মানুষের বিবর্তনে সদ্যপ্রাপ্ত “ড্রাগন ম্যান” জীবাশ্মের ভুমিকা
সূচিপত্র
প্রাক কথন
এই লেখাটি নেচার পত্রিকায় ২৫ জুন, ২০২১ তারিখে প্রকাশিত একটি খবরের বঙ্গানুবাদ [1] এবং বিবর্তন সম্পর্কে সদ্য প্রকাশিত কয়েকটি বৈজ্ঞানিক রিপোর্ট ও লেখায় যে যে তথ্য পাওয়া গেছে, সেই তথ্যগুলি সহজবোধ্য ভাষায় তুলে ধরার প্রচেষ্টা মাত্র। আর একটি বিষয়, এখানে দেখবেন বেশ কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সকল ইংরেজি শব্দের বাংলা তর্জমা করা যায় না। তাই যেখানেই দেখা যাবে ভারি ভারি ইংরেজি শব্দ আসছে, সেখানে তার অর্থ ও উচ্চারণ প্রথমবার বলে দেওয়া হবে।
ঘটনার সারসংক্ষেপ
ইজরায়েল এবং চায়নায় মানুষের কিছু জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একটি নমুনা হল “ড্রাগন ম্যান”। মনে করা হচ্ছে এই নতুন জীবাশ্মগুলি কোন অজানা প্রাচীন মানুষের প্রজাতি সন্ধান দেবে। কিন্তু প্রকাশিত তথ্য বিজ্ঞান মহলে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। বিবর্তন বিষয়ক আরও লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হোমিনিন কাদের বলে?
প্রাইমেট (Primate) হোল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের একটি গোষ্ঠী যাদের মধ্যে লেমুর, লোরিস, বাঁদর, এপ আর মানুষ। এপ বা ape হোল সেইসব প্রাইমেট যাদের লেজ নেই, যেমন গিবন আর শিম্পাঞ্জি, বোনোবো, ওরাংওটাং, গরিলা আর মানুষ। গিবন ছাড়া বাকিদের হোমিনিডাই বা হোমিনিডি (Hominidae) বলে। জীবজগতের শ্রেনিবিন্যাস করার পদ্ধতিকে বলা হয় Taxonomy (ট্যাক্সোনমি)। এই শ্রেণীবিন্যাসের পদ্ধতিতে কতকগুলি ধাপ আছে, যেমন: ডোমেইন, কিংডম, ডিভিসন, ক্লাস, অর্ডার, ফ্যামিলি, জেনাস, স্পিসিস বা প্রজাতি। হোমিনিন হোল হোমিনিনি (Hominini) “ট্রাইব (tribe)”-এর একটি সদস্য, যাদের মধ্যে বর্তমান যুগে কেবল আধুনিক মানুষই বেঁচে আছে।
কার্ল লিনিয়াস ১৭ শতাব্দীতে জীবের শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতি শুরু করেন। পরের দিকে সেই প্রাচীন পদ্ধতির বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়। যেমন প্রাচীন পদ্ধতি অনুযায়ী মানুষের অবস্থান এইরকম:
- Kingdom: Animalia (অর্থাৎ প্রাণী)
- Phylum: Chordata (সাধারণ ভাবে বললে বোঝায় মেরুদণ্ডী)
- Class: Mammalia (স্তন্যপায়ী)
- Order: Primate
- Family: Hominidae
- Genus: Homo (genus অর্থাৎ গন)
- Species: sapiens
এই বিন্যাস অনুযায়ী হোমিনিড বলতে বোঝাত Hominidae পরিবারের সমস্ত সদস্যদের। পরবর্তীকালে Hominidae-এর মধ্যে ওরাংওটাং, গরিলা ও শিম্পাঞ্জিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কারণ এদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। জিনগত পরীক্ষা করে জানা যায়, তুলনামুলক ভাবে ওরাংওটাঙের থেকে মানুষের সাথে গরিলা ও শিম্পাঞ্জির সাদৃশ্য অনেক বেশী। তাই নতুন শ্রেণীবিন্যাস এইরকম:
- Kingdom: Animalia (অর্থাৎ প্রাণী)
- Phylum: Chordata (সাধারণ ভাবে বললে বোঝায় মেরুদণ্ডী)
- Class: Mammalia (স্তন্যপায়ী)
- Order: Primate
- Family: Hominidae (ওরাংওটাং, গরিলা, শিম্পাঞ্জী ও মানুষ)
- Subfamily: Homininae (গরিলা, শিম্পাঞ্জী ও মানুষ)
- Tribe: Hominini (মানুষ ও অধুনা বিলুপ্ত মানুষের কাছাকাছি অন্যান্য প্রজাতি)
- Genus: Homo (genus অর্থাৎ গন)
- Species: sapiens
অর্থাৎ Hominin বা হোমিনিন বলতে বুঝতে হবে এই Hominini বা হোমিনিনি গোষ্ঠীর সদস্য।
বিস্তারিত গল্প
চায়না এবং ইসরায়েলে ১ লক্ষ ৪০ হাজার বছরের পুরোনো হোমিনিনি গোষ্ঠীর সদস্যের কিছু জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। বিভিন্ন তথ্য প্রমানের উপর ভিত্তি করে ধারণা করা হচ্ছে তারা প্রাচীনকালে আধুনিক মানুষের কাছাকাছি বাস করত, তাদের মধ্যে সংমিশ্রনও হয়েছিল।
ইজরায়েলে হোমিনিন গোষ্ঠীর যে জীবাশ্ম গুলি পাওয়া গেছে তাদের কথা আগে জানা ছিল না। মনে করা হচ্ছে এরা নিয়ান্ডার্থালদের সরাসরি পূর্বপুরুষ। ভূগোলে ল’ভান্ট (Levant) বলতে মধ্যপ্রাচ্যের একটি ভৌগলিক অঞ্চল কে নির্দেশ করা হয় এই ভূগোলিক অঞ্চলের মধ্যে পড়ে লেবানন জর্ডান সিরিয়া এবং আধুনিক ইসরায়েল। এই নতুন হোমিনিন গোষ্ঠী Levant অঞ্চলেই বিকশিত হয়েছিল এবং অধুনা আধুনিক মানুষের সাথেই তাদের বিচরণ ছিল।
অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা আর একটি প্রাচীন মানুষের মাথার খুলির জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা করছেন। জীবাশ্মটি বেশ অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে 1930 সালে চীনে। এই জীবাশ্মটির নাম দেওয়া হয়েছে Dragon Man বা ড্রাগন ম্যান। তথ্য প্রমান থেকে মনে হচ্ছে এই জীবাশ্মটি এমন এক প্রজাতির যারা নিয়েন্ডারথাল প্রজাতির মানুষের থেকেও অনেক বেশী নিকটবর্তী সম্পর্কযুক্ত আধুনিক মানুষের সাথে।
উভয় জীবাশ্ম থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলি বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। জীবাশ্মের হাড়ের আকার, আকৃতি এবং কাঠামোর বিশ্লেষণ করে তথ্যগুলি পাওয়া গেছে। বিতর্কের কারণ কিছু কিছু বিশ্লেষণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কারণ হাড়ের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলির উপর ভিত্তি করে প্রাপ্ত সিধান্তগুলি বিভিন্ন ব্যক্তির চিন্তা ভাবনা ও ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করতে পারে। আর একটা অসুবিধা হোল, এখনও কোন DNA পাওয়া যায় নি, যা নিয়ে গবেষণা করা যাবে এবং এই সন্দেহ নিরসন করা যাবে। তাই এই বিতর্ক নিরসন করা দরকার।
পূর্বের এই হোমিনিন নমুনাগুলিকে অনন্য প্রজাতিতে আলাদা করা, অন্যান্য প্রজাতির সাথে তাদের সম্পর্ক, প্রজাতিগুলির মধ্যে মেলবন্ধন, তাদের বিবর্তনের সঠিক ধারা নির্ধারণ করা সবই বেশ কঠিন এবং অনেক সময়ই বিতর্কিত।
তবে এই বিতর্ক এই প্রজাতিগুলি বিবর্তনের শাখায় কোথায় বসবে সেই নিয়ে, বিবর্তন নিয়ে কোন বিতর্ক নেই, অথবা এই জীবাশ্মগুলি যে মানুষের থেকে ভিন্ন কোনও প্রজাতি সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই।
নিয়েন্ডারথালের পূর্বপুরুষ
বিগত অর্ধ মিলিয়ন বছর ধরে মানব বিবর্তনের ধারাবাহিকতা এবং ইতিহাস সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি আরও জটিল হয়ে উঠেছে 2000 সালের পর থেকে। কারণ গবেষকরা মধ্য এবং পরবর্তী প্লেইস্টোসিন যুগে বসবাসকারী Homo গনটির সদস্যদের বংশের তালিকায় বহু প্রজাতি যুক্ত করেছেন। এই সদস্যদের মধ্যে এখন ইন্দোনেশিয়ার 2003 সালে পাওয়া H. floresiensis, 2010 সালে চিহ্নিত সাইবেরিয়ার ডেনিসোভান; 2015 সালে বর্ণিত দক্ষিণ আফ্রিকার H. naledi; এবং ফিলিপিনোর H. luzonensis যা 2019 সালে পাওয়া।
এই প্রজাতিগুলি আধুনিক মানুষ বা H. sapiens এর সাথে একই সময়ে এই পৃথিবীতে বিচরন করতো। ধারণা করা হয় আধুনিক মানুষ বা H. sapiens প্রায় 200,000 বছর আগে আফ্রিকা থেকে উত্থিত হয়েছিল এবং ইস্রায়েল এবং অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। যেখানে নিয়ান্ডারথালস বা H. neanderthalis ইউরোপে 300,000 বছর ধরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু প্রায় 40,000 বছর পূর্বে আধুনিক মানুষের সাথে সংঘর্ষের কারণে অথবা তাদের সাথে আন্তরপ্রজননের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে অগ্রসর হয়েছিল।
কিন্তু, এই সমসাময়িক কালের কিছু হোমিনিন জীবাশ্ম বিদ্যমান যাদের পূর্বোক্ত কোন প্রজাতির সাথে খাপ খায় না, এখনও পর্যন্ত কোন জানা আছে এমন কোন প্রজাতির সাথে সঙ্গতিও রাখে না বা তাদের এখনও কোন প্রজাতির অন্তর্ভুক্তও করা যায় নি। ইস্রায়েলে পাওয়া এই দলছুট জীবাশ্মগুলির অধ্যয়ন করে এখন গবেষকরা মনে করছেন তারা সম্ভবত হোমিনিনদের একটি নতুন দল চিহ্নিত করেছেন। তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের (Tel Aviv University) নৃতাত্ত্বিক ইস্রায়েল হার্শকোভিটস (Israel Hershkovitz, সঠিক উচ্চারণ জানা নেই) এবং তার সহকর্মীরা মধ্য ইস্রায়েলের নেশের রামলার থেকে পাওয়া কিছু মাথার খুলির টুকরো (প্যারিয়েটাল হাড়ের অংশ এবং একটি চোয়াল) বর্ণনা করেছেন। সম্ভবত এই জীবাশ্ম সেই একই ব্যক্তির বা একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত কোনও ব্যক্তির যে ১৪০,০০০ থেকে ১২,০০,০০০ বছর আগে জীবিত ছিল।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এই সময়ে লেভ্যান্টে (Levant) কেবল H. sapiens বা আধুনিক মানবরাই দাপিয়ে বেড়িয়েছে। ঐ একই জায়গায় নিয়ান্ডারথালদের উপস্থিতির প্রথম নিখুঁত প্রমাণ 70000 বছর আগে থেকেই রয়েছে। তেল আভিভ ইউনিভার্সিটির সহলেখক হিলা মে (Hila May) বলেছেন, “আমরা যা আশা করছিলাম যে জিবাশ্মটি হোমো সেপিয়েন্স হবে।” কিন্তু প্রথম বার দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে এই জীবাশ্মটি আধুনিক মানুষের জীবাশ্ম নয়। চোয়াল এবং দাঁতগুলি দেখে নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির মনে হলেও, মাথার খুলির আকৃতিটি বেশ পুরাতন। অবশ্যই এই বৈশিষ্ট্যগুলি অস্বাভাবিক সমন্বয়।
আরও অদ্ভুত ব্যাপার হল, ইস্রায়েলের আশেপাশে পাওয়া মুষ্টিমেয় কিছু জীবাশ্ম পাওয়া গেছিল যাদের বয়স মোটামুটি চার লক্ষ বছর। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে এই জীবাশ্মগুলির কোনটিই আগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। এই অনাথ জীবাশ্মগুলির তাদের সাথে এই নমুনার মিল আছে। মে (May) বলছেন, “আমরা তাদের কোনও হোমো গ্রুপে স্থান দিতে পারি নি”। যেহেতু পূর্বে প্রাপ্ত জীবাশ্মগুলি সম্পূর্ণ ছিল না, তাই উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে এটি একটি রহস্যই ছিল যে এই জীবাশ্মগুলির স্থান কোথায়। 24শে জুন Science পত্রিকায় দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়[2], [3]। তারা প্রস্তাব করেছেন, যে এই জীবাশ্মগুলির সমস্তই একটি নতুন হোমিনিন জনগোষ্ঠীর, যাদের নামকরন করা হয়েছে “Nesher Ramla people” বলে। ধারণা করা যায় যে, তারা কয়েক হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। গবেষকদের দলটি আরও বলছেন যে, এই Nesher Ramla people-রা হয়ত সম্পূর্ণ প্রথক কোন প্রজাতি নয়, বরং অজানা কোন বৃহত্তর প্রজাতির সদস্য।
“Nesher Ramla people” জনগোষ্ঠী এই অঞ্চলে বসবাসকারী H. sapiens-এর মতো একই পাথরের সরঞ্জামের ব্যবহার আয়ত্ত করেছিল। জীবাশ্মের নিকটে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলি দেখে মনে হয় তারা 10 কিলোমিটার দূরে থেকে উপাদান সংগ্রহ করতে জানত এবং যখন প্রয়োজনমত সরঞ্জামগুলি আবার তীক্ষ্ণ করে তলার কায়দাও তারা জানত। H. sapiens-এর অনুরূপ প্রযুক্তির ব্যবহার ইঙ্গিত দেয় যে তারা আধুনিক মানুষের সাথে একত্রে বাস করেছিল এবং সম্ভবত আন্তরপ্রজননেও লিপ্ত ছিল।
তবে সারা পৃথিবীর সমস্ত গবেষকরা এই দলটির অনুসন্ধানের সাথে একমত নন। ম্যাসাচুসেটসে অবস্থিত কেমব্রিজের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের palaeoanthropologist ফিলিপ রাইটমায়ারের (Philip Rightmire) কাছে, খুলিটি ‘আদি এবং প্রাচীনতর নিয়ান্ডারথাল’ এর মতোই দেখাচ্ছে। রাইটমায়ারের মতে যে এই সময় এই অঞ্চলে নিয়ান্ডারথালদের দেখে তিনি অবাক হবেন না। অর্থাৎ তিনি এই Nesher Ramla people-দের নিয়ান্ডারথাল থেকে আলাদা করছেন না।
হার্শকোভিৎস (Hershkovitz) এবং সহকর্মীদের যুক্তি, Nesher Ramla people ইউরোপে প্রারম্ভিক প্রাক-নিয়ান্ডারথল সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেছিল। আফ্রিকা বা এশিয়া থেকে প্রাচীন জিন (gene) বহন করে নিয়ে এসেছিল ইউরোপের মাটিতে, আর তা প্রবেশ করিয়েছিল ইউরোপে থাকা এমন একটি প্রজাতিতে প্রবেশ করিয়েছিল যা প্রচলিতভাবে ইউরোপের মাটিতে স্বাধীনভাবে বিকশিত বলে মনে করা হত। এর অর্থ ‘নিয়ান্ডারথালরা এখন আর একচেটিয়া ইউরোপীয়ান গল্প নয়’।
তবে রাইটমায়ার যুক্তি জিন প্রবাহটি অন্য দিকেও যেতে পারত। তিনি বলেন, “এই জীবাশ্মগুলি যদি নিয়েন্ডারথালদের পূর্বপুরুষদের হয় তবে তারা ইউরোপ থেকে আসতে না পারার কারণ আমি দেখছি না।”
বিতর্ক কিন্তু এই প্রজাতিগুলি আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ কিনা বা মানুষের বিবর্তন নিয়ে নয়। বিতর্ক gene flow কোন ধারায় হয়েছে সেই বিষয় নিয়ে। টাইম মেশিন ছাড়া এই সুত্রগুলি উদ্ধার করা খুবই দুরূহ।
ড্রাগন ম্যান
চীনে, কয়েক দশক আগে পাওয়া মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগের হোমিনিন খুলির বিশ্লেষণ আমাদের পূর্বপুরুষদের উপর নতুন আলোকপাত করতে পারে।
হার্বিনে পাওয়া খুলি (The Harbin skull) একটি অত্যন্ত সুসংরক্ষিত ক্রেনিয়াম (cranium), যা প্রায় 140000 বছরের পুরানো। এটি একটি 50 বছর বয়সী পুরুষের বলে মনে করা হয়। খুলিটি মূলত 1933 সালে খনন কাজের সময় আবিষ্কৃত হয়। পরে জাপানি সেনাবাহিনী থেকে গোপন করার উদ্দেশ্যে তা একটি কূপের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। 2018 সালে শিজিয়াজুয়াংয়ের হেবেই জিইও বিশ্ববিদ্যালয়ে (Hebei GEO University in Shijiazhuang) অনুদান দেওয়া হয়েছিল। খুলিটি বিশেষত বড় এবং পুরু হাড়। বড়, বর্গাকার চোখের গর্ত, গালের হাড় নীচে, বড় দাঁত এবং একটি বিস্তৃত মূর্ধা।
25 জুন The Innovation-এ প্রকাশিত হয়েছে দুটি গবেষণাপত্র[4], [5]। হেবেই জিইও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালেওন্টোলজিস্ট জি কিয়াং এবং সহকর্মীরা বলছেন যে হারবিনের খুলির অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলি বিচার করে একটি নতুন প্রজাতি হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট। হাইলংজিয়াং (Heilongjiang) প্রদেশ লং জিয়াং (ড্রাগন নদী) এর নাম অনুসারে প্রজাতির নামকরন করেছেন হোমো লঙ্গি (ড্রাগন ম্যান) বলে। এই অঞ্চলেই জীবাশ্মটি পাওয়া গেছে।
খুলিটি যে স্থানে আবিষ্কৃত হয়েছিল, সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। তাছাড়া এই নমুনাটির সাথে আশেপাশের আর কোন প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনাই সংগ্রহ করা হয় নি। তাই কেবল একটি একক মাথার খুলির উপর ভিত্তি করেই একটি নতুন প্রজাতির নামকরণ কতোটা যুক্তিযুক্ত সেই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ‘আমি মনে করি যে আমরা যা জানি বা ধারণা করি, এশিয়ার আশেপাশে আরও অনেক বেশি মানব প্রজাতি ছিল,’ শোয়ার্জ (Schwartz) বলেছেন। তাঁর মতে, যথেষ্ট প্রমাণ নেই যে এই খুলিটি একটি নতুন প্রজাতির প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
হারবিন জীবাশ্ম, চীনে বেশ কয়েক বছর ধরে মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগের Homo প্রজাতির সে সকল অদ্ভুত জীবাশ্মগুলি পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে একটি। রাইটমায়ারের মতে এই জীবাশ্মগুলি আদি নিয়েন্ডারথাল প্রজাতির যারা মধ্যপ্রাচ্য, চীন এবং সাইবেরিয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপ থেকে যাত্রা করেছিল এবং অবশেষে ডেনিসোভান প্রজাতিতে পরিণত হয়েছিল। তাঁর মতে এটা আলাদা কোনও প্রজাতি নয়, বরং ডেনিসোভানদের মতো একই গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। হার্শকোভিটিজ (Hershkovitz) যুক্তি দেখিয়েছেন যে এই এশিয়ান জীবাশ্মগুলির কিছু কিছু Nesher Ramla গ্রুপের সাথেও ন্তর্ভুক্ত করতে পারা যায়।
গবেষণায় কিয়াং (Qiang) ও সহকর্মীরা বলেছিলেন যে হার্বিনের খুলির সাথে কিছু আদি H. sapiens জীবাশ্মের সাথে মিল আছে, তাই H. longi আধুনিক মানুষের সাথে নিয়ান্ডারথালদের তুলনায় আরও নিকট সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। তবে শোয়ার্টজ (Schwartz) মনে করেন যে এই জীবাশ্মগুলির মধ্যে কিছুটিকে অনুপযুক্তভাবে H. sapiens-এর সাথে একই শ্রেণীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে এই জীবাশ্মগুলির মধ্যে অনেকগুলিই একে অপরের থেকে খুব আলাদা।
তথ্যসূত্র
- Mysterious skull fossils expand human family tree — but questions remain [↑]
- Hershkovitz, I., et al., A Middle Pleistocene Homo from Nesher Ramla, Israel. Science, 2021. 372(6549): p. 1424[↑]
- Zaidner, Y., et al., Middle Pleistocene Homo behavior and culture at 140,000 to 120,000 years ago and interactions with Homo sapiens. Science, 2021. 372(6549): p. 1429.[↑]
- Ji, Q., et al., Late Middle Pleistocene Harbin cranium represents a new Homo species. The Innovation.[↑]
- Ni, X., et al., Massive cranium from Harbin in northeastern China establishes a new Middle Pleistocene human lineage. The Innovation.[↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
GREAT and AMAZING finding ..another proof that We did not originate from immaginary ADAM& EVE … the creationist will never agree with this but they will never be able to prove otherwise … creationist and dogmatic religious people only delude themselves