্মীয়-স্বজনগণ পরস্পর পরস্পরের নিকট ঘনিষ্ঠতর। তবে তোমরা তোমাদের বন্ধু বান্ধবদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করতে চাইলে, করতে পার। (আল্লাহর) কিতাবে এটাই লিখিত।
— Taisirul Quran
নাবী মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্টতর এবং তার স্ত্রীরা তাদের মা। আল্লাহর বিধান অনুসারে মু’মিন মুহাজির অপেক্ষা যারা আত্মীয় তারা পরস্পরের নিকটতম। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করতে চাও তাহলে করতে পার। এটা কিতাবে লিপিবদ্ধ।
— Sheikh Mujibur Rahman
নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতাস্বরূপ। আর আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজিরদের তুলনায় আত্নীয় স্বজনরা একে অপরের নিকটতর। তবে তোমরা যদি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভাল কিছু করতে চাও (তা করতে পার)। এটা কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।
— Rawai Al-bayan
নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও ঘনিষ্টতর [১] এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা [২]। আর আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজিরগণের চেয়ে—যারা আত্মীয় তারা পরস্পর কাছাকাছি [৩]। তবে তোমরা তোমাদের বন্ধু-বান্ধবের প্রতি কল্যাণকর কিছু করার কথা আলাদা [৪]। এটা কিভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর ঘরসমূহে প্রবেশ করো না; অবশ্য যদি তোমাদেরকে খাবারের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে (প্রবেশ কর) খাবারের প্রস্ত্ততির জন্য অপেক্ষা না করে। আর যখন তোমাদেরকে ডাকা হবে তখন তোমরা প্রবেশ কর এবং খাবার শেষ হলে চলে যাও আর কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ো না; কারণ তা নবীকে কষ্ট দেয়, সে তোমাদের বিষয়ে সঙ্কোচ বোধ করে; কিন্তু আল্লাহ সত্য প্রকাশে সঙ্কোচ বোধ করেন না। আর যখন নবীপত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আর আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ।
— Rawai Al-bayan
সূরা আহজাব, আয়াত ৫৩
আসুন সূরা আহজাবের ৬ নম্বর আয়াতটির তাফসীর ইবনে কাসীরের তাফসীর গ্রন্থ থেকে পড়ে নেয়া যাক [24] –
কয়েকজন তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর পুনর্বিবাহ
এখানে একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে, মুহাম্মদের কয়েকজন তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী তো পুনরায় বিবাহ করেছিল। তাহলে তারা কীভাবে বিবাহ করেছিল? উল্লেখ্য, তারা বিবাহ করার অধিকার পেয়েছিল খোদ নবীর নির্দেশনা মতে, যাদের সাথে নবী বিবাহ পূর্ণ করেননি। অর্থাৎ সহবাসের আগেই যাদের তালাক দিয়েছিলেন, তারা এই উম্মাহাতুল মুমিনীনের পদবীর আওতা বহির্ভূত। আসুন এই বিষয়টি তাফসীরে মাযহারী থেকে দেখে নিই। নিচে দেখুন, যায়যাবী লিখেছেন, রাসুলের ঐ সকল পত্নী বিবাহ নিষিদ্ধ হওয়ার আওতার বাইরে, যাদের সাথে নবী সহবাস করেননি। অর্থাৎ যাদের সাথে সহবাস করেছেন, এমনকি সে দাসী হলেও, তাদের সাথে অন্য সকল মুমিনের বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল [25]
একই বিবরণ পাওয়া যায় আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া থেকেও। সেখানে দেখা যায়, মুহাম্মদ মৃত্যুর মাত্র দুইমাস আগেও একজনকে বিবাহ করেন। তবে সেই বিবাহে নবী সহবাস করতে পারেননি, অসুস্থতার কারণেই তা করতে পারেননি বলেই বোঝা যায়। নিচে উমরের বক্তব্য খেয়াল করুন, উমর বলছে, এই মহিলা পরে আবারো বিবাহ করতে পেরেছিল কারণ নবী তার সাথে সহবাস করেননি। অর্থাৎ সহবাস করা না করাই এখানে মুখ্য। সহবাস হয়ে গেলে সেই নারীকে আর কেউ বিবাহ করতে পারবে না। কারণ তখন সে উম্মাহাতুল মুমিনীন হয়ে যাবে। [26]
খোরপোষ দেয়া হবে না
শুধু যে নবীর পরে নবীর স্ত্রীদের বিবাহ হারাম করাই হয়েছে সেটিই নয়, নবী এই নিয়মও জারি করেন যে, নবী তালাক দিলে তার স্ত্রীগণ আর কোন খোরপোশ পাবেন না। অর্থাৎ নবী তাদের আর ভরণপোষণ দেবেন না। তারা আর কাউকে বিয়েও করতে পারবেন না, উল্টোদিকে ভরণপোষণও পাবেন না, এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে তারা কীভাবে জীবন যাপন করবেন? তাদের পিতা কি তাদের আর দায়িত্ব নিতে রাজি থাকবে? বাকি জীবন পিতার ঘরে বোঝা হয়ে তারা থাকতে পারবেন? চাকরি বাকরি ব্যবসাবাণিজ্য করেও তো তারা চলতে পারবেন না। কারণ আরেক আয়াতে নবীর স্ত্রীগণকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে [27]। বিষয়টি হলো, জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। তালাক হলেও বিপদ, তালাক না হলেও বিপদ। তাহলে নবীর স্ত্রীগণের জন্য তালাকের হুমকি তো মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণার মতই ভয়ঙ্কর ব্যাপার [28] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৯/ তালাক
পরিচ্ছেদঃ ৪. ইখতিয়ার প্রদান করলে তালাকের নিয়্যাত ছাড়া তালাক হবে না
৩৫৫৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিতির অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তিনি তার দরজায় অনেক লোককে উপবিষ্ট দেখতে পেলেন। তবে তাদের কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় নি। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তিনি আবূ বকর (রাঃ) কে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে তিনি প্রবেশ করলেন। এরপর উমর (রাঃ) এলেন এবং তিনি অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তাকেও প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হল। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চিন্তিত ও নীরব বসে থাকতে দেখলেন আর তখন তার চতুষ্পার্শ্বে তাঁর সহধর্মিনীগণ উপবিষ্টা ছিলেন।
তিনি (বর্ণানাকারী জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)) বলেন, উমর (রাঃ) বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এমন কথা বলব যা তাঁকে হাসাবে। এপর তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যদি দেখতেন খারিজার কন্যা (উমর (রাঃ) এর স্ত্রী) আমার কাছে খোরপোষ তলব করছিল। আমি তার দিকে উঠে গেলাম এবং তার ঘাড়ে ঘুষি মারলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং বললেন, আমার চতুষ্পার্শ্বে তোমরা যাদের দেখতে পাচ্ছ তারা আমার কাছে খোরপোষ দাবী করছে।
অমনি আবূ বকর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) এর দিকে ছুটলেন এবং তাঁর গর্দানে ঘুষি মারলেন। উমর (রাঃ)ও দাঁড়িয়ে গেলেন এবং হাফসা (রাঃ) এর দিকে অগ্রসর হয়ে তাঁর ঘাড়ে ঘুষি মারলেন। তাঁরা উভয়ে বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এমন জিনিস দাবী করছে যা তাঁর কাছে নেই। তখন তাঁরা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনীগণ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা আর কখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন জিনিস চাইব না যা তাঁর কাছে নেই।
এরপর তিনি তাঁদের (তাঁর সহধর্মিনীগণের) থেকে একমাস কিংবা ঊনত্রিশ দিন পৃথক রইলেন। এপর তাঁর প্রতি এই আয়াত নাযিল হলঃ (অর্থ) “হে নবী! আপনি আপনার সহধর্মিনীদের বলে দিন, তোমরা যদি পার্থিব জীবনের ভোগ ও এর বিলাসিতা কামনা কর, তাহলে এসো আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসে ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও পরকালকে কামনা কর তাহলে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (আহযাবঃ ২৮ ২৯)
তিনি [জাবির (রা)] বলেন, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয়িশা (রাঃ) কে দিয়ে (আয়াতের নির্দেশ তামীল করতে) শুরু করলেন। তখন তিনি বললেন, হে আয়িশা! আমি তোমার কাছে একটি (গুরত্বপূর্ণ) বিষয়ে আলাপ করতে চাই। তবে সে বিষয়ে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে তোমার ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করাই আমি পছন্দ করি।
তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে বিষয়টা কি (আমি জানতে পারি)? তখন তিনি তার কাছে এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার ব্যাপারে আমি কি আমার পিতা-মাতার কাছে পরামর্শ নিতে যাব? (এর কোন প্রয়োজন নেই)। না, বরং আমি আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও আখিরাতকেই বেছে নিয়েছি। তবে আপনার সকাশে আমার একান্ত নিবেদন, আমি যা বলেছি সে সম্পর্কে আপনি আপনার অন্যান্য সহধর্মিনীগণের কারো কাছে ব্যক্ত করবেন না। তিনি বললেন, তাদের যে কেউ সে বিষয় আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি অবশ্যই তাঁকে তা বলে দিব। কারণ আল্লাহ আমাকে কঠোরতা আরোপকারী ও হঠকারীরূপে নয় বরং সহজ পন্থায় (শিক্ষাদানকারী) হিসাবে প্রেরণ করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
নবীর স্ত্রীদের মারধোর
উপরে বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায় [28], নবীর স্ত্রীদের মধ্যে হাফসা এবং আয়িশার পিতা যথাক্রমে উমর এবং আবু বকর, যারা নবীর মৃত্যুর পরে খলিফা হওয়ার আশায় বুক বেধেছেন, তারা নবীর স্ত্রীদেরকে এই নিয়ে মারধোর পর্যন্ত করেছেন। এর থেকে বোঝা যায়, নবী তালাক দিলে এই মেয়েরা আর বাপের বাড়িতেও ফেরত যেতে পারতো না। বা ফেরত যেতে পারলেও তাদের অত্যাচারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকতো সবসময়ই। নবী মুহাম্মদ খুব কৌশলে আসলে তার বিবিদের এমনই এক বিপদে ফেলেছিলেন, যেখান থেকে মুক্তির কোন উপায় আসলে নেই। নবীর দাসী সহবতের ইচ্ছাকে মেনে নেয়া ছাড়া তাদের সামনে আর কোন রাস্তাই আসলে খোলা ছিল না।
নবীর স্ত্রীদের নতি স্বীকার
সবদিক বিচার বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত নবীর স্ত্রীগণ নবীর সাথে থাকা এবং দাসী মারিয়া কিবতিয়ার সাথে নবীর যৌনলীলাকে মেনে নিতে বাধ্যই হলেন। আসলে তাদের কী বা করার ছিল! শিক্ষাদীক্ষা জ্ঞান বিজ্ঞানে তারা আত্মনির্ভরশীল কোন মানুষও ছিলেন না যে, লম্পট স্বামীর গালে চড় মেরে চলে যাবেন। আজকের দিনে এরকম ঘটনা ঘটলে একজন আত্মনির্ভরশীল আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নারী নিশ্চিতভাবেই স্বামীর পেছনে লাথি মেরে ঘর থেকে চলে যেতো। কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে নবীর স্ত্রীগণ এই সাহস দেখাতে পারেননি।
বিদ্রোহী স্ত্রীদের খুশি করা আয়াত
আরেকটি সূরাতে নবীর লাম্পট্যে ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত স্ত্রীগণকে খুশী করতে আল্লাহ একটি আয়াত নাজিল করে, যেটি নবীকে আল্লাহ আর বিয়ে শাদী করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ আলেমের মতে, এই আয়াতের পরেও নবী আরো বিবাহ করে, যেটি ছিল আল্লাহর এই নির্দেশনার লঙ্ঘন। যদিও আলেমগণ বলে থাকেন, এই আয়াতটি মানসুখ হয়ে গেছে, আল্লাহ নাকি নবীকে পরে আরো বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছিলেন! কিন্তু আল্লাহ একবার আর বিয়ে করতে নিষেধ করে আবার কেন অনুমতি দেবেন, বিষয়টি একদমই গোলমেলে! [29]
অতঃপর আর কোন নারী তোমার জন্য বৈধ নয়। আর তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে চমৎকৃত করে। তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সব বিষয়ের উপর দৃষ্টি রাখেন।
— Taisirul Quran
এরপর, তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরির্বতে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয় যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে, তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই বিধান প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সব কিছুর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
এরপর তোমার জন্য (এদের অতিরিক্ত) অন্য স্ত্রী গ্রহণ হালাল নয় এবং তোমার স্ত্রীদের (তালাক দিয়ে) পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয়, যদিও অন্যদের সৌন্দর্য তোমাকে বিমোহিত করে; তবে তোমার মালিকানাধীন দাসী ছাড়া। আর আল্লাহ সকল কিছুর উপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন।
— Rawai Al-bayan
এরপর আপনার জন্য কোনো নারী বৈধ নয় এবং আপনার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয়, যদিও তাদের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে [১]; তবে আপনার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপার ভিন্ন। আর আল্লাহ্ সবকিছুর উপর তীক্ষ পর্যবেক্ষণকারী।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
নবীর লাম্পট্যের আরো কথা
অনেক মুসলিমই আজকাল লজ্জার মাথা খেয়ে বলে থাকেন, সেই যুগের কাফেররাও নাকি নবী মুহাম্মদের চরিত্র নিয়ে কোনদিন প্রশ্ন তোলেনি! নবীর নারী প্রেম আর এত বিবাহ করার বাতিক, দাসী নেয়ার বাতিক নিয়ে নাকি সেই সময়ও কোন প্রশ্ন ওঠেনি। অথচ এগুলো একেবারেই নির্লজ্জ মিথ্যাচার। সত্য হচ্ছে, সেই যুগেই নবীর এই বহুবিবাহ আর নারীলোভ দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলতেন। তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যাও করে নবীর সাহাবীগণ। শুধুমাত্র তাদেরই বাঁচিয়ে রাখা হয়, যারা নবীর অন্ধ অনুসারি ছিল। এই কারণেই পরবর্তী সময়ে নবীর বিরুদ্ধে যারা ছিল বা যারা কাফের ছিল তাদের বই পুস্তক দলিলপত্র ইতিহাস কিছুই পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় শুধুই নবীর অন্ধ অনুসারিদের তৈরি ইতিহাস। কিন্তু সেখান থেকেই অনেক কাফেরের বক্তব্যের প্রমাণ মেলে। যাদেরকে মুসলিমরা ঘৃণা ভরে কুৎসা রটনা বলে অভিহিত করতেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থ থেকে- [30]।
তাফসীরে মাযহারীতে সূরা আহজাবের তাফসীরে আয়িশার একটি বক্তব্য এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হচ্ছে। এই বর্ণনাটিতে আয়িশা বেশ তীর্যক সুরেই বলছেন, আল্লাহ তো দেখছি আপনার কোন বাসনাই অপূর্ণ রাখেন না [31] –
এই প্রসঙ্গে আয়েশার একটি অতি বিখ্যাত হাদিস রয়েছে, যা পড়া সকলের জন্য জরুরি। হাদিসটি পড়লেই বোঝা যায়, নবী মুহাম্মদের চরিত্র কতটা উন্নত ছিল! [32] [33] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ ترجئ من تشاء منهن وتؤوي إليك من تشاء ومن ابتغيت ممن عزلت فلا جناح عليك “তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তোমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা তোমার কাছে স্থান দিতে পার। আর তুমি যাকে দূরে রেখেছ, তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন ترجئ দূরে রাখতে পার। أرجئه তাকে দূরে সরিয়ে দাও, অবকাশ দাও।
৪৪২৫। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেসব মহিলা নিজকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হেবাস্বরূপ ন্যাস্ত করে দেন, তাদের আমি ঘৃণা করতাম। আমি (মনে মনে) বলতাম, মহিলারা কি নিজেকে অর্পণ করতে পারে? এরপর যখন আল্লাহ্ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ “আপনি তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আপনার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন। আর আপনি যাকে দূরে রেখেছেন, তাকে কামনা করলে আপনার কোন অপরাধ নেই।” তখন আমি বললাম, আমি দেখছি যে, আপনার রব আপনি যা ইচ্ছা করেন, তা-ই পূরণ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
জুওয়াইরিয়া বিনতে হাছির ছিলেন বনু মুস্তালিক গোত্রের সঙ্গে দাঙ্গার ফলে আটক হওয়া যুদ্ধবন্দী নারী, যিনি ঐ গোত্রের সর্দারের কন্যা ছিলেন। তার স্বামী, মুস্তফা বিন সাফাওয়ান, উক্ত আক্রমণে খুন হয়। জুয়াইরিয়া প্রাথমিকভাবে সাহাবী সাবিত বিন কায়েস বিন আল শাম্মাসের গনিমতের (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) ভাগে পড়েন। তখন জুওয়াইরিয়া মুহাম্মাদ এর কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন যে, গোত্রপ্রধানের কন্যা হিসাবে তাকে যেন মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু মুহাম্মাদ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিয়ের প্রস্তাব দেন। গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হচ্ছে, জুওয়াইরিয়া ছিলেন অসামান্য সুন্দরী। আয়িশা তাই আগেই বুঝেছিলেন, এই মেয়েকে দেখলে তার স্বামী কামাতুর হয়ে উঠবে [34]
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৪/ দাসত্বমুক্তি
পরিচ্ছেদঃ ২. মুকাতাবা (চুক্তিব্ধ গোলাম)-এর চুক্তি ভঙ্গ হলে তাকে বিক্রি করা
৩৯৩১। আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী মুস্তালিক যুদ্ধে জুয়ায়রিয়াহ বিনতুল হারিস ইবনুল মুতসতালিক বন্দিনী হয়ে সাবিত ইবনু কায়িস ইবনু শাম্মাস (রাঃ) বা তার চাচাত ভাইয়ের ভাগে পড়েন। অতঃপর তিনি নিজেকে আযাদ করার চুক্তি করেন। তিনি খুবই সুন্দরী নারী ছিলেন, নজর কাড়া রূপ ছিলো তার। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি চুক্তির অর্থ চাইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন। তিনি দরজায় এসে দাঁড়াতেই আমি তাকে দেখে অসন্তুষ্ট হলাম। আমি ভাবলাম, যে রূপ-লাবন্য তাকে দেখেছি, শিঘ্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এভাবে দেখবেন।
অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জুয়ায়রিয়াহ বিনতুল হারিস, আমার সামাজিক অবস্থান অবশ্যই আপনার নিকট স্পষ্ট। আমি সাবিত ইবনু কায়িস ইবনু শাম্মাসের ভাগে পড়েছি। আমি মুক্ত হওয়ার চুক্তিপত্র করেছি, চুক্তির নির্ধারিত অর্থ আদায়ে সাহায্য চাইতে আপনার কাছে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর চেয়ে ভালো প্রস্তাবে তুমি রাজি আছো কি? তিনি বললেন, কি প্রস্তাব, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আমি চুক্তির সমস্ত পাওনা শোধ করে তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি আছি।
আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুয়ায়রিয়াহকে বিয়ে করেছেন, একথা সবার মাঝে জানাজানি হয়ে গেলো। তারা তাদের আওতাধীন সমস্ত বন্দীকে আযাদ করে ছাড়তে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শ্বশুর বংশের লোক। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নিজের গোত্রের কল্যাণের জন্য তার চাইতে বরকতময়ী মহিলা আমি আর কাউকে দেখিনি। শুধু তার মাধ্যমে বনী মুস্তালিকের একশো পরিবার আযাদ হয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম শাসক সরাসরি বিয়ে করতে পারেন।[1]
হাসান।
[1]. আহমাদ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
সীরাত গ্রন্থেও এই বিবরণ পাওয়া যায় [35] –
নবীর সিরাত গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মৃত্যুশয্যাতেও আয়িশা নবীকে বলছেন, নবীর আগে যদি আয়িশার মৃত্যু হতো, তাহলে নবী আয়িশাকে দাফন করেই আরেক বিবি নিয়ে আয়িশার ঘরেই আরেক বিবি তুলতেন। অর্থাৎ, নবীর চরিত্র আয়িশা খুব ভালভাবেই জানতেন এবং বুঝতেন [36] –
বিবরণটি সহিহ বুখারীতেও এসেছে আরও স্পষ্টভাবে [37] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬২/ রোগীদের বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ২২৬৫. রোগীর উক্তি “আমি যাতনা গ্রস্থ” কিংবা আমার মাথা গেল, কিংবা আমার যন্ত্রণা প্রচন্ড আকার ধারণ করেছে এর বর্ণনা। আর আইয়ুব (আঃ) এর উক্তিঃ হে আমার রব। আমাকে কষ্ট-যাতনা স্পর্শ করেছে অথচ তুমি তো পরম দয়ালু
৫২৬৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আবূ যাকারিয়্যা (রহঃ) … কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছিলেন হায় যন্ত্রনায় আমার মাথা গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি এমনটি হয় আর আমি জীবিত থাকি তাহলে আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো, তোমার জন্য দু’আ করবো। আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ হায় আফসুস, আল্লাহর কসম। আমার মনে হয় আপনি আমার মৃত্যুকে পছন্দ করেন। আর এমনটি হচ্ছে আপনি পরের দিনই আপনার অন্যান্য সহধর্মিনাদের সঙ্গে রাত যাপন করতে পারবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং আমি আমার মাথা গেল বলার বেশি যোগ্য। আমি তো ইচ্ছা করেছিলাম কিংবা বলেছেন, আমি ঠিক করেছিলাম আবূ বকর (রাঃ) ও তার ছেলের নিকট সংবাদ পাঠাবো এবং অসীয়ত করে যাবো, যেন লোকদের কিছু বলার অবকাশ না থাকে কিংবা আকাঙ্ক্ষাকারীদের কোন আকাঙ্ক্ষা করার অবকাশ না থাকে। তারপর শুনলাম আল্লাহ (আবূ বকর ব্যতীত অন্য কেউ খিলাফতের আকাঙ্ক্ষা করুক) তা অপছন্দ করবেন, মুমিনগণ তা পরিহার করবেন। কিংবা তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তা পরিহার করবেন এবং মুমিনগণ তা অপছন্দ করবেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ কাসিম বিন মুহাম্মাদ (রহঃ)
আয়িশার বর্ণনা অনুসারে, নবী যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ইচ্ছে অনুসারে নারীদের গ্রহণ করে ভোগ করেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত নবীর মৃত্যু হয় নি। অর্থাৎ নবীর ভোগের ইচ্ছে সম্পূর্ণ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ পাক তাকে মৃত্যু দেননি [38] –
সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৬/ নিকাহ (বিবাহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলের উপর যা ফরয করেছেন এবং অন্যদের জন্য যা হারাম করেছেন- আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে
৩২০৭. মুহাম্মদ ইন মানসূর (রহঃ) … আতা (রহঃ) বলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনতিকাল করেন নি, যে পর্যন্ত না তার জন্য হালাল করা হয়েছে মহিলাদের মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন তাকে গ্রহণ করার।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আতা ইবনু আবী রাবাহ (রহঃ)
উপসংহার
ইসলামের নবী মুহাম্মদ যে অসম্ভব নারী লোভী আর কামুক স্বভাবের ছিলেন, সেটি যেকোন সুস্থ মাথার মানুষের বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। খাদিজা জীবিত থাকাকালীন তিনি এসব কিছুই করতে পারেননি, যার প্রধান কারণ ছিল খাদিজার অর্থ সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তি। খাদিজার ঘরে ঘরজামাই এবং খাদিজার টাকায় প্রতিপালিত হতদরিদ্র রাখালবালক মুহাম্মদের পক্ষে খাদিজার ঘরে বসে দাসী সহবত নিশ্চয়ই সম্ভব ছিল না। তাহলে খাদিজা সেইদিনই লাথি মেরে মুহাম্মদকে বিলাস বহুল বাড়ি থেকে বের করে দিতো। কিন্তু খাদিজার মৃত্যুর একমাসের মধ্যেই নবী দুই দুইটি বিবাহ করে করে ফেলেন [39], পরবর্তীতে দাসীবাঁদী বুড়ি ছুড়ি শিশু যুদ্ধবন্দী নারী কাউকেই তিনি আর ছাড়েননি। স্ত্রীদের প্রতিবাদকেও তিনি দমন করেছেন আল্লাহর আয়াত নামিয়ে, যেখানে আল্লাহ মুহাম্মদের পক্ষে উকালতি করেছেন এবং রীতিমত তার স্ত্রীদের হুমকিধামকিও দিয়েছে। মুহাম্মদ ঠিকমত দাসী সহবত করতে পারছেন না, এই চিন্তায় মহাবিশ্বের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহর ঘুম নিশ্চয়ই হারাম হয়ে গিয়েছিল, খুবই পেরেশান হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এগুলো একটু সুস্থ স্বাভাবিক মাথায় চিন্তা করলেই বোঝা যায়, ঘটনার ভেতরের ঘটনা আসলে কি! আশাকরি পাঠকগণ দলিলপ্রমাণগুলো ভালভাবে পড়ে যাচাই করবেন, এবং এই নিয়ে ভাববেন।
তথ্যসূত্র
- কোরআন ৩৩ঃ৫০ [↑]
- সূরা তাহরীম, আয়াত ১-৫ [↑]
- মারিয়া কিবতিয়া – বাঁদী পত্নী সমাচার! [↑]
- সূনান নাসাঈ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬১ [↑]
- সূনান নাসাঈ (ইফাঃ), খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১০৬। ডাউনলোড লিঙ্ক [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৭৬৬ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৯৭, ৪৯৮ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৫৭৮৮ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬০৩- ৬০৪ [↑]
- তাফসীর ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, অনুবাদঃ ড মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান, তাফসীর পাবলিকেশন্স কমিটি, খণ্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৫৫৭- ৫৬০ [↑]
- তাফসীর ইবনে কাসির, তাফসীর পাবলিকেশন্স কমিটি, ১৭ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৬৬, ৫৬৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৭২ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৪৭ [↑]
- Holland, Tom (২০১২), In the Shadow of the Sword। Doubleday, পৃষ্ঠা ৪২ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬০৪ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৯৭ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৫৯ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ১৭৬ [↑]
- সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ২০১৬ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৫৯৪ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৫৮ [↑]
- সূরা আহযাব, আয়াত ৬ [↑]
- সূরা আহজাব, আয়াত ৫৩ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৪৯ [↑]
- আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৯ [↑]
- সূরা আহজাব, আয়াত ৩৩ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৫৭ [↑][↑]
- সূরা আহজাব, আয়াত ৫২ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৩৯, ৪০ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৫ [↑]
- সহীহুল বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৩৯৩১ [↑]
- সিরাতুন নবী (সাঃ), ইবনে হিশাম, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০২ [↑]
- সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, সম্পাদনা পরিষদের তত্ত্বাবধানে অনুদিত, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫২৬৪ [↑]
- সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩২০৭ [↑]
- আয়িশা কি নয়বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন? [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
এরকম লুইচ্চা বদমাইশ নবী হয় কি করে ! নিজের মত করে আয়াত নাজিল করে নিজের ফায়দা লুটে নেয় । আর মানুষ এ অন্ধকার থেকে কখন বেরিয়ে আসবে । কখন বোধোদয় হবে মানুষের । চার পাশে কাঠ মোল্লাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ, ওয়াজিদের চিল্লা পাল্লায় ঘুম হারাম । এসব আর কতদিন চলবে কে জানে ।
আসিফ ভাই, আশা করি ভাল আছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪২৫ নম্বর হাদিসটা মনে হয় ৪৪২৯ হবে। hadithbd.com এ ৪৪২৯ দেখাচ্ছে।
আর কত কাল বোকা থাকবি রে আসিফ?
he’s just a man after all 💀💀
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যহ নিয়মিতভাবে আসরের পর দাঁড়ানো অবস্থায়ই সকল স্ত্রীর কাছে কুশল জিজ্ঞাসার জন্যে গমন করতেন। একদিন যায়নব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে একটু বেশি সময় অতিবাহিত করলেন এবং মধু পান করলেন। এতে আমার মনে ঈর্ষা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল এবং আমি হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার সাথে পরামর্শ করে স্থির করলাম যে, তিনি আমাদের মধ্যে যার কাছে আসবেন, সেই বলবেঃ আপনি “মাগাফার” পান করেছেন। (মাগাফীর এক প্রকার বিশেষ দুৰ্গন্ধযুক্ত আঠাকে বলা হয়।) সেমতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ না, আমি তো মধু-পান করেছি। সেই বিবি বললেনঃ সম্ভবত কোন মৌমাছি মাগাফীর বৃক্ষে বসে তার রস চুষেছিল। এ কারণেই মধু দুৰ্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুৰ্গন্ধযুক্ত বস্তু থেকে সযত্নে বেঁচে থাকতেন। তাই অতঃপর মধু খাবেন না বলে কসম খেলেন। যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা মনঃক্ষুন্ন হবেন চিন্তা করে তিনি বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্যেও বলে দিলেন। কিন্তু সেই স্ত্রী বিষয়টি অন্য স্ত্রীর গোচরীভূত করে দিল। ফলে এ আয়াত নাযিল হয়। [বুখারী: ৪৯১২, ৫২৬৭, ৬৬৯১, মুসলিম: ১৪৭৪]