যুক্তিবাদ

ব্যক্তি আক্রমণ ও রেটোরিকাল ডিভাইস নিয়ে কিছু কথা – পর্ব ১

(একটাই লেখা ছিল, কিন্তু লেখাটা বড় হয়ে যাওয়ায় দুটো পর্বে ভাগ করে দিচ্ছি, সকলেরই পড়া উচিৎ)

এখানে চার প্রকারের ব্যক্তি আক্রমণ বা এড হোমিনেম নিয়ে লেখা হচ্ছে। এড হোমিনেম (এবিউসিভ), এড হোমিনেম (সারকামস্টেনশিয়াল), এড হোমিনেম (গিল্ট বাই এসোসিয়েশন), এবং এড হোমিনেম (টু কুওকুয়ি)। এই চারটি এড হোমিনেম নামক লজিকাল ফ্যালাসি বা যৌক্তিক হেত্বাভাস বা কুযুক্তির অন্তর্গত। কোন আলোচনা বা বিতর্কের সময় খেয়াল রাখা উচিৎ যাতে এগুলো আলোচনায় না আসে। ফেইসবুকের মত অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা ও তর্ক বিতর্ক লেগেই থাকে। আর সেখানে স্বভাবতই প্রবেশ করে এড হোমিনেম বা ব্যক্তি আক্রমণগুলো। কিন্তু শেষপর্যন্ত এগুলো আলোচনার পরিবেশকেই নষ্ট করে, কেননা এড হোমিনেম বা ব্যক্তি আক্রমণগুলো কোনটাই যুক্তিসঙ্গত নয়, সবকটাই কুযুক্তি।

১। এড হোমিনেম (এবিউসিভ)

এটি পারসোনাল এবিউজ, পারসোনাল এটাক, এবিউসিভ ফ্যালাসি, ড্যামিং দ্য সোর্স, নেম কলিং, রিফিউটেশন বাই কেরিকেচার, এগেইনস্ট দ্য পারসোন, এগেইনস্ট দ্য ম্যান নামেও পরিচিত। এই এড হোমিনেম (এবিউজ)-কে পারসোনাল এটাক বা বাংলায় ব্যক্তি আক্রমণ বলা হয় বলে ভাববেন না কেবল এর মাধ্যমেই ব্যক্তি আক্রমণ ঘটে। বাদ বাকি তিনটি এড হোমিনেমও ব্যক্তি আক্রমণ ঘটে থাকে। তাই সকল এড হোমিনেমকেই এই লেখায় ব্যক্তি আক্রমণ বলা হচ্ছে। কেন বলা হচ্ছে তা বাকিগুলো পড়লেই পরিষ্কার হবে। যাই হোক, এই এড হোমিনেমের ক্ষেত্রে ব্যক্তি যে যুক্তি দিচ্ছেন তাকে আক্রমণ না করে, যে ব্যক্তি যুক্তি দিচ্ছেন তাকে আক্রমণ করা হয়, যেখানে ব্যক্তির উপর আক্রমণটি সেই ব্যক্তি যে যুক্তি দিচ্ছেন তার সাথে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। এর যৌক্তিক আকার বা লজিকাল ফর্মটি হচ্ছে –
১ নং ব্যক্তি এর দাবি হচ্ছে “ক”
১ নং ব্যক্তি একজন মূর্খসুতরাং,
“ক” দাবি সত্য নয়।

উদাহরণ দেয়া যাক –
(১) আমার বিরোধী দাবি করলেন যে কর কমিয়ে দেয়া একটি উত্তম প্রস্তাব। এই দাবিটি এমন একজন নারীর কাছ থেকে আসছে যিনি প্রতি রাতে এক পাঁইট করে বেন এন্ড জেরির পণ্য গেলেন।
(২) টনি আমাদের এটাই বিশ্বাস করাতে চায় যে প্রাণের উৎপত্তি একটি “একসিডেন্ট” ছিল। টনি একজন নাস্তিক মুর্খ, যে চার্চের চেয়ে হাজতেই বেশি সময় কাটায়। তাই তার কথায় বিশ্বাস করার কিছু নেই।

প্রথম উদাহরণে সেই ব্যক্তি আইসক্রিম ভালোবাসেন, এর সাথে কর কমানোর কোন সম্পর্ক নেই, তাই এটি তার যুক্তির সাথে অপ্রাসঙ্গিক। এড হোমিনেম আক্রমণগুলো সেই হতাশা বা মরিয়া অবস্থার সময়ই ঘটে থাকে যখন ব্যক্তি কোন উপযুক্ত প্রতি-যুক্তি খুঁজে পান না। দ্বিতীয় উদাহরণের ক্ষেত্রে বলব, টনি নাস্তিক হতে পারে, সে চার্চের চেয়ে বেশি কারাগারেও বেশি দিন কাটাতে পারে। কিন্তু এগুলো তার প্রাণের উদ্ভব সংক্রান্ত যুক্তির সাথে অপ্রাসঙ্গিক।

যারা যারা এরকম ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হবেন তাদেরকে কিছু কথা বলে রাখছি। কেউ যদি আপনার উপর এরকম আক্রমণ করে তবে আপনি সেটাকে আপনার যুক্তির উচ্চমানের একটি প্রশংসা হিসেবে গ্রহণ করুন। এটি সাধারণত তাদের হতাশা বা মরিয়াভাবেরই লক্ষণ।

২। এড হোমিনেম (সারকামস্টেনশিয়াল)

এটি আপিল টু মোটিভ, আপিল টু পারসোনাল ইন্টারেস্ট, আরগুমেন্ট ফ্রম মোটিভস, কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট, ফল্টি মোটিভস, নাইভ সিনিসিজম, কোয়েশ্চেনিং মোটিভস, ভেস্টেড ইন্টারেস্ট নামেও পরিচিত। এই এড হোমিমের ক্ষেত্রে নির্দেশ করা হয় যে, যে ব্যক্তি কোন যুক্তি প্রদান করছেন তিনি কোন পক্ষপাত বা কোন বিশেষ অবস্থানকে পূর্ব থেকেই সমর্থন করার কারণে সেই যুক্তিটি প্রদান করছেন। আর তাই তার যুক্তিটি অকার্যকর বা তার দাবিটি মিথ্যা। এর যৌক্তিক আকার বা লজিকাল ফর্মটি হচ্ছে –
১ নং ব্যক্তির দাবি হচ্ছে “ক”
“ক” দাবি সত্য হওয়ায় ১ নং ব্যক্তির স্বার্থ রয়েছে
সুতরাং “ক” দাবি মিথ্যা

এবারে উদাহরণ দেয়া যাক –
(১) বিক্রেতা – এই গাড়ির গ্যাস মাইলেজ অন্য গাড়িগুলোর তুলনায় উৎকৃষ্ট, এবং এটি কনজিউমার রিপোর্ট অনুযায়ী সব থেকে বেশি নির্ভরযোগ্য গাড়ি। ক্রেতা – আমার সন্দেহ হচ্ছে। তোমার আমাকে এই গাড়িটি গছিয়ে দিতে চাইছ।
(২) অবশ্যই আপনার মন্ত্রী বলবেন যে তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। না হলে তো তার আর মন্ত্রিত্ব থাকবে না।

প্রথম উদাহরণটিতে গাড়িটি বিক্রি করায় বিক্রেতার স্বার্থ রয়েছে। তার মানে এই নয় যে তিনি মিথ্যা বলছেন। তিনি মিথ্যা বলতে পারেন, কিন্তু এই উপসংহার আপনি কেবল তার স্বার্থের উপর ভিত্তি করে টানতে পারেন না। এটি ধরে নেয়া যৌক্তিক যে, বিক্রেতাগণ তার পণ্য ও সেবা এই কারণে বিক্রি করেন, কারণ তারা তাদের পণ্য ও সেবায় বিশ্বাস করেন। দ্বিতীয় উদাহরণটির ক্ষেত্রে মন্ত্রী ঈশ্বরে বিশ্বাস করে মানে এই নয় যে, তিনি মন্ত্রী হবার জন্যই ঈশ্বরে বিশ্বাস করার নাটক করছেন।

যারা এরকম ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হয়েছেন বা হন বা হবেন তাদের জন্য কিছু কথা বলে রাখি। কোন বিশেষ অবস্থানে থাকা এবং তার মাধ্যমে বিশেষ কিছু অর্জন করতে চাওয়া ভুল কিছু নয়। কোন বিশেষ মতবাদ সমর্থন করা এবং তার সমর্থনে যুক্তি দেয়াও ভুল কিছু নয়। নিজের অবস্থান, উদ্দেশ্য, আদর্শকে সমর্থন করা ও তার স্বপক্ষে যুক্তি দেয়ায় দোষের কিছু নেই। এগুলোতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু কেউ আপনার এই অবস্থান, এই আদর্শ এর অযুহাত দেখিয়ে আপনার দাবিকে মিথ্যা বলতে পারেন না, আপনার যুক্তিকে অকার্যকর করতে পারেন না। খুব ভাল হয় যদি আপনি এটা নিয়ে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়ে নিজেই এই ব্যাপারে পরিষ্কার করে দিন।

৩। এড হোমিনেম (গিল্ট বাই এসোসিয়েশন)

এটি এসোসিয়েশন ফ্যালাসি, ব্যাড কোম্পানি ফ্যালাসি, কোম্পানি দ্যাট ইউ কিপ ফ্যালাসি, দে আর নট লাইক আস ফ্যালাসি, ট্রান্সফার ফ্যালাসি নামেও পরিচিত। এই এড হোমিনেমের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বা বিষয়কে নেতিবাচকভাবে দেখা হয় কেননা সেই ব্যক্তি বা বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তি বা বিষয় নেতিবাচক। এর যৌক্তিক আকারটি হল –
১ নং ব্যক্তি “ক” দাবি করছেন
২ নং ব্যক্তি “ক” দাবি করেন, এবং তিনি একজন মুর্খ
তাই ১ নং ব্যক্তিও মুর্খ

উদাহরণ দেখা যাক –
(১) ডেলোরেস সমান শ্রমে সমান মজুরির সমর্থক। সকল এক্সট্রিম নারীবাদী দলগুলোই এটি সমর্থন করে। তাই ডেলরেস এর মত এক্সট্রিমদেরকে এত গুরুতরভাবে নেয়ার কিছু নেই, অন্তত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তো নয়ই।
(২) কম্বোডিয়ান মাওবাদী বিপ্লবী পল পত ধর্মের বিরুদ্ধে ছিলেন, এবং তিনি নিষ্ঠুর ও অমানুষ ছিলেন। ফ্র্যাংকিও ধর্মের বিরুদ্ধে, তাই ফ্র্যাংকিও অবশ্যই একটা বাজে লোক।

প্রথম উদাহরণে ডেলোরেস সকল নারী ও পুরুষের সমান শ্রম ও সমান মজুরির নীতিতে বিশ্বাস করেন বলেই তাকে এক্সট্রিম নারীবাদী ধরে নেয়া যায় না। দ্বিতীয় উদাহরণের ক্ষেত্রে পল পত ও ফ্র্যাংকির একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে একই মত থাকার কারণে এটা বলা যায় না যে সম্পর্কিত নয় এমন অন্যান্য বিষয়ে তারা অভিন্ন হবেন তা বলা যায় না, বিশেষ করে এটা তো বলা যায়ই না যে ফ্র্যাংকিও একজন বাজে লোক। পল পত ধর্মের বিরুদ্ধে থাকায় একজন খারাপ লোক ছিলেন না, গণহত্যার সংঘটন করার জন্য তাকে বাজে লোক বলা হয়।

যারা এরকম ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হন তাদেরকে বলব আপনার আচরণের সাথে কোন নেতিবাচক চরিত্রের কোন আচরণের মিল থাকতেই পারে, তাতে দোষের কিছু নেই। কোন নেতিবাচক আচরণ এর উদ্ভব কোথা থেকে, তার সাথে অন্যান্য আচরণগুলোর কার্যকারণ সম্পর্ক কী সেগুলো নিয়েও বিচার বিশ্লেষণ দরকার। কেউ এরকম দাবি করলে তাকে সেই বিচার বিশ্লেষণ থেকে বলতে পারেন যে এরকম আচরণের অনুরূপতা দোষের কিছু নয়, সেই সাথে সেই আচরণের সাথে আপনার আচরণের মধ্যে কার্য কারণ সম্পর্ক নেই তাও দেখিয়ে দিতে পারেন।

৪। এড হোমিনেম (টু কুওকুয়ি)

একে “ইউ টু” ফ্যালাসি, হিপোক্রিসি, পারসোনাল ইনকনসিস্টেন্সিও বলা হয়ে থাকে। এখানে কোন ব্যক্তি তার যুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করেন না এই দাবি করে তার যুক্তিকে ভিত্তিহীন বা অকার্যকরী দাবি করা হয়। এর লজিকাল ফর্মটি হচ্ছে –
১ নং ব্যক্তি বলছেন “ক” দাবি সত্য, কিন্তু ১ নং ব্যক্তি এমন আচরণ করছেন যেন “ক” দাবি সত্য নয়
সুতরাং “ক” দাবি অবশ্যই সত্য নয়

উদাহরণ দেয়া যাক –
(১) – তোমার ওটা খাওয়া উচিৎ নয়… বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে ফ্যাট বার্গার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। – তুমি সবসময়ই ফ্যাট বার্গার খাও, সুতরাং সেটা সত্য হতে পারে না
(২) জিমি সোয়াগার্ট (ইভাঞ্জেলিস্ট নেতা) যৌন অনৈতিকতা বিরুদ্ধে যুক্তি দেন। তবুও বিভিন্ন যৌনকর্মীর সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই যৌন অনৈতিকতা গ্রহণযোগ্য।

১ম উদাহরণে ১ম ব্যক্তি আসলেই তার উপদেশটি নিজে অনুসরণ করেন কিনা তাতে কিছু আসে যায় না। বক্তব্যটির সত্য বা মিথ্যা ১ম ব্যক্তি সেই অনুযায়ী আচরণ করছেন নাকি করছেন না তার উপর নির্ভর করবে না। এমন নয় যে প্রথম ব্যক্তির ফ্যাট বার্গার খাবার কারণ হল তার দাবিটি মিথ্যা, বরং এর অন্য অনেক কারণ থাকতে পারে, একটি সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে ফ্যাট বার্গার দেখলে লোভ সংবরন করাটা কঠিন হয়ে যায়। ২য় উদাহরণে জিমি সোয়াগার্ট যৌনকর্মীদের সাথে কী করেন সেটা তার যৌন অনৈতিকতার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, কিন্তু যৌন অনৈতিকতার পক্ষের বা বিপক্ষের যুক্তির সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।

যারা এরকম ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হন তাদের জন্য কিছু কথা বলে রাখি। আপনি নিজে কী করছেন কোন কাজ করতে পারছেন কিনা তার সাথে আপনার কোনটাকে ঠিক মনে করেন, সেই সম্পর্কে আপনার কী মত তা সম্পর্কিত নয়, যদি না আপনি নিজে যা করেন তাকেও আপনার এই মত বা আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করেন। ব্যক্তির আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইচ্ছাশক্তির অভাব, সিস্টেমের ত্রুটি ইত্যাদির কারণে তিনি যেটাকে ঠিক মনে করেন সেখান থেকে বিচ্যুত হতেই পারেন। কেউ যদি তাকে কেন্দ্র করে আপনাকে আক্রমণ করে তবে তা নিয়ে বিচলিত হবেন না। আপনি জানেন আপনি কেন আপনি যা ঠিক মনে করেন সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারছেন না। সেই বিষয়গুলো অবাস্তব নয়, সেগুলোকে সামনে তুলে ধরুন। পারলে অপরপক্ষ তা নিয়ে কিছু বলার আগেই বিবৃতি দেবার সময় নিজের এই অক্ষমতার ব্যাপারগুলো বলে দিন। যেমন ধূমপানের বেলায় বলতে পারেন, “আমার মত ধূমপান শুরু করে কখনই বোকা হয়ো না। আমি জানি যে এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, আর আমার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও এটা খুব ক্ষতি করছে, আমার মৃত্যুরও কারণ হতে পারে এটা। কিন্তু তুমি যদি ধূমপান শুরু না করো তবে তুমি এটাকে মিসও করবে না, বাধ্য হয়ে ধূমপানও করবে না, যেমনটা আমি করি।”

ব্যক্তি বা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিতর্কে এই কুযুক্তিগুলোর সীমাবদ্ধতা

এবারে আসা যাক এই এড হোমিনেম বা ব্যক্তি আক্রমণের কিছু সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে। সাধারণ আলোচনায় এইসব সীমাবদ্ধতা কাজ করে না। কিন্তু বিতর্ক তো কেবল সাধারণ কোন বিষয়েই ঘটে না, লিগাল ডিবেটগুলোতে বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান। এই অবস্থায় বিশেষ এই যৌক্তিক হেত্বাভাসগুলোর সাথে আরও বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন এড হোমিনেম (এবিউসিভ) ও এড হোমিনেম (সারকামস্টেনশিয়াল) এর ক্ষেত্রে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট বা ব্যক্তি স্বার্থ সামনে চলে আসে। যখন ব্যক্তির উপর আক্রমণটি তার যুক্তির সাথে প্রাসঙ্গিক হবে তখন সেটি কুযুক্তি হবে না। একটি উদাহরণে বেন এন্ড জেরির পণ্য ব্যবহারের কথা ছিল। সেখানে একজন ব্যক্তি পণ্যের উপর কম কমাতে চেয়েছিলেন। তিনি বেন এন্ড জেরির প্রোডাক্ট এক পাঁইট করে রাতে খান, সেটা আনা কুযুক্তি ছিল। কিন্তু যদি তিনি বেন এন্ড জেরির পণ্যে ট্যাক্স কমাতে চান, এবং প্রতি রাতে সেই প্রোডাক্ট বেশি করে খান তবে সেটা কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট বা ব্যক্তি স্বার্থের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসবে। রাতের বেলায় বেন এন্ড জেরির পণ্য খাবার খাদ্যাভাস কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট এর একটি শক্তিশালী সাক্ষ্য হবে। এগুলোতে ব্যক্তির বিশেষ পক্ষপাত বা বায়াসও সামনে চলে আসে।বিশেষ বিষয়ে কোন মানুষের পক্ষপাত বা বায়াস, অথবা কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের সংঘাত যুক্তির সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলে, সাধারণত যদি সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে তা অধিক পরিমাণে চিহ্নিত হয়, তবে যুক্তিটিকে কুযুক্তি কম এবং বৈধ মোটিভ হিসেবে বেশি দেখা হয়।

এড হোমিনেম (গিল্ট বাই এসোসিয়েশন) এর ক্ষেত্রে যদি এটি দেখানো যায় যে, দুটো বৈশিষ্ট্যের মধ্যে (উপরের উদাহরণে ঈশ্বরে বিশ্বাস ও খারাপ ব্যক্তি হওয়া যেমন দুটো বৈশিষ্ট্য ছিল) সম্পর্ক কোন ভাবে কার্যকারণ সম্পর্কের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, তবে কোন ব্যক্তির মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য দেখা গেলে অপর বৈশিষ্ট্য দেখার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে দাবিগুলো কুযুক্তি না হয়ে বৈধ হতে পারে। যেমন পল পত গণহত্যা করেছিলেন তাই তিনি খারাপ ব্যক্তি ছিলেন। এখন যদি ফ্র্যাংকিও গণহত্যা সংঘটন করে তবে সেও খারাপ ব্যক্তি। এড হোমিনেম (টু কুওকুয়ি) এর উদাহরণের ক্ষেত্রে যদি জিমি সোয়াগার্ট দাবি করতেন যে তার কাজটি যৌন নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাহলে একে ঘিরে বিতর্কের সুযোগ রয়েছে।

যাই হোক, সাধারণ আলোচনার সময় এরকম সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচ্য নয়, কেননা সেগুলোতে বিতর্কের বিষয়বস্তু ব্যক্তি হয়না। যার সাথে কোন বিষয়ে বিতর্ক হচ্ছে, বিতর্কের বিষয় রেখে ব্যক্তির চরিত্র নিয়ে বিতর্ক শুরু করাটা ব্যক্তি আক্রমণই হবে। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তিকে নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়, যেমন অনেক সময়েই কারও টাইমলাইনে বা কোন গ্রুপে কোন ব্যক্তির আচরণ নিয়ে বিচারসভা বা খাপ বসতে দেখা যায়, সেসব ক্ষেত্রে ব্যক্তি আক্রমণের এই সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচ্য হতে পারে। অন্যথায় এগুলো বিবেচ্য হবে না।

রেফারেন্স

Walton, D. (1998). Ad hominem arguments. University of Alabama Press.

অলংকার এর সমস্যা

বিভিন্ন বক্তব্য বা আলোচনা থেকে কুযুক্তি বা যৌক্তিক হেত্বাভাসগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য যুক্তিবাক্য বা আর্গুমেন্ট গঠন করে সেগুলোকে লজিকাল ফর্মে বসিয়ে তারপর দেখতে হয় এগুলো আসলেই কুযুক্তি কিনা। মানুষের কথাবার্তায় থেকে সবসময় যুক্তিবাক্য বা আর্গুমেন্ট বের করা সহজ হয়না। কেননা মানুষের কথায় থাকে বিভিন্ন রকমের অলঙ্কার বা রেটোরিকাল ডিভাইস (রেটোরিক এর পরিভাষা অলঙ্কারশাস্ত্র ও রেটোরিকাল ডিভাইস এর পরিভাষা হিসেবে অলঙ্কার ব্যবহার করছি)। অলঙ্কার সাহিত্যে বা আমাদের বিভিন্ন কথায় সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এগুলো মানুষকে প্রভাবিতও করে। আর এগুলোকে ব্যবহার করে মানুষ ব্যক্তি আক্রমণও করেন। যিনি অলংকার প্রয়োগ করে ব্যক্তি আক্রমণ করবেন তিনি হয়তো যাকে প্রভাবিত করতে চাইছেন তাকে আরও বেশি করে প্রভাবিত করার জন্য অলংকার ব্যবহার করবেন, অথবা তিনি নিজের ব্যক্তি আক্রমণকে সরাসরি প্রকট করতে চান না বলে অলংকার প্রয়োগ করবেন, অথবা অধিক আবেগ প্রকাশের জন্য করবেন, অথবা অভ্যাসবশতই করবেন। অনেক কারণই থাকতে পারে, কিন্তু কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা, যুক্তিতর্কের ক্ষেত্রে সেই অলংকারগুলোকে সরিয়ে বিবৃতির আসল অর্থ বের করে আনতে হবে। আগামী পর্বে আমি বেশি কয়েকটি অলঙ্কার বা রেটোরিকাল ডিভাইস সম্পর্কে উদাহরণ সহ বর্ণনা করব। সেগুলো দেখলে বুঝতে সহজ হবে যে কিকরে অলঙ্কারকে বিশ্লেষণ করে যুক্তিবাক্য গঠন করা যায়।

দ্বিতীয় পর্বের লিংক – ব্যক্তি আক্রমণ ও রেটোরিকাল ডিভাইস নিয়ে কিছু কথা – পর্ব ২

(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *